২০১৬ সাল। বাংলাদেশ থেকে আসছিলাম ইংল্যান্ডে কাতার এয়ার ওয়েজে, ঢাকা টু দোহা তারপর দোহা টু লন্ডন। ঢাকা থেকে দোহা পর্যন্ত পুরো ফ্লাইট ভরা মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। তাদের কথোপকথনে বুঝলাম অনিশ্চিত জীবন জেনে ও জমিজমা শেষ সম্বল বেচে তারা টাকা কামাতে যাচ্ছে। একজনের বউয়ের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে ৮০০ টাকা লাগবে, সে প্লেনে বসে তার সহযাত্রীকে দুঃখ করে বলছিল কোথা থেকে তার বউ টাকা টা পাবে সে তো দিয়ে আসতে পারে নাই।
তারপর হামাদ এয়ারপোর্টে এক বাংলাদেশি ক্নিনার মেয়ের সাথে কথা হলো। কাজের অল্প বিরতিতে সে আমার সাথে অনেক কথা বললো। বাংলাদেশ থেকে এজেন্টের মাধ্যমে তারা ২ লাখ টাকা খরচ করে আসে আর মাসিক বেতন ১৪৫০ রিয়েল মানে বাংলাদেশি টাকায় ৩০০০০ টাকা। অন্যদিকে পুরুষরা আসে ৪ লাখ টাকা দিয়ে আর বেতন পায় ১২০০ রিয়েল। দুই বছর পরপর চুক্তি বাড়ার কথা যেখানে সিংহভাগ বাংলাদেশিদের চুক্তি বাড়েনা। আরো জানলাম নেপালি শ্রমিকরা সরকারের মাধ্যমে আসে, মেয়ে ছেলে উভয় শ্রমিক জনপ্রতি ১ লাখ টাকার বেশি দেয়না। তাদের বেতন আমাদের দেশের শ্রমিকদের মত হলেও তারা বাড়তি সুবিধা পায় আর তাদের কাজের মেয়াদ ও বাড়ে শুধুমাত্র তাদের দেশের সরকারি তত্পরতার জন্য।
নেপালের মত ছোট একটা দেশ নিজেদেরটা বুঝলে আমাদের দেশ কেন বুঝেনা! আমার ধারণা সব দেশের জন্য নিয়ম এক। বাংলাদেশিদের বেশি টাকা গুণতে হয় কারণ আমাদের দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আর এই ব্যাপারগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানলে হয়তো তারা ঝামেলা এড়ানোর জন্য আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেয়াই বন্ধ করে দিবে। সেবার খেয়াল করে দেখেছিলাম নেপালি, ফিলিপাইন, সাউথ ইন্ডিয়ান শ্রমিক অনেক সে তুলনায় বাংলাদেশি কম ছিলো এয়ারপোর্টে। জানিনা এখন অবস্হার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে কিনা মাঝে তো গেলো দুইটি বছর।
খুব কষ্ট লেগেছিল মেয়েটির কথা শুনে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে মাসিক আয় করে ১২০০ থেকে ১৫০০ রিয়েল। সেখানে কোনরকমে খেয়ে পরে থাকতে একজনের মাসিক খরচ লাগে কমে ৩০০ রিয়েল। কতো কষ্ট করে তারা দেশে টাকা পাঠায়। হয়তো তাদের পরিবার সেটা অনুধাবণ করতে পারেনা, ভাবে কত ই না আয় করে। প্লেনে বসে সেদিন শুনছিলাম অনেকের কাছে কাজে যেতে না যেতেই পরিবার থেকে কতো আবদার আসছিল।
আসলে যারা মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে যায় তারা বড় বেশি অসহায়। কলুর বলদের মত খাটে পরিবারের মানুষগুলোকে আরাম দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের কষ্ট অনুধাবণ করার জন্য কেউ নেই, কেউ তাদের নূণ্যতম সম্মান ও দিতে চায়না। কে বুঝবে তাদের কষ্ট যেখানে দেশের সরকার তাদের চিন্তা করতে উদাসিনতা দেখায়।
loading...
loading...
পরিস্থিতি একই আছে কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনও প্রবাসমূখী মানুষের ঢল থামেনি। রুটি রুজির আশায় মানুষ ছুটছে।
শব্দনীড় এ আপনাকে স্বাগতম বৈতরণী হক।
loading...
'আসলে যারা মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে যায় তারা বড় বেশি অসহায়।' কথাটা সর্বৈব সত্য। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় আমাদেরই প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মুখচেনা কিছু দালাল শ্রেণীর চতুর সহকারীরা।
স্বাগতম দিদিভাই।
loading...