ডায়েরি : চিকিৎসালয়শালা
এক
নগ্ন হও নগ্ন হও — এই শুধু স্লোগান
যেন পোষাকেই সব অসুখ লেগে আছে
“দেখি দেখি” বলে বারবার দেখার নিচে
চলে যাচ্ছে হাঁস-নার্সেরা
যত বলি, লজ্জাই আমার একমাত্র প্রেমিকা,
“না, ভিজিটিং আওয়ার্স ছাড়া কেউ কাছে থাকতে পারবে না।”
দুই
সিডাকটিভ সাদা জোব্বা-পরা আমি
হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম
তরুণীর পায়ের সিঁড়িতে
বললাম, বহু কষ্টে চেতনা পেয়েছি
মাঝামাঝি স্পিডে এবার চালাতে চাই শান্তিজীবন
আমার কাতরোক্তি গির্জার সমবেত সংগীত ছাড়িয়ে উঠছে দেখে
দরজা ঠেলে যাজক ঢুকলেন, দেখতে খ্রিস্টের অপোজিট…
ভেবেছিলাম প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে আমার মহৎ সূক্তগুলো
আবৃত্তি করি
বলি যে আর একবার জ্ঞান হারালেই আব্বুলিশ, আবার
অন্ধকার গর্ভ থেকে টর্চ হাতে উঠে আসতে হবে…
আমি যত ভেঙে পড়ি, চোখে চোখে ছুরি-বিনিময় করে তারা
ইউরেনিয়ামের অনুরোধ পাঠায় চতুর্দোলায় উঠে আসতে
জোব্বার ফাঁকে বিষণ্ণ পুরুষাঙ্গ দোল খাচ্ছে, দেখি
তার দিকে চিকিৎসার দুই বাচ্চা
থমথমে সূর্যাস্ত মুখে তাকিয়ে রয়েছে
তিন
আমি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্তান
আর ব্যাধি ব্রহ্মস্বাদময়
নকুলদানার ভেতরে সরষেবিন্দু যেন।
নিজের বিগ্রহশরীর বয়ে এনেছি হড়হড় বমির আদলে
মাথার ওপর পিছলে যাচ্ছে ছাদের উজ্জ্বল চামড়া
আমি কি এই ইস্তিরি করা পিচে
রক্ষণাত্মক ব্যাট তুলবো অ্যান্ড ইট ড্রপড ডেড ইন ফ্রন্ট
অফ হিম?
না না, এ-বাদাম সে-বাদাম নয়
চার
নিজের মৃত্যুকে শ্রদ্ধা করি
তাই তাকে কোনও আলোচনায় আনব না
পিওন মানিঅর্ডার, তাছাড়া অন্য কারও কাছে
নেবো কেন সোয়ামির নাম?
তোমাদেরও মান্য করি — জমদগ্নি ছেলেমেয়ে,
ডাল ঝুঁকিয়ে নিচু করা থেকে
আঁকশিগুলো খুব ধারালো থেকে
রেডি ওয়ান টু থ্রি-র ঝাঁকুনিতে
আমার সমস্ত শিউলি ঝরে পড়ল তোমাদের কাঁটাচামচ উপচে
স্যুপ বোলের ফাঁকায়…
পাঁচ
ছিনিয়ে নিলে, আমার জঠর থেকে আমার দেহকে…
বানানো করুণায় ভেসে যায় সার্জারির নাট্যশালা
শরীরেরও একটা শরীর থাকে যে জেগে উঠেছে দৃষ্টি-অপমানে
আমিও অবাক দেখি, এই দেহ আসলে কোরাল-দ্বীপ!
নীল মাংসস্রোতের নিচে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখছে পাঁচ-ছ’জন ট্যুরিস্ট
তারপর নিষেধাজ্ঞার ভেতরে হাত ডুবিয়ে মুচড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে, আহ্,
দেহের মুকুল!
এ-কায়াভাণ্ডার ফতুর করে ভোরের কুয়াশামুখী প্লেনে চেপে
চলে যাচ্ছে ওরা…
ছয়
হলুদ ভিজিটিং কার্ড হাতে গলি ফুরোচ্ছি…কোনায় কোনায় প্রহরী।
শীতলী প্রাণায়ামের ছায়া পড়েছে নার্সের হেঁটে আসায়,
প্রভুর সেগুন কাঠের ঝকাস গ্যালারিতে।
নিজের অসুখ একটা পুঁটলিতে ফুলগিঁট দিয়ে
মুখে লাঠি পরিয়েছি, কাঁধে ফেলে উঠে যাব ওপরতলায়
তার আগে দেয়ালের অনৈতিক দিক থেকে কেউ এসে
চিনিয়ে দিল দূরের পুরনো ব্লক,
ভেঙে পড়া কিন্তু নির্মীয়মান
লিফটে শোয়ানো সাদা ট্রলি তার পোঁদ-ওলটানো স্যালাইন জানালো সিঁড়ি দিয়ে ওঠো,
অথচ শেষ সিঁড়িটা এখনও তৈরিই হয়নি, দুজন মিস্তিরি
তাড়াহুড়ো করে পাটায় মিক্সচার ঢালতে গিয়ে
নিজেদের গলায় ঢেলে দিচ্ছে আর বলছে দশ মিনিটে হয়ে যাবে
নিজেকে ভিজিট করতে সময়ের দশ মিনিট আগে চলে এসেছি যে…
loading...
loading...
অপার বিস্ময়ে আপনার লিখার কৌশল লক্ষ্য কবি প্রিয় চন্দন দা। অভিনন্দন রইলো।
loading...
চিকিৎসালয়শালা। ভীষণ অদ্ভুত এই অংশটি। জীবন কবিতায় মুগ্ধতা দাদা।
loading...
* অভিনব উপস্থাপনা, মুগ্ধকর…
loading...
পড়লাম চন্দন দা।
loading...