বীণাপাণি বনাম খেয়ালী

তিন
প্রভাতে উভয় সেনা করিল সাজন
কুরুক্ষেত্রে গিয়া সবে দিল দরশন
যে যার লইয়া অস্ত্র যত যোদ্ধাগণ
সিংহনাদ করি রণে ধায় সর্বজন

দিদিমার মুখে শুনে শুনে অর্ধেক কাশীরাম দাস মুখস্থ চাঁদের। খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ তার নবম দিনের যুদ্ধ মনে পড়ে গেল — দ্রোণাচার্যের পতন।

কিন্তু চাঁদ চিরকাল এক পয়ার থেকে উড়ে আর এক পয়ারে ডানা মুড়ে বসে। থঙ্গরাজের মতো হাইট বীণাপাণির গোলি কেষ্টদা, সে যেই খেয়ালীর স্ট্রাইকারের পায়ে ঝাঁপিয়ে গোল বাঁচিয়ে দিল, ওমনি জিভ নড়ে ওঠে একশো আট নামে :

হিরণ্যকশিপু-র উদর-বিদারণ
প্রহ্ললাদে করিলা রক্ষা দেব নারায়ণ
বলীরে ছলিতে প্রভু হইলা বামন
দ্রৌপদীর লজ্জা হরি কৈলা নিবারণ

শুণ্ডে শুণ্ডে জড়াজড়ি লেগে গেছে। কালমার্তণ্ড দাপিয়ে বেড়ায়, তাদের বুটের স্পাইকে খুরজ-খুরজ হয়ে গেল ঘাসের জনসমাজ। পায়ে পায়ে চার্জ ফেটে পড়ছে দোদমার মতো, কালো কাদা ছিটকে দর্শকের চোখেমুখে। প্রাণ জায় পর সম্মান না জায়। চাঁদের চোখ হাঁ ক’রে থাকে, গায়ে করলাকাঁটা, আর তার পা-সন্ধির পটল লোহাশক্ত হয়ে উঠেছে উত্তেজনায়। প্যান্টের পকেটে বাঁ হাত ঢুকিয়ে মুঠোয় ধ’রে থাকে, থুতনি ধক ধক ক’রে ঘোরে যেদিকে বল, আর ঠোঁট বাতাসের বেগে বিড়বিড় করছে পাঁচালি। এইমাত্র শিনবোনে বুটের লাথি খেয়ে বংকাকে ছটফট করতে দেখে চাঁদ আবার স্লিপ ক’রে লক্ষ্মীবন্দনায় চলে গেল :

বৃদ্ধা বলে পতিহীনা আমি অভাগিনী
কী কাজ শুনিয়া মম দুঃখের কাহিনি
পিতাপুত্র ছিল মোর অতি ধনবান
সদা ছিল মোর ভাগ্যে লক্ষ্মী অধিষ্ঠান…

চার
ফ্রিকিক ভন্ডুল ক’রে হলুদ কার্ড দেখেছিল পিকু, কিন্তু খেয়ালী এই লঘুদণ্ডে রেগে আরও লাল, কারণ তাদের কোচ কাম নির্ভরযোগ্য লেফট ব্যাক অপরেশ মুখার্জি মাঠের বাইরে শুয়ে, কোমরে বরফ ঘষা চলছে। টিম বেশ গগন-গগন খেলছিল, আর পনেরোটা মিনিট কাটাতে পারলে…! তারপর তোদের যেতে হবে না আমাদের পাড়ার ওপর দিয়ে সরকারি লাইব্রেরিতে, কামদেবপুর হাটে যাবি না অথবা কল্যাণী? ধ’রে ক্লাবঘরে বেঁধে রেখে দেব!

কিন্তু শুধু বল উড়িয়ে চললে কাদামাঠে অর্ধেক শট কেটে গিয়ে নিজেদেরই গোল লাইন টপকে দৌড়োয়। এই নিয়ে ন’নম্বর কর্নার পেল বীনাপাণি। পিকু ভয় খেয়ে নীচে নেমে গেছিল, আবার গুটিগুটি সেকেন্ড বারে এসে দাঁড়িয়েছে। নবদার কিক, কিন্তু খেয়ালির রজতদা, গিয়াসুদ্দিন এত লম্বা যে বলে অন্য কারও মাথা লাগানোর সুযোগ এন আই এল — নিল। তবু লবটা উঁচু হয়ে এগিয়ে আসছে, উঁচু হচ্ছে স্টপারদের মাথা, পিকু ভেবে নিল তার সামনে কেউ নেই — বল আর সে আর গোলপোস্ট। বাঁপায়ের বুড়ো আঙুলে গোটা শরীরের ভর এনে ডান পা মাটির সমান্তরালে কোমর পর্যন্ত তুলে ভলি নিল। কী আশ্চর্য, সব লাফানো মাথা এড়িয়ে বল সত্যিই পিকুর পায়ের কাছে গোঁত খেয়ে পড়ছে, পিকুর শটটা বল পৌঁছোনোর দু’সেকেন্ড আগে শেষ হয়েছে শুধু। কিন্তু নটরাজের মতো ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর বিদ্যুততাড়সে ঘুরে যেতে যেতে ছেলে সেটা বুঝে ফেলেছে। ঘূর্ণন না থামিয়ে আর এক চক্র কাটল সে, এবং দ্বিতীয় আবর্তনে ফের আগের জায়গাতে পৌঁছে পায়ে-বলে কানেক্ট করল। দ্বিতীয় পোস্টের কোনা দিয়ে বল জড়িয়ে গেল জালে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
বীণাপাণি বনাম খেয়ালী, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২১-০৮-২০২২ | ৭:০৬ |

    বীণাপাণি বনাম খেয়ালী'র দ্বিতীয় খণ্ডেও একরাশ মুগ্ধতা রাখলাম প্রিয় কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...