১.
রুটির শেষ টুকরাটি নিয়ে, টম কিং, ধীরে আর গভীর মনযোগে মাংসের ঝোলটুকু মুছে নিয়ে যখন মুখে পুড়ল, তখন তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু-ধারা বইয়ে গেল নি:শব্দ। খাবার টেবিল থেকে যখন উঠল সে, তখনও সে দমন করল প্রচন্ড ক্ষুধার অনুভূতি। সে একাই খেল। দু’টি বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি ঘুম পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। যাতে বাচ্চারা টের না পায় যে, তারা কিছুই খায়নি। তার স্ত্রী, ব্লিমি কিছুই স্পর্শ করেনি, নীরবে বসে উৎসুক নেত্রে অবলোকন করে গেল। মহিলা পাতলা ধরনের, নিচুস্তরের কাজের মহিলার মত দেখতে এখন, যদিও চেহারা থেকে একটি সৌন্দর্যের রেখা চলে যায় নি। হাতে থাকা শেষ টাকাটি আটা কিনতে শেষ হয়ে গেছে তার। মাংস আনতে ধার করতে হয়েছে প্রতিবেশীর কাছ থেকে।
যখন টম বারান্দায় রাখা নড়বড়ে চেয়ারে বসল, চেয়ারটি আর্তনাদ করে উঠল কড়কড় শব্দে। তার গতিবিধি ধীর, বিশাল দেহ লোহার মতো দৃঢ় আর বলিষ্ঠ। পোশাক একেবারে নোংরা। জুতা জোড়া তার ভার সহ্য করতে পারছে না বলে মনে হয়। কয়েক জায়গায় ছিড়ে যায় যায় করছে।
সে কখনো এ ধরনের পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করেনি।
টমের চেহারাটা বিজ্ঞাপিত করছে সে কি ছিল। মুখমন্ডলখানি একজন প্রতিনিধি স্থানীয় মুষ্টিযোদ্ধার, যে দীর্ঘ সময় চারকোনাকার রিং-এ নিবেদন করে নিজেকে একজন জান্তব লড়াকু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার চেহারাটা ঝড়ের তান্ডবের মতো রুদ্র। গোফ-দাড়ীহীন। ঠোঁট বিকৃত। একটি দীর্ঘ লম্বা গাঢ় কাটা দাগ চেহারায়। তার চোয়াল আক্রমনাত্মক, জান্তব, শক্তিশালী। দীর্ঘ লম্বা চুল কাঁদ বরাবর ঝুলে গেছে, কপালের খানিকটা চুল দ্বারা আবৃত, চোখ দুটি শান্ত ভাবলেশহীন। নির্ভেজাল এক শিকারী সে, চোখ দু’টি পিটপিট করতে থাকে। তার চোখ , শক্ত চোয়ালসহ তার পুরো মাথাটা গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে একজন দুর্বৃত্তের মত মনে হয়। যেন শিকারী সিংহের মাথাটি মানুষের দেহের উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
সবমিলিয়ে, তার চেহারাটা অন্ধকার বা নীরব স্থানে দেখলে যে কেউ ভড়কে যাবে। টম কখনই দুর্বৃত্ত ছিল না, কোন প্রকার আইন বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। রিং এর বাইরে, জীবনের পথচলায়, সে কোন মারামারিতে কখনো জড়ায়নি। তাকে কেউ কখনও উগ্রপন্থী কার্যকলাপে দেখেনি। সে একজন পেশাধারী ফাইটার, তার সমস্ত ক্রদ্ধতা, পাশবিক আচরণ পেশাধারী মনোভাবাপন্ন। রিং-এর বাইরে সে একজন ধীরস্থির মানুষ, তার আচরণ উগ্রতাবিহীন। যৌবনের সেই দিনগুলোতে, যখন অর্থ ছিল দ্রুতগতিতে তার দিকে ধাবমান, তখনও সে দাম্ভিব ছিল না। লড়াই স্রেফ তার পেশা । রিং-এর ভিতর সে প্রচন্ড গতিতে আঘাত করত, অঘাত করত বিধ্বস্ত করার জন্য। দর্শক চিৎকার করত। তারা টিকেট কেটে দু’জনের নৃশংসতা দেখতো। বিজয়ী পেত বড় অংকের টাকার চেক। বিশ বছর আগে, যখন টম উইলিয়ামের মুখোমুখি হয়েছিল, টম জানত উইলিয়াম সবেমাত্র তার চোয়ালটার ধকল সামলে রিং-এ ফিরেছে। টম লক্ষ্য রাখছিল প্রতিপক্ষের চোয়ালটার দিকে কারণ সে জানত উইলিয়ামের মতো প্রতিষ্ঠিত প্রতিপক্ষকে পরাভূত করার এটাই একমাত্র দুর্বলতা স্থান। তৃতীয় রাউন্ডে সে তার চোয়ালটা ভেঙ্গে দেয়। কোন অন্যায় ইচ্ছা তখনো কাজ করে নি তার। সে জানে এটা একটা খেলা। দু’জনই জানে এটা একটা খেলা। তারা পরস্পরকে আঘাত করার এই খেলাতে মেতে উঠত নানা কৌশলে।
টম নীরব প্রকৃতির, কখনো বাকপটু ছিল না। বিষণ্ন মনে নিরালা বারান্দায় বসে একদৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। তার হাতের আঙুলগুলো পুন:পুন আঘাতে শক্ত ও কদাকার । সে তার ফোলে ফোলে ওঠা শিরাগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করল। এখন তার অধিক পরিশ্রমের চাপ সহ্য করা কষ্টসাধ্য মনে হয়। দ্রুত গতির পাঁচ রাউন্ড, কোদালে মাটি কাটা কিম্বা হামারের সাহায্যে খনিজ পাহাড় কাটা থেকে কোন অবস্থাতেই কম পরিশ্রমের কাজ নয়। হিংস্র প্রদর্শনী ক্রমাগত হিংস্রতার রূপ নয়। বর্গাকৃতির সেই ষ্টেজটিতে কখনো আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দড়িতে আছড়ে পড়ে কিম্বা নিজেই প্রতিপক্ষকে আঘাত হানে। হিংস্র এই প্রতিযোগিতা, পঞ্চম রাউন্ড পর্যন্ত টেনে নিয়ে সফল পরিসমাপ্তির দিকে যেতে, শরীরের ভিতর এক গভীর চিৎকার অনুভুত হয়। নিজেকে উজার করে দিতে হয়। সমস্ত শরীর শূণ্য মনে হয়, আর বৃষ্টির ফোঁটার মতো জলধারা বয়ে যেতে থাকে, নি:শ্বাসকে রাখতে হয় নিয়ন্ত্রিত। ক্ষীপ্র সেই শরীরে বিশ্বস্ততার সাথে ফুসফুস রক্ত সঞ্চালন করে দ্রুতগতিতে শিরা-উপশিরাগুলোতে। শিরাগুলো তখন ফুলে ফুলে ওঠে আর নিয়ন্ত্রিত হয়ে আবার পূর্ববস্থায় চলে যেতে চায় কিন্তু প্রতিবারই সমান্য ফোলে থাকে। সে গভীরভাবে ফোলে উঠা শিরাগুলো দেখতে লাগল।
২.
ক্ষুধার অনুভুতিতে সে আবার কাবু হয়ে পড়ল।
-‘ব্লিমি , আমি কি একটুকরা মাংসও পেতে পারি না।’
সে বিড়বিড় করতে লাগল।
-‘আমি চেষ্টা করেছি, কোথাও আর ধার পাইনি’
তার স্ত্রী দু:খের সাথে স্বীকার করল।
-‘কেউ রাজি হলো না!’ টম কিং বিস্মিত হয়ে বলল।
-‘‘ধার-দেনা তো আর কম করিনি, ভেবে দেখেছো কত দেনা, কত বড় অংক দেনা করেছি, ভাবলে তুমি অস্থির হয়ে উঠবে।’’
গোঁৎ গোঁৎ করে সে ফুলতে থাকল কিন্তু কোন উত্তর দিল না। স্মৃতিতে তার যৌবনের দিনগুলো সাঁতরাতে লাগল। তার কুত্তাটিকে সে কত মাংস দিত গননাহীনভাবে! অনেক দোকান মালিক সে সময় মনকে মন মাংস বাকী দিত। কিন্তু সময় বদলায়! টম কিং, এখন অস্তমিত সময়ে , যা উপার্জন করে, দোকান বিলের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুতে পারে না। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য তার কোন প্রকার প্রস্তুতি ছিল না।
অস্ট্রেলিয়ায় এটা অনাবৃষ্টির বছর, কোন ধরনের পরিশ্রমের কাজ যোগানও কষ্টসাধ্য। মান সম্মত খাবার যোগাড় করতে পারছিল না সে, যা যোগাড় হত তা যথেষ্ট ছিল না। মাঝে মাঝে নির্মান শ্রমিকের কাজ যোগাড় করতে পারত সে। অবশেষে অনেক বলে সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাবের ট্রেইনার হিসাবে যোগদান করে, যার বাবদ কিছু অগ্রীম নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়নি। এটা খুব কষ্টসাধ্য কাজ, তাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। স্ত্রী-দুই সন্তানের খাবারের চিন্তায় সে বিহ্বল ছিল। ফলে যা ঘটার তাই ঘটেছে, কর্তৃপক্ষ তাকে কাজে স্থায়ী করেনি।
-‘কটা বাজে?’ টম জিজ্ঞাসা করে।
-‘প্রায় আটটা’ ব্লিমি বলল।
তার পরবর্তী দশ মিনিট নীরবতা ভর করল ঘরটিতে। অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করে টম বলল, ‘সত্যি কথা, ট্রেইনার হিসাবে আমি মোটেই ভাল নই কিন্তু ফাইট করতে জানি, জিততে জানি আমি, আজ যদি জিততে পারি…’’
টম কখনো যাবার সময় চুমু খাবার প্রস্তাবনা করে না কিন্তু ব্লিমি আজ নিজ বাহুতে টমকে জড়িয়ে ধরল। চুমুতে চুমুতে আপ্লুত করে ফেলল। বৃহদায়ত দেহের কাছে ব্লিমিকে একজন বালিকার মতো মনে হলো।
-‘গুড লাক, টম’ সে বলল,‘তুমি পারবে।’
‘আমি পারব’ কথাটি বারবার উচ্চারণ করতে লাগল টম যেন কথাটি প্রতিধ্বনি তুলল তার সমস্ত স্বত্ত্বা জুড়ে, ‘আমি পারব’।
হৃদয় বাহিত নির্মল হাসি হাসল টম। স্ত্রীকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। টম বাড়িটির দিকে তাকাল। সারা পৃথিবীতে এই ক’টি কক্ষের বাড়িটি তার আশ্রয়স্থল, নিজের, তার স্ত্রী আর বাচ্চাদের।
সে এটাকে ত্যাগ করছে, তাদের খাদ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। সে বেরিয়ে যাচ্ছে আধুনিক কোন কাজে সন্ধানে নয়, কারখানার শ্রমিক, সড়ক নির্মাণশ্রমিক কিম্বা এ জাতীয় কোন কাজে নয়। সে বেরোচ্ছে, বন্য পশু যেমনি শিকারে বেরোয় নিজেদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য, জড়িয়ে পড়ে নানামুখী আক্রমণ আর প্রতি-আক্রমণে তেমন বন্য আদিম সংঘাতে জড়িয়ে পরতে।
‘আমি পারব’ সে বারবার উচ্চারণ করতে লাগল, অবশেষে সে গোঁয়ারের মতো বলতে লাগল, ‘যদি আমি জিতি, বেশ কিছু টাকা আমার হাতে এসে যাবে, সমস্ত দেনা পরিশোধ করেও থেকে যাবে অনেক। আর যদি হেরে যাই, আমি কিছুই পাব না, এমনকি বাসের ভাড়াটাও আমার হাতে অবশিষ্ট থাকবে না।’
‘‘ হেরে গেলে প্রাইজমানি পাবে না?’’
‘‘না। এভাবেই , এ শর্তেই আমি রিং-এ ফিরছি। যদি জিততে পারি তবে সমস্ত টাকা আমার আর যদি হেরে যাই তবে ক্লাবের সেক্রেটারী নিয়ে নিবে সব প্রাইজমানি। বিদায়। আশা করি জিতেই বাড়ি ফিরব।’’
‘আর আমি তোমার প্রতীক্ষায় থাকব….’ তার স্ত্রী বলল।
৩.
একদিন সে ছিল হেভী ওয়েট চম্পিয়ন, রিং-এ আসার জন্য নানা কোম্পানীর ক্যাব থাকত। তার সাথে গাড়িতে চড়তে পেরে আনন্দিত হত অনেকে। আজ তাকে একা আসতে হলো! এক সময় সে ভেবেছিল কোন ধরনের ব্যবসায় জড়াবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল না। তার আশে-পাশে উপদেশ দেয়ার কেউ ছিল না, থাকলেও টম কিং এতে কর্নপাত করত কিনা সন্দেহ।
টাকা উপার্জন তার জন্য ছিল সহজ। সেটা অন্য উন্মাদনা। বড় অংকের টাকা- একটি সম্মানজনক ফাইট- মাঝে অলস সময়, তোষামদকারী, পিঠ চাপড়ে দেয়া, হাতে হাত রাখা, মাত্র পাঁচ মিনিটের পরিচয়ে তরল পানীয় উপহার দিতে পেরে ধন্য হয়ে যাওয়া লোকের অভাব ছিল না। অনেক গৌরব, মানুষের উল্লাসে ফেটে পড়া গ্যালারী। রেফারীর উচ্চারণ ‘ আর একটি কিং এর বিজয়।’’ এবং পরদিন খেলার পাতায় তার নাম। কি দিন!
দিনগুলো সোনার খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকে না! যখন সে ছিল পূর্ণ যৌবনে, তার প্রতিপক্ষ ছিল প্রতিষ্ঠিত ফাইটার। টমের আজও মনে আছে দশ বছর আগে সেই দিনের সেই দৃশ্য। বাচ্চা ছেলের মতো ড্রেসিং রুমে কেঁদেছিল টসার বিল! দ্বিতীয় রাউন্ডে টমের হুকে পড়ে গিয়ে টসার বিল আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
-‘টসার বিল! বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছিল তোমার? তোমার স্ত্রী আর সন্তনদের খাদ্যাভাব তোমাকে বিষণ্ণ করে রেখেছিল? কিছু মাংসের জন্য কি হাহাকার করছিল তোমার ক্ষুধার্ত অনুভূতি? ‘
স্মৃতিতে সাঁতার কাটতে কাটতে বিলকে কাল্পনিক প্রশ্ন করে যাচ্ছে সে। দশ বছর আগে টম লড়ছিল সন্মানের জন্য, সহজ উপায়ে টাকা উপার্জনের জন্য। টসার বিল! কেনো লড়েছিল সেদিন? কেন পরাজয়ের পর ড্রেসিং রুমে বাচ্চা ছেলের মতো কেঁদেছিল!
৪.
শুরু থেকেই মানুষকে লড়াই করেই এগুতো হয়। এটাই প্রকৃতির এক দৃঢ় কঠিন নির্দেশনা। শুক্রানু থেকেই শুরু এই লড়াইয়ের। তারপর প্রতিটি পদক্ষেপে, সামনে এগুতে হলে তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। কেউ দীর্ঘ সময় লড়াইয়ে জয়ী হয়ে টিকে থাকে, কেউ হয়ত কিছুটা কম। কিন্তু একসময় এই লড়াইয়ে হারতেই হয়।
হেভী ওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা যদিও একটি খেলা, এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। কেউ হয়ত এক’শটি কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, কেউ হয়ত মাত্র বিশটি। এটি এক একজনের অন্তর্গত শারীরিক দক্ষতার উপর নির্ভর করে। টম অন্যদের তুলনায় একটু বেশি লড়েছে। অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ ও কঠিন লড়াইয়ে সে টিকে আছে। তার সমকালীন আর কেউই রিং-এ নেই। সে প্রবীণদের শেষ প্রহরী। সে তাদের সকলের শেষ হয়ে যাওয়া অবলোকন করেছে এবং কাউকে কাউকে সে নিজ হাতে ধ্বংস করেছে।
প্রতিষ্ঠিতদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে তাকে এবং একে একে সব প্রতিষ্ঠিতকে বিদায় করে দিয়েছে সে। প্রতিটি বিজয় এনে দিয়েছে ভরপুর আনন্দ, হাসির উপলক্ষ্য। টম তখন হাসছিল যখন বিল ডেসিংরুমে বসে কেঁদেছে।
৫.
এখন টম পুরানো প্রতিষ্ঠিত ফাইটার, নতুনদেরকে তার বিরুদ্ধে লড়েই এগুতে হবে। যেমন আজকের প্রতিদ্বন্ধী স্যান্ডেল। সে নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে এসেছে, ওখানে তার স্মরনীয় রেকর্ড রয়ে গেছে কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে সে নতুন, অপরিচিত। তাকে প্রতিষ্ঠিত টমের মুখামুখি হতে হবে। যদি স্যান্ডেল দক্ষতার পদর্শনী দেখাতে পারে, তার সামনে এসে যাবে আরো বড় ধরনের সুযোগ, আরো বৃহত্তর প্রদর্শনীর। এটা নির্ভর করছে তার উপর সে কতটা দক্ষ লড়াকু, তা প্রমাণের ওপর। সে ছিনিয়ে নিতে পারে অনেক কিছু, টাকা-সুনাম আর ক্যারিয়ার। টমও কাটিয়ে এসেছে এ সব পদক্ষেপ, এখন এই ফাইট হতে তার কিছু অর্থ হস্তক্ষেপ হওয়া ছাড়া কিছুই পাবার নেই। সে মানুষের নানা দেনা ও দোকান বাকি পারিশোধ করবে।
যেহেতু টম স্মৃতি রোমান্থন করছে যৌবনের, যৌবনের রূপরেখা দেখা দেয় তার মানসপটে। যৌবন, সম্মানিত যৌবন, উৎফুল্লতায় মাধুর্যমণ্ডিত, অজেয়, মসৃন মাংসপেশী, টসটসে ত্বক, প্রাণবন্ত ফুসফুস, ক্লান্তি এসে কাবু করতে পারে না, হৃদয়োত্থিত কান্না থমকে থমকে হানা দেবার অবসর পায় না স্রোতস্বীনি হাসির স্রোতের গতিময়তায়। হ্যা, যৌবন ধ্বংসপ্রবন, সে ধ্বংস করে পুরাতন জং ধরা স্থবিরতাকে। যদি তেমন না করতে পারে তবে সে ধ্বংস করে নিজেকে। যৌবন সর্বদাই উদ্যমী।
পৃথিবীটা যৌবনের, উদ্যমের আর বিজয়ের। যৌবন কখনো পুরানো হয় না, মানুষের বয়সটা কেবল ক্রমাগত পরিণতির দিকে ধাবমান।
যখন টম কিং মঞ্চে প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে যাচ্ছে, যুবকদের চিৎকার ধ্বনি শুনতে পায় সে। সে শুনতে পায় একজন আরেকজনকে বলছে,
-‘দেখো, দেখো, টম কিং। দ্যা, টম কিং!’
টম যখন তার ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করল, ক্লাবের সেক্রেটারী তাকে স্বাগত জানাল।
বলল,
-‘কেমন বোধ করছো, টম?’’
‘‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত আমি’’ টম বলল।
যদিও সে জানে সে সত্যটা বলছে না, বলছে না যে, এখন তার হাতে কিছু টাকা থাকলে সে কয়েক টুকরা ফ্রেস মাংস খেয়ে নিত।
৬.
ড্রেসিং রুম ছেড়ে টম কিং যখন মঞ্চে এসে দাড়াল তখন একটি হর্ষধ্বনি গমগম করতে লাগল সমস্ত গ্যালারী জুড়ে। প্রবেশ পথে কেউ কেউ হাত মিলাল। কিং লক্ষ্য করল যে, যারা তার সাথে হাত মিলাচ্ছে তার প্রায় সকলেই নবীন। টম কিং যখন প্রথম লড়াইয়ে নামে এবং জিতে যায় তখন এসব নবীনের অনেকে জন্মায়নি। মঞ্চে উঠে টম কিং ও প্রবীণ রেফারী, যিনি দশ বছর রিং-এ নেই, কিং- এর অনেক জানাশোনাও বটে, পরস্পর হাত মিলাল।
এরই মাঝে প্রবলতর গুঞ্জনধ্বনি, চিৎকার, হৈ চৈ-এর মাধ্যে দিয়ে আগমন ঘটল, টম কিং-এর আজকের প্রতিদ্বন্ধী স্যান্ডেলের। টসটসে ত্বক, দৃঢ় গাথুনি, চেহারায় একটি স্পষ্ট মায়াবী ভাব লক্ষ্য করল টম। টম কিং, নিজের প্রথম লড়াইয়ে ফিরে গেল স্মৃতিতে। মাত্র পাঁচ রাউন্ড টিকেছিল তার প্রতিদ্বন্ধী, নক আউট করে দিয়েছিল সে। তার দীর্ঘ লড়াইয়ের ময়দানে বহু প্রতিদ্বন্ধীকে নক-আউট করে দিয়েছে টম, তার হুকগুলো দুর্ধর্ষ, খুব কম ফাইটার তার প্রচন্ড আঘাতের পর উঠে দাড়াতে পারে।
ভাষ্যকারের নানা ধরনের উপস্থাপনার পর, ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠল। প্রথম দুই রাউন্ড পুরোটাই স্যান্ডেলের। টম কিং সমর্থকরা হতাশ হয়ে যাচ্ছে প্রথমেই কিন্তু টম কিং মোটেও নয়। সে প্রথম দুই রাউন্ড স্যান্ডেলকে লাফাতে দিয়েছে, যাতে শক্তির প্রাথমিক কিছুটা ক্ষয় হয়। টম কিং জানে শক্তিমত্তায় নবীনদের সাথে পেরে উঠা দুষ্কর কিন্তু অভিজ্ঞতা আর ব্রেনকে কাজে লাগাতে জানে টম কিং।
প্রথম দুই রাউন্ড শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে স্যান্ডেলকে লড়তে দিয়েছে। দর্শকের চিৎকার আর হৈ চৈ এ স্যান্ডেল উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে বার বার। তৃতীয় রাউন্ডে এসে টম কিং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল। সে প্রচন্ড আঘাতে স্যান্ডেলকে ধরাশায়ী করে ফেলে। দর্শকের মাঝে সাঝ সাঝ রব পড়ে গেল। একজন বাচ্চা ছেলে পিছলে পড়ে গিয়ে পর মূহুর্তেই দাঁড়িয়ে যেমন আবার দৌঁড়াতে থাকে, স্যান্ডেল তেমনি এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াল। তবে স্যান্ডেল সতর্ক হয়ে গেল, বুঝে গেল সে একজন কঠিন প্রতিদ্বন্ধীর মোকাবেলা করছে।
চতুর্থ রাউন্ডে এসে বোঝার কোন উপায় রইল না কে এগিয়ে রইল। টম অবশ্য বুঝতে পারছে যে সে কিছু পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ লড়াই চলল প্রায় সমানে সমানে। তরুণ আর বুদ্ধিদীপ্ত সফল লড়াকুর মধ্যে এই লড়াইয়ে সমস্ত গ্যালারী উল্লাসিত।
শেষ রাউন্ড স্যান্ডেল একটু বেশি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। টম কিং লক্ষ্য রাখল এবং কিছুটা সুযোগ করে দিল টমকে আঘাত করার জন্য। বেশ কয়েকটি আঘাতের পর স্যান্ডেল জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করল। একটু অমনোযোগী, একটু ঢিলামি পেয়ে বসল তাকে। টম এটার অপেক্ষায় ছিল। টম জানে প্রতিপক্ষ যদি অসতর্ক হয়ে ওঠে, তার হুকগুলোর আঘাতটা যদি সঠিক শক্তিতে পাঞ্চ করতে পারে, কারো সামর্থ্য নেই উঠে দাঁড়ানোর। জীবনে বহুবার টম পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ে তার এই হুকে নক-আউট করে দিয়েছে অনেক প্রতিপক্ষকে।
এই মুহূর্তে সমস্ত গ্যালারী স্তব্ধ হয়ে আছে যেন একটি নীরবতা এসে ভর করেছে। টমের কানে কোন শব্দ প্রবেশ করছে না। এই লড়াইয়ের শেষ দিকে টম এই প্রত্যাশা করছিল। স্যান্ডেলের অতিরিক্ত আত্ম-বিশ্বাস, সামান্য
অসতকর্তা। পর পর তিনটি আঘাত করল টম, সমস্ত শক্তি দিয়ে। তার অতীত অভিজ্ঞতা এই যে, কেউ উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এবার টম প্রকৃতস্থ হলো, এবার সমস্ত গ্যালারি পিন পতন নিস্তব্দতা। রেফারী গুনছে এক, দুই, তিন… দর্শকের একাংশ সমস্বরে উচ্চারন করছে এক, দুই, তিন, চার… জয় থেকে টম আর মাত্র কিছু সময় দূর… সাত, আট, নয়… আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড…
কিন্তু একমাত্র যৌবন উঠে দাঁড়াতে পারে। স্যান্ডেল, উঠে দাঁড়াল। স্তব্ধ টম, তার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে সবশেষ আক্রমন করেছে সে। কেউ, যারা তার পূর্বসূরী, যারা তার সম-সাময়িক কেউ উঠে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু নবীন উঠে দাঁড়ায়। তারুণ্য উঠে দাঁড়াল। স্যান্ডেল আরো তীব্র হয়ে উঠল, টম কিং জানে, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন তারুণ্য আরো দারুণ উদ্দীপিত হয়ে ওঠে, বরং যত বেশি প্রতিকূলতা এসে ভর করে তত বেশি উদ্দীপনা কাজ করতে থাকে। আর প্রবীনের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন তাকে বিদায় নিতে হয়।
পরবর্তী দুই রাউন্ড টম কিং একটি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সৈনিক যেন। কেবল নক আউট হতে বেঁচে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেল। যদিও সর্বশেষ রাউন্ডে টম কিং, দ্যা টম কিং আরো একটি আক্রমণ হানলো। আর স্যান্ডেল ছিটকে পড়ল, আছড়ে পরল মঞ্চে, কিন্তু উঠে দাঁড়াতে বেগ পেতে হয় নি স্যান্ডেলের।
৭.
খেলা শেষ। পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত টম সমস্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে তার জন্য নির্দিষ্ট আসনে হেলান দিয়ে বসে রইল। সকলেই ফলাফলের প্রতীক্ষায় অস্থির সময় কাটাচ্ছে। অবশেষে ভাষ্যকার মঞ্চে এলো। ভাষ্যকার বললেন-
‘প্রিয় দর্শক, যে লড়াই আজ আমরা দেখলাম, ইয়ং স্যান্ডেল আর দ্যা টম কিং-এর মাঝে, দীর্ঘ দিন এমন লড়াই দেখা যায়নি। আমার দৃষ্টিতে এ লড়াই এ মঞ্চে গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে শ্রেষ্ট। কিন্তু আমাকে ফলাফল ঘোষনা করতে হবে।’’
রেফারী দুইজন প্রতিদ্বন্ধীর দুই হাত ধরে আছে, আর প্রতীক্ষা করছে, যার নাম ঘোষনা হবে তার হাত উঁচিয়ে ধরবেন।
অবশেষে ভাষ্যকার ঘোষনা করলেন-
‘বিচারকের দৃষ্টিতে এবং বিচারে অতি সামান্য, একবারে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছে টম কিং।’
সমস্ত গ্যালারী আবারো থমকে গেল। ফলাফল ঘোষণার পর চেঁচামেচিতে গ্যালারী উল্লাসিত থাকে কিন্তু সকলেই থমকে গেল। স্যান্ডেল, এই মঞ্চে প্রথম লড়াই তার, হেরেও আনন্দিত। সে ভাষ্যকারের হাত হতে মাইক্রোফোন নিয়ে বলল-‘ বিচারকের দৃষ্টিতে আমি হেরেছি, তবু আমি আনন্দিত। কিন্তু এই লড়াইয়ে জয়ী টম কিং, দ্যা টম কিং, দ্যা… টম কিং বটে, কিন্তু আমিও কম জয়ী নই, এক অসাধারণ লড়াই লড়েছি। আশা করি আপনারা আমাকে মনে রাখবেন। এই মঞ্চ থেকেই টম কিং-কে চ্যালেঞ্জ দিয়ে রাখলাম, আগামী লড়াইয়ে আমি তাকে হারাবোই…’
৮.
সমস্ত গ্যালারী টম কিং-টম কিং চিৎকারে কেঁপে উঠল। স্যান্ডেল এসে টমকে জড়িয়ে ধরল। টম তার হাতে হাত মিলিয়ে বিদায় নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এলো। তার কানে স্যান্ডেলের শেষ বাক্যটি বার বার প্রতিধ্বনি তুলছে- আাগামী লড়াইয়ে আমি তাকে হারাবোই… টম বুঝে গেছে সময় একদিন তার ঘুরে দাঁড়ানো থমকে দিবে। সে মঞ্চ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। পিছন থেকে ভাষ্যকারে উচ্চারণ শুনা গেল, বলছেন,
-‘টম কিং, দ্যা টম কিং, আ গ্রেট ফাইটার, বয়সের বাধা পেরিয়ে কেবল দৃঢ় ইচ্ছা শক্তিতে যিনি সকলের হৃদয় জয় করে গেছেন। টম কিং, দ্যা টম কিং, আ গ্রেট ফাইটার।’
অনেকেই টমের সাথে কথা বলতে চাইল, একজন সাংবাদিক, ক্লাব সেক্রেটারীসহ আরো অনেকে। কিন্তু টম সোজা বেরিয়ে এলো ড্রেসিং রুম থেকে। হাঁটতে হাঁটতে নির্জন রুমটিতে এসে বসল । একটি অবিশ্রান্ত ক্লান্তি এসে ভর করল তার সমস্ত দেহ জুড়ে।
মঞ্চটা সব সময় কি আনন্দঘন! কিন্তু যারা মঞ্চায়িত করে এ আনন্দ দৃশ্যপট, তাদের মাঝে কত উত্থান আর পতন। শুধু থেকে যায় কিছু লড়াকু দৃশ্যায়নের ইতিহাস। যখন জয়ী হয় তখন কত সমাঝদার চারিদিকে কিন্তু যখন এই মঞ্চ হতে বিদায় নেয় একজন লড়াকু, টম তা ভালো করেই জানে, কী নিঃস্ব, একা!
মুখ ঢেকে ফেলল টম কিং, তার প্রিয়জনদের মুখ ভেসে উঠল, তার স্ত্রী, বহুদিনের আপন আর পরীক্ষিত বন্ধু, প্রাণপ্রিয় সন্তানদের। টম কিং, দ্যা টম কিং হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
(সমাপ্ত)
loading...
loading...
আরেক টি টম এণ্ড জেরী সিরিয়াল হতে পারে।
loading...
আপনাকে স্বাগতম সেই সিরিজে। বাচ্চা লোক তালিয়া বাজাও।
loading...
খাড়া লাইনের লিখায় সাধারণত চোখ ফসকায়। ক্লান্ত হয়। কিন্তু আগ্রহ থাকলে হয় না।
আপনার লিখা লড়াই এর প্রথম পর্ব পড়লাম বন্ধু। চোখ ওপেন থাকলো।
loading...
আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম যে আপনি চোখ খুলে রেখেছেন সেটা আবার কি রকম ব্যাপার!!
যাক পরে বুঝেছি আপনি কষ্ট করে গল্প পড়বেন। ধন্যবাদ।
loading...
সমাপ্ত পর্বের ছলে পুরো লিখাটাই পুনরায় পড়ার সুযোগ হলো স্যার।
loading...
দারুন আগ্রহ জাগানিয়া প্রথম পর্ব। সাথে থাকার আশা রাখছি।
loading...
এটা আমার অনেক আগে লেখা গল্প। এখানে যা পোষ্ট দিয়েছি তা অন্য জায়গা থেকে কপি করা যা খসড়া ছিল। শব্দনীড়ে ছিল ফাইনাল। গল্পটি একটি গল্প সংকলনের বইয়ে আছে। নতুন করে টাইপ করতে হবে পরের অংশটি।
আপনার আগ্রহ আমার নজর এড়িয়ে যায়নি। ধন্যবাদ।
loading...
পরের পর্বগুলো পড়ার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠলো।
loading...
ধন্যবাদ।
গল্পটি অনেক আগের লেখা। বাকি পর্বটি যে।কোন সময় পোষ্ট দিব। আপনি যদি পড়েন তবে আমার ভাল লাগবে।
loading...
হাতের উল্টোপিঠে দীর্ঘ ও ফুলে উঠা রগ ভেসে উঠেছে এবং হাতের আঙুলগুলো পুন:পুন আঘাতে শক্ত ও কদাকার হয়ে উঠেছে। সে কখনো ভাবার সময় পায়নি যে, ধমনীগুলোর জীবনই একজন মানুষের জীবন কিন্তু সে তার ফুলে ফুলে উঠা শিরাগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করল।
বাহ দারুন নিরিক্ষার,,,,,,,লড়াই,,,,,,,,,,,,এগিয়ে চলুক


loading...
ধন্যবাদ মান্নান ভাই আশা করি পরের পর্বে আপনাকে পাব।
loading...
কবিতার মত গল্পও চমৎকার লিখেন। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন প্রিয়।
loading...
দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে আমন্ত্রণ।
loading...
দারুণ বললেন।
সমৃদ্ধ উপস্থাপন।
মুগ্ধতা অপরিসীম।
loading...
ধন্যবাদ। আশা করছি গল্পটি পড়ছেন বা পড়বেন।
শুভ কামনা।
loading...
বেশ!
পড়লাম, অপেক্ষায় থাকলাম।
loading...
ধন্যবাদ!
loading...
বেশ ভালো লেগেছে গল্পটি
অনেক অনেক শুভকামনা ভাইয়া ☺️
loading...
আপনার প্রতিও শুভ কামনা রইল।
loading...
আপনার লেখা “লড়াই” পঅড়ে নিজের জীবনের কথা ভাবছি! সত্যি দারুণ উপস্থাপন করলেন।
শুভকামনা সবসময়।
loading...
ধন্যবাদ
loading...