এই মহিমান্বিত রজনীতে আমরা কি করব

ইসলামী শরীয়তে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ রাত আছে তার অন্যতম হল লায়লাতুল বরাত আমাদের দেশে যা শবে বরাত নামে পরিচিত। বাকী রাতগুলো হল লায়লাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর এবং ঈদের রাত্রিগুলো।

এই সমস্ত রাতের অসীম ফজিলত রয়েছে। এই সব রাত আসলে আমাদের জীবনে আসে বোনাস হিসেব। আসে আত্মশুদ্ধির জন্য। আর আসে পরকালীন পাথেয় অর্জনের এক দারুণ সুযোগ নিয়ে। এইসব রাত তওবা ও অনুতাপ করার জন্য, পাপ হতে পূণ্যের পথে আসার জন্য, জীবনকে সুপথে পরিচালিত করার দৃড় শপথ নেয়ার জন্য, সর্বপোরি আল্লাহ ও রসূলের ( দঃ ) নৈকট্য ও ভালবাসা অর্জনের জন্য।

শবে বরাতের প্রতিটি ক্ষণ তাই অতি মূল্যবান। এটি আপনার মালিকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য বিশেষ দয়া ও রহমত। এ রাতের প্রতিটি মূহুর্ত আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি’র জন্য ব্যয় করা উচিত। নফল ইবাদত, নামাজ, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, জিকির আসকার ইত্যাদির মাধ্যমে সারারাত অতিবাহিত করা উচিত। ফরজ নামাজগুলো অবশ্যই জামাতে পড়বেন। এ রাতে এমন কোন প্রোগ্রাম রাখবেন না যাতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। একাগ্রচিত্তে আল্লাহ ও রসূলের ( দঃ ) দিকে মনোনিবেশ করুন। দান খয়রাত করুন, চেষ্টা করুন অভাবী ও সাহায্যপ্রার্থীদেরকে ফিরিয়ে না দিতে। ভালখাবার তৈরি করুন । নিজেরা খান, অন্যকে খাওয়ান। আমাদের দেশে এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরির প্রচলন আছে তা করতে পারেন। কোন সমস্যা নাই। কিছু কিছু লোক আপনাকে হালুয়া রুটি তৈরি করত নিষেদ করবে। এরা এক ধরনের বেকুব বটে। খাবার দাবার হালাল হলেই সেটা করা যায়, খাওয়া যায় এতে কোন নিষেদ নাই। আমাদের দেশে আমরা ছোলামুড়ি দিয়া ইফতার করি, ঈদের দিন সেমাই পাকাই। এগুলো কোনটাই অবৈধ নয়। একইভাবে শবে বরাতে হালুয়া রুটি খেলে অন্যকে খাওয়ালে ভাল’র চেয়ে মন্দ কিছু নাই। আল্লাহতো অন্যকে খাওয়ানো পছন্দ করেন। নিজে খাবেন, গরীব দুঃখী, আত্মীয় বন্ধুকে খাওয়াবেন। তবে এই খাওয়া দাওয়া যাতে ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটায়। এ রাতে গোসল করাও পূণ্যময়। এ রাতে গোসলের প্রতি ফোটা পানির জন্য রয়েছে অতি উত্তমপ্রতিদান। এ রাত হল ভাগ্যরজনী। এ রাতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। পরবর্তী এক বছরের জন্ম মৃত্যু, রিজিক সুনির্দিষ্ট হয়।

এ রাত ক্ষমার রজনী। হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী এ রাতে বনু কালবের ছাগ-পালের পশমের চেয়েও অধিক বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করেন। এ রাতে জান্নাতের প্রথম দরজায় এক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে বলেন আজ রাতে রুকুকারীর জন্য রয়েছে সুসংবাদ। একই ভাবে বাকী দরজাগুলো তে যথাক্রমে সিজদা, জিকির, আল্লাহর ভয়ে ক্রনদনকারী, তসবিহ থলিলকারী ও মুমীন মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ ঘোষনা করা হয়। সপ্তম দরজা হতে বলা হয় প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা মন্জুরের নিশয়তা আর অষ্টম দরজা হতে ক্ষমার নিশ্চয়তা ঘোষনা করা হয়।

এ রাতে আল্লাহর সাথে শরিককারি, অহংকারী, হিংসুক, ব্যাভিচারি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, যাদুকর-গণক প্রভৃতিকে ক্ষমা করা হয় না। এছাড়াও এই তালিকায় মদ্যপ, খুনী, জুয়াড়িরাও রয়েছে। তবে এই সব অপকর্ম হতে কায়মনোবাক্যে তওবা করলে আল্লাহ তা’লা ক্ষমা করে দিবেন।

মহানবী ( দঃ ) এই রাতে কবর জিয়ারত করতেন। জান্নাতুন বাকীতে যেতেন। সুতরাং এ রাতে কবর জিয়ারত করুন। মা-বাবা, দাদা, দাদী, নানা,নানী আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহতো ক্ষমাশীল। হয়তো এ রাতের প্রার্থনা আপনার স্বজনের আজাব আনন্দে পরিনত করে দিতে পারে। আর স্মরণ করুন তাদের মত আপনাকেও একদিন কবরবাসী হতে হবে। সেই কবরে যাবার পাথেয় আপনার কতটুকু আছে?

প্রার্থনা করুন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, বাবা মা ভাই বোন সন্তান সন্ততি আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য, দেশের জন্য, দশের জন্য, সমস্ত মুসলিম জাহানের জন্য। জীবিতদের জন্য। মৃতদের জন্য। সুস্থদের জন্য। অসুস্থদের জন্য। শিশুদের জন্য বৃদ্ধদের জন্য। ইহকাল ও পরকালের জন্য। ঈমান ও আমলের জন্য। আল্লাহর রসুলের ( দঃ ) সুপারিশ লাভের জন্য।

যা করবেন না
১। আড্ডাবাজি
২। আতশবাজি
৩। অযথা সময় নষ্ট করা
৪। হাসি ঠাট্টা আমোদ-ফূর্তি করে বাজে সময় পার করা।
৫। নেটে, ব্লগে, ফেসবুকে ফাও সময় নষ্ট করা।
৬। মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকা
৭। গান বাজনা, নাটক সিনেমা, টিভি এই সব নিয়ে সময় কাটানো।
৮।অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটানো।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১২-০৫-২০১৭ | ১:২৪ |

    ‘প্রার্থনা করি নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, বাবা মা ভাই বোন সন্তান সন্ততি আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য, দেশের জন্য, দশের জন্য, সমস্ত মুসলিম জাহানের জন্য। জীবিতদের জন্য। মৃতদের জন্য। সুস্থদের জন্য। অসুস্থদের জন্য। শিশুদের জন্য বৃদ্ধদের জন্য। ইহকাল ও পরকালের জন্য। ঈমান ও আমলের জন্য। আল্লাহর রসুলের ( দঃ ) সুপারিশ লাভের জন্য।’ আমীন।

    GD Star Rating
    loading...
    • আনু আনোয়ার : ১৩-০৫-২০১৭ | ১২:৩৯ |

      আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের কবুল করুন। আমীন।

      GD Star Rating
      loading...
  2. মামুনুর রশিদ : ১২-০৫-২০১৭ | ৬:১৯ |

    প্রথমত, আমার প্রশ্ন: লাইলাতুল “বরাত” নামে কোন শব্দ আরবি অভিধানে আছে কি না?
    দ্বিতীয়ত, “শবে বরাত” এটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ হলো ভাগ্য রজনী। কিন্তু আদৌ এটি ভাগ্য রজনী কি না?

    যদি বারাআত ধরা হয়, তবে বারাআত শব্দের অর্থ হলো সম্পর্কচ্ছেদ করা।

    তবে এর প্রকৃত নাম কী? লাইলাতুন নিছফ মিন শাবান অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত। এ রাতের ফযিলত এবং ইবাদত সম্পর্কে যে ক’টি মাত্র হাদীস বর্ণিত হয়েছে- সেগুলোর সনদ দুর্বল অর্থাৎ জয়িফ হাদীস।

    আর জয়িফ হাদীস দ্বারা কোন আহকাম সাব্বস্ত করা জায়েয নেই।

    যে রাতের ফযিলত এবং ইবাদত সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে- সেটি হলো লাইলাতুল কদর; যা শুধুমাত্র রমযান মাসের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব।

    GD Star Rating
    loading...
    • আনু আনোয়ার : ১৩-০৫-২০১৭ | ১২:৫৮ |

      অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

      আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার মত জ্ঞান আমার নাই। আমি ধর্মীয় বিষয়ে অজ্ঞ। আমি যেহেতু ধর্ম জানি না, তাই যারা ধর্ম জানেন, তাঁদেরকে অনুসরন করি।

      জন্ম থেকেই শবে বরাতকে একটা বিশেষ রাত হিসেবে জানি। সারা বাংলাদেশের মুসলমানরা একে বিশেষ রাত হিসেবে পালন করেন। আমিও করি। সাধ্যানুযায়ী ইবাদত বন্দেগী করার চেষ্টা করি। আলেম ওলামা, মসজিদের ইমাম সাহেব, ধর্মগুরু, ধর্মপ্রচারক সবার কাছে শবে বরাতের গুরত্ব শুনে শুনে বড় হয়েছি। ক্লাস থ্রী থেকে ইনটারমেডিয়েট পর্যন্ত প্রতি ক্লাসে ইসলাম শিক্ষা ছিল। ইসলাম শিক্ষা বইয়ে শবে বরাত নিয়ে সুনির্দষ্ট চ্যাপ্টার পাঠ করেছি। এজন্য শবে বরাত নিয়ে আমার মনে কোন সংশয় নাই।

      আপনি যে বিষয়গুলোর অবতারনা করেছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার মত যোগ্যতা আমার নাই। আরবী জ্ঞান আমার শূণ্য। হাদীস শরীফের জটিল আলোচনা আমার পক্ষে অসম্ভব।

      প্রশ্ন করতে পারেন না জেনে এই পোস্ট কেন দিলেন? দিয়েছি কারন
      সাধারণভাবে আমাদের দেশে সবাই শবে বরাত পালন করেন। আমিও করি। তাই যারা শবে বরাত পালন করেন তাদের সাথে এই রাতে নিজের উপলব্দিটুকু শেয়ার করেছি।

      এটা নিছক ব্যক্তিগত উপলব্দি শেয়ার করা মাত্র। কোন গবেষণা নয়। ধর্ম নিয়ে গবেষণা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার পড়ালেখার সাবজেক্ট ধর্ম ছিল না। রসকসহীন একাউন্টিং আমার সাবজেক্ট।

      আবারো ধন্যবাদ নিবেন প্রিয় মামুন ভাই।

      GD Star Rating
      loading...