-সাব হিন্দি মে বাতাইয়ে না?
এই কথা শুনতে শুনতে ভরণের খুব রাগ হয়। সকাল থেকে প্রায় এই নিয়ে দশবার হল। উত্তর দিতেই হল – কিঁউ তুম বাংলা সমজতে নেই?
– থোড়া থোড়া সমজতে হ্যাঁ। ফিরভি?
– ফিরভি? কিঁউ ফিরভি? কাঁহা সে আয়া হো।
– উধার বড়া সা রাজ্য সে।
– ক্যায়া ভাই। উধার বাংলা চলতা হ্যায় ক্যায়া। কৈ বলেগা, স্যার বাংলায় বলিয়ে না। তো বাংলা বলে গা, ক্যায়া? তো তুম যব ইঁহা পর র্যাহেতে তো, বাংলা শিখলো। ঠিক হ্যায় কি নেহি?
– ক্যায়া সাব। ইতনা সব কুচ হিন্দী মে বোলা, লেকিন এ জো মুচকো দিয়া হ্যায় ও হিন্দী মে বলিয়ে না?
আরও সব উপভোক্তা লম্বা লাইনে। চিৎকার জুড়ে দিল – আপনি বড্ড কথা বলেন মশাই। ওকে একটু হিন্দীতে বলে দিলে ক্ষতি কি? ও তো বুঝতেই পারছে না?
ভরণ চেষ্টা করল বোঝানোর – কে বলেছে ও বুঝতে পারে নি? ভালই বুঝেছে।
সেই ভদ্রলোককে আবার ভরণ জিজ্ঞেস করল – কত দিন এখানে এসেছ, ভাই।
– আমরা তো আসি যাই। তা বছর চার পাঁচ হয়ে গেল। বাবা মা কাকা সবাই আছে এখানে।
ভরণ এবার উপভোক্তাদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল – দেখলেন। ভালই বাংলা জানে। শুধু আমাদের দিয়ে হিন্দী ভাষাটি বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
সময় চলে যাচ্ছে। উপভোক্তাদের আর তর সইছে না। বলে বসল – আর বেশি বাতেলা মারতে হবে না। হাত চালাইয়ে। হামকো ভি কাজ মে যানা হ্যাঁয়।
ভরণ আর একটু গলা চড়াতে বাধ্য হল – কি ভাই? তুমিও। নিজের ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পাও।
একজন তেড়ে ফুড়ে এগিয়ে এল – এই চুপ! হিন্দী উচ্চ ভাষা হ্যায়। সমজে মিঃ। আর বাংলার আছে টা কি? যতসব ব্যাকডেটেড।
ভরণ আর কিছু বলল না। আমাদের আমরাই যেখানে চাই না সেখানে একা ভরণ আর কতটা কি বা করতে পারে।
কাজ শুরু করে দিল। হিন্দী বাংলা ও কিছু ইংরেজী মিশিয়ে। এছাড়া আর উপায় কি? বাসে ট্রামে ট্রেনে রাস্তায় রেঁস্তরায় সর্বত্র হিন্দী ইংরেজী মেশানো ভাষ্য। এখানেও দেখল আমরা নিজেরাই খুব একটা বাংলা বলতে চাই না। পারে না তাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অন্য ভাষা বলছে, তাও বাংলায় বলছে না। যেন প্রেস্টিজ চলে যাবে।
সেবার ভরণও তাই করেছিল। একটা নামী কোম্পানির ব্যাগ সারাই করতে গিয়ে শুরু করল হিন্দীতে। ঠিক বোঝাতে পারছিল না। তাও। আর সেই ভদ্রলোকের দ্রুত হিন্দীর পাশে একটু পরেই কুপোকাৎ। ভদ্রলোক স্পষ্ট বাংলায় বলল – আপনি তো নিপাট বাঙালী মশাই। তো বাংলায় বলুন। নিজের ভাষার চেয়ে মধুর কিছু হয় না। কেন বলেন, এ রকম।
ভরণ বাংলা ভাষা নিয়ে এত গর্ব করে। বাংলা নিজের খুব প্রিয়। কত গল্প উপন্যাস কবিতা পড়েছে। সব সময় বাংলা গান গুনগুনিয়ে আপন মনে গায়। ছেলেকেও বাংলা মিডিয়ামে পড়াচ্ছে। আজ কেন এমন করল। ভরণ নিজেই লজ্জা পেল।
ব্যাগ সারিয়ে ধন্যবাদ ও নমস্কার জানিয়ে ফিরে এল। তারপর থেকে আর নয়। বাংলা ভাষা যেহেতু তার মাতৃভাষা তাই সেই ভাষাতেই যতটা সম্ভব বলার চেষ্টা করে। সামনে যে থাকে তাকে দিয়ে বাংলা ভাষা বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
কাজ শেষ করে ভরণ বাড়ি ফিরছে। একটু দূরে বাসস্ট্যাণ্ড। সেখানে সকালের সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা। বলল – নমস্কার স্যার। ডিউটি শেষ হল। বাড়ি ফিরছেন।
ভরণ একমুখ হাসল। বলল – হ্যাঁ। বাস এসে গেছে। যাই।
বাসে উঠে ভরণ শুনল – স্যার, ভাল থাকবেন।
loading...
loading...
বাংলায় কথা বলুন। নিজের ভাষার চেয়ে মধুর কিছু হয় না।
loading...
অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...
আমি বাংলাকে ভালোবাসি –
ভাষা তো প্রাণের প্রকাশ । নিজের ভাষায় কথা বলা অনেক আনন্দের ।
loading...
অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...
দু এক লাইন পড়ব চিন্তা করেছিলাম
পুরোটাই পড়িয়ে নিলেন-
অভিনন্দন প্রিয় লেখক
loading...
অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...
শুভেচ্ছা নিন কবি।
loading...
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...
সব জাগায় বাংলাভাষা হোক এই প্রত্যাশা কামনা করি দাদা
loading...
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন
loading...