আমাদের দেশ দুর্দশার মধ্যে আছে। আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়তো নয়, কিন্তু চলছে চরম উত্তাপময় একটা দশা। কেউ নিচু বা স্বাভাবিক স্বরে কথা বলছে না; “কালো টাকার মালিক”, “স্বৈরাচারী”, “সাম্প্রদায়িক” আর “দেশদ্রোহী” — মূলত এই চার বিশেষণ প্রত্যেকে প্রত্যেকের দিকে ছুঁড়ে মারছে।
শুধু ওই চারটে শব্দই বা বলি কেন; রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া — মানে সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে সবাই “মোরা এক ভাষাতেই করি গান”। প্রত্যেকে খুব অসহিষ্ণু হয়ে অন্যকে ধান্দাবাজ সন্দেহে বকাবকি করছে। বোঝা যায়, উষ্ণায়ন প্রকৃতিতে নয়, বাসা বাঁধে আমাদের মাথার ভেতরে।
সবাই ঘটনার প্রতিক্রিয়া (reaction) দেখাচ্ছে, সাড়া (response) পাচ্ছি না একটাও। কিছু লোক বলছে, দেশের ভবিষ্যৎ অতিরিক্ত সূর্যকরোজ্জ্বল, কিছু লোক জনমৃত্যু আর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় মশগুল হয়ে আছে। এই রকমটাই হয়, ক্ষমতায় যে থাকে তার ভাষা দক্ষিণপন্থী আর ক্ষমতার বাইরে এলে ওই দলের বাক্যই বামমার্গী হয়ে পড়বে। আবহমান কাল ধরে, সে গণতান্ত্রিক হোক বা বিপ্লবী রাষ্ট্র, মসনদে থেকে যাওয়ার কলকাঠি মানেই হল দক্ষিণ আর মসনদে পৌঁছনোর কৌশলটি বাম।
সাধারণ নাগরিক ছাড়া পৃথিবীতে একা দাঁড়িয়ে থাকে না প্রায় কেউ। প্রত্যেকের দল আছে। যে দলে ফিট হতে চায়নি বা পারেনি, তার জন্যে থাকল “ব্রাহ্মণের জন্যে আনা সন্দেশ” — মানে মতবাদ। সমাজে বাস করা মানুষ কোনও কালেই খুব নিশ্চিন্ত ছিল না, নানা রকম সামাজিক শক্তি তাকে শোষণ করে গেছে। তাই সে নিজেকে বাঁচাতে জাতি বা ধর্ম বা সম্প্রদায় ভিত্তিক উপ-সমাজ গঠন করে নিতো মূল ইলেকট্রিক সার্কিটের মধ্যে লোকাল সেলের মতো করে। রাষ্ট্রের চরিত্র রাজনৈতিক হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ভেঙে রাজনৈতিক দলভিত্তিক গোষ্ঠী তৈরি হল। আমি কোন দল বেছে নেব তার পেছনে নিশ্চয়ই আমার স্বার্থ বা বাস্তব পরিপ্রেক্ষিত কাজ করেছে, এবং ওই দুটো জিনিসের ওপর ভিত্তি করে আমি যে ভবিষ্যতে দল পালটাবো না এমনও বলা যায় না; তবে যতক্ষণ যেখানে আছি, সেটাই আমার পরিচয়, দাঁতে-নখে তাকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। মতাদর্শের বেলায় অবস্থা আরও একটু সঙ্গীন। দল বদল হতে পারে, কিন্তু মতাদর্শে কোনও পরিবর্তন আনা খুব অসম্ভব। আমার দল, কিন্তু ইজম-এর আমি। মোটের ওপর কোনও মানুষই নিজের নয়। তাই একমাত্র দুভাবে সে হেরে যেতে পারে। নিজের দল বা মতবাদ হেরে গেল, নয়তো বিরুদ্ধ দল বা মতবাদ জয়ী হল। যার আত্মপরিচয়ের অভাব রয়েছে, হেরে যাওয়ার চেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন তার কাছে কিছু নেই।
(আরেকটু বাকি)
loading...
loading...
যতক্ষণ যেখানে আছি, সেটাই আমাদের পরিচয়।
দাঁতে-নখে তাকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। সবখানেই একই অবস্থা।
loading...