[গুরুচরণ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে কয়েকজন পড়ুয়া এবং দুইজন শিক্ষক। শিক্ষকরা আলোচনারত।]
অমায়িক পাড়ুইঃ তাহলে বলছেন আমার ছাত্ররা পুরোপুরি প্রস্তুত। মানে আসন্ন সাক্ষাৎকারের মোকাবিলায় ওরা তৈরী।
ঝিলমিল মুখার্জীঃ বললাম তো যা বলার বলেছি এবং যা করার করেছি।
অমায়িকঃ না মানে যদি একটু জোর দিয়ে বলেন তাহলে আমার ভরসাটা জমাট হয়, অর্থাৎ কংক্রীট হয়। আচ্ছা ম্যাডাম, আপনাকে কি আমি বলেছি আর ছ’মাস পরে আমার রিটায়ারমেন্ট?
ঝিলমিলঃ অসংখ্যবার বলেছেন। এইমাত্র আরো একবার বললেন। যদি কিছু মনে না করেন—শুনতে শুনতে আমি যেন হাঁফিয়ে উঠেছি।
অমায়িকঃ ও! আপনার বয়স কত?
ঝিলমিলঃ এটা আবার কি ধরণের প্রশ্ন? আমার বয়স ২৯।
অমায়িকঃ ঐ কারণে আপনি আমার ব্যাথা, বেদনা, উদ্বেগ, জ্বালা, আতংক কিছুই বুঝতে পারছেন না। আসলে উনত্রিশ বছরে কিছুই বোঝা যায় না। যখন আপনার বয়স হবে উনষাট বছর ছয়মাস তখন, কেবল তখনই আপনি সবকিছু গভীরভাবে। মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করতে পারবেন।
ঝিলমিলঃ ও! আচ্ছা! শুনে আস্বস্ত হলাম যে একদিন আমি পারব। কিন্তু আজ তাহলে কি করব?
( বাইরে থেকে—আসব স্যার?)
অমায়িকঃ হ্যাঁ,হ্যাঁ, এসো, এসো। ( রাজিবুল প্রবেশ করে)
রাজিবুলঃ বসব স্যার?
অমায়িকঃ হ্যাঁ, বসবে বৈকি। বেঞ্চির উপর অবনত হয়ে বস। আর তোমার ওই দাঁতগুলি গোপন করে, মুখটি বন্ধ করে একটু ইতিহাস ভূগোলের চিন্তা কর—এই ম্যাডাম আপনি একটু দেখুন তো ও সব পারে কিনা।
( আসব স্যার? এইবার ফতিমা উঁকি মারে)
ঝিলমিলঃ এসো। ওইখানে বসো কোন গোলমাল করবে না।
এইসময় চীৎকার করে উৎপল নামের এক ছাত্র –
উৎপলঃ দিদিমণি, হামিদা দাঁত নিয়ে নখ কাটছে।
ঝিলমিলঃ চুপ! বলেছি না চীৎকার করবে না? একি হামিদা, তুমি আবার দাঁত দিয়ে নখ কেটেছ?
হামিদাঃ না, ম্যাডাম। ও মিথ্যা করে নালিশ করছে।
অমায়িকঃ না, না, নখ দিয়ে কখনও দাঁত কাটবে না। এতে দাঁতের ময়লা নখে গিয়ে বুকের অসুখ করতে পারে।
ঝিলমিলঃ কি?!
অমায়িকঃ আচ্ছা হামিদা অসুখ কথার মানে কি?
হামিদাঃ ওর মানে জ্বর ডায়েরিয়া নয়ত সর্দি-কাশি, বাতের বেদনা।
ফতিমাঃ তার কোন মানে নেই—আচ্ছা স্যার, অসুখ মানে ব্রণ বা ফোঁড়াও হতে পারে?
অমায়িকঃ চুপ! মুর্খের দল! আমি তোমাদের কাছে কোন অসুখের নাম চাইনি, অসুখ মানে জিজ্ঞাসা করেছি। যে মানে জানে না, সে কিছুই জানে না—আশা করি আমি কি বলতে চাইছি তা তোমরা বুঝতে পারছ?
ফতিমাঃ হ্যাঁ, কিন্তু ফোঁড়া কেন অসুখ হবে না সেটা বুঝতে পারিনি।
রাজিবুলঃ কিন্তু স্যার এমন কি কোন অসুখ হতে পারে যার কোন নাম নেই? আর যার নাম নেই তার থাকা আর না থাকা সমান নয় কি?
ফতিমাঃ তুমি চুপ করো। অসুখ কোন অসুখের নাম নয়, আর ফোঁড়া থাকা আর না থাকা কখনও সমান নয়।
ঝিলমিলঃ তোমার কি হয়েছে ফতিমা? তুমি তখন থেকে ফোঁড়া ফোঁড়া করছ কেন?
রাজিবুলঃ হয়ত ওটাই ওর অসুখ।
ফতিমাঃ হ্যাঁ হয়েছে।সারা পৃথিবীতেই কারও না কারো ফোঁড়া হয়। এই স্কুলের সক্কলের কখনও না কখনও ফোঁড়া হবে। রাজিবুল দেখো তোমারও হবে।
অমায়িকঃ ঝিলমিল,
ঝিলমিলঃ বলুন—
অমায়িকঃ এরা কারা? এরা কি সব আইনস্টাইন না প্লেটো? এরা একটা সামান্য কথা নিয়ে এত মাঞ্জা দিচ্ছে কেন? এত প্যাঁচ কষছে কেন? ও! আমি পাগল হয়ে যাবো, এদিকে ছ’মাস পরেই আমার রিটায়ারমেন্ট—
( বাইরে থেকে এক ভদ্রলোক প্রবেশ করে)
পরিদর্শকঃ এটাই কি গুরুচরণ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়?
অমায়িকঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ এটা ঐ বিদ্যালয়। মানে বিদ্যালয় হিসেবে আদর্শ আর খাঁটি। আপনি নিশ্চয় বিদ্যালয় পরিদর্শক?
পরিদর্শকঃ ঠিক অনুমান করেছেন। আপনি?
ঝিলমিলঃ উনি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমায়িক মান্না।
পরিদর্শকঃ নমস্কার।
অমায়িকঃ না, না, স্যার কি যে করেন? আমার এই ছমাস আর মাত্র চাকরি আছে –এখন আমি শুধু আপনাকে নমস্কার করতে চাই এক তরফা। আর দেখবেন স্যার রিপোর্টে যেন কিছু গোলমাল না হয়।
পরিদর্শকঃ মানে?
অমায়িকঃ সে আমি পরে বলব। এই তোমরা সব স্যারকে নমস্কার করো।
(সবাই তাই করে) (ক্রমশঃ)
loading...
loading...
"এরা কি সব আইনস্টাইন না প্লেটো? এরা একটা সামান্য কথা নিয়ে এত মাঞ্জা দিচ্ছে কেন? এত প্যাঁচ কষছে কেন? ও! আমি পাগল হয়ে যাবো, এদিকে ছ’মাস পরেই আমার রিটায়ারমেন্ট !!!"
পুরো সেটআপটি আমার কাছে বেশ লেগেছে। বিশেষ করে ছ’মাস পরেই আমার রিটায়ারমেন্ট। মাঝে মাঝে এমন লিখাতেও মনে প্রফুল্লতা আসে। দারুণ মি. বাসু দেব।
loading...
বেশ লেখেছেন
শুভ কামনা রইল
loading...
দুই রথির আলাপচারিতা বেশ উপভোগ্য লেগেছে। চালিয়ে নিন দাদা। আছি।
loading...
পরিদর্শক সাহেব এবার গুরুচরণ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভালো রিপোর্টই দেবেন।
loading...