বিকেলটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।পার্কের বেঞ্চগুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।বাচ্চা গুলোও খেলার শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।শুধু এককোণের একটা বেঞ্চে বসে আছেন অনুপমা দেবী।তাঁর আজ আর বাড়ি ফেরার তাড়া নেই যেন।নিজের বাড়িটাকে নিজের বলে ভাবতেই মন চাইছে না আজ।
অথচ এই সংসার, সন্তানদের জন্য কি অমানুষিক পরিশ্রম তিনি করেছেন। সেই সংসার থেকে এই প্রতিদান পাওনা ছিল?না কিছুতেই আর বাড়ি ফিরে যাবেন না তিনি।মন স্থির করে ফেলেছেন আজ।
হঠাৎ পিঠে কার হাত পড়তে চমকে উঠলেন অনুপমা দেবী।
———————————————————-
দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে দেখেন না কেউ নেই। সামনে থেকে কেউ একজন বললেন – এই তো আমি, এখানে।
অনুপমা দেবী তার মুখোমুখি হয়ে অবাক হলেন না। বললেন – ও। আপনি। কেমন আছেন?
– তুমি না খুব নীরস অনু। মাঝে তিন চার বছর অন্তর দেখা হত। এবার তো অনেকদিন পরে। তাও একটুও উচ্ছ্বাস নেই।
– জীবনের শেষ প্রান্ত সবচেয়ে কঠিন। সবার গলগ্রহ হয়ে নিঃশেষ হওয়ার প্রতীক্ষা। হৃদয় থেকে আর তুমি বেরোচ্ছে না।
– কদিন ধরে তাই দেখছি তোমাকে খুব মন মরা। আজকে যেন একেবারে এক্সট্রিম।
– তাই তো নিশীথদা। আজ নাতি পর্যন্ত বলল, চুপ। একদম চুপ। না হলে ঘাটে ফেলে আসব। অর্ধেক লিখে দিয়েছেন উনি। আমারটুকু আমার। যতই শকুনের দৃষ্টি দিক ওরা।
– কতবার বলেছি আমাকে নিশি বলে ডাকতে। এই বয়সেও তুমি পর পর ভাবো। এই যে বাড়ি ফিরবে না ভাবছো, তো কোথায় যাবে? আর তো নিবারণদা নেই। আমার হাত ধরো।
কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে ভাবলেন। তারপর আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন – চলো যাই।
হেমন্ত শেষ হতে চলল। হাল্কা ঠাণ্ডা ঠান্ডা লাগছে। স্ট্রিট লাইট জ্বলতে শুরু করেছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে। গাছে ডানা ঝাপটাচ্ছে।
অনুপমা দেবী হাঁটতে লাগলেন নিশীথের হাত ধরে। নিশি নিশি বলে পুরোনো দিনের কত কথা মনে এল। বলতে বলতে কত কি বলা হল। মনটা একেবারে হাল্কা হয়ে গেল। সংসারের কারও উপর আর কোন রাগ নেই। আসলে এটাই সংসার।
আর পৌঁছে গেলেন নিজের বাড়িতে।
ছেলে দেখতে পেয়ে ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল – মা, এতক্ষণ কোথায় ছিলে শুনি? বুড়ো বয়সে তোমাদের কি হয়? এই তো অফিস থেকে ফেরার পথে শুনলাম নিশীথ জ্যেঠু ট্রেনে কাটা পড়েছে। এদিক-ওদিক কি দেখছো? যাও নিজের ঘরে যাও।
অনুপমা দেবী নিজের ঘরে থ হয়ে বসে পড়লেন।
loading...
loading...
বেশ কিছুকাল পর আবার আপনার অণুগল্প পড়ার সুযোগ হলো প্রিয় সব্যসাচী দীপঙ্কর বেরা। বরাবরই আপনার লিখা আমার ভালো লাগে। গুড লাক ফর এভরি মোমেন্ট।
loading...