ওহে জয়দেব

এক
মাটি থেকে ছিটকে উঠে মাটিতেই ভেসে যাবে,
জানা।
ঝরনা হল মাথার পাগড়ি, তাতে গোঁজা ময়ূরের ডানা
ঝরনার কোমরে বাঁকা নদী, চার চাঁদের আলোয় ঝলসাচ্ছে কাজল
ও মন ময়না ময়না ময়না… কৃষ্ণকথা বল

দুই
আমার যে ভবঘোরা — সুন্দর হবে
বনপাস স্টেশনে আচমকা ট্রেন থেমে গেলে
ব্যাগ থেকে বের করব রিভল…, নাহ বিস্কুট
কষ্টের নাড়িভুঁড়ি দুহাতে ভেতরে ঠেলে
গুণছুঁচ দিয়ে খুলি সেলাই করেছি
এবার এক প্যাকেট সবুজ আমলকি… খুচরো পয়সা
মেঝেয় ফেলে দিয়ে হকার মেয়ের পা ছোঁব।
ছায়ায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান থাকবে এ-জীবনে;
প্রুফে একটা বানান ভুল তন্ন তন্ন করার মতো
আমি খুঁজব প্রেম…

খুঁজতেই তো এসেছি

তিন
সে গৌরহরি সেবাশ্রমই হোক, কি
পবন বাউলের আখড়া
আমাকে দুপুরদুপুর ভাতে বসিয়ে দাও
সে হোক অজয়ে সোয়া-নগ্ন মেয়েবউ, কি
লোভে ফাজিল সাধু
আমাকে ঘুরঘুর করাও গাঁজাকলকের চারপাশে
গোল অন্ন-মুগডাল গোল পাতে
গোল ডাবুহাতায় বিতরণ করো
সে ফানাফানা কলার কাঁদি হোক, বাস্‌নায় জড়ানো,
মুসলমান কুটুমবাড়ি নেবে
কিম্বা দুশোমতো কুঠোভিখিরি
নদীকাটা দুধারি রাস্তায়;
আমাকে ভ’রে উঠতে দাও কান্নাসজলে

যেটুকু যাবে, তার সঙ্গে অবশিষ্ট উব্‌জে চলে যায়
তারপর যাবজ্জীবন আমার পরিবেশনা
আর তোমাদের ‘দারুণ খেলাম’!

দাঁড়াও, আগে নিজে মুগ্ধ হয়ে নি’

চার
তোমাকে কৃষ্ণনগরে দেখেছি না, দাঠাকুর?
আমি রবি, বউ খুঁজে পাচ্ছি না, সেবাইতকাকা।
জয়দেব-পদ্মাবতী মিলনমন্দির থেকে নেমে
আমরা আলাদা হয়ে গেনু। মেলায় পুলিশ আছে
নাম জিগ্যেস করার জন্যে। লিখে নিয়ে
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাইকে অ্যালাউন্স ক’রে দেবে।
কিন্তু বউটা বড় কাঁচা আমার, পূর্ণিমা।
এবারে যে-সে ডাক দেবে — পূর্ণিমা ধীবর,
এদিকে এসো; পূর্ণিমা ধীবর, চলো আমার সঙ্গে…

বউ হারিয়ে গেছে, ফিরে পাব
চলে গেলে আর ফেরত আসবেনি

পাঁচ
গৌরীদাসের সঙ্গে চৈতন্যের মিলন হল কোথায়?
কেউ বলছেন শ্রীখণ্ডে, কেউ কাটোয়ায়,
কেউ বা মাধাইতলা। আমরা বলি,
স্থান গুরুত্বের নয়, কথা হল কাল।
কোন কালে দেখা?
যেথা যেথা নিত্য হরিনাম সংকীর্তন।
সেথায় নিত্য নবদ্বীপধাম, নিত্য বৃন্দাবন।।

গোরাচাঁদ নিত্যানন্দাদি বন্ধু ও শিষ্যদের নিয়ে নগর-পরিক্রমায় বেরিয়েছেন, বদনে হরিনাম — এমনি সময়ে গৌরীদাস উপস্থিত। তাকে দেখতেই গৌরাঙ্গের মনে পড়েছে শ্রীরাধার কথা। কেননা,
এই গৌরীদাস তো আর কেউ নন,
তিনি বৃন্দাবনের সুবল। মহাপ্রভু গৌরীকে জড়িয়ে ধ’রে “রাধা রাধা” ব’লে উচ্চস্বরে…

আহা, সে কী অশ্রু! কোনও ভক্ত বলছেন
প্রভুর দু’চোখ বেয়ে মুক্তো গড়িয়ে পড়ছে। আবার কোনও ভক্ত — না না, গড়িয়ে পড়ছে মুক্তি। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের ভক্তিরূপ গাল বেয়ে মুক্তি গড়িয়ে পড়ছে গো!

.
[প্রথম অংশ। ‘ভুবনভোজন চলছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে।]

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ওহে জয়দেব, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৫-০৯-২০২৩ | ২০:০৫ |

    এবারে যে-সে ডাক দেবে — পূর্ণিমা ধীবর,
    এদিকে এসো; পূর্ণিমা ধীবর, চলো আমার সঙ্গে… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...