করোনায় সবচাইতে লাভবান দেশ ভিয়েতনাম

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। এবার যখন ভিয়েতনামে করোনা ছড়ালো, পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় তারা সে করোনা খুব ইফেশিয়েন্টলি হ্যান্ডল করলো। ফলাফল করোনায় ভিয়েতনামে একটা লোকও মারা যায়নি। ভিয়েতনাম একদিনের জন্যও তাদের দেশের কলকারখানা বন্ধ করেনি। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে তারা চলে গিয়েছে সেই ২০১৯ এর নভেম্বরেই। এদিকে করোনায় ধাক্কা খাওয়ার পর চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও মার্কিনীদের তৎপরতা দেখে নড়েচড়ে বসেছে জার্মানীও।

জাপান অলরেডী তাদের কারখানাগুলো চায়না থেকে সরাতে ২৩.৫ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারা। Trump যদি আবারো ক্ষমতায় আসে তবে চীনের সাথে মার্কীনীদের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে। চীনের উপর আরোপিত শুল্কারোপের সময় আরো লম্বা হবে। এসব বিবেচনায় জাপান, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানী ইতোমধ্যে তাদের চায়না থেকে কারখানা সরিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপনের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। এবং তাদের দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যে জাপানের টয়োটা, মার্কিন প্যানাসনিকসহ ২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রায় কনফার্ম করেই দিয়েছে তাদের পরবর্তী গন্তব্য ভিয়েতনাম। শ্রমিকের সহজলভ্যতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, চায়নার বর্ডার, স্মুথ কাস্টম প্রসেস থাকার কারণে ভিয়েতনামই হচ্ছে চায়নার অন্যতম বিকল্প।

কিন্তু আমরা কী করব? আমাদের চার দশকের বেশি বয়স্ক এই পোশাক শিল্প কী এই বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়ায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে? আমাদের স্কিলড ওয়ার্কার আছে, আছে উপযুক্ত প্রযুক্তিও, আছে স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার। সবকিছু থাকার পরেও চার দশকে আমাদের কোন আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কোন প্রচেষ্টাও নেই। বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর তিন কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা টিকে থাকতে পারেনা। এখনই যদি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প চিন্তা না করা হয় তবে অচিরেই এই শিল্প এদেশ থেকে ভ্যানিশ হবে। কারণ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া আর মায়ানমারের মত দেশগুলো এই শিল্পে আমাদের ঘাড়ের উপর ইতিমধ্যে প্রতিযোগীতার নি:শ্বাস ফেলছে।

এত এত কারখানা ভিয়েতনামে যাওয়ার ঘোষণাতেও ভিয়েতনাম হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা মনোযোগ দিচ্ছে তাদের বর্তমান প্রধান আয়ের উৎস পোশাক শিল্পের দিকে। তারা দেখছে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো কোটি কোটি ডলারের প্রোডাক্ট নিয়ে গিয়ে পেমেন্ট না দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। ফলে তারা আর পেমেন্ট পাচ্ছেনা। এথেকে বুঝতে পেরেছে আসলে অনন্তকাল ধরে অন্য ব্র্যান্ডের অর্ডারকৃত পোশাক বানিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হবে।তাই ভিয়েতনাম ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরে তারা অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এবং এই ব্র‍্যান্ডগুলো প্রতিষ্ঠায় যেখানে যে ধরণের সহায়তা দেয়া দরকার ভিয়েতনাম শিল্পমন্ত্রণালয় তার সবধরণের সহায়তা করবে। ভিয়েতনামীরা বীরের জাতি। দীর্ঘ এক দশক মার্কিনীদের সাথে লড়াই করে তারা তাদের দেশ মুক্ত করেছে। গত শতকে মার্কিনীরা একমাত্র ভিয়েতনামীদের কাছেই মুখোমুখি যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে। অতএব ভিয়েতনাম দশ বছরে অন্তত ১০ টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। আর আমরা ঘোষণা দিয়েছি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের । প্রশ্ন হল কোথায় গেল জনগণের রক্ত পানি করা প্রণোদনা । কোথায় গেল শ্রমিকের লাঞ্চনা গঞ্জনা ।

সূত্রঃ LinkedIn

ছবিঃ ন্যাট।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৬-০৬-২০২০ | ২০:৫২ |

    শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মি. ফয়জুল মহী। গুড জব। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. মাহবুব আলী : ০৭-০৬-২০২০ | ৮:৩৩ |

    তথ্যবহুল।

    GD Star Rating
    loading...
  3. ফারজানা শারমিন মৌসুমী : ০৭-০৬-২০২০ | ১৫:৩২ |

    বাহ্ চমৎকার 

    GD Star Rating
    loading...