১। সিনেমাটিক জীবন যেনো-এক দৌঁড়েই বড় হতে হতে একদম বয়সের শেষ সীমান্তে এসে যাই। এই দৌঁড় যেনো থেমে নেই। দৃষ্টির সীমান্ত যত দূর যায়-এক সময় মিলিয়ে যায় সময়ের মতই মানুষগুলোও হাওয়ায়। কত পরিচিতজনেরা চলে গেছে ছেড়ে অথৈ আঁধারে। মেয়েবেলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে এখন থেমে গেছি। নামতে হবে এবার নিচের ধাপে। তবুও জীবন আশা ছাড়ে না বেঁচে থাকার। তবুও জীবন স্বপ্ন দেখে রঙধনু রঙ। চোখ দেখে যায় মুগ্ধতায় এই সুন্দর দুনিয়া। জীবন চলমান……… আমিও মুগ্ধ হই এমন দৃশ্যে -ফিরে যায় মন মেয়েবেলার দ্বারপ্রান্তে।
________________________________________________
আরো কিছু এলোমেলো ছবি-কিছু ট্রেন থেকে তোলা-আর কিছু এখানের সেখানের। আপনাদের ভাল লাগলেই আমার কষ্ট করা পোস্ট সার্থক হবে। ফটোগ্রাফার আমি কখনো নই ছিলাম না বা হবোও না। নিতান্তই শখের বসে ছবি উঠাই -আমার চোখে যা সুন্দর তা ধরে রাখি ক্যামেরায়। চোখের ক্লান্তি এলে সবুজের দিকে তাকাই। ছবিগুলোও মনে হয় এমন সবুজ তাকালেই শান্তি লাগে। আমার গ্রামের সোঁদা মাটির গন্ধ পাই- সবুজে হারিয়ে যাই। বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই সব পাহাড় ঘেরা সবুজে। আমাদের থানা চুনারুঘাট-টাও এমন পাহাড় ঘেরাই। যদিও সময় সুযোগ কমই হয় সেসব জায়গায় যাওয়ার । এইতো আমার দেশ আমার জন্মভূমি। ভালবাসি বাংলাদেশ।
২। এমন আটপৌরে জীবনে ভালবাসা চুয়ে চুয়ে পড়ে। সকাল থেকে কর্মব্যস্ত প্রহর পেরিয়ে সকল ক্লান্তি স্বচ্ছ জলের পুকুরে ফেলে এখানে সবাই বিকেল ছুঁই ছুঁই রোদ্দুরে বসে শান্তির ওম নেয়। সবুজের বুকে দূর্বাঘাসের নরম পিড়িতে বসে সবাই আড্ডায় হয় মত্ত। দুঃখ সুখের বেলায় সবাই সবার আপনজন। বেলাশেষে সবাই গোধূলিয়ার আলোয় এক আকাশ সুখ নিয়ে নীড়ে ফিরে। গ্রামের এমন শান্ত পরিবেশ সবুজের হাতছানি নিত্য হাত বাড়িয়ে ডাকে। ভাল লাগে যখন মায়ের কোলে ফিরে যাই। কয়েকটা পল নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে অনুভব করি আর নিশ্বাসে টেনে নেই শুদ্ধ অক্সিজেন। ভালবাসি বড্ড আমার দেশটাকে।
৩। কেউ কি আর হয় শুনি
জনম জনমের সাথী
কেউ কি আর রয় শুনি
একসঙ্গে দিবারাতি!
–
দেখ্ না বন্ধু তুই আর আমি
কেমন সখ্যতায় থাকি
ফুটে থেকে আনন্দেতে
ঝরব সে স্বপ্ন আঁকি!
বন জঙ্গলের ফুল এখন টবেও পাওয়া যায়….
৪। খানে রোদ্দুর জ্বলা দুপুরে কেউ আয়েসী ঘুম যায় না-সবাই মেতে থাকে কর্মে কিংবা দায়িত্বে যে যার। ছায়াঘেরা বৃক্ষের নিচে ঠাঁঁয় বসে থাকে রাখাল বালক। এখন তাদের হাতে বাঁশি থাকে না। বাঁশির বদলে হাতে উঠে এসেছে এন্ড্রয়েড। ওরাও এখন ফেইসবুক বুঝে এবং এটাই ইন্টারনেট বুঝে। হাতের মুঠোয় পৃথিবী এখন ওদেরও। দুপুরের ঘুম হারাম করে ওরা গরু চড়ায় মাঠে-ক্লান্তি দূর করতে ওরা ফেইসবুক নেট চালায়। ওরা দেশের খবর জানে এমনকি বিদেশেরও। মায়াময়ী গ্রামও এখন ডিজিটাল আওতায়। ভাল লাগে খুব। ওরা এখন সচেতন হতেও শিখে যায়। যেখানে গেলে শান্তি নেমে আসে মনে সে হলো অপরূপ ছায়াময়ী মমতাময়ী গ্রাম। আমি জানি শহরের মানুষগুলো অপেক্ষায় রত-কখন গ্রামে গিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস টেনে আসবে।
৫। এই শুনো-না একটু এদিক এসো, দেখো সবুজের ফাঁকে ঝুলে আছে এক টুকরা মেঘ। আমার খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে- এমন সজীব মুহুর্ত তুমি শুধু মিস-ই করে গেলে। মনের দুয়ার খুলে দাও ফাগুন হাওয়ায়-এসো নীলের কাছাকাছি। শহরের ইট কংক্রিটে কি খুঁজে পাও এমন মুগ্ধতার প্রহর-যেখানে সবুজ ঝুলে থাকে চোখের পাতায়। নীল ছুঁয়ে থাকে সবুজ মাঠটির শেষ সীমানায়। আড়মোড়া দিয়ে ভেঙ্গে দাও আলসেমী যত-চলে এসো এখানে-এ্ই যে সবুজে ঘেরা গ্রাম। যেখানে নি:শ্বাসে টেনে নেয়া যায় নিশ্চিন্তে শুদ্ধ অক্সিজেন।
৬। এমন চিত্র চোখের সামনে আসলে কার না ছুটে যেতে ইচ্ছে সেই সেই মায়াময় ছায়াময় সবুজে ঘেরা গ্রামের মাটিতে। ক্লান্তি কেটে যাওয়া প্রহর এখানে নেই। ধূলোবালির যন্ত্র শহরে পড়ে থাকি জীবনের প্রয়োজনে। দৃষ্টি জুড়ে মাঠ নেই এখানে-ইট কংক্রিটে ঘেরা পৃথিবী যেনো। আকাশটাও আজ দেখা যাচ্ছে না উচু প্রাসাদে ঢেকে গেছে আকাশ আমার। আর বৈদ্যুতিক তারের ছাউনিতে আকাশের এক টুকরো নীল চোখে এসে লাগেনা আর। তবুও বাঁচি মুগ্ধতায়-মনে উচ্ছ্বাস নিয়ে যন্ত্রতেই খুঁজি জীবনের মানে। ভাল থাকি -ভাল আছি- আলহামদুলিল্লাহ।
৭। মাথায় নিয়ে স্বাদের বোঝা-জীবন বয়ে যায় ওদের চানাচুর চানাচুর বলেই। আমরা আয়েসী ঢঙে ঢেকে আনি কাছে-এই পাঁচ টাকার চানাচুর দে-তো-ঝাল দিস বেশী- তুই-তুকারীতে তাদের মনে আমাদের কিঞ্চিত অহম বুঝিয়ে দেই-আমরা উঁচু মান শুধু টাকা আছে তাই মন ভরে খেতে পারি। ওরা স্বাদ বেচে দুবেলার দুমুঠো অন্ন যোগায়। হয়তো সংসারে মা বাবা ভাই বোন-অনেকেই আছেন। কোনোদিন সে খবরে যাই না…. যাবই বা কেনো-হালাল রোজী হোক না এমন করেই সুন্দর জীবন যাপন- আর ঐ যে থালা হাতে ভিক্ষের- আবেগী হয়ে তাদের থালায় ছেড়ে দেই খুচরো মমতা। অথচ তাদের খেটে খাওয়ার ক্ষমতাও ছিলো- আমলই তাদের এমন, তারা ভিক্ষেতেই অন্ন কুঁড়ায়। আর যে নারী চকলেট দিয়ে দিয়ে ফিরে আসে টাকা নিতে আমি চকলেট কিনে নেই-সে শ্রম বেচে খাচ্ছে-অথচ কেউ কেউ আমরা চকলেট ফেরত দেই টাকা দেই না।
৮। এখানে মাটজুড়ে ফসল, সব্জি, সবুজে সবুজে একাকার চতুর্দিক
এখানে মেঠোপথে এখনো ফেরি করে বেড়ায় ফেরিওয়ালা
এইতো আমার মায়াময়ী ছায়াময়ী অপরূপ সুন্দর গাঁও
এখানে পথে ঘাটে গাছের ছায়ায় সর্বত্র শান্তি এবং শান্তি
এখানে মাঘের ভোরে হাঁসেরা জলে কাটে স্বাধীনতায় সাঁতার,
শান্তিতে ঐক্য হয়ে থাকুক আমার গাঁওবাসি।
ভালবাসি মানুষ, ভালবাসি আমার গাঁও, ভালবাসি দেশ।
এই দেশ এই মাটি আমার গর্ব আমার অহংকার।
৯। লুকিয়ে আছিস ওলো সুন্দরী
সবুজের বুকে চুপি
প্রজাপতি ছুঁয়ে দিবে এসে
মাথায় পড়ে টুপি
ভাব দেখিয়ে মুচকি হেসে শেষে
ঝরে পড়িস কেনো
তোর লাগিয়া প্রজাপতির মনে
বাজে দুঃখের বেণূ।
১০। এমন একটি শীতের বিকেল-যেখানে শুধু সোনা ঝরা প্রহর- হেমন্তের ফসল গোলায় ভরে কৃষাণী মাথায় বোঝা বয়ে। এখানে পরিশ্রমের বিনিময়ে উচ্ছ্বল মানুষগুলো -বড্ড ভালবাসি। শ্রদ্ধায় করি মন নত। মরা কাঁচা দূর্বাঘাসে নগ্ন পায়ে হাঁটার প্রহরগুলো যন্ত্র শহরে নেই। এই শহরে আছে শুধু ক্লান্তি। আর ছায়াময় গ্রামে আছে সর্বত্র ছড়িয়ে শান্তি।
বছরের কয়েকটি দিন হয় তাই শহরবাসীদের জন্য সেরা দিন। ভালবাসি দেশ আমার-ভালবাসি দেশের মানুষ।
১১। লজ্জা যেমন হারিয়েছে এ সমাজ হতে ধীরে ধীরে তেমনি এই আলতো ছুঁয়ে দিলে ওরা লজ্জায় নুয়ে যেতো তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার পথে। এখন গ্রামে গঞ্জে লজ্জাবতীরা বসে থাকে না দূর্বাঘাসের ফাঁকে। মানুষের পায়ের তলায় পিষ্ট হতে হতে ওরা হারিয়ে যাচ্ছে কালের গহরে। আহা কত মুগ্ধতার প্রহর ছিলো সেই, ইচ্ছে করেই ওদের ছুঁয়ে দিতাম আর ওরা লজ্জায় মুখ লুকাতো ফুলের বুকে। আবার ওদের বুকে ফুটে থাকতো মিষ্টি গোলাপ রঙ ফুল। মুগ্ধতা শুধু মুগ্ধতার প্রহর ছিলো সেই … এখন আর এমন প্রহর হেসে উঠে না। মিইয়ে গেছে সময়ের সাথে। তাই লজ্জাবতীরাও হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওদের এখন নীড় গড়া উচিত দখিন দাওয়ার ফুলের টবে। ইটপাথরের শহরে ওদের নিমন্তন্ন রইল।
১২। চলে যাচ্ছে বসন্ত দিন-শুকনো পাতাদের হুলি খেলা হবে বন্ধ। পাতারা ঝরে যাচ্ছে মুর্হুমুহু ফাগুন হাওয়ায়। তবুও গাছে গাছে কুহু কুজন আর শুকনো দূর্বাঘাসের ফাঁকে বসন্ত ফুল ফুটে আছে হেসে। মুগ্ধতা দৃষ্টি জুড়ে। মৌসুম শেষে ঝরে যাবে রক্ত রঙিন ফুল, বাসন্তি গাঁদা……. স্বপ্নবীজ দিয়ে ওরা হারিয়ে যাবে। আর স্বপ্নবীজ থাকবে আগত বসন্তের অপেক্ষায়। এভাবেই ঋতুগুলো আমাদের দিয়ে যায় অনাবিল আনন্দ। বসন্ত হাওয়া গায়ে মেখে কেটে যায় শুদ্ধ প্রহর।
loading...
loading...
অসাধারণ ফটোগ্রাফি এবং তার সঙ্গে মন উদাস করা লিখা। নস্টালজিক হয়ে পড়ি। যে কোন পাঠকেরই কাছে ভালো লাগবে। আমি বরাবরই আপনার পোস্টের ভক্ত প্রিয় শ্রদ্ধেয়। প্রত্যাশা করি আরো নিয়মিত আপনার লিখা যেন পড়তে পাই।
আপনার উপস্থিতি অনেক স্বস্তিদায়ক।
loading...
জাজাকাল্লাহ খাইরান । ইনশাআল্লাহ আছি শব্দনীড়ের সাথেই
ভাল থাকুন ভাল রাখুন সাথেই থাকুন
লাফানো ফুল কই গেলো গা হাহাহাহ
loading...
ফুল গুলা ক্যান লাফায়!!
loading...
বিরামহীন আনন্দে।
loading...
কোয়ালা কোকিলা কাজরী গায় শোনে বনানী
কি মায়া ছড়াল পথের ধারে শিরিষ মেহগনি।
যেমন ছবি ঠিক তেমনি অনুভুতির বিবরনি, অসাধারন!
loading...
খুব সুন্দর মন্তব্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
loading...
অসাধারণ সব ছবি । আপু আমিও মেয়েবেলায় চলে গেলাম ।
– সেই কীটের সাথে মনে হয় কীটানু হয়ে যাচ্ছি । শুভকামনা জানবেন ।
ইটের পরে ইট মাঝে মানুষের কীট”
loading...
একদম ঠিক। দিন দিন রোগের সংখ্যাও বাড়ছে
অনেক ধন্যবাদ আপি
loading...
ছবিগুলো এ কংক্রিটের শহর থেকে বিদায় জানাতে চায় আমাকে, বারবার মনকে বলে তুমি এ শহর চলে যা, সত্যি এখন আর মন ভরে না এই শহরে। আবার পারিও না পেটের দায়ে। ছবিগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। সাথে কথাগুলো অসাধারণ।
loading...
আসলেই পেটের দায়ে আর দায়িত্ব
ছেলেরা তাও যেতে পারে ইচ্ছে হলেই
মেয়েরা এ জায়গায় বন্দি
ধন্যবাদ ভাইয়া
loading...
আজকালকার পলিশড্ ফটোগ্রাফির মাঝে অতিরঞ্জিত ফটোশফ বিবর্জিত আপনার এই সহজ সাধারণ ছবি আর তার সাথে বলা সাবলীল কথা গুলো আসলেই অন্য পোস্টগুলো থেকে ব্যতিক্রম। আপনি আরো অনেক ছবি তুলুন আমাদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করুন।
ছবি তোলা আমারো শখ কিন্তু ছবি আপলোড করা খুবই ঝামেলার কাজ মনে হয়।
loading...
আপি ছবি পোস্ট করা ঝামেলা নয় তো। ইমগোর এ আপলোড করবেন এবং এখানে
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে আপি সুন্দর মন্তব্যের জন্য
loading...
চমৎকার কিছু ছবি। এ পোড়া শহরে হঠাৎ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলাম যেন।
loading...
ধন্যবাদ মোকসেদ ভাইয়া ভাল থাকুন
loading...