একজন ক্লিনারের স্বপ্ন- দুই

দ্বিতীয় পর্ব

আলমগীর ভালো ভাবেই পৌছুলো রাতে । কিন্তু রাত একটু বেশী হয়ে গিয়েছে তার ঝিনাইগাতি পর্যন্ত পৌছাতে । তার বাড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে আধ কিলোমিটার দূরবর্তী এক গ্রামে । ঠিক বাড়ি নয়, মাথা গুজার ঠাই । একটা ছোট্ট টিনের ছাপরা । একটা ঠিকানা । গ্রামের নাম আহমেদ নগর ।

পকেট থেকে মোবাইলটা একটু ভয়ে ভয়ে বের করে আলমগীর সময় দেখবে বলে । রাত বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি । সে দারিয়ে আছে বাস স্ট্যান্ড থেকে বের হওয়ার রাস্তায় । চারিদিক অন্ধকার । উপজেলা শহর । এত রাতে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে । কোন ভ্যান গাড়ি এখন আর পাওয়া যাবে বলে তার মনে হচ্ছে না । কিন্তু আলমগীরের তর সয় না । বাড়িতে নিশ্চয়ই তার অসুস্ত বাবা ও বয়স্কা মা অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। আজ তাদের অনেক খুশির দিন । সে হাটতে শুরু করে । ভয়টা তার আরও একটু বারে যখন সে অন্ধকারে একটা দোকানের পেছন থেকে তিনটা আগুনের ফুল্কি তার দিকে আসতে দেখে দ্রুত । ভুত টুত নাকি ? একটু পড়েই তার সমবয়সী তিনটা ছেলের অবয়ব তার কাছে স্পষ্ট হয়। তাদের হাতে সিগারেট । কাছে আসতেই বিকট একটা গন্ধ তার নাকে আসে । তার বুঝতে বাকি থাকে না এটা গাজার গন্ধ। মহাখালিতে সে যে বস্তিতে থাকে সেখানে এ দৃশ্য হরহামেশাই দেখতে হয় তাকে । অজানা আশংকায় তারাতারি সে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দেয় তার পেছনের দিকে । ছেলেগুলা কাছে আসে । কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে জাপটে ধরে তিনজন । একজন তার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে । পকেটে হাত দেয় দুই দিক থেকে দুইজন । আলমগীরের দম বন্ধ হয়ে আসে । ওরা কিছু পায় না । ছেড়ে দেয় । দুজন সামনে এগিয়ে যায় দু কদম । আলমগীর স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে । আবার ফিরে আসে ওরা । আলমগীরের হাতের ব্যাগ টা নিয়ে যায় হ্যস্কাটানে । পুরো ঘটনাটা ঘটে যায় নিশব্দে, এক মুহূর্তের মধ্যেই । যাবার সময় একজন শুধু বলে দৌড় দে । ভয়ে দৌড় দেয় আলমগীর ।

অনেক দূর চলে এসেছে সে । হাপিয়ে উঠে । হঠাৎ তার মনে পড়ে ফেলে আশা মোবাইলটার কথা । সে ভয়ে ভয়ে দাড়ায়। দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ । দূরে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে । দৌড়ে এগিয়ে আসছে তাড় দিকে । সে কুকুর ভয় পায় । কিন্ত এবার তার আর ভয় লাগে না । তার মনে হয় কুকুরের চেয়েও মানুষ ভয়ংকর । কুকুর প্রভু ভক্ত প্রাণী । সে নিথর দাড়িয়ে থাকে । কুকুরটা আরও কাছে আসে । নিশ্চল আলমগীর । কুকুরটা তার পায়ের কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । উঠে দাড়ায় । তারপর ঘেউ ঘেউ করতে করতে ঘুরপাক খেতে থাকে তার চারদিকে । এতক্ষণ পর সে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে । এগিয়ে যেতে থাকে পেছনের দিকে । পেছনে পেছনে যেতে থাকে কুকুরটা ।

তার মোবাইলটা তার কাছে অনেক প্রিয় । স্মার্ট ফোন । এটা তার অফিসের বড় স্যার তাকে দিয়েছে তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে । তার অনেক দিনের সাধ পূর্ণ হয়েছে মোবাইলটা পেয়ে । অনেক কাজের জিনিস এই মোবাইল । অফিসের কাজে ফোন করা ছাড়াও গুগল ম্যাপ দেখে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও অফিসের ঠিকানা সে গুগল ম্যাপ দেখে বের করে । এ রহস্য সবাই বুঝতে পারে না । অফিসের স্যাররা ভাবে ষোল বছরের এই পিচ্চি ছেলে সারা ঢাকা কিভাবে চিনে ? ভীষণ স্মার্ট । আলমগীর ও নিজেকে স্মার্ট ভাবতে পছন্দ করে । কিন্তু সেটা তার একটা ফেসবুক আই ডি আছে এজন্য নয় । তার মত কয়টা ছেলে পাঠ্য পুস্তকের পি ডি আফ ভার্সন মোবাইলে রেখে অফিসের কাজের ফাকে ফাকে পড়াশুনা করে ? আলমগীরের মুরাদের কথা মনে পড়ে । সে বলে মুরাদ স্যার । সে কৃতজ্ঞতা বোধ করে আবারো । বুদ্ধিটা আমাকে মুরাদ স্যার না দিলে হয়তো আমি কোনদিন জানতেই পারতাম না মোবাইলটা আমার এত বড় উপকারে আসবে একদিন । তার বুক পকেটে ছোট ছোট চিরকুট লিখে রাখার কথাও মনে পড়ে যায় এবার । তার মুরাদ স্যারের এই বুদ্ধিটাও তাকে অনেক অংক ও প্রশ্নোত্তর বুঝতে সাহায্য করেছে। কৃতজ্ঞতায় ও বিনয়ে তার কান্না পায় এতক্ষণে । আলমগীর হাউ মাউ করে কাদে । কাদতে থাকে । কেদে বুকটা হাল্কা করে সে। তার ব্যাগে থাকা ছোট ভাইটার জন্য খেলনা বা মায়ের জন্য যে সামান্য সংসার খরচের টাকা সে নিয়ে এসেছিলো সেটা হারানোর জন্য সে কাদেনাই এতক্ষণ । কারন সে এই অল্প বয়সেই শিখে গেছে মানুষ কিছুই হারায় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার মনবল না হারায় ।

সে এতক্ষণ চেষ্টার পর ঠিক তার আগের জায়গায় এসে দারিয়েছে বলে তার মনে হল । অন্ধকারে সে কি তার মোবাইলটা খুজে পাবে ? সে দুই তিন পা পিছিয়ে যায় । প্রথমে বসে পড়ে । তারপর উপুর হয়ে মাটিতে হাতরাতে থাকে অন্ধকারে !

একজন ক্লিনারের স্বপ্ন – প্রথম পর্ব

৬ মে, ২০১৭

( চলবে )

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৭-০৫-২০১৭ | ৯:০৮ |

    শুভেচ্ছা মি. আনিসুর রহমান। লিখায় সাসপেন্স রয়ে গেলো।
    তারপরও ভালো লাগছে বড় গল্প অথবা উপন্যাসটি। শুভ সকাল। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. আনিসুর রহমান : ০৭-০৫-২০১৭ | ১০:৪৫ |

    শুভ দিন মুরুব্বী স্যার । গল্পটা গল্পের মত এগিয়ে যাচ্ছে । আমি শুধু দেখতে চাচ্ছি শেষ পর্যন্ত এটা কি হয় । ধন্যবাদ আমাকে বরাবরের মত সময় দেয়ার জন্য ।

    GD Star Rating
    loading...
  3. মামুনুর রশিদ : ০৭-০৫-২০১৭ | ১৩:১৪ |

    আরেকটি ক্যারেক্টার খুঁজে পেলাম। বেশ শব্দচিত্র এঁকেছেন! শুভেচ্ছা রইলো সতত।

    GD Star Rating
    loading...
  4. আনিসুর রহমান : ০৭-০৫-২০১৭ | ১৩:৪৭ |

    সাথে থাকার জন্য আবারো অনেকhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif ধন্যবাদ মামুনুর রশিদ ভাই ।

    GD Star Rating
    loading...
  5. আনু আনোয়ার : ০৯-০৫-২০১৭ | ১২:২৮ |

    আপনার গল্প বলার ঢং টা সুন্দর। এভাবেই গল্প বলতে হয়। একটা বিষয় খেয়াল করুন, আমি বলেছি গল্প বলা, গল্প লিখা নয়। আমরা যখন গল্প লিখি তখন মাথায় রাখতে হবে গল্পটা আমি বলছি। তাহলে বেশ ভাল কাজ হবে।

    আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।

    GD Star Rating
    loading...
    • আনিসুর রহমান : ১০-০৫-২০১৭ | ১৪:৫০ |

      অনেক অনেক ধন্যবাদ আনু আনোয়ার ভাই । আপনার ভালো লেগেছে জেনে প্রিত হলাম । আপনার জন্য https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      GD Star Rating
      loading...
  6. আনু আনোয়ার : ০৯-০৫-২০১৭ | ১২:৩০ |

    আরেকটা বিষয়, জবাব দেয়ার জন্য মন্তব্যের নিচে জবাব এ ক্লিক করে প্রতি মন্তব্য করবেন। তাহলে, মন্তব্যকারী আপনার দেয়া উত্তর দেখতে পাবেন।

    GD Star Rating
    loading...
    • আনিসুর রহমান : ১১-০৫-২০১৭ | ১১:১৭ |

      অবশ্য অনুসরনীয় আনু আনোয়ার ভাই !https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

      GD Star Rating
      loading...