খাদ্যের কিছু জীবন অভ্যাস

মানুষের জীবন লোভের ভাণ্ডার। যত পায় আরও চায়। সন্তুষ্টি তার জীবনে সাময়িক। তবু সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বয়স যখন চল্লিশ পেরিয়ে যায়।
১। সবসময় পরিমিত আহার করা উচিত। পেট ভরে খাওয়া চলবে না। অর্থাৎ পেটের কিছু অংশ খালি রেখে দেওয়া উচিত। কেন না আমরা বেশিরভাগ খাওয়ার খাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সেই খাওয়ার হজম হলেও শরীরে তা শুধু জমা হয়। জমার পরিমাণ বাড়ছে কমছে খরচ। ফলে সুগার, পেশার, ওজন বেশি, ভুঁড়ি বাড়া হার্টের রোগ ইত্যাদি নানান রোগের বাসাও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ যত জমা তত রোগের আমন্ত্রণ।
২। নিয়মিত শরীরকে কাজে লাগানো দরকার। সকালের মর্নিং ওয়াক। সম্ভব না হলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে হাঁটাচলা করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু হাঁটা দরকার। হাঁটার চেয়ে বড় ব্যায়াম কিছু নেই। শারীরিক কসরত যোগব্যায়াম খেলাধূলা ইত্যাদি করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু যদি এগুলো সম্ভব না হয় তাহলে শুধু হাঁটা। সকালের শীতল ছায়ায় কিংবা বিকেলের মৃদু মন্দ হাওয়ায় শুধু হাঁটা। হাঁটলেই আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের নড়াচড়া হয়। জোরে হাঁটা বা দৌড়নো নয়। শুধু হাঁটা। এতেই আপনার শরীরের জমা খরচ হবেই। তার মানে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই হাঁটবেন। হাঁটতে ভয় পাবেন না।
৩। যেখানেই যান না কেন সাথে জল এবং শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুটের প্যাকেট) ক্যারি করবেন। জল আমাদের দেহের বাহক। অর্থাৎ আমরা যা কিছু খাবার ইনটেক করি তার অপ্রয়োনীয় বাইরে বের করতে এই জল কার্যকরী। জলে যদি ক্রমাগত অশুদ্ধি থাকে বা কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর সচল রাখার জন্য দেহজ জমা রাখা ও খরচ করার সুনির্দিষ্ট কাজ ব্যহত হয়। অর্থাৎ রাস্তায় চায়ের দোকান বা অজানা সোর্স থেকে জল না খাওয়াই ভাল। ঘরের জল ক্যারি করাটাই সবচেয়ে বেটার। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে – অ্যালোপ্যাথি হোমওপ্যাথি, হাইড্রো(জল)প্যাথি ইজ দ্যা বেস্ট প্যাথি।
৪। প্রতিদিন কোন না কোন ফল খাবেন তবে তা কোনকিছু খাবার খাওয়ার পর। একেবারে পরিমিত। একটা কি দুটো। চেষ্টা করবেন দুপুরের আগে খাওয়ার। ফলের কার্যকারিতার মাপকাঠি এভাবে করা যেতে পারে – সকালে ফল খেলে সোনার মত উপকারিতা, দুপুরে খেলে রূপোর মত, আর রাতে খেলে লোহার মত উপকারিতা পাবেন।
৫। বহুল প্রচারিত খাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ঘুমোবেন না। ঠিক। তবে ঘুমোবেন রাত এগারোটার মধ্যে। কোনভাবে রাত জাগার কোন প্রয়োজন নেই। যারা রাত জেগে ডিউটি করেন তাদের কথা আলাদা। না হলে রাত জাগার কোন মানেই হয় না। যে কোন কাজ আপনি রুটিন পরিবর্তন করে দিনে করার চেষ্টা করতেই পারেন। আর একটা কথা সময় থাক বা না থাক দিনে বিছানা পেতে আয়েশ করে কখনই ঘুম নয়।
বেশির মানুষ বলে নানান চিন্তা কি করে ঘুম আসবে? এটা কথাটাই ঠিক না। তিনটে জিনিস কাওকে জোর করতে হয় না বা জোর করবেন না। প্রত্যেকে নিজের তাগিদে এবং ভাল থাকার প্রয়াসে সেই তিনটে কাজ করে অথবা করতে পারে। খাওয়া, ঘুমানো, আর মলত্যাগ। খাও খাও, ঘুমাও ঘুমাও, যাও যাও। বলার কোন দরকার নেই। এগুলো কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রথমেই বলেছি মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায়। ফলে জোর করা মানেই বিড়ম্বনা। শরীরকে খাটাবেন তবেই ঘুম আসবে। শরীরকে বিশ্রাম আর আয়েশের মধ্যে রাখলে ঘুম আসবে না। অনেকেই দুপুরে একটু গড়িয়ে নেন। আর রাতে জেগে থাকেন। একটা নির্দিষ্ট রিদমে শুধু রাতে নির্দিষ্ট সময়ে রোজ ঘুমোতে গেলে ঘুম আসবেই। ফলে জোর করার দরকার নেই। আর ঠিক একই রকম ভাবে সকালের প্রাতকৃত্য পাক না পাক রোজ করবেন। রিদমে তা ফলপ্রসূ।
৬। সবার সব কিছুই খাওয়া যায়। খাওয়াতে খুব একটা বারণ নেই। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আপনি গ্রহণীয় খাবার হজম হয়তো করতে পারবেন কিন্তু খরচ করতে পারবেন না। এই খরচ করার মত প্রয়োজনীয় সার্মথ্য কিন্তু আপনার কমতে থাকবে। তাই গ্রহণও কমিয়ে দেওয়া উচিত। এবং কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে খাওয়া উচিত। যেমন ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংস পুরোটাই জমার খাতায়। সব বয়সের ক্ষেত্রে যতটা খাবেন পুরোটাই জমা। খরচ নাই। কম বয়সে যদিও বা কিছু খরচ করা যায় পরে আর তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৭। সবাই প্রায় নেশা করে। এই নেশা পরিমিত হোক বা অপরিমিত সবটাই কিন্তু বিড়ম্বনার। চল্লিশের পরে এই ইনটেক নেশা সবটাই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যায়। এই বিড়ম্বনার আবার দুটো দিক। এক আপনার শারীরিক বিড়ম্বনা আর দুই আপনার পারিবারিক বিড়ম্বনা। অনেক সময় এর ফলে আপনি দিব্যি হাসপাতালে আর দৌড়াদৌড়ি বাড়ির লোকের। হয়তো সবক্ষেত্রে নয় কিন্তু কিছুটা তো এর জন্য দায়ী। তার মানে আপনার কার্যকারিতা অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা। এক না ঢোকা। দুই নিজেকে ভাবা ও পরিবারকে ভাবা।
৮। দিনে যতবার খাবেন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবেন। আধঘণ্টা এদিক ওদিক হতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দুই তিন ঘণ্টা পেরিয়ে না যায়। মাঝে মধ্যে হয়তো নিয়ম ব্রেক হল হতেই পারে, কিন্তু সেটাই যেন নিয়ম না হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের শরীরও একটা রিদমে চলে। বিপাক ক্রিয়ার জন্য নিসৃত রস নির্দিষ্ট সময়ে নিসৃত হয়। সে যদি খাবার পেল তো ভাল না পেল তো মাংসপেশী হজম করতে শুরু করল। তাই প্রতিদিন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত।
৯। এই খাওয়ার দাওয়ার অভ্যাসের উপর আরো অনেক কিছু নির্ভরশীল। যেমন বদহজম, গলা বুক জ্বালা, পেট ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি নিয়মিত সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য পেটের রোগ থেকে রেহাই সম্ভব। আর রোগ সৃষ্টি থেকে দূরে থাকা আর তার মোকাবিলা করার প্রধান ও সহজ রাস্তা হল পেট পরিস্কার রাখা। পেট সুস্থ রাখা। মুখ থেকে পায়ূ পর্যন্ত যে নালী বা ড্রেন তাকে যে যতটা পরিচ্ছন্ন রাখতে পেরেছে সে তত বেশি সুস্থ।
১০। সবাই জানে ভাল থাকার পাশওয়ার্ড হল যতটা সম্ভব মুখ বন্ধ রাখা। সে বলার জন্য হোক আর খাওয়ার জন্য। বেশি বলা মানে বিড়ম্বনা, বেশি খাওয়া মানেও বিড়ম্বনা। খোলা রাখুন চোখ কান ইত্যাদি। সে সমস্ত থেকে ইনপুট সমূহ মস্তিষ্ককে সার্ফ করে তোলে। আর মুখ খোলা অতটা অগ্রবর্তী করে তুলতে পারে না। পুষ্টিকর সুষম খাওয়ার বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় কি? ঘটায়। পরিমিত আহারে। অতিরিক্ত নয়। ঠুঁসে দিতে তোতাপাখির মত জ্ঞান গ্রহণের মৃত্যু।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. সাইয়িদ রফিকুল হক : ০২-০৭-২০১৭ | ১২:২৬ |

    জনস্বার্থে সচেতনতামূলক পোস্ট।
    ভালো লেগেছে।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০২-০৭-২০১৭ | ১২:৫৪ |

    এমনিতেই বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেলে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা উচিৎ।
    তবু যে মন মানে না। মনও মানে না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cry.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • দীপঙ্কর বেরা : ০২-০৭-২০১৭ | ২৩:৩৮ |

      সত্যি তাই। মন মানে না। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

      GD Star Rating
      loading...
  3. আনিসুর রহমান : ০২-০৭-২০১৭ | ১৩:২৪ |

    উপকারি পোস্টের জন্য ধন্যবাদ কবি !

    GD Star Rating
    loading...