একদিন এক দাঁতালো ক্রেন...

এখানে মানুষের বেশকিছু বাড়িঘর ছিল। কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ বাহারি পণ্য বিক্রেতার নিত্য আনাগোনা। বেশ কয়েকটি ছোটো বড় সারিবদ্ধ চায়ের দোকান। অনবরত ‘টুং টাং’ শব্দ চামচ পেয়ালার। দুর্দান্ত আড্ডা, গল্পের সরস আসর। হালফিল রাজনীতি সমাজ ক্রীড়া বিনোদন ইত্যাদি এন্তার বিষয় নিয়ে দিনরাত সরগরম আলোচনা মানুষের। এ সব নিয়ে এক কথা দু’কথায় কখনও মতভেদ চরমে উঠলে তিক্ততা, তপ্ত বাক্য বিনিময় ও এক পর্যায়ে অকথ্য গালিগালাজ; এমনকি হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়তো অতি উৎসাহী দুয়েকজন। যথারীতি উৎসুক শ্রোতা দর্শকের ভিড় জমে যেতো ঘটনাস্থল ঘিরে (পরবর্তীতে বিচার শালিস পর্যন্ত গড়িয়ে থাকবে দুয়েকটি ঘটনা)।

স্মিতমুখ একদল আলুথালু শিশু খেলা করতো চারপাশে- ফুটবল ক্রিকেট কানামাছি ওপেন্টি বায়োস্কোপ ছু কুতকুত; কখনও ওড়াতো ঘুড়ি। ওদের খিলখিল হাসির শব্দ আন্দোলিত হতো বাতাসে। ওদেরও ঝগড়াঝাঁটি হতো, মারামারিও বেধে যেতো কদাচিত। কিন্তু সে সব বেশিদূর গড়াতো না বড়দের মতো। ওরা নিজেরাই সেগুলো মিটিয়ে মেতে উঠতো খেলায়।

অপরাহ্ণে গৃহবধূরা সেজেগুজে আড্ডা জমাতো এখানে; সালোয়ার কামিজ পরা দুয়েকজন কিশোরীও থাকতো। তারা মজা করে গল্প করতো, কথা বলতো হেসে হেসে। জানি না, কি ছিল সে সব হর্ষোৎফুল্ল আড্ডার বিষয়, শুধু দেখতাম মাঝেমাঝে হাসির গমক বেড়ে গেলে আহ্লাদে ঢলে পড়তো পরস্পরের গা’য়ে! তারপর সন্ধ্যা ঘনালে যথারীতি ফিরে যেতো যার যার ঘরে।

এভাবে সুখেদুখে ভালোই কাটছিলো তাদের দিনগুলো। কিন্তু অকস্মাৎ একদিন ভীষণ কুৎসিত অতিকায় এক দাঁতালো ক্রেন এসে সব ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিয়ে গেল। আর কী প্রচণ্ড শক্তি থুকথুকে ন্যাংটো ক্রেনটার। তিলতিল করে গড়া মানুষের এইসব সাধের ঘরবাড়ি আসবাবপত্র সারিবদ্ধ পরিপাটি দোকানগুলো কী অবলীলায় মাত্র ক’মিনিটেই কামড়ে আঁচড়ে চিবিয়ে ভেঙেচুরে গুড়ো গুড়ো করে রেখে গেল আবর্জনার স্তুপাকারে- যত্রতত্র। সহস্র মানুষের ক্রন্দন বিলাপ মিলালো শূন্যতায়।

সত্যি, একটা কিম্ভুতকিমাকার নগন্য দাঁতালো ক্রেনের কাছে মানুষ তো ছাড়ো, ঈশ্বরও বড্ড অসহায়।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১১ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:০৭ |

    ভালো লিখেছেন কবি অর্ক ভাই।

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:১২ |

      জি ধন্যবাদ ভাই।   

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:১৩ |

    কবিতার জন্য শুভেচ্ছা আপনাকে।

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:১৪ |

      ধন্যবাদ।  

      GD Star Rating
      loading...
  3. শাকিলা তুবা : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:১৬ |

    ধন্যবাদ ভাই। 

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:২৬ |

      ধন্যবাদ আবার কেন! 

      GD Star Rating
      loading...
  4. সুমন আহমেদ : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:১৯ |

    বেশ জটিল লাগলো কবিতাটি। কয়েকবার না পড়লে কবিতার স্বাদ গ্রহণ সম্ভব নয়। শুভেচ্ছা জানবেন কবি।

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ০২-০৪-২০১৯ | ২১:২৭ |

      অতিশয় প্রীত হলাম জেনে সুমন ভাই। লেখাটা আমার খুবই প্রিয় লেখা। 

      অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।

      GD Star Rating
      loading...
  5. রিয়া রিয়া : ০২-০৪-২০১৯ | ২২:০৯ |

    নন্দিত হোক কবিতাটি। হোক পাঠকপ্রিয়। কবিতার গড়নে অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন প্রিয় অর্ক দা। বিশেষ করে আমার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছে। অভিনন্দন জানাচ্ছি। 

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ০২-০৪-২০১৯ | ২৩:৪৮ |

      আরে আপনিই তো আমার আসল মুরুব্বি এখানে। শুরু থেকে মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে আসছেন। হা হা হা।

      একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আবিদ আনোয়ার’র থেকে কয়েক গুণ বেশি পাঠকপ্রিয়, নন্দিত আপনি আমাদের এই অনলাইন সাহিত্য জগতে। এখানে আমার জায়গা কোথায়!

      ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  6. হাসনাহেনা রানু : ০৩-০৪-২০১৯ | ৮:৩৭ |

    কবিতার থিমটা চমৎকার ছিল। সুন্দর প্রকাশ কবি।শুভ কামনা।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...