ভেলৌরযাত্রীর ডায়েরি

ভেলৌরযাত্রীর ডায়েরি

আমরা সবাই দেহ দিতে এসেছি। হাসপাতালে। মরণোত্তর নয়, মৃতদেহ অনেক স্বপ্নের জিনিস। ডাক্তারি শরীর আসলে দুরকম হয়: মৃত শরীর — বডি, আর জীবিত শরীর — পেশেন্ট। সেই পেশেন্ট আবার হাসপাতালে ভর্তি হলে হয়ে যাচ্ছে বেড নাম্বার।

কাজেই যতই আপনি বলুন আমি সো অ্যান্ড সো, অমুক চাকরি করি আর তমুক জায়গায় থাকি, উন্মুখ বসে নেই কেউ শোনার জন্যে। ফুলবডি জমা দিন, ওরা সেখান থেকে বাছবে: মাথাটা নেবো, না অণ্ডকোষ। পোশাক ফেলে, চশমা-চপ্পল সরিয়ে কুয়াশামাখা স্বরে পাশ ফিরতে বলে আচমকা পায়ুতে নল চালিয়ে দেবে। ধর্ষণের একশো বাহান্ন উপায় কোঈ সার্জন সে শিখে। আয়নায় দাঁড়ালে দেখতে পাবেন যৌনকেশহীন ১০ বছরের বালক/বালিকা।

হতেই পারে যে, চিকিৎসাবিদ্যা আপনাকে জীবিত বডি (পেশেন্ট) বানায় মৃত বডি থেকে দূরে সরাবে বলে। চেন্নাই আপোলো হাসপাতালের গেটে নীল নিয়ন জ্বলছে: “প্রাইসলেস লাইভস সেভড পঁয়ত্রিশ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার একশো একচল্লিশ” (২০ জুলাই, ২০১৭, রাত আটটা), যা প্রতি মিনিটে জোঁকের মতো ডিঙি পেড়ে বাড়ছিল। খুব কিছুদিনের মধ্যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যারও বেশি মানুষকে শোচনীয়ভাবে বাঁচিয়ে ফেলবে এরা।

আর লক্ষ করবেন চিকিৎসা সব সময় আপনাকে জানা কোনও নোমেনক্লেচারে ফিট করতে চাইছে। “মাঝে মাঝে অ্যাজমার ওষুধ নিতে হয়? তবে সিওপিডি কেস”। “মাঝে মাঝেই ঘুম হয় না? তার মানে স্লিপ নর্মাল”। আর এদের পরীক্ষাগার সমুদ্রের নিচে নানা গভীরতায় বসানো, আলাদা আলাদা সাগরিক জীব যেগুলো চালাচ্ছে। আপনার ইসিজি করবে লোহার দাঁড়াওলা একটা কালো রোগা অক্টোপাস। ইকো কার্ডিওগ্রাফির দায়িত্বে থাকা বেঁটেমতো বৃষ্টিভেজা শামুক এমন জড়িয়ে ধরে থুতুচুমু খাবে, আপনার বুকে ব্যথাই লাগবে না।

কিন্তু ঈশ্বর এমআরআই প্রদেশকে পৃথিবীর কিছুটা বাইরে সেই সব ডিমড নক্ষত্রে বসিয়েছেন যারা কবেই মরে গিয়ে তেঁতুলটক দাঁতের মতো ঠান্ডা। যেখানে পোশাক পালটে একা অপেক্ষা করতে হয় একার জন্যে, কিছু দূরে তিনজন মুখোশপরা অ্যালিয়েন কলমপিউটার নিয়ে কি সব আঁকছিল। আর দুই নার্স তোমাকে দুই বাজুতে ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই ইন্টারোগেশানস্পেসে যেখানে ঘড়ি আছে কিন্তু সময় নেই; রোগ নেই, অসুস্থতা চালু। যেখানে বরফবিদ্যুতের চুল্লিতে শুইয়ে দিয়ে, কর্ণাটকী সংগীতে পোড়ানোর পরে আমার মস্তিষ্কের কমলমুকুলদল খুলিল। খুলে এখানে ওখানে ছিটকে যাচ্ছে, হঠাৎ চোখে ভেসে উঠল এতক্ষণ বসে থাকা ক্লোকরুমের আকাশি দেওয়াল…কে জানে কে, যে সবার জন্যে লিখে গেছে, প্রশংসনীয় পেনসিলে, সুদূর বাংলাধ্বনিতে:
“আমাকে কেউ মারতে পারবে না…”।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৪-১১-২০১৮ | ১০:০৯ |

    Smile ইহাই বাস্তবতা প্রিয় চন্দন দা।

    GD Star Rating
    loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০৪-১১-২০১৮ | ১৫:১৭ |

    হাসপাতালের অভিজ্ঞতা আমাদের ভারতীয়দের কম বেশী অনেকটাই মিলে যায় দাদা।

    GD Star Rating
    loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০৪-১১-২০১৮ | ২০:০৬ |

    'আমরা সবাই দেহ দিতে এসেছি। হাসপাতালে। মরণোত্তর নয়, মৃতদেহ অনেক স্বপ্নের জিনিস। ডাক্তারি শরীর আসলে দুরকম হয়: মৃত শরীর — বডি, আর জীবিত শরীর — পেশেন্ট। সেই পেশেন্ট আবার হাসপাতালে ভর্তি হলে হয়ে যাচ্ছে বেড নাম্বার।'

    হাসপাতালে গেলে আমারও এমনটা মনে হয়।

    GD Star Rating
    loading...