পাপিয়া এবং লাল গোলাপ – প্রথম পর্ব
৫.
পাখিটি তার খয়েরী রঙের ডানা মেলে উড়াল দিল এবং বাতাসে সাঁতার কটলো। সে বাগানের উপর দিয়ে উড়ালপথে চলল কিছু সময়, সে ঘন বনের উপরে কয়েক চক্কর দিল।
ছাত্রটি তখনও ঘাসের উপর শুয়ে আছে যেখানে তার সাথে তার সর্বশেষ কথা হয়েছে। এখনও তার চোখের জল অনবরত ঝরছে।
‘সুখী হও, ‘পাপিয়া বলল,’সুখী হও। তুমি পাবে তোমার কাঙ্খিত লাল গোলাপ। চাদের আলোর মায়াবী কম্পনজাত সংগীতে আমি তাকে জাগিয়ে তুলব আর মিশিয়ে দিব আমার বুকের তাজা রক্তে। এসব এ কারণে করব কারণ তুমি একজন সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষ। মনে রেখো ভালোবাসা ফিলোসোফির চেয়ে জ্ঞানী, রাজার চেয়ে ক্ষমতাবান। আগুনের শিখার মতো গায়ের রঙ তার, সেই বর্ণ প্রকাশিত হয় প্রেমিকের দেহে যা আমি খোঁজে পেয়েছি তোমার দেহে।’
যুবক ঘাসে চিৎ হয়ে শুয়ে শুনছিল পাপিয়ার কথা, কিছুই বুঝল না। সে কেবল ফিলোসোফি বইয়ের ভাষাই বুঝতে পারে।
কিন্তু ঐ যে হিজল, তমাল, মহুয়া গাছেরা, তারা বুঝেছিল সেই ভাষা। তারা চুপি চুপি বলে যায় পাপিয়া যেন তার শেষ সময়ের গানটি শুনিয়ে যায়।
হিজল গাছটি ঝিরিঝিরি করে বলে গেল,’যখন তুমি চলে যাবে বড় একা হয়ে যাব। তোমার গান শুনিয়ে যাও আমায়।’
পাপিয়া গেয়ে গেল গান, তার কণ্ঠে যেন অনন্তকালের অনন্য সংগীত বেজে উঠলো।
যুবক চলে গেল তার কামড়াতে।
রাত নেমে এলো চরাচরে। নেমে এলো চাঁদের স্বর্গীয় আলো। পাপিয়ে উড়ে এসে বসল গোলাপ গাছে।
সারারাত ব্যাপী পাপিয়া ডেকে চলল তার হৃদয় ছেড়া গান। রাত বাড়তে থাকলে গভীর থেকে গভীর হলো হৃদয়ের প্রতিধ্বনি, টুকরো টুকরো হয়ে যেতে থাকল পাপিয়ার বুক। যখন স্বর উঠলো চরমে একটা অলৌকিক ফুল ফোটল গোলাপ গাছটায়। গাছ বলে চললো আরও জোরে জোরে গাও, আরও দ্রুত, আরও ঘন। হয়ত নেমে আসবে ভোর, তখনও ফোটবে না পুরো ফুল। পাপিয়া গেয়ে উঠলো আরও আরও জোরে, তন্ময় হয়ে, বুকে তার একটা ব্যাথা জেগে উঠলো, আরও ব্যাথা আরও। তার জীবনের রক্ত বইয়ে গেলো গোলাপ গাছের শিরা উপশিরায়। একটা অফুরন্ত সৌন্দর্যমাখা লাল গোলাপ জেগে উঠলো গাছ জুড়ে। গাছ চিৎকার করে উঠলো, ‘দেখো কি অসাধারণ লাল গোলাপ!’ কিন্তু পাপিয়া নিথর।
৬.
দুপুরে ছাত্রটি জানালা খুলে বাইরে তাকাল। সে চিৎকার করে উঠলো,’ কি আশ্চর্য! কি সৌভাগ্য আমার! এখানে একটি লাল গোলাপ, আমার সারা জীবনে এমন অসাধারণ গোলাপ দেখিনি আমি।’ সে ফুলটি ছিড়ে নিয়ে প্রফেসরের বাসায় হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছল।
প্রফেসরের কন্যা নীল রঙের মখমলের শাড়ি পরে বসে আছে। যুবক বলল,’ তুমি আমায় বলেছিলে যদি লাল গোলাপ এনে দেই, তবে তুমি আমার সাথে নাচবে। দেখো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ লাল গোলাপ তোমাকে নিবেদন করছি। এটা খোঁপায় পড়ে নাও, এটাই তোমাকে বলে দিবে কতটা ভালোবাসি তোমায়।’
কন্যা বলল,’ আজ আমি যে রঙের শাড়ি পড়েছি, এ ফুলটি তার সাথে ম্যাচিং করবে না, দেখো আমার শাড়ির রঙটি, দেখো। ‘
যুবক রেগে গেল,’ তুমি আমাকে বলোনি লাল গোলাপ এনে দিলে তুমি আমাকে ভালোবাসবে। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লাল গোলাপ এনেছি, আনিনি?’
‘ হা বলেছি। তুমি খুবই বিরক্ত করছিলে, পাগলের মতো করছিলে। তাই বলেছি। দেখো, তুমি এখন যাও, বাবার কামড়ায় বসে আছে তার পছন্দের এক ছাত্র , সে এনেছে আমার জন্য মুক্তোর নেকলেস। সে এখন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আর তুমি এনেছো সামান্য গেলাপ। তুমি কি? তুমি একজন সাধারণত ছাত্র মাত্র।’
ছাত্রটি লাল গোলাপ ছুড়ে ফেললো রাস্তায়, একটা বাচ্চা ছেলের সাইকেলের চাকার নিচে পড়ে থেতলে গেল।
ছাত্রটি হাটতে হাটতে চলে এলো। মনে মনে বলছে,’ প্রেম কত বিরক্তিকর জিনিস। এর অর্ধেকটাও যুক্তি যুক্ত নয়। এটা কিচ্ছু প্রমাণ করে না। সব সময় এমন কথা বলে যা কখনো ঘটে না। এটা এমন কথা বলে যা সত্যি নয়। এটা একেবারে অবাস্তব। আমাকে প্রতিটি ব্যাপারে বাস্তবমূখী হতে হবে। আমি আমার ফিলোসোফি আর মেটাফিজিক্সে ফিরে যাব।’
বাড়ি ফিরে যুবক ধুলোমাখা বইগুলো টেনে নিল আবার পড়া শুরু করল।
সমাপ্ত।
loading...
loading...
প্রিয় কবি
কেমন আছেন। প্রকৃতি আজ আমাদের উপর খুবই নারাজ। সবাই এক দৌড়ের উপর আছে আর সেই দৌড় হলো জীবন বাঁচানো। তবে ঘরের কোণায় লুকিয়ে থাকাই আজ জীবন বাঁচানোর প্রথম শর্ত। লিখতে হলে পড়তে হবে, লিখতে হলে ঘুরতে হবে। এই দুইটাই আমার মতে লেখার উপাধান দেয়। ভালোবাসা প্রতিটি মানুষকে । হোক মনুষ্যের জয়।
loading...
দুই পর্বের অসাধারণ একটি গদ্য ভাবের সন্ধান পেলাম। সার্থক আপনার লিখা স্যার।
loading...