প্রেমের সাথে প্রেমের পথে

প্রেম নিয়ে দু চার পংক্তি। প্রেম কি আসে? নাকি প্রেম করতে হয়? নাকি প্রেম হয়ে যায়?

এর পরের প্রশ্ন প্রেম করার, প্রেম হওয়ার বা প্রেম আসার বয়স মাপকাঠি ঠিক কি? অর্থাৎ যারা ম্যাচিওর পঁচিশ তিরিশ বছরের পরে বা নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যাদের প্রেম আসে বা হয় তাদের বেলায় এক রকম। আবার যাদের বয়স তার নীচে তাদের প্রেম আসা বা হওয়া কতটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সামাজিকতা বহন করে?

এর পরে প্রেমের আসা, প্রেমে পড়া বা প্রেম করা কি সত্যিই আকস্মিক? ওই যেমন সিনেমায় দেখায় ও এলেই গরমেও মধুর বাতাস বয়, ভিড় বাসে মনে হয় আকাশে উড়ছি, রাতে পছন্দের খাবার না পেলেও অমৃত মনে হয় – এ সব কি সত্যিই হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।
কি কথা? এসব আদ্য প্রান্ত সত্যিই মনে হয় তখন সেক্সচুয়াল টান অবধারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্পর্শ সাপেক্ষ দুই দেহের সংযোগ। অল্প সংযোগ পূর্ণ মিলনের অদম্য আগ্রহে উপরের সমস্ত অবস্থানের জন্য ছটপট করে। তার ফলে বয়স পঁচিশের নিচে যে সব অবধারিত অবস্থান প্রয়োজন তা আর সম্পন্ন হয়ে ওঠে না। যেমন ক্যারিয়ার তৈরীর জন্য পড়াশুনা, নিজের মেধার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়াস সবই জলাঞ্জলি যায়। মনের মধ্যে সেই সব অনাগত আদিম গুঞ্জরিত হতে থাকে।

এর উপর আছে টিন এজ সমস্যা। যৌবন প্রারম্ভে হরমোনাল মানসিকতা উদ্দাম ছোটাছুটি করে। তার পুরোটাই কিন্তু বিপরীত অথবা দুই দেহের সংযোগ হওয়ার আপ্রাণ আগ্রাসী ভাবনা। প্রেমের জ্যোতি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র থাকে বলে মনে হয় না। এই সংযোগ যদি সময় সুযোগে আরো গাঢ়তর হয় তখন প্রেমের অবস্থানের সূচনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য মানুষ হিসেবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে পরিচিতি হারিয়ে যায়। গড্ডলিকায় শুধু বয়ে যায়। যদিও বা কিছু করার বাসনা গড়ে ওঠে তা অনেক পরে নিজস্ব বোধ বুদ্ধি অবস্থানের পর্যায়ক্রমে।

অর্থাৎ পরিণত বোধের পরেই যে দুই দেহের মধ্যে মনের আদান প্রদান গড়ে ওঠে তাকেই প্রেম বলা যেতে পারে। রাধাকৃষ্ণ হীর রাঞ্ঝা সেলিম আনারকলি এসবই সেই সব জীবনের ফসল চিত্রকলা। রাধাকৃষ্ণ তো জন্মসূত্রেই বোধ সম্পন্ন।

আমাদের আশেপাশে শুধুমাত্র প্রেম সকল চিন্তাভাবনায় কত যে এই বোধহীন হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নারী পুরুষ বা দুই দেহের মন নাড়াচাড়ায় প্রেমের যে পূর্ণতা তা আকাশ অসীম অনন্তের ভাব প্রয়াস। সময় সুযোগ অবস্থান সংযোগ এবং তার অবস্থানিক বোধ পরিচালনায় প্রেমের উন্মুখ চিত্র। সিনেমার মত হুট করে ধাক্কা লাগল আর প্রেম হয়ে গেল – তা কখনই বাস্তবে হয় না। সদ্য যৌবন পা শুধুই ছলাকলায় ডুবে নাবিক কথামালা। পাড়ে পৌঁছতে পারে অথবা হারিয়ে যেতে পারে। বোধ পরিপূর্ণ এ রকম অনেক আছে যারা প্রেম করেছেন কি না জানি না তবে একটা ধরেছেন ছেড়েছেন আবার ধরেছেন আবার ছেড়েছেন এবং আবার তাও তারা প্রতিষ্ঠিত জীবনে ও মননে। সে নারী অথবা পুরুষ, যে কেউ।

কেউ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে যে স্কুল লাইফে চুটিয়ে প্রেম করেও স্কলার ফেলোসিভ বা সর্বোচ্চ হতে পেরেছেন? তাহলে এই স্থিতি সীমান্তে প্রেমের ভূমি রাজ্য কি? বোধ পূর্ণতা পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে আয়ত্বে রাখতে পারে না। অন্য এক দেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরে। এই খোঁজার মাঝে যদি সদ্য যৌবন তা পেয়ে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে তা বিপরীতমুখী। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনুকুল।

ভাবনার বিষয় তাহলে শুধু প্রেম কি দেয়? আর কি পায়? জৈবিক চাহিদার অজৈবিক পার্থিব অবস্থানে? এর পরে আছে বৈধ আর অবৈধ প্রেম। বৈধ অর্থাৎ সবার সামনে বুক ফুলিয়ে সমাজ সংসারকে সামনে রেখে। যেমন বিয়ে এই জাতীয় অবস্থান। আবার লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। সবাই গানটি জানে ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’। প্রকাশ্যে আসবেই আজ কাল কিংবা পরশু। কিন্তু তবু অনেকেই মনে করে কিছু হবে না চল, প্রেম ঘুরে আসি থুড়ি প্রেম করি। কেউ জানতে পারবে না।

যতদূর জানি প্রেমের এই কোন লুকানো ঝুকানো ধরা পড়েছেই। টিন এজ এই অবস্থানে ঢুকে পড়ছে প্রেম রহস্যে। ফলে নিজস্ব কেরিয়ার বৃত্তিতে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। বোধ না জন্মানো বড়দের মত হওয়ার প্রেম নেশায় কত অকাল হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। তাকে রোধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবার। আমাদের বড়দের। পাশে থাকা, বুঝতে শেখা, বুঝিয়ে বলা ও নিয়মিত টিন এজের মত হওয়া। টিন এজ মেধা যা পড়াশুনার মাধ্যমেই বিকশিত হয়। তার সাথে মানবিক বোধ আহরণ করতে শেখে।

ঠিক সেই সময় প্রেমের নেশা যা পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও বিনোদন থেকে দেখে শেখে এবং সদ্য তাই তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। ফলে মেধার অপচয় ঘটে যায়। তাকে রোধ করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বোধ পূর্ণতা প্রেম জীবনে স্বাগত। আনন্দম।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৮-০৬-২০১৭ | ০:১৩ |

    মেধার অপচয় যাতে না ঘটে তাকে রোধ করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
    বোধ পূর্ণতা প্রেম জীবনে স্বাগত। আনন্দম। প্রেমের সাথে প্রেমের পথে …

    পূর্ণ অপূর্ণ দুটো দিক বিবেচনায় রেখে আলোচনা করেছেন। এবং বেশ সহজ ভাবে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • দীপঙ্কর বেরা : ১৮-০৬-২০১৭ | ১৪:০৮ |

      ধন্যবাদ
      আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
      ভাল থাকবেন।

      GD Star Rating
      loading...