ফড়িংভাবনা
নারীপুরুষ সম্পর্ক যখন ভাঙে, সব সময় যে দুহাতে ছুঁতে পারার মতো কারণ লেগে থাকে তাতে, এমন নয়। এক-কলসি ভালোবাসা আর সেই প্রেমেই ডুবে থাকার সাবমেরিন ইচ্ছে সত্ত্বেও প্রতিদিন নানা দুদুভাতু কারণে মনোমালিন্য হতে হতে দুজনে যেন নিজেদের কাছে হেরে গিয়েই অন্যকে হারিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে পৌঁছোয়।
আর ‘বাস্তব’ হেতুসকল, যেমন টাকাপয়সা, নির্যাতন ইত্যাদির সর্বসমক্ষে আসা পল্লব সরিয়ে দিলে চোখে পড়তে পারে, নিচে সুপক্ক পেয়ারাফলের মতো ভুলবোঝাবুঝিই চুপটি করে বসে ছিল।
আমি দেখেছি, সম্পর্ক-বিচ্ছিন্নের একটা বড় মহাদেশ অশনিবেগে, না জাঁক দেরিদা নয়, জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এত ঘনিষ্ঠ মানুষটাকে বুঝতে ভুল হল কেন, সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখেও কেন ঠকলাম, সেই সব গুগলি ‘পড়ে’ নিতে চাইছে তারা। কেননা, ভাঙনকালে তো দুজনেই নিজেকে অন্যের দ্বারা ভিন্ন বা এমনকি একই ইস্যুতে প্রতারিত ভেবে থাকে!
আঘাত আর ব্যথা কার্যকারণ সম্পর্কে বাঁধা আছে। কিন্তু আঘাত যদি তোমাকে আশ্চর্য করে দিতে পারে, তবে যন্ত্রণা শতগুণ হয়ে ধরা পড়বে। কেননা, তখন ওই ব্যথাই ঘুরে গিয়ে আবার আঘাত করে, আঘাত থেকে পুনরায় ব্যথা জন্ম নেয়…ধারাবাহিক, নিউক্লিয়ার ফিশন-এর মত। আর প্রেম ভেঙে যাওয়ার মচমচ শব্দ যখন কানে ধাক্কা মারছে, মনকে তুমি যতই স্কুল ইউনিফর্ম পরিয়ে রেডি রাখো না, বাস এলেই তুলে দেবে, ভেতরের আর একটা অন্তর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলে যায়, ধুস, এ একটা বিচ্ছিরি দুঃস্বপ্ন, সত্যি হতেই পারে না। কাজেই ভেবে দ্যাখো, বিস্মিত হওয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই প্রেমিকের।
তারপর গ্রহমুক্তি হবে একদিন। যদিও মানুষের জন্ম বা মৃত্যুসময়ের মতো সম্পর্কের ভ্রূণধারণ বা দাহকাজের মুহূর্ত চিনে ওঠা যায় না, আশপাশে অনুভবী কেউ থাকলে টের পায়, শোকতপ্তের গলার ধড়া নেমে গেছে, মুণ্ডিত মাথায় জেগে উঠছে নরম কার্পেট।
কিন্তু ওই প্রাণ কি আগের জীয়ন হয়ে ওঠে আর কোনওদিন? বিচ্ছেদ কি বিকৃতি নয়! যেন টাইম মেশিনে চেপে একজোড়া জুতো বিচ্ছিন্নের ছোটবেলায় পৌঁছে তাকে গাছ থেকে খসা জামের মতো থেঁতলে দিয়ে আবার ফিরে এসেছে বর্তমানে। তাই যখন সে প্রেম হারালো, ওই বিকৃতির বীজ ফুটে উঠতে লাগল ভেতর। সবাই দ্যাখে, মানুষটা আগে তো এমন ছিল না!
আমরা কেউ জানি না, ধ্বংস হওয়া সম্পর্কের সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে না এলে আজ ঠিক কেমন দেখতে হতাম, গলার আওয়াজ কিরকম হতো, হাঁটার ভঙ্গি তো পালটে যেত নিশ্চিত, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে হাসতাম রাস্তাঘাটে আর সমাজসেবামূলক কাজ; শীতের শ্বাসকষ্ট থাকতো না, পঁচিশ হাজার শব্দে উপন্যাস লিখতাম পুজোসংখ্যায়…আমরা কেউ জানি না, প্রেম ভেঙে সরে না এলে আমাদের প্রেম কি ভালো থাকতো!
loading...
loading...
সমসাময়িক এবং বাস্তবতায় ফড়িংভাবনা। ___ চমৎকার প্রকাশ প্রিয় চন্দন দা।
loading...
মানুষটা আগে তো এমন ছিল না!
চমৎকার ভাবনা
loading...
আঘাত আর ব্যথা কার্যকারণ সম্পর্কে বাঁধা আছে। কিন্তু আঘাত যদি তোমাকে আশ্চর্য করে দিতে পারে, তবে যন্ত্রণা শতগুণ হয়ে ধরা পড়বে।
loading...
ফড়িংভাবনাগুলোন এমনই হয়। জট পাকিয়ে যায়।
loading...