যুগ যুগ ধরে মানুষমাত্রেই গল্প করে বাঁচে। একজনের সাথে আর একজনের দেখা হলে গল্প করে। গালগল্প, না-গল্প, হ্যাঁ-গল্প। এই গল্প বিনিময়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদ্যতা বাড়ে, মানুষ ঈর্ষান্বিত হয়, মানুষ সৃষ্টি করে, মানুষ ধ্বংস করে এবং মানুষ আগামী গড়ে অথবা ইতিহাস হয়ে যায়।
অর্থাৎ গল্প করাই বাঁচিয়ে রাখে যুগের প্রবাহ। গল্পের মতে করে পড়লে পরা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে বললে শোনা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে পর পর সাজিয়ে শুনলে বুঝতে পারা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে ভাবলে ভাবনা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে দেখলে দেখা হয়ে যায় প্রাণবন্ত।
একজন আর একজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলে তাকে চেনা জানা বোঝা সহজ হয়ে যায়। যার সঙ্গে আপনার ভাব তার সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ গল্প করুন দেখবেন তার সঙ্গে আরো গভীর ভাব ভালোবাসা হতে বাধ্য। যাকে রাগ করেছেন গল্প করুন রাগ গলে জল হয়ে যাবে। যাকে ভুল বুঝেছেন, খারাপ লোক মনে হচ্ছে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করুন উল্টো ফল পাবেন। তাই তো প্রেমিক প্রেমিকা একান্ত নির্জনে কিছু আলাপচারিতার (গল্প) মাধ্যমে নিজেদেরকে বুঝে নেয়।
এজন্য গল্প আমাদের জীবনের চেনা জানা দেখা বলা ভাবা চলার ক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। হাটে বাজারে মাঠে ঘাটে ফুটপাতে আলিশানে সর্বত্র গল্প বসে থাকে, গল্প ঘুরে বেড়ায়, গল্প দেখে, গল্প ভাবে, গল্প আপনাকে আমাকে নিয়েই গল্প করে। এই গল্পকে বাদ দিয়ে কোন জীবনী নয়, কোন রচনা নয়।
আবার সাহিত্য ধারায় গল্প আপামর মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। গল্প পড়ার ছলে, গল্প করার ছলে, গল্প ভাবার ছলে যে কেউ যখন তখন দু এক কলি গান গেয়ে ওঠে, কবিতা মনে পড়ে যায় আর পাশের কোন মানুষকে সহজ করে বুঝতে পারে। অর্থাৎ সমস্ত ধারার মাঝে গল্প আছে। গানে আছে, কবিতায় আছে, উপন্যাসে আছে, বক্তব্যে আছে, প্রবন্ধ আছে।
গান শুনতে শুনতে বা গাইতে গাইতে আপনি মনে যে চিত্র আঁকেন তা একটা গল্প। তাই আপনার চোখে জল আসে, আপনি হেসে ওঠেন বা ভাবেন। কবিতা পড়ার সাথে সাথে বা কবিতা লেখার সাথে সাথে যে চিত্র আপনার চোখে ভেসে আসে বা অন্যকে যে চিত্র ভাবাতে বাধ্য করান তা অবশ্যই কোন গল্প ভাবনা। উপন্যাসের এক একটা অংশ ছোট ছোট গল্প উপজীব্য। প্রবন্ধে যা আপনার ব্যাখ্যার বিষয় তাতে অবশ্য সমাজের দেখা কোন কল্প কথার বিস্তৃত রূপ।
অর্থাৎ গান কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ বা সাহিত্যের যে কোন ধারায় আপনি যদি গল্পের আকারে সেই ভাবনা নিজে ভাবতে না পারেন বা অন্যকে ভাবেতে না পারেন তাহলে সেই গান কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ বা অন্য কোন সাহিত্যধারা জনমানসে উপজীব্য হবে না। সেটা গান নয়, কবিতা নয়, উপন্যাস নয়, প্রবন্ধ নয় বা সাহিত্যের অন্য কোন ধারা নয়। যদিও হয় তাহলেও তা কখনওই সুদূর প্রসারী হবে না।
অর্থাৎ গল্পই হল সাহিত্য। সাহিত্যের মাঝে গল্পের অনাবিল ভাবধারা। গল্প ভাবনা উপেক্ষা করে সাহিত্য সৃষ্টি কখনই সম্ভব নয়। যে কোন সমাজের দেশের গোষ্ঠির সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে সেই সমাজের গোষ্ঠির দেশের সাহিত্য পাঠ করলেই জানতে পারবেন। সেই গল্প উপন্যাস গান কবিতা প্রবন্ধ যাই হোক না কেন? কিন্তু জানতে পারবেন তখনকার সমাজ চিত্র।
সাহিত্য ভাবধারার অন্যতম অংশ হল চিত্রকলা। যা না বলেও অনেক কথা বলে। এক একটা চিত্রপট এক একটা গল্প। যেমন সমাজের দেখা প্রতিটি মানুষই এক একটা মস্ত বড় গল্প। আসলে এই মস্ত বড় গল্পকে কমপ্যাক্ট করে যে যেভাবে পারে উপস্থাপিত করে। কেউ গানে কেউ গল্পে কেউ কবিতায় কেউ প্রবন্ধে কেউ উপন্যাসে আর এখন বর্তমানে অণুগল্পে।
সেইসব চলমান গল্পকে অন্যের কাছে উপস্থাপনা করা বা অন্যকে বলব সে যেন শোনে এ রকম করে তুলে ধরা একটু কঠিন। যা বাংলা ভাষায় অসামান্য সাহিত্যিকরা অন্যন্য মুন্সিয়ানায় আমাদের রত্নরাজি দিয়ে গেছেন।
তাই ‘স্বরচিত গল্প রচনা’ ভাবনা বিস্তারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাহিত্যের অন্যতম ধারা।
loading...
loading...
আলোচ্য বিষয়টিতে যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন এবং সহমত পোষণ করলাম। ভালো লাগে এমন স্বতন্ত্র ধারার আলোচনা হলে। ধন্যবাদ প্রিয় আলোচক। শুভ সকাল।
loading...
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...