মৃত পাখির হাড় থেকে জন্ম নিয়েছিল যে পাথর
অলক্ষ্যেই অনেক কিছু আমার দেখা হয়ে যায়। মৃত পাখির হাড় থেকে
জন্ম নিয়েছিল যে পাথর তার উপর জন্মেছে একটি বৃক্ষ, সেই বৃক্ষে ফুটে
আছে একটি নামহীন ফুল। ফুলটি কী তবে সেই পাখির ডানাচিহ্ন! আর
বৃক্ষটি কী তবে পাখির সহদোরা! যে বিলে স্নান সারতো ঐ পাখি, সেই
চলনবিল কী তবে আমার লেখার খাতা! এমন অনেক ঘোরদৃশ্য দেখতে
দেখতে আমি ট্রেনে চেপে বসি। টিকিট চেকার এসে আমার টিকিট দেখতে
চান। টিকিট কাটি’নি আমি। দিইনি ট্রেনের ভাড়া।আমাকে সামনের স্টেশনেই
নেমে যাবার আদেশ জারি হয়। আমি কাঁধের ঝুলো’টি সামলাতে সামলাতে
নেমে পড়ার জন্য তৈরি হই। একজন কাগজ বিক্রেতা এসে আমার সামনে
দাঁড়ান। এবং বলতে থাকেন— নামবেন না বাবু! আপনার ভাড়াটা আমিই
দিয়ে দিচ্ছি…………
আমি ক্রমশ পাথর হতে থাকি। মনে হয়, মানবজনমের চেয়ে পাথরজনম
অনেক ভালো। পাথর অনেক কিছুই দেখতে পারে। মানুষ চেয়েও দেখে না।
#
.
স্যাটেলাইট, ছায়া হয়ে থাকো
মনে আনন্দ এলে আমি মাঝে মাঝে অজান্তেই
‘জয় বাংলা’ বলে ফেলি। একদিন নিউইয়র্কের ব্রায়ান্ট পার্কে বসে এমনটি
বলার পর বেশ বিপাকেই পড়েছিলাম।
পাশের চেয়ারে বসা তরুণ জানতে চেয়েছিলেন- ‘আর ইউ ওকে!’
তিনি ভেবেছিলেন, আমি নিজের সাথেই
কথা বলছি।
একই অবস্থা হয়েছিল লন্ডনেও। গতবছর,
ট্রাফালগার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে জয় বাংলা
বলে উচ্চস্বরে শ্লোগান দেয়ার পর-
আমার দিকে তেড়ে এসেছিলেন এক বাঁশিওয়ালা
তার অভিযোগ ছিল, আমি তার সুরধ্যানে
ব্যাঘাত ঘটিয়েছি।
আমি এভাবেই আত্মালাপ করে করে দেশে বিদেশে,
শুনিয়েছি ৩২ নম্বরে নেমে আসা কালোরাতের
বিষাদগল্প। এভাবেই পঙক্তি লিখেছি
শেখ মুজিবের নামে।
৮৯ এর এক দুপুরে জাতিসংঘ চত্বরে
‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে যে শ্লোগান দিয়েছিলাম,
তা পৌঁছেছিল স্বৈরশাসকের তখত পর্যন্ত।
আমার সতীর্থরা, তেমন স্মৃতি এখনও
মনে করিয়ে দেন। তারা আরও বলেন-
এই জাতিসংঘের পুষ্পবিতানেই একদিন
জনকের ছায়া পড়েছিল।
আমি এখনও সেই পদরেখা খুঁজি।
আজ ১১ মে ২০১৮ এর এক সূর্যময় বিকেলে
ফ্লোরিডার আকাশ থেকে যে স্যাটেলাইট’টি
উড়ে গেল, অথবা আমাদের একগুচ্ছ স্বপ্ন
ছড়িয়ে দিল আকাশে-
সেখানেও উজ্জ্বল হয়ে থাকলো জনকের
শক্তিছায়া,
‘আমি যদি হুকুম দিবার না ও পারি’….
বলে তিনি যে সাহস জাগিয়েছিলেন প্রজন্মের
প্রাণে প্রাণে, সেই প্রজন্মই আজ আবার বললো, ‘জয় বাংলা’
বিশ্ববাসী দেখলো, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এখন এয়ারস্পেসে,
নিজেদের সাকিন করে নিয়েছে।
#
loading...
loading...
আমি ক্রমশ পাথর হতে থাকি। মনে হয়, মানবজনমের চেয়ে পাথরজনম
অনেক ভালো। পাথর অনেক কিছুই দেখতে পারে। মানুষ চেয়েও দেখে না।
loading...