কর্মচারী

আপনার কি জানা আছে পার্শ্ব কর্মচারী কেন নিয়োগ করা হয়? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন পোষ্টে কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন অবস্থান বেসরকারী হয়ে যাচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন সিভিক কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে চারিদিকে কেন অনেকক্ষেত্রে আর তেমন কোন পার্মানেন্ট পোষ্টের কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে না?
এত সবকিছুর একটাই উত্তর, কাজ। আপনি আপনার কাজ করুন। কোথাও না কোথাও পার্মানেন্ট হিসেবে আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। আপনি আপনার কাজে যতটা ফাঁকি দেবেন ঠিক ততটাই ভবিষ্যতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর পার্মানেন্ট নিয়োগ হবে না।
যে কাজ পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে না সেই কাজ সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে। কিংবা আরো বেশি ও আরো ভাল কাজ পাচ্ছে। তাই খামোখা পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে বেশি টাকা খরচ করা উচিত হবে কি? আপনি কি বলেন?
তাই আপনি পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হলে আপনি আপনার সমগোত্রীয় পার্মানেন্ট কর্মচারীকে প্রশ্ন করে দেখেছেন কি ” ভাই, তুমি তোমার কাজ নিয়মিত ও ফাঁকি না দিয়ে কর কি?” পার্মানেন্ট তো আপনার পাশের টেবিলে কাজ করে। আপনি ভাল করেই জানেন, ও পার্মানেন্ট তাই সবার আগে ফাঁকি দেওয়া শিখে নিয়েছে। কিন্তু আপনি কাজ চলে যাওয়ার ভয়ে আপনার দায় এড়াতে পারেন না। বরং বেশি করে কাজ করতে হয়। বেশি সিনসিয়ারিটি দেখাতে হয়। তাই নয় কি?
তাহলে ভাই, তোমাকে যদি পার্মানেন্ট কর্মচারী করে দেওয়া হয় তাহলে তুমিও যে ভাই তাই করবে। ফাঁকি দেবে, দায়বদ্ধতা থেকে দূরে সরে যাবে। তাহলে? তার চেয়ে বাড়ির মালিক বা সরকার বা যে কোন কনসার্ন কাকে চাইবে? তুমিই বলো, কাকে চাইবে? পার্মানেন্ট কর্মচারী নাকি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী। তাই সবার আগে কাজ চাই। কাজ। নিষ্ঠার কাজ।
কেন না আমি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ যতটা না দায়ী তার চেয়ে একশগুণ দায়ী আমার পূর্ববতী পার্মানেণ্ট কর্মচারী। তাদের না কাজ করার, ফাঁকি দেওয়ার, কাজ পেন্ডিং রাখার, স্কুলে না পড়ানোর, সমাজে নিরাপত্তা না দেওয়ার প্রবণতার জন্য আজ আমরা এই পথে। তার মানে আমার ভবিষ্যৎ ছেলেমেয়ের কাজ না পাওয়া বা পার্শ্ব সিভিক ও কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হওয়ার জন্য আমিই দায়ী, আমরা দায়ী।
তাই কর্তৃপক্ষকে দোষ না দিয়ে পার্মানেন্ট কর্মচারীদের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে জোরালো আবেদন, কাজ করুন। কাজ। যার যতটুকু কাজ ততটুকুই করুন। ফাঁকি দেবেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, আমাদের ছেলেমেয়ের কাজের নিশ্চিত নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেবেন না। কাজ করুন। কাজ। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
তবে কাজ কিন্তু হয়। কোনো কাজ বসে থাকে না। পড়ে থাকে না। সরকারী বেসরকারী কিছু উদাসীনতায়, কিছু অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বাহানায়, কিছু তোষণনীতির জন্য যাই হোক করে কিছু কাজ চালানো হয়। ফলে সেখানে এই রকম সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে কাজ চালানো হয়। তখন জনমানসের আর কিছু করার থাকে না।
তবু প্রত্যেকের নিষ্ঠার সঙ্গে করা কাজ কোথাও না কোথাও তার ছাপ ফেলে যায়। সেখানে একশ শতাংশ না হলেও মোটামুটি সত্তর আশি শতাংশ কর্মচারীকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে তার প্রতিফলন অবশ্যই নিয়োগে দেখা যাবে। যেখানে এই শতাংশ চল্লিশ পঞ্চাশে নেমে যাবে সেখানে সরকার বা মালিক বা কনসার্ন এইভাবে সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করেই কাজ চালিয়ে নেবে।
তাই সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, কাজ করুন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের কাজ পাওয়ার জন্য নিজে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
সরকার বা মালিক বা কোন কনসার্ন শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য পার্শ্ব বা সিভিক বা কনন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে না। ভাল কাজ পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে এমন পন্থা বেছে নেয়। আজ যারা কাজ হারানোর জন্য আন্দোলন করছে। একদিন তারাই বা তাদের সমগোত্রীয় কর্মচারী কিভাবে পাবলিককে, পরিসেবা পাওয়ার অধিকারীকে ঘুরিয়েছে, কিভাবে কমিশন না নিয়ে কোন কাজ করে নি, কিভাবে পার্সেন্টেজের দিকে হাত বাড়িয়ে থাকত সেসব মনে করলেই বুঝতে পারবে কেন কাজ চলে যাচ্ছে।
অবাক করা ব্যাপার হল, পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী কিন্তু নিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে। তাতে হাজার হাজার লাখো লাখো দরখাস্ত জমা পড়ছে। কই, টাকায় পোষাচ্ছে না তাই আমরা কেউ দরখাস্ত করব না। তা তো হচ্ছে না।
তাহলে? কেন না কাজ নেই। মানুষের সংখায় মানুষ দিন দিন বাড়ছে। আগামী প্রজন্ম আসছে। আসবে। এমএ, এম এসসি, এম বি এ, বি টেক, এম বি এ, পি এইচ ডি প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়তেই আছে।
আপনি পি এইড করলেও যদি কোথাও আপনি নিয়োজিত না হন তাহলে আপনি প্রফেসার বা লেকচারার নন। আপনি এমএ বিএড কিন্তু কোন স্কুলে নিয়োগ না হলে আপনি শিক্ষক নন। আপনি ম্যানেজমেন্ট পড়লেও কোন কনসার্নে না নিয়োজিত হলে আপনি কোন পদাধিকারী নন। তাই ডিগ্রীর সাথে সাথে নিয়োগও প্রয়োজন।
কিন্তু আবার ভেবে দেখুন কোথাও কোন প্রতিষ্ঠান কনসার্ন বা সরকারী সিস্টেম বন্ধ থাকছে না। চলছে। স্কুল চলছে। কলেজ চলছে। হাসপাতাল চলছে। পরিবহণ চলছে। করপোরেট চলছে। নতুন নতুন কনসার্ন খুলছে। সেখানে পারমানেন্ট এবং তার সাথে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে। কার কাছে কাজ বেশি পাচ্ছে সেটা সেই কনসার্ন দেখছে। টাকা পয়সা কোথায় বেশি খরচ হচ্ছে সেটা তারা দেখছে না। কেন না ভাল কাজের জন্য একটু বেশি খরচ হলে সেই খরচ তারা প্রোডাক্ট থেকে কিংবা সিস্টেম থেকে তুলে নেবে। তাই তারা দেখছে কম টাকায় বেশি কাজ কিভাবে কোথায় পাওয়া যায়। আমি আমার বাড়ির কাজেও তাই দেখি। আপনিও দেখেন।
তাই দেখবেন কিছু হোটেল হাসপাতাল বাজার চলতি প্রোডাক্ট তাদের দাম কিছুতেই কমায় না। আপনার মনে হবে একই বিরিয়ানি এখানে এত দাম কেন? একই খাওয়ার মশলা এখানে এমন কি দেয় যে এত দাম নিচ্ছে? ওরা জানে দাম একটু বেশি এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল দায়বদ্ধতা। সেখানে কোন কম্প্রোমাইজ চলে না।
এই দায়বদ্ধতার বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে পার্মানেন্ট কর্মচারীর মধ্যে। সে প্রাইভেট হোক কিংবা সরকারী বা কোন কনসার্ন। সব ক্ষেত্রে পারমানেন্ট কর্মচারী যত দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসবে তত এভাবে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে।
পার্মানেন্ট ভাবে, আমি কাজ করি কিংবা না করি আমার কিছু করতে পারবে না। আমি কাজে দায়বদ্ধ থাকি কিংবা না থাকি, আমি কিছু দুর্নীতি বা অন্য অন্য উপার্জন করলেও আমার কিছু করতে পারবে না। বড় জোর একটু আধটু ট্রান্সফার করবে কিংবা এটা ওটা করে হ্যারাসম্যাণ্ট করবে। তাতে আমার বয়েই গেছে। আমার মাইনে পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো পাকা। আমার কিছুটি করতে পারবে না। আমিই বস। অফিসের ডেকোরাম, অফিসারের উচ্চবাচ্য মানছি না মানব না। কাজও করব তথৈবচ। এরকম ভাবনার পার্মানেন্ট কর্মচারী দিন দিন বাড়ছে। ফলে কাজের জন্য, সরকারী বেসরকারী অবস্থান আরো উন্নত করার জন্য মালিক সরকার বা কোন কনসার্ন বাধ্য হয়ে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করছে।
ভরসা ছিল। তাই কিছুদিন আগে পর্যন্ত এভাবেই নিয়োগ হতো। সরকারী বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত নিরাপত্তার ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। কেন না কর্মচারীর পূর্ণ নিরাপত্তা দিলে তবে সেই কর্মচারী পূর্ণ আস্থার সঙ্গে কাজ করবে। কাজ পাওয়া যাবে একশ শতাংশ দায়বদ্ধতা যুক্ত। তারপর এল ইউনিয়ন লিডার মেম্বার মিটিং মিছিল ধর্মঘট আরো চাই আরো চাই মুনাফা ইত্যাদি। ফলে কাজের ভিত্তিতে ঢুকে পড়ল না-কাজের নানান বাহানা।
কত কষ্ট করে, মামা কাকা দাদার সোর্স করে, অনেক খরচাপাতি করে, কত বিনিদ্র রাত জেগে তবে এই চাকরি পেলাম। আর কি পড়াব? আর কি নিরাপত্তা দেব? আর কি পরিবহণ করব? আর কি পরিসেবা দেব? আর কি পাবলিক সিমপ্যাথি দেখাব? যা হয় হোক তাতে আমার কি? মাস গেলে আমার একাউণ্ট ভরবে নিশ্চিত। তাই কাজ কাজের মত চলছে, চলুক। আমি আমার চাকরি পাওয়ার জন্য যা কষ্ট করেছি তা উসুল করে নেব। আয়েশ করে, যতটা পারি মুনাফা আদায় করে নেব।
এরকম ভাবনা হলে তাহলে কি করে হবে?
এই প্রশ্নের আমিও উত্তর খুঁজি। আপনিও খোঁজেন। এমন কি তিনিও খোঁজেন। সবাই চায়। পারমানেন্ট কর্মচারী হলে সত্যিই নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তাই পারমানেন্টকে তার দায়বদ্ধতা আরও বেশি করে নিতে হবে। তবেই না মালিক সরকারী বা কনসার্ন তার কর্মচারী পারমানেন্ট নিয়োগ করবে।
আমার পারমানেন্ট কর্মপদ্ধতি আগামী সমাজ গড়ার অন্যতম দিক দিশা। আমার হাতে সামাজিক মূল্যায়ণের ভবিষ্যৎ সূচনা। এরকম ভাবনা সমস্ত পারমানেন্ট কর্মচারীকে ভাবতে হবে। তবেই পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা বন্ধ হবে। না হলে আরো বেশি করে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে। তারপর এই সব পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী আরো আন্দোলন করবে। তবে লাভ কিছু হবে কি?

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. নিতাই বাবু : ০৯-০৯-২০১৯ | ২২:২৮ |

    ভালো লিখেছেন। আমি নিজেও একজন কর্মচারী। তাই বললাম। আপনার লেখায় উপদেশগুলো গ্রহণযোগ্য ।          

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ১০-০৯-২০১৯ | ৮:৫৬ |

    অতএব আমরা আমাদের কাজে যতটা ফাঁকি দেবো ঠিক ততটাই, ভবিষ্যতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর পার্মানেন্ট নিয়োগ হবে না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. সুমন আহমেদ : ১০-০৯-২০১৯ | ৯:৫২ |

    যথার্থ আলোচনা। 

    GD Star Rating
    loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১০-০৯-২০১৯ | ১৬:২৭ |

    যুক্তি গ্রহণযোগ্য আলোচনা।

    GD Star Rating
    loading...