১.
আলো সরল পথেই চলে। আর তাই আপনি ওয়ালে টর্চ মারলে ঐ ওয়ালেই পড়বে, জানালা দিয়ে ঘুরে ফিরে পাশের বাড়ির সুন্দরী জরিনার ওপর পড়বে না। এখন টর্চের আলোর সামনে একটা কার্ডবোর্ড রাখলে তার ছায়া ওয়ালে পড়বে। ছায়া অন্ধকার এবং আলোর এত ক্ষমতা নাই যে সে কার্ডবোর্ড ভেদ করে ওয়ালে আছড়া পড়বে। আলোহীনতার কারনে ছায়ার অংশটা অন্ধকার হবে। এটা সবাই জানে, এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নাই। এখন বাসার দুস্ট শিশুটি একটা সুই নিয়ে কার্ডবোর্ড ফুটো করে দিলো। তাহলে ওয়ালে দেখবেন ছায়ার মধ্যে একটা ফুটো পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে একটাই ফুটো পাবেন। কিন্তু শিশুটি ধারনাতিত দুস্ট হওয়ায় ঐ ফুটোর পাশে আরেকটা ফুটো করে দিলো। তো স্বভাবতই মনে হতে পারে ওয়ালে আপনি দুটো ফুটোই পাবেন।
কিন্তু না, তাকিয়ে দেখলেন অনেকগুলো ফুটো লাইন ধরে। মনে হতে পারে কোনো ম্যাজিক বা কিছু একটা ভুল বা ফুটো আরো কোথাও আছে। আপনি যেটা করলেন আরো কার্ড বোর্ড নিলেন এবং দুটো ফুটো করে বোর্ডে টর্চ মেরে দেখলেন ফোটার সংখ্যা টর্চের মাথা থেকে কার্ডবোর্ডের দূরত্বের সাথে বাড়ছে কমছে। এমনকি ফোটাগুলোর উজ্জলতাও। প্রশ্ন আসতে পারে আলো যদি এমন ঘুরায় ফেরায় যায় তাহলে ওয়াল ভেদ করে জরিনার কাছে যায় না কেন?
এরকম একটা পরীক্ষা, এমন সন্দেহ নিয়ে পদার্থবিদরাও চিন্তায় পড়েছিলেন এবং এখান থেকেই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ব্যাসিক ধারনা প্রতিষ্ঠা পায়। তারা এর সমাধান দেয় অনেকটা এভাবে: পুষ্কুরীনিতে আপনি যখন ঢিলটা মারলেন তখন তার চারপাশে গোলাকার ঢেউয়ের সৃষ্টি হইছে। এখন আপনি একটা কাজ করলেন ৮-১০ টা খুটি ফাকা ফাকা রেখে পুস্কুরিনীর তলদেশে পুতে একটা গোলাকার বৃত্তের সৃষ্টি করলেন এবং তার মধ্যে একটা ঢিল ছুড়লেন। একটু ভালো করে দেখেন এবার তার চারপাশের গোলাকার ঢেউ একটা প্যাটার্ন সৃষ্টি করছে। খুটি বরাবর সামনের দিকে কোনো উচু ঢেউ নেই কিন্তু দুটো খুটির মাঝখানে ফাকা বরাবর প্রথমে একটা, পরে সেটা থেকে দুটো এবং একটু পর চারটা এমন করে ছোট ছোট ঢেউয়ের সংখ্যা বাড়ছে। ঠিক এই জিনিসটাই আলোর সাথে হচ্ছে।
তার মানে আলো আসলে কনিকা নয়, এগুলো একেকটা ঢেউ। তাহলে আমরা যে অমুক কনিকা সমুক কনিকা পাওয়া গেছে বলি এটা কি ভুল? না, সেগুলো আমরা গননার সুবিধার্থে বলি। আর কনিকা হলেও যে পিং পং বলের মতো টু টু করে ফাল পাড়বে সেটা না। প্রতিটা ঢেউয়ের চূড়া একটা বিন্দু এবং বিন্দু গুলোর আচরন অনেকটা পিং পং বলের মতো। তাই বলে আপনি বলতে পারবেন না এটা শুধু ফাল পাড়তেছে। পিং পং বল যেমন ডানে বায়ে ঘুরে, সামনে এগোয়, বাউন্স করে এই পয়েন্টগুলোও সেরকম করে। এবং আপনি যখন তাদের বিন্দু মনে করে হিসাব করেন তাহলে তখন আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে একটা কনিকা নির্দিস্ট অনেক জায়গাতে থাকতে পারে।
আর এজন্যই শ্রোয়েডিঙ্গার তার তার বিড়ালের থট এক্সপ্যারিমেন্ট দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন কেন এটা একই সময় জীবিত ও মৃত!
এতুকু যদি বুঝতে পারেন, নিদেপক্ষে অনুধাবন করতে পারেন তাহলে আমার কথা শুনে রাখুন, আপনি এখন পুরো কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিজে বুঝে ক্লাস থ্রি এর একটা পিচকিকে সে বিষয়ে জ্ঞান দিতে পারবেন এরকম মজাদার এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে, দারুন তাই না?
২.
পঞ্চইন্দ্রিয়ের ব্যাখ্যাতীত সবকিছুই আমাদের কাছে অলৌকিক লাগে। একসময় মনে হতো বৃষ্টি পড়া সুর্য দেখা, পীরের দোয়ায় গর্ভবতী হওয়া বিশাল কেরামতি। যদিও মানুষজনের জ্ঞানবুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারে আসলে ঐ পীরটা ছিলো একটা লম্পট চরিত্রের।
পোস্ট শেষ। ভাবলাম হুদাই একটা জিনিস লেখে পোস্ট করি।
loading...
loading...
ভালোই হয়েছে।
loading...
পোস্ট দিয়ে ভালো করেছেন। আমাদেরও মন হালকা হলো।
শুভেচ্ছা মি. উদাসী স্বপ্ন। 
loading...