একজন দার্শনিক হিসেবে বলছিঃ ৭

একজন দার্শনিক হিসেবে বলছিঃ ৭

প্রেম এমন এক নীতিকথা যেখানে বাবা তার সন্তানকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসবেন। কিন্তু যখন দৈব অপছন্দে জাতির সবচেয়ে আদরের প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রুষ্ট দেবী এমন এক শীতল নিষ্ক্রিয়তা ছুঁড়ে দিয়েছেন যা উপহাস করছে মানুষের বিপদ কেটে বেরনোর সব চেষ্টাকে, যখন ভবিষ্যতবক্তা এই বলে তার শোকাবহ ভাষণ শেষ করলেন যে দেবী এক তরতাজা যুবকের রক্ত না পেলে তৃপ্ত হবেন না — তখন তুমি, আমার প্রেমিকা, নিশ্চয়ই সাহসের সঙ্গে সেই ক্ষতিস্বীকার করবে? তুমি তোমার অনিচ্ছা গোপন করবে, যদিও বারবার আমার মনে হবে, যদি সেইসব কমশিক্ষিত মহিলা হতে পারতাম যারা কাঁদতে সাহস করে! যদি বুদ্ধিমান না হতাম, সুন্দর না হতাম, সম্পাদক না হতাম, যাকে বুদ্ধিমান সুন্দর সম্পাদকের মতো ব্যবহার করে চলতে হয়? সমগ্র মানবজাতির মধ্যে মাত্র দুজনকে তুমি জানাতে পেরেছ যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটালে, বর্তমান প্রেমিক আর আগের স্বামী…না না, এটা কোনও সমস্যা নয়, আইনস্টাইনও পৃথিবীতে মাত্র ছ’জনের কাছে মন খুলে কথা বলতে পারতেন।

আমি জানি এই বিষাদ আস্তে আস্তে গোটা কলকাতার হৃদয়ে সঞ্চারিত হবে, যেভাবে ছড়িয়ে পড়বে তোমার কাজের জন্যে মানুষের আনন্দ, সবাই হাসিমুখে বলাবলি করবে মুদিখানার দোকানদার থেকে বাংলাসাহিত্য হয়ে অটোচালক অ্যাসোসিয়েশানের মঙ্গলের জন্যে আত্মক্ষতির মতো এই খুনটা তুমি করলে তাকেই যে কিনা তোমার প্রেমিক, তোমার সন্তান, তোমার বুবু — আহা কী ঢেউখেলানো চুল, তার নাকের পাশে হাসির ভাঁজদুটো, তার বার-চকোলেট পুরুষাঙ্গ। ক্ষতিস্বীকারের মুহূর্তে আমার চোখের জল তোমাকে আলোড়িত করবে নিশ্চয়ই, ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে নেবে, কিন্তু সাহসিকা তার ছুরি উঁচু করে ধরতে ভুল করবেন না। তারপর যখন সংবাদমাধ্যম পৌঁছলো বাড়িতে, আমার স্ত্রী আদৌ রেগে ওঠেনি, নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ; বরং সিজন চেঞ্জের অল্প খুকখুক কাশির মতো সামান্য গর্বিত লাগছিল তাকে, তোমার কাজের কিছুটা ভাগ নিতে পারার অহংকার, কারণ সে তো আমাকে তোমার চেয়ে আরও অনমনীয়ভাবে আরও আজীবন ধরে রেখেছিল, তাই না?

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১০-০৬-২০১৭ | ১০:০৭ |

    লিখাতে জীবন অনুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি ব্যাখ্যাও বেশ মনোগ্রাহী।
    জীবনকে খুব কাছাকাছি থেকে না দেখা থাকলে এমনি লিখা সম্ভব নয় চন্দন দা। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. সাইয়িদ রফিকুল হক : ১০-০৬-২০১৭ | ১৩:১১ |

    ভালো লেগেছে। কিন্তু
    সবিনয়ে বলছি:
    ‘তার বার-চকোলেট পুরুষাঙ্গ’—কথাটির অর্থ বুঝতে পারিনি।
    ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...