এমন প্রেসটি কোথাও খুঁজে…
এ বছর বইমেলায় কবিতার বইটা না বেরোলেই নয় ব’লে প্রুফে নাক গুঁজে বসে আছি আর নাকের ডগা লাল হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ! শেষ সহ্য করতে না পেরে মোবাইলের দিকে হাত বাড়ালাম: ম্যাডাম, এত বানান ভুল? যেখানেই গা লিখেছি, পা কম্পোজ করে দিয়েছেন; কথায় কথায় গায়ে পা তোলাটা কি খুব ভদ্রতার ব্যাপার!
ওপাশ থেকে প্রাণখোলা হাসির আওয়াজ এল।
— কী হয়েছে জানেন দাদা, মেশিনের প্রবলেম। এখন পা-টা আপনার ওখানে তোলাই থাক; চিন্তা করবেন না, সময়মতো মানে ফাইনাল প্রুফে নামিয়ে নেব।
— সে নয় আমি কিছুদিন ভোলেবাবা হয়ে দম আটকে চোখ মটকে চিৎ হয়ে থাকলাম, কিন্তু থাপা’স লজের কথা লিখেছিলাম একটা কবিতায়, সেটাকে করেছেন থাপা’স লেজ! আপনার পাহাড়ে ওঠা চিরকালের মতো বন্ধ হয়ে যাবে, সে খেয়াল আছে? আর জলপাইগুড়িতে আমার মামার বাড়ি, ওখানে গেলে লোকসভা নির্বাচনের মুখে আমি নির্ঘাৎ খুনই হয়ে যাবো! আপনি কিন্তু সমগ্র উত্তরবঙ্গসহ তামিলনাড়ুর সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলছেন, ম্যাডাম!
ডিটিপি এবার আন্তরিকভাবেই অবাক হয়ে গেল।
— আরে দাদা, অত ভয় পেলে সাহিত্যিক হওয়া যায়? আপনারাই তো দেশকে পথ দেখাবেন! মেশিনে লজ নিচ্ছে না তো আমি কী করবো? বিশ্বাস না হয় বাড়ি ব’সে লেজ সরি লজ না নাড়িয়ে প্রেসে এসে দেখে যান একবার। তাছাড়া, এখন লজফজ উঠে গিয়ে হোম স্টে-র জামানা। সময়টাকে ধরার চেষ্টা করুন, আপনি তো মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস লিখছেন না, লিখছেন আধুনিক মডার্ন কবিতা!
শুনেছি বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে পড়লে প্রতিভাবান মানুষেরা বজ্রকঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার প্রতিভা হালদার বা বোস বা মুখার্জি কিছুই নেই বলে আরও বেশি নেতিয়ে যাই। তারপর সকাল থেকে আকাশ অংশত বদমায়েসি করে যাচ্ছে, রোদ ওঠার নামই নেই! শীতে কাঁপতে কাঁপতে বললাম:
—- আরও একটা কথা…ভেবেছিলাম চেপে যাব, কিন্তু না বললে বুকের ভাত হজম হবে না…।
— বলুন বলুন আবার কী ভুল পেয়েছেন? বাই দ্য ওয়ে, বুকের ভাত বলে কিছু হয় না।
— ওহ, সরি! ম্যাডাম, বিগত পঞ্চাশ বছরে আমার অন্তরে অনেক মেয়েই আঘাত দিয়ে গেছে, কিন্তু কেউ বলতে পারবে না কমপ্লেন করেছি বা আশা হারিয়েছি কোনওদিন। অথচ আজ আপনি যেভাবে সেই ভালোবাসার অপমান করলেন, তারপর আমার মতো ছোটলোক কবি ইয়ে ছোট কবির পক্ষে নিজেকে সামলে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে! এভাবে কেউ কখনও একান্ত গোপন অনুভূতিকে ভেঙে চুরমার করে দেয়নি তো!
— আহা, তলেতলে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলেন দেখছি! জানি আপনি ছিটিয়াল, গায়িকা জয়শীলা বাগচি বলে দিয়েছিল; ‘সম্মোহন’ পত্রিকার বীরেশ্বর সমাদ্দারদাও আগাম সাবধান করেছে ওকে আর যাই করো খবরদার ফোন নাম্বার দিও না, কিন্তু এসব বাদে আপনি মানুষটা…।
—ওরে বাবা সেকথা হচ্ছে না! আমার ‘মহাকাশের হেডফোন’ কাব্যগ্রন্থের তেষট্টিটা কবিতার চৌষট্টি জায়গায় (উৎসর্গপত্র ধরে) ‘ভালোবাসা’ শব্দটা প্রয়োগ করেছিলাম, আর আপনি সবগুলোকে কম্পোজ করে বানিয়েছেন ‘বালোবাসা’! দেখে ওভারডোজ কাম্পোজ খেয়ে সুইসাইড করতে ইচ্ছে করছে! আমার প্রেমকে এভাবে দুহাতের দশ আঙুলে পিষে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? জানি এখুনি বলবেন, মেশিনের দোষ।
— দূর মশাই, তানসেনের মতো বারবার মেশিন ধরে টানছেন কেন? আমি যা করেছি খুব ভেবেচিন্তে হিসেব কষে আপনার বালোর জন্যেই করেছি। টিভিমিভি দ্যাখেন না নাকি? ‘রানী রাসমণি’ হিট করার পর আজকাল ‘ভালোবাসা’ কেউ বলছে না। ভ আর কোত্তাও নেইকো, তেনার জায়গায় ব এয়েচে। ও বানান পালটানো যাবেনি। অ্যাকোন আমায় না জ্বালিয়ে পোনটা রাকুন দিকি!
loading...
loading...
হাহাহা।
এমন দেশটি … ইয়ে মানে এমন প্রেসটি কোথাও খুঁজে পাবো নাকো আমরা। অভিনব অভিজ্ঞতা। 
loading...
রানী রাসমণি’ হিট করার পর আজকাল ‘ভালোবাসা’ কেউ বলছে না। ভ আর কোত্তাও নেইকো, তেনার জায়গায় ব এয়েচে। ও বানান পালটানো যাবেনি। অ্যাকোন আমায় না জ্বালিয়ে পোনটা রাকুন দিকি!
অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে চন্দন দা।
loading...
জামানাই বদলে গেছে দাদা। এলেবেলে শব্দে ভরে গেছে চারিদিক।
loading...