প্রথম প্রথম ল্যাব করতে গিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট পড়লো ইউরেনিয়াম, আর্মেসিয়াম সহ বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য। সারাজীবন শুধু ইউরেনিয়াম, এটমিক বোমার নামই শুনে গেছি কিন্তু কখনো ইউরেনিয়াম নিয়ে নাড়াচাড়া করবো সেটা ভাবিনি। এরপর আরেকটা পড়লো ঘরের কোনায় লুকিয়ে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য একটা সিস্টেম বানানো। তখন এটমেল এভিআর ৩২ এর চল ছিলো, বাজারে রাসবেরীর সিস্টেম সবে আসতে শুরু করেছে। এরপর আরেকটা এ্যাসাইনমেন্ট এলো যে রেডিয়েশন ব্লক করার সিস্টেম এবং তাদের কার্যকরীতা। লেড মানে প্লামবাম থেকে শুরু করে এলউমিনিয়াম গ্রাফাইট, মোটা পুরু কংক্রীটের স্লাব সবই ছিলো সেই বিকিরন টেস্টে। সে এক লম্বা তেজস্ক্রিয় টাইপের ইতিহাস। যদিও প্রফেসর সুপারভাইজার গন আমাদের আশ্বস্ত করতেন যে আসলে আমাদেরকে পিউর ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে নেয়া হবে না। এমন কিছু ধাতব পদার্থ যাদের ওপর ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয় বিকিরন ফেলা হয়েছে সেসব দিয়ে এই প্রজেক্ট গুলো করানো হবে।
সে যাকগে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কখনো যদি মেল্ট ডাউন বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবচে বিপদজ্জনক যে জিনিসটা হয় তেজস্ক্রিয়তার ছড়াছড়ি। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবাই যেটা জানি না কোরিয়ামের ভয়াবহতা। নিউক্লিয়ার রড যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চেইনরিএকশন ঘটে তাকে ঘিরে থাকা কন্ট্রোলড মডারেটর আর কিছু করতে পারে না। প্রচন্ড তাপে, এই মোটামুটি ২৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে (১০০ ডিগ্রিতে পানি বাস্পীভূত হয়, ইস্পাতের গলনাংক ১৫১০ ডিগ্রী), মডারেটর ধরে রাখতে পারে না। সেখানে প্রচন্ড তাপে ইউরেনিয়াম ফুয়েল রড গলতে শুরু করে এবং আশেপাশের সবকিছু গলিয়ে লাভাতে পরিনত করে। পানির সংস্পর্শে এসে বোরিক এসিড, ইন্ডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সিজিয়াম আয়োডাইড এবং পরে জিরকোনিয়াম ডাইঅক্সাইডের সৃষ্টি করে। পানির সংস্পর্শে প্রচুর বাস্পের সৃষ্টি করে এবং সেই বাস্পে এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে আর তখন শুরু হয় তুষার পাত। দুর্ঘটনাস্থল হতে ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরে জানালার শার্সিতে যে ধূলো লেগে আছে তাতে পাবেন তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ। সেই কোরিয়াম ঠান্ডা করতে সারা সোভিয়েত ইউনিয়নের যত বোরন ছিলো অথবা হিট এক্সচেন্জারের জন্য যত লিকুইড নাইট্রোজেনের মজুত সব এক অর্ডারে চেরনোবিলে জড়ো করা হয়েছিলো। সুইডেনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মিটারে আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ ধরা দিচ্ছিলো। তখনও সারা বিশ্ব জানতে পারে চেরনোবিলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে দুর্ঘটনা হয়েছে। সাদা তুলোর পেজার মতো পড়তে থাকা তুষারপাত মানুষ ভুল ভেবে যদি চোখে মুখে লাগায়, অথচ এটাই তেজস্ক্রিয়তা তখন কি কেউ ভেবে দেখেছে তার কি হবে?
সুন্দর একটা পয়েন্ট! তেজস্ক্রিয়তা আসলে ব্যাপারটা কি? মানুষ যখন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসে তখন আমাদের কংকালের হাড়ের ক্যালসিয়াম খুব দ্রুত তেজস্ক্রিয় বা আয়োনাইজড হয়ে যায় এবং সেগুলো বিকিরন করা শুরু করা। ফলে শরীরে রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন বা রেড সেলের অক্সিজেন স হজেই নস্ট হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ও হিলিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোষের ডিএনএ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মিউটেটেড হওয়া শুরু করলে হাড় থেকে মাংস গুলো খসে পড়ার যোগাড় হয়। বড় ভয়ংকর সে মৃত্যু। তবে আপনাকে সে পরিমান রেডিয়েশনের শিকার হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে বছরে আপনি বছরে সর্বমোট মাত্র ৩ রয়েন্টজেন্ট রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসতে পারেন। আপনি যদি নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টরীতে কাজ করেন তাহলে বছরে ৫ এর বেশী না। এখন আপনি যদি হেজমেট স্যুট পড়ে রিএক্টরের সামনে নাচানাচি করেন, তাহলে আপনার মৃত্যু হয়তো তার পরের দিন সকালে লিখিত হবে। চেরনোবিল রিএ্যাক্টরে যখন মেল্ট ডাউন হয় তখন দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে ১৫০০০ রয়েন্টজেন্ট এবং কেন্দ্রে প্রায় ১ মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট ছিলো।
এইচবিও চেরনোবিলের ওপর অসাধারন সিরিজ তৈরী করেছে। প্রথম দুটো এপিসোডে এমনও দৃশ্য আছে যখন রেডিয়েশনের মেঘ লোকালয়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে তখন তার নীচে ছোট ছোট শিশুরা পনিটেইল বেধে স্কুলে খেলা করছে। কিশোরীরা গরম থেকে রক্ষা পাবার জন্য আইসক্রীমে কামড় দিচ্ছে। উঠতি বয়সী যুবকেরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাস্কেটবল কোর্টে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক দৃশ্য ছিলো যখন রেডিয়েশনে আক্রান্ত সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন প্রিয় পোষা কুকুরটি সে গাড়ীর পিছে দৌড়াচ্ছে। কুকুরটির শরীরের অর্ধেক পশম নেই, রক্ত ঝরছে। তার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তার মালিকের গাড়ীর পিছু নিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, সরকার পক্ষ নিজেদের এহেন ব্যার্থতাকে ঢেকে রাখবার জন্য যে অসুস্থ অস্বীকার ও ঘটনা ধামাচাপা দেবার প্রবনতা সেটা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। যেসব কয়লা শ্রমিকদের রিএ্যাক্টরের নীচে থাকা পানি সরানোর জন্য পাম্প ও হিট এক্সচেন্জার বসানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়, তাদের ছিলো না কোনো হেজমেট। ওপরে ইউরেনিয়াম অক্সাইডের কোর গলছে, মিলিয়ন মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট পরিমান তেজস্ক্রিয়তা নির্গমন হচ্ছে আর নীচ দিয়ে পুরো উলঙ্গ অবস্থায় সূড়ঙ্গ গড়ছে। যদিও জানে না এই আত্মঘাতী কাজের জন্য তাদের কোনো ক্ষতিপূরন দেয়া হবে কিনা কিন্তু তারা এটা করছে এই গলিত কোরিয়াম যদি পানির সাথে গিয়ে থার্মোনিউক্লিয়ার ব্লাসট ঘটায় অথবা পার্শ্ববর্তী নদীর পানিতে মেশে তাহলে ৫০ লক্ষ মানুষের খাবারের সুপেয় জলের উৎস বহু বছরের জন্য তেজস্ক্রিয় হয়ে থাকবে।
সমালোচনা করা যায় গর্বাচেভের আদলে যিনি অভিনয় করছেন। ছোটবেলায় গর্ভাচেভের ভারী কিউট পার্সোনালিটির সাথে এ চরিত্রটা তেমন যায় না। কিন্তু তাতে এক অথর্ব দুর্নীতিগ্রস্থ ও অযোগ্য সরকারের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে এতটুকু কার্পন্য নেই কারো অভিনয়ে বা শুদ্ধ বয়ানে।
কি যেনো মসৃন কালো পাথরের মতো ছিলো! বেশ উৎসাহভরেই দমকল কর্মী সেটা হাতে নিলো। পাশের সহকর্মী বলে উঠলো,”ওটা গ্রাফাইট, ফেলে দে!” একটু সন্দেহ দেখা দিলো, হাত থেকে ফেলে দিলো,”কংক্রিটও হতে পারে!” কিন্তু তার মিনিট কয়েকের মধ্যে তার হাত ঝলসে গেলো। আসলে ওটা গ্রাফাইট ছিলো, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে তেজস্ক্রিয়তম পদার্থটি সে হাতে নিয়ে নিজের ওপর পৈশাচিক মৃত্যুকেই যেনো ডেকে এনেছিলো। রক্তাক্ত, কষ্টকর, যন্ত্রনাকাতর মৃত্যুর চাইতেও ভয়াবহ ছিলো এক অথর্ব স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের চরম ব্যার্থতার রূঢ় শিকার!
আমরাও কিছু দিন পর নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি। চেরনোবিলের আরবিএমকে নিউক্লিয়ার রিএক্টর থেকে হাজার গুন নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ও যুগোপোগী এই রিএ্যাক্টর। যদি দক্ষ হাতে চালানো যায়, আমাদের আর পিছে ফিরে তাকাতে হবে। ভুল হলেও এরকম ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই। তারপরও আমাদের হয়তো তখন একটা করে আয়োডিন ট্যাবলেটের কৌটা সাথে করে ঘুরতে হবে। তার আগে এই সিরিজটা একটা ভালো শিক্ষা হতে পারে।
অবশ্য আমরা মনে সান্তনা পাবার জন্য ফুকুশিমা দুর্ঘটনার দিকে তাকাতে পারি যেখানে তেজস্ক্রীয়তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে আনা গেছে যদিও দুর্ঘটনাস্থলে এখনো ভয়াব হ মাত্রা তেজস্ক্রিয়তা বিদ্যমান। সেই পুরো প্লান্ট স্ক্রাপ করার জন্য ৪০ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যের শুধু প্লান করার জন্য হাতে ৫ বছর রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ৮ বছর পর রোবট দিয়ে এখন ধারনা পাওয়া যাচ্ছে চেরনোবিলের ফুকুশিমার রিএ্যাক্টর পুরোপুরি ধ্বসে যায়নি এবং কোরিয়াম এখনো রিএ্যাক্টরের ওপরের দিকেই আছে। পুরোপুরি রোবট নিয়ন্ত্রিত উদ্বার কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে তবে সেই টেকনোলজি এখনো কারো হাতে আসেনি। তাই বলে গবেষনা থেমে নেই। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্প রিখটার স্কেলের ৬-৭ ঠেকাবার জন্য সিভিল ইন্জিনিয়াররা পন্থা বের করতে পারলেও ৮ এর ওপর বা ৯ হলে তার কোনো পন্থা কারো জানা নেই। হতে পারে প্রকৃতির একটা ধাক্কা তাই বলে এটা আশীর্বাদ ধরা যায় এ জন্য যে এর ফলে টেকনোলজিক্যাল যে উন্নয়ন ঘটবে তা কাজে লাগানো যাবে গ্রহান্তরী অভিযান বা আরো বড় কোনো কাজে।
বিজ্ঞান আসলেই উত্তর দেয়, বলা হয়নি যে সবকিছু স হজে মিলবে। প্রকৃতির গুপ্তধন আরাধ্য বলেই মানুষের এগিয়ে যাওয়া।
loading...
loading...
রায়ায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, চেরনোবিল আর ফুকুশিমা দুর্ঘটনা জেনেছি। পড়লাম ঠিকই তবে তেমন ভাল বুঝিনি। কোন টিভি সিরিয়ালের গল্প বললেন কি না।
তারপরও ধন্যবাদ উদাসী দা।
loading...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। একটা উদাহরন দেই। ছোটবেলায় নতুন বছর আমাদেরকে বই ধরিয়ে দিতো, সাথে থাকতো সিলেবাস। নতুন বইয়ের মিস্টি গন্ধ আর বাবার করে দেয়া চোষ কাগজের মলাটে বাঁধা বইগুলো টেবিলে সুন্দর সাজিয়ে রাখতাম। একসময় মনে হলো আমাদের সব বই দেয়া হয়েছে, সাথে গাইড বই। এসব বই যদি নিজেরাই পড়ে নেই তাহলে স্কুলের কি দরকার? তখন বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দেখে এর উত্তর পাই সেটা হলো যারা ভালো ফলাফল পেতো তারা নিয়মিত ক্লাস এবং হোমওয়ার্ক করতো।
চেরনোবিলের ব্যাপারটা আমরা কমবেশী জানি। কিন্তু সেটা জানার জন্যই। সুন্দরবনের কাছাকাছি যেখানে কিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানো হলো তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীর ৮০ শতাংশ শুধু সরকারের বিরোধীতার জন্যই আর তা যদি নাই হতো এখন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবার পথে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে টু শব্দ করছে না। অথচ বাসে খুলনার টিকেট কেটে সরেজমিনে দেখে যেসব ক্ষতি হচ্ছে সুন্দরবনের এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবার আগে সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তার যে কিছুই মানছে না সেটা নিয়ে আরো বেশী লেখালেখি করা যেতো। আমরা আদতে তা করছি না কারন আমরা এর ভয়াবহতা শুধু পড়ে জেনেছি। চাক্ষুষ এর ভয়াবহতা দেখলে নিশ্চয়ই শিউরে উঠতাম। শুধু সুন্দরবনের জন্যই এই প্রতিবাদ নয়, আমার সন্তান,দেশ, আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা সবকিছু মিলিয়ে আমাদেরকে সোচ্চার হতে বাধ্য করতোই। কিন্তু আমরা চাক্ষুষ দেখিনি বলে বিশ্বাস করিনি।
এইচবিও তার এই সিরিজের মাধ্যমে সেটা কিছুটা অনুধাবন করার সুযোগ করে দিয়েছে যদিও মূল ভয়াবহ ও টেকনিকাল খুঁটিনাটির ১ শতাংশও এতে ফুটে ওঠেনি। শুধু াত্র ঘরের কোনায় লুকিয়ে থাকা তেজস্ক্রিয়তা এবং তার বিরুপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও গোড়া কয়েক জার্নাল লেখা হয়ে যাবে। বাকি অংশ গুলো তো পড়েই আছে। এলিফ্যান্ট ফুট নিয়ে তো কিছু লেখার সুযোগই পেলাম না, অথবা ইস্পাতের রড গুলো যে মোমের মতো গলে যাবে সেটার সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে না পেরেও বেশ আফসোস লাগছে।
হতে পারে আমি ভালো লেখিয়ে নই, এত বিস্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে সুন্দর ও বোধগম্য করে উপস্থাপন না করার ব্যার্থতা আমার একান্ত নিজের।
আমি চেয়েছিলাম লোকে আগ্রহী হোক, জানুক, প্রশ্ন করুক, সবার মাঝে ছড়িয়ে যাক। একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নিরাপদ করার দায়িত্ব শুধু একজন নিউক্লিয়ার ফিজিশিস্ট বা সরকার বা তদসংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদেরই নয়, এটা সবার। একে নিরাপদ এবং নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিজের ওপরই।
ভালো থাকবেন।
loading...
অসীম ধৈর্য্য নিয়ে আমার জন্য প্রতি-মন্তব্য সাজিয়েছেন দেখে যারপরনাই খুশি হলাম দাদা। প্রত্যেকটি মন্তব্য পড়লাম। এখন একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে গেছি। আমি জেনে নেবো। কবিতায় জর্জরিত শব্দনীড়কে সময় দেবেন আশা করবো। ধন্যবাদ।
loading...
সবার দ্বারা যেমন সবকিছু হয় না, আমার দ্বারা তাই কবিতা হয় না। মনের ভাবকে কথার ছন্দে, শব্দের মালাতে গাঁথার মত সৃষ্টিশীল মন ও মেধা কোনোটাই নাই। শিল্প হয় না বলেই শিল্পের ভোত্তা হয়েও একটা আফসোস মনের মধ্যে সবসময় কাজ করে।
কবিতা লেখার মতো সৃষ্টিশীল যোগ্যতা যারা লালন করেন তাদের পোস্টের ভীড়ে আমার এসব ছাইপাঁশ বড্ড বেমানান।
ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য
loading...
চেরনোবিল বিপর্যয় নিয়ে তৈরি সিরিজটির বিস্তর প্রশংসা নিয়ে একটি নিবন্ধ পড়েছি দুদিন আগে। টেকনিকেল বিষয় গুলোন না বুঝলেও ভালো রিভিউ হয়েছে এটা বুঝতে পারলাম।
loading...
টেকিনিক্যাল বিষয়গুলোর ব্যাপকতা এত বিশাল, জটিল অবশ্যই বলবো না, এগুলো নিয়ে কয়েকটা বই লেখা যায় দিব্যি। জটিলতা এজন্যই যে আমি খুব কম বইতেই দেখেছি এগুলোকে সহজ ভাষায় লিখতে। নিজের মধ্যে জটিলতা হয়তো এ কারনেই বাসা বেঁধেছি তাই যখনি লিখতে বসি তখনই সে জটিলতা গুলো প্রতিটা শব্দের ভাজে ভাজে উকি দেয়। পাঠক বারংবার হয় আশাহত। অবশ্য সহজভাবে বিশাল লেখা দেয়া সময়ের ব্যাপার, তার চে বড় কথা এখন কেউ এসবে আগ্রহী হন না। সিয়াম সাধনার মাসে যদি ইতিকাফ করার বিবিধ উপায় এবং সহী উপায়ে চিল্লা লাগানোর তরিকা নিয়ে পোস্ট দিলে সেখানে বিস্তর ভীড় জমতো, বাহবা বা প্রশংসার বন্যা বইতো। তার চে বড় কথা মানুষ সেটা জানতে আগ্রহী হতো।
দেশের মানুষের সাথে কথা বললে মনে হয় বিজ্ঞান ব্যাপারটা হচ্ছে একটা নাপাকী জ্ঞান। অথচ আমরা যে নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, প্রতিটা ক্লাসের প্রথম ১০ জনকে ক্যামিস্ট্রি ফিজিক্স আর ম্যাথের ওপর স্পেশাল ক্লাস নেয়া উচিত এবং প্রতিটা স্কুল পাশ ছেলেকে এই প্রশ্ন দিয়ে তাদের বিশেষ শিক্ষা শুরু করা উচিত:
হঠাৎ করে নিউক্লিয়ার ফল আউট হলে কি করা উচিত?
১) যতদ্রুত পারো পালাও ওখান থেকে
২) নিজেকে ভালোমতো ঢেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাও
৩) কংক্রিট দিয়ে বানানো ঘরে গিয়ে দরজা জানালা সব বন্ধ করে দাও।
(সঠিক উত্তর ৩ নম্বর)
এই সিরিজটা দেখলে আসলেই অনেক কিছু সুন্দর ক্লিয়ার হবে। যদি তিন নম্বর এপিসোড চলছে। বাকি গুলো দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। আশা করি রাজশাহী রংপুর বিভাগের সবাইকে এটা বিনামূল্যে দেখানো উচিত
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
loading...
একমত। ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে যে প্রকল্প সমূহ বর্তমান নির্মাণাধীন রয়েছে, এখানে ব্যবহৃত অংশের বর্জ্য কিভাবে ডেস্ট্রয় করা হবে কে জানে। সব জায়গায় আলো আঁধারী খেলা। সৃষ্টিকর্তা না করুন কোন দূর্ঘটনা ঘটলে এর মাশুল দিতে হবে ভয়াবহ। সতর্কতা জরুরী।
loading...
এ চুক্তি যখন করা হয় তখন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান শর্তই ছিলো বর্জ্য ফেরত নিতে হবে। রাশিয়া প্রথমে এ নিয়ে আগ্রহ না দেখালেও পরে নাকি সেরকম একটা চুক্তি হয়েছে এবং শুনেছি তা নাকি নৌপথে ও স্থলপথে নেয়া হবে। বিস্তারিত কিছু জানি না এছাড়া আরো অনেক প্রশ্ন আসে সেটা ১৮ মাসের সাইকেল পূর্ন হবার সময় যেসব বর্জ্য এবং তার পর সে বর্জ্য গুলো কতদিন পর স্থানান্তর করা শুরু হবে? আপনি সাথে সাথেই ওগুলো নিয়ে যেতে পারবেন না। জিনিসটা ধোঁয়াশার তাছাড়া এগুলো যে পথেই নিক এর নিরাপত্তার কি ব্যাবস্থা? অনেক জঙ্গি সংগঠন বা শত্রুদের এর ওপর লোভ আছে।
সবচে ভালো হতো বাংলাদেশ আনবিক কমিশনকে যদি শক্তিশালী করা যেতো। কিন্তু যেখানে ফ্রড শমশেরের মতো কোরানবিজ্ঞানী বা ডাক্তার আনবিক কমিশনের প্রধান করা হয় তার ওপর খুব বেশী আশা করা যায় না। চট্টগ্রাম ইউনিতে একটা রিএ্যাক্টর প্রোটোটাইপ আছে। কিন্তু সেখানে এখন বোধ হয় সাপ খোঁপ বাসা বেধেছে।
এরকম আত্মঘাতী কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াটাই দুস্কর।
loading...
রহস্যময় দিক কিন্তু আরও একটি রয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ হয়েছে প্রকল্পে অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের প্রেসক্রিপশনে। ওয়েল ডান রাশিয়া।
loading...
পরামর্শকের চাইতে সবচে বেশী দরকার টেকনিকাল অডিট ও তার পুংখানুপুংখ সুপারভিশন যাতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ না ঘটে। কিছুদিন আগে দুদক এক দেশী প্রকৌশলীকে পাকড়াও করেছে যিনি কিনা রুপপূরের হাউজিং প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে। এখন রিএ্যাক্টরের অবকাঠামোতে কংক্রিটের পর যে লীড বা ইস্পাতের দেয়াল বা আবরন থাকে পুরু সেখানে যদি বাঁশ ব্যাবহার করে তাহলেই সর্বনাশ।
এখন এগুলো কে দেখছে কি করছে কে জানে…
loading...
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কখনো যদি মেল্ট ডাউন বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবচে বিপদজ্জনক যে জিনিসটা হয় তেজস্ক্রিয়তার ছড়াছড়ি। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবাই যেটা জানি না কোরিয়ামের ভয়াবহতা।
এইচবিওতে দেখার ইচ্ছে জাগলো। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
loading...
আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে ভুলবেন না
অপেক্ষায় রইলাম
loading...
ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি নিগম পরিচালিত আনুমানিক সাত জায়গাতে প্রায় ২১টি পারমাণবিক চুল্লী আছে। এর বেশীর ভাগ সোভিয়েত রাশার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতা। এখানেও ব্যবহৃত হয় ভয়ংকর সব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ঐসব প্রতিষ্টানের সাথে কি কি চুক্তি করেছে জানিনা। তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা পরিবেশ এবং ক্ষতির বিষয়টি বেশী করে মাথায় রেখেছে। সেফটি ফার্ষ্ট। এইচবিওর সিরিয়ালটি আমি দেখেছি। কার দোষে অমন বিভীষিকাময় ধ্বংস ঘটেছিলো, অবহেলা না স্যাবটাজ সেগুলো আপাতত ভুলে আমাদের আশেপাশের দেশে এমন দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
loading...
পারমানবিক গবেষনায় ভারত অনেক এগিয়ে এবং জিরকোনিয়াম দিয়ে রিএযাক্টর বানানোর প্রক্রিয়াতে তারা বেশ সফলতা পেয়েছে। হয়তো সে কারনেই ভারতের সাথে চুক্তি হয়েছে এবং আমার মনে হয় ভারতের যে টেকনিকাল জ্ঞান সেটা আমাদের জন্য শাপেবর। রাশিয়া এবং ভারতের সম্মিলিত সহযোগিতা কিছুটা হলেও বেশ ভালো সাহায্য করবে এবং এটাই আমাদের জন্য সর্বোতকৃস্ট অপশন
loading...
বিষয়টি জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠলাম।
loading...
জানার কোনো শেষ নেই
জামার চেস্টা বৃথা তাই
হা হা হা
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
loading...
ধন্যবাদ ভাই।
loading...
চেরনোবিল: এইচবিও টিভি সিরিজ এর রিভিউ পড়লাম। স্বতন্ত্র উপহার।
loading...
আপনাকেও ধন্যবাদ। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভুলবেন না
loading...
youtu.be/s9APLXM9Ei8
ট্রেইলার দেখে আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। ইংরেজীতে একটু কাঁচা বলে সবটা বুঝিনি কি বলছে, তবে আপনার রিভিউ এর কল্যাণে সহজ লেগেছে। ধন্যবাদ স্যার।
loading...
দেখা শুরু করতে পারেন উইকেন্ডে। গোর সীন গুলো বাদে আবেগ অনুভুতি খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছে। সাবটাইটেলও পাবেন আশা করি
loading...
দেখবো নিশ্চয়ই। আপনার পোস্ট পুনরায় পড়লাম। অসাধারণ।
loading...
হেলিকপ্টার দিয়ে বোরন ঢালা হচ্ছে যাতে আগুনটা কমে। কিন্তু রেডিয়েশনের বোমবার্ডম্যান্ট এত তীব্র ছিলো যে ইএমই সহ ধাতব দন্ড পর্যন্ত ক্ষয় হয়ে যায়। কতটা তীব্র… এই একটা দৃশ্যই যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছে
loading...
রূপপুরের জন্য চেরনোবিল দুর্ঘটনার বার্তা।
– মওদুদ রহমান। প্রকৌশলী, গবেষক। প্রথম আলো। ২৬ এপ্রিল ২০১৮
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটে। তার দুই যুগেরও বেশি আগে মানুষ পৌঁছে গিয়েছিল মহাশূন্যে। বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে এভাবেই পৃথিবী এগিয়েছে, এগিয়ে যাবে। কিন্তু বিজ্ঞান যখন চর্চার বদলে বদ্ধ বিশ্বাসে পরিণত হয়, তখনই ঘটে যত বিপদ। সত্তর আর আশির দশকে বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের অহমিকায় অন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) কেউই এই বিপদ থেকে রেহাই পায়নি।
১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক দুর্ঘটনার মাধ্যমে বেজেছিল সাবধান হয়ে যাওয়ার ঘণ্টা। কিন্তু সে সময়ে নীতিনির্ধারকেরা তা কানে তোলেননি। যার মূল্য গুনতে হয়েছে ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইউক্রেনে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনার মাধ্যমে। ৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও চেরনোবিল শহর এখনো বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত। বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম আর ক্যানসারে মৃত্যু এখনো সেখানে নিয়মিত ঘটনা। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়া রাশিয়া, বেলারুশ আর ইউক্রেনের কয়েক লাখ হেক্টর জমি আজও ফলনের জন্য অনুপযুক্ত।
ক্ষুদ্র পরমাণুর ভাঙনে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়ার স্বপ্নের সৌধ এতটাই উঁচুতে পৌঁছে ছিল যে গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে এই বিদ্যুৎকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে সস্তা বিদ্যুৎ হিসেবে প্রচার করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সস্তা বিদ্যুতের কাল আর আসেনি। দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার আশ্বাস দিয়ে দেশে দেশে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণের খরচ জোগানো হয়েছে। প্রযুক্তিকে দোহাই মেনে এটিকে নিরাপদ বিদ্যুৎ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনায় নিরাপদ আর সস্তা হিসেবে জাহির করা পারমাণবিক বিদ্যুতের বিজ্ঞাপনী মুখোশ খসে পড়েছে।
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ স্তিমিত হয়ে পড়ে। আর ২০১১ সালে জাপানে ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর জার্মানি ২০২২ সালের মধ্যেই চালু থাকা সব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মজুতের মালিক অস্ট্রেলিয়া কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার নীতি গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত খরচ আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ দেশগুলো যখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকে বিদায় জানাচ্ছে, তখন ঠিক কী কারণে বাংলাদেশ রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করল, তা পরিষ্কার নয়।
রূপপুর প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই নির্মাণ ব্যয় ৩২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে (ডব্লিউএনআইএসআর, ২০১৭)। লাগামছাড়া খরচ আর নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতায় শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ জানে না। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইএইএর গাইডলাইন অনুসারে রূপপুর প্রকল্পের আশপাশের ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বসবাসরত সবাইকে যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আলোচনা পর্যন্ত করা হচ্ছে না। পরিবেশ সমীক্ষার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টটি কী কারণে এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হলো না, তা কেউ জানে না। জনসংযোগ এখন পর্যন্ত কেবল বিজ্ঞাপন প্রচারেই সীমাবদ্ধ। রূপপুর প্রকল্প নিয়ে আলোচনাহীন পরিবেশে নীতিনির্ধারণী মহলের নীতি এখন ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার’। রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তার ব্যাপারে যদি এতটাই নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে ঠিক কী কারণে ভবিষ্যৎ যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়মুক্তি দিয়ে আইন পাস করে রাখা হয়েছে, সেটাও একটা জরুরি প্রশ্ন।
কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনেই পারমাণবিক বিদ্যুতের খরচের চক্র শেষ হয় না; বরং এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় যে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয়, সেটাও অনন্তকাল ধরে নিরাপদে রাখার আয়োজন করতে হয়। বলা হচ্ছে, রাশিয়া নাকি এই বর্জ্য ফেরত নেবে। অথচ রাশিয়ার আইন অনুসারে অন্য দেশের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সেখানে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ অসম্ভব। (world-nuclear.org)।
প্রযুক্তির আধুনিকায়নে অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদনি ব্যবস্থায় খরচ কমে। যেমন ২০১০ সালের তুলনায় প্রতি ইউনিট সৌর বিদ্যুতের দাম সাত বছরের ব্যবধানে কমে গেছে শতকরা ৭২ ভাগ (আইআরইএনএ, ২০১৮)। অথচ পারমাণবিক বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা যুক্ত হতে থাকায় খরচ কেবলই বাড়ে। এ কারণেই ২০০৭ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফ্রান্সের ফ্লামেনভিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ খরচ ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ক্রমাগত বাড়তে থাকা খরচের চাপে পিষ্ট হয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী কোম্পানি জাপানের তোশিবা আর ফ্রান্সের আরিভা উভয়েই ২০১৭ সালে দেউলিয়াত্বের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে।
বিজ্ঞানকে বিশ্বাসে পরিণত করে প্রযুক্তির ঘাড়ে পা রেখে পারমাণবিক বিদ্যুৎকে সস্তা আর নিরাপদ হিসেবে প্রমাণ করতে চাওয়া নীতিনির্ধারকেরা বারবার ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছেন । মিথ্যা আশ্বাস আর ভ্রান্ত প্রচারণায় হিসাবের খাতায় ক্ষতির পরিমাণ কেবলই বেড়েছে। কাজেই চেরনোবিলসহ প্রতিটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা সবার জন্য সতর্কবার্তা। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সে বার্তা পাঠ করা খুব জরুরি।
loading...
আসলে থ্রি মাইলের ব্যাপারটা ভুল ভাবে এই দেশে সবাই ব্যাখ্যা করে। থ্রি মাইলের ঘটনায় এক্সস্ট ভালভ খুলে যাওয়া পানি প্রেসারাইজড পাইপে ঢুকে স্টিমের মিক্সচারের সৃস্টি করে। কিন্তু প্রকৌশলীরা যখন মিটারে দেখছে টাংকির পানি সীমার মধ্যেই আছে তাই তারা কারেন্টের মিটারের লম্ফনটা মিসইনটারপ্রেট করে। পরে যখন বুঝতে পারে তখন পুরা প্রেসার পাইপের পাম্প বন্ধ করে দেয় এবং হিতে বিপরীত হয়। আর রিএ্যাক্টর বন্ধ করে দেবার পরও যে ফিসাইল এলিমেন্ট থাকে চার এনার্জী দিয়ে আরও ৭০ মেগাওয়াট তড়িত উৎপন্ন করা যায়। যেহেতু প্রেসারাইজড রিএ্যাক্টর সেহেতু বন্ধ করে দেখায় হাই প্রেসারাইজড স্টিম কুলেন্টের অভাবে মেল্ট ডাউন ঘটে এবং এর পুরোটার জন্য দায়ী ছিলো ইভেন্ট বেজড প্রটোকল সিস্টেম যেটা ৮০ এর দশকের শেষ বা ৯০ এর গোড়ার দিকেই বিলুপ্ত।
চেরনোবিলে যেটা হয়েছে সেটা হলো প্রজেক্টের দুর্নীতি এবং অনভিজ্ঞ অপারেটর। কিন্তু অপারেটর বা প্রকৌশলীরা যা করেছেন সব কিছু প্রোটোকল মেনেই কিন্তু ডিজাইন অনুযায়ী রিএ্যাক্টর বানানোতে দুর্নীতির কারনে ইমার্জেন্সি শাটডাউন প্রটোকল ও কুলেন্ট সেভাবে কাজ করে নি। টেস্ট ফেজেই ধরা খেয়ে যায়।
আপনার লেখা অনুযায়ী প্রযুক্তিকে আসামী বানানো বোকামী বৈ কিছু নয় কারন এসব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যই বিশ্বের প্রথিতযশা ইউনি এর পরপরই নিজেরা রিএ্যাক্চর নির্মান করে সেফটি টেস্ট করে। এর ফলে সারা বিশ্বে এত গুলো কিএ্যাক্টর থাকার পরও কালেভদ্রে দুর্ঘটনা ঘটে। আর যেভাবে নিউক্লিয়ার পাওয়া প্লান্টকে সবাই ব্লাক গোলের মতো সর্বগ্রাসী প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এটা দেখলে হাসি পায়। বরংচ কয়লা বা পানি বিদ্যুৎ থেকে হাজার গুন নিরাপদ ও লাগসই বর্তমান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি। কিন্তু এর জন্য প্রচুর শিক্ষিত লোকবল দরকার। এখন শিক্ষার অভাবের দায় হলো একটা জাতীর একান্তই নিজস্ব বদনাম, বিজ্ঞানের নয়
এটা বুঝতে হবে। অজ্ঞতাকে এজন্যই অনেকে অপরাধ মনে করেন
loading...
খুবই মনযোগ দিয়ে আপনার রিভিউ আর মন্তব্য গুলো পড়লাম। জানলাম।
loading...
ধন্যবাদ পড়বার জন্য। আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু কলেবরে বিশাল হয়ে গেলে তখন নিজের কাছেই বড্ড বেমানান লাগবে
loading...
আগে এবিষে তেমন একটা ধারনা ছিল না। আপনার লেখা পোস্ট পড়ে অনেককিছু জানা হলো। এখন কথা হচ্ছে এসব নিয়ে সরকার কি তেমন কিছু ভাবছে?
loading...
কয়েকদিন আগে সাবেক বিজ্ঞান মন্ত্রী মঈনুদ্দিনের সাক্ষাত্কার পড়লাম। সাম্প্রতিক র্যাংকিং এ ঢাকা ইউনির অবস্থান না থাকা নিয়ে অনেক কথা বললেন, শিক্ষকদের ব্যাস্ততা, গবেষনা কাজে সময় দিতে না পারা এবং সিলেবাসের গতানুগতিক ধারা নিয়ে কথা বললেন। সাক্ষাতকারটা পড়তে পড়তে মনে হলো এখন যেসব গবেষনা হচ্ছে ইউনিভার্সিটি লেভেলে তার ১% গবেষনাও হয়নি তার আমলে এবং এ নিয়ে তারা কি করেছেন। এ কথাটা মনে আসতেই তিনি আরও বললেন গবেষনার জন্য টাকা দেয়া হলেও আমাদের দেশের শিক্ষক ও ছাত্ররা তা সম্পন্ন করতে পারেন না, তারা অক্ষম। এটা শুনে মেজাজ এতটাই বিগড়ে গিয়েছিলো টেবিলে একটা ঘুষি মেরে হাতের কব্জি মচকে ফেলি।
উনি একজন পিএইচডিধারী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে ওনার মতো যোগ্য ব্যাক্তি এখনো কোনো বাংলাদেশ সরকার দায়িত্ব দেননি ফখরুদ্দিনের আমল ছাড়া। তার হয়তো জানার কথা পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর সারা বিশ্বে যতগুলো প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয় তার মাত্র ২৮ শতাংশ সফলতার মুখ দেখে। আর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বুয়েট ডিইউ এর ছেলে পেলে এত সুন্দর সুন্দর প্রজেক্ট করেছে যেগুলো পুরস্কারের দাবী রাখে।
হয়তো এ কারনেই বর্তমান সরকার সে ধারাটা ধরে রাখার চেস্টা করছেন যদিও প্রচেস্টা অপ্রতুল। তার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের সময় পাঠ্যপুস্তক গুলোতে জঙ্গি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া এবং ভুল বৈজ্ঞানিক তথ্য (যেমন ক্লাস নাইনের বইতে নাকি লেখা আছে বিবর্তন অনুযায়ী মানুষ এসেছে বানর থেকে ইত্যাদি) সম্বলিত করে পুরো ১০ টি প্রজন্ম পঙ্গু করে দিয়েছে। সেদিন একটা ব্লগে একজন দক্ষ প্রোগ্রামার কিছু গানিতিক সমস্যা ব্লগে তুলে দিয়ে বললেন এগুলো নাকি তার কাছে ধাঁধার মতো। আমি পড়ে দেখলাম ২০০২ বা ২০০৩ এর দিকে জাফর ইকবাল, কায়কোবাদ স্কুলে গনিত অলিম্পিয়াড চালু করেন তখন এসব প্রশ্ন দিতেন। যেহেতু স্কুল গনিত অলিম্পিয়াড সেহেতু আমরা ভার্সিটি পাশ করে সেটাতে অংশগ্রহন করার অনুমতি ছিলো না কিন্তু সেগুলো আসলেই শিশুতোষ। এটা একটা সামান্য উদাহরন মাত্র।
হয়তো এ কারনেই সরকার বিভিন্ন দিক চিন্তা করে পুরো প্রজেক্ট বিদেশীদের সহায়তায় করতে চাচ্ছেন এবং দুর্ঘটনা ঘটলে এমন একটি শক্তিকে দোষারোপ করতে পারবে যাতে করে সরকারের নিজের ভাবমূর্তি অক্ষত থাকে কিন্তু মান বাচবে।
এছাড়া করারই বা কি আছে! যারা বলেন অল্টারনেটিভ সাসটেইনেবল পাওয়ার সোর্স নিয়ে কাজ করার কথা তারা এটা বলেন না বিদ্যমান ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ডিস্ট্রিবিউশন লস সহ সিস্টেম লস এবং তার সাথে দুর্নীতির কারনে আর্টিফিসিয়াল সিস্টেম লস গোনায় ধরলে ক্রমবর্ধমান টেনিডেন্সিটি এবং মার্কেট ডিমান্ড কখনোই মেটানো যাবে না। এটা অবাস্তব। অন্যান্য দেশ পারছে কারন তারা লোকালয় জেনারেট করে এবং লোকালাইজেশন ও উন্নততর ডিস্ট্রিবিউশন, বিলিং পলিসি এবং শক্ত সার্ভেইলেন্সের কারনে তারা পোষাতে পারছে। তাছাড়া লোকাল ইনভেস্টররা তাতে ইনভেস্ট করছে। কিন্তু আমাদের দেশে দুটো টাকা হলে দ্বিগুন ধর্মের উপসানালয় অথবা মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়। এখন তো নিজের সম্তানকে মাদ্রাসায় দেবার হিড়িক পড়েছে। সরকার এতটাই অসহায় যে টেলিকম সেক্টরের লোকদের ডেকে এনে তাদের ৫ জি দেয়া হবে তখনই যখন তারা ভালো গবেষনাগার তৈরী করতে পারবে এবং তাদেরকে রীতিমত ভিক্ষা করতে হচ্ছে। এরকম জাতি কিভাবে নিউক্লিক ফিজিশিস্ট বানাবে আমার সেটা জানা নাই।
চেরনোবিলের সিনিয়র রিএ্যাক্টর ইন্জিনিয়ারের বয়স ছিলো ২৫ যখন রিএ্যাক্টর ফাটে। প্রতযন্ত অঞ্চলে হওয়ায় ওখানে কোনো দক্ষ প্রকৌশলী যেতে চায়নি। এমনকি প্লান্টের পাশে যে বাসস্থান গড়ে তোলা হয় সেগুলো তৎকালীন মস্কোর অভিজাত এলাকা থেকেও উন্নত এবং ধনী ইউরোপীয়ান দেশের আদলে পুরো একটা শহর গড়ে তোলা হয়েছিলো। তবুও সেখানে কেও যেতে চায়নি। তাই ইউনি পাশ পোলাপান বা ভ্যাটেরনারী থেকে কোর্স করেই সরাসরি সেখানে ঢুকে যায়। চেরনোবিল দুর্ঘটনার অপারেটরদের দোষ তো ছিলোই কারন তারা এক্সট্রিম কন্ডিশনে ইমার্জেন্সি শাটডাউন চাপে যেটা আসলে কোনো কাজে দেয় না। কিন্তু তার চে বড় বিষয় ডিজাইনের গলদ ।
আমাদের জন্য সুখকর বিষয় এখনকার রিএ্যাক্টর অনেক সেফ এবং এসব সেফটি ব্যাপার গুলো অনেক এগিয়েছে এবং একই মডেলের বেশ কয়েকটা রিএযাক্টর ভারত নিজে রক্ষনাবেক্ষন করে এবং যেকোনো দুর্ঘটনা হলে তারাও এফেক্টেড হবে তাই তারাও এতে যুক্ত হচ্ছে। তবে এখন নির্মাণের সময় ভারত রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা আরও জরুরী যদিও বিদেশ বসে বোঝার উপায় নেই সাইটে কি হচ্ছে।
সমস্যা হলো এত চিন্তা করলে সরকারের রাতের ঘুম হারাম হবে। তার চে বরং আমরা জাতী হিসেবে নিজেদের দিকে তাকাই আমরা কি করছি…. সরকারকে সাহায্য করা উচিত না বসে বসে সরকারের পিন্ডি চটকানো উচিত
মম্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
loading...