ফেসবুক প্রেম


মীম এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ। এখন পড়ার কোন চাপ নেই। যথেষ্ট সময় এখন তার হাতে। মীম তার ছোট নাম। পুরো নাম তানিয়া সুলতানা মীম। মেয়ে এখন অনেক বড় হয়েছে। তাই বাবা তাকে একটি এনড্রুয়েড মোবাইল সেট কিনে দেয়।
ফেসবুক জগৎ সর্ম্পকে কোন ধারনা নেই মীমের। বান্ধবী লুবনার সহযোগিতায় মোবাইল দিয়ে একটি ফেসবুক আইডি খুলছে সবে মাত্র দুই দিন হয়। দুই দিনে বেশ ভালোই বন্ধুর রিকুয়েস্ট এসেছে। মেয়েদের আইডিতো তাই রিকুয়েস্ট একটু বেশি আসে। ফেসবুক দুনিয়ায় মীম একে বারেই নতুন। কি করবে কিভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে, কিভাবে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করবে, কিভাবে স্ট্যাটাস দিবে, কিভাবে ছবি আপলোড করবে, কিভাবে চ্যাটিং করবে এর কিছুই জানে না। তাই বন্ধবী লুবনার বাসায় প্রতিদিন বিকাল বেলায় এসে ফেসবুকের খুনিনাটি বিষয় জেনে যায়।
ইতোমধ্যে মীম বুঝে গেছে কিভাবে রিকুয়েস্ট পাঠাতে হয় এবং কিভাবে রিকুয়েস্ট গ্রহণ করতে হয়। মীম সব রিকুয়েস্ট গ্রহণ করে না। ওর বান্ধরীরা বলেছে না জেনে না বুঝে কারো রিকুয়েস্ট গ্রহণ করবি না। কারণ ফেসবুকে অনেক ভুয়া আইডি থাকে। এসব আইডি থেকে মেয়েদের প্রোফাইলে ট্রেগ করে অনেক খারাপ ছবি আপলোড করে দেয়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। মীম কিছু সংবাদ পত্রের পেইজে লাইক দিয়েছে। ফেসবুক খুললেই তাজা খবর এখন তার সামনে চলে আসে। ফেসবুকে থাকাবস্থায় এসব খবর পড়ে সময় কাটিয়ে দেয়।
ইতোমধ্যে মীমের ফেসবুক সর্ম্পকে ধারনা হয়েছে। মোবাইলে একটি নাম্বারে একজনের সাথে যোগাযোগ করা যায় আর ফেসবুকে এক সাথে অনেক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা যায়। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথে চ্যাটিং করা যায়। ছবি শেয়ার করা যায়। মনের ভাবনা শেয়ার করা যায়। বন্ধুরা লাইক দিয়ে, মন্তব্য করে তাদের অনুভূতি জানান দেয়। তাইতো ফেসবুককে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বলা হয়। এসব সুবিধা দেখে মীম দিন দিন ফেসবুকের প্রতি আসক্ত হয়ে গেলো। দিন যত যাচ্ছে তার বন্ধুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। পরিচিত অপরিচিত অনেকের সাথে ইতোমধ্যে তার সর্ম্পক হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সমবয়সী ছেলেরা তার সাথে বেশী ভাব জমাতে থাকে। এখন ফেসবুক খুললেই চ্যাটিং করার জন্য অনেকের প্রস্তাব আসে। যাকে ভাল লাগে তার সাথে তার চ্যাটিং হয়। যাকে ভালো না লাগে তাকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এখনও তার মনের মতো কাউকে ফেসবুকে পায়নি।
দুই ভাই বোনের মধ্যে মীম বড়। তার ছোট একটি ভাই আছে। মীম খুব সুন্দরী মেয়ে। উচ্চতা পাঁচ ফুট ৩ ইঞ্চি। গায়ের রং ফর্সা। ছাত্রী হিসেবে খুবই মেধাবী। স্কুলে পড়াশুনা করা অবস্থায় অনেক ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সব প্রস্তাবই সম্মানের সহিত ফিরিয়ে দিয়েছে। কারণ তখন তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভালভাবে লেখা পড়া করে এস.এস.সিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া। তাই পড়াশুনার প্রতি ছিল তার প্রবল আকর্ষণ। তাইতো ছেলেদের সাথে বেশী মিশত না। সারাক্ষণ পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু পরীক্ষা দেয়ার পর এখন আর সেই অবস্থায় নেই। এখন সে অবসর সময় কাটাচ্ছে। মনে মনে একজন ভাল সঙ্গী খুজছে। সহপাঠীদের মধ্যে অনেককেই তার মনে ধরেছে। কিন্তু এখনতো আর ক্লাস নেই। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্কুল পড়াকালীন সময় তার কোন মোবাইল ছিল না বিধায় কোন সহপাঠীর নম্বরও নেই। তাই তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন সারাক্ষণ শুধু ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মীম। হঠাৎ একদিন একটি ছেলের একটি স্ট্যাটাস দেখে চমৎকে উঠল মীম।

মনের মতো প্রেমিকা চাই
আমার নাম মুন্না। পুরো নাম সাকিবুল হাসান মুন্না। বয়স ২৫ বছর। অনার্স পাস করেছি সবে মাত্র। এখনও বিয়ে করি নাই। মনের মতো কাউকে পেলে জীবন সঙ্গী করে বিয়ে করতে চাই। আগ্রহী সুন্দরী মেয়েরা আমার ফেসবুকে রিকুয়েস্ট পাঠালে তার সাথে যোগাযোগ করব।

এই স্ট্যাটাস দেখেতো মীম আশ্চর্য হয়ে গেল। এভাবে কি কেউ সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব করে! আসলে কি ছেলেটা প্রেম করতে চায় নাকি এমনিতেই মজা করছে, তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল মীম। আর কিছু না ভেবেই তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিল মীম। কিছুক্ষণের মধ্যেই মীমের রিকুয়েস্ট গ্রহণ করে সে ম্যাসেজ দিল। হাই মীম।
এবার মীম ভাবছে এখন কি তার সাথে কথা বলবে নাকি ফেসবুক বন্ধ করে দিবে। সাহস হচ্ছে না একজন অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতে। তাই তার ম্যাসেজে সাড়া না দিয়ে আজকের মতো ফেসবুক বন্ধ করে দিল।
পরদিন আবার যখন ফেসবুক ওপেন করল তখন দেখল ছেলেটি অনলাইনে আছে। কিন্তু আজও সাহস হচ্ছে না। তাকে কি বলবে। দাঁতে নখ কাটছে আর চিন্তা করছে এখন কি করা যায়। এমন সময় ছেলেটি ম্যাসেজ দিল। আপনি কি মীম বলছেন?
এবার মীম আরো চিন্তায় পড়ে গেল এখন কি করবে। যদি তার সাথে কথাই না বলি তাহলে কেন তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালাম। এই চিন্তা থেকে তার উত্তর দেয়ার জন্য মনস্থির করল।
এবার মীম বুকে সাহস নিয়ে বলছে, জি আমি মীম বলছি।
মীমের সাড়া পেয়ে মুন্না খুব খুশী হলো। এবার মুন্না বলল, আপনি কি আমার স্ট্যাটাস পেয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইছেন?
জি।
তাহলে কি আপনি রাজি?
একথা বলাতে মীম লজ্জায় লাল হয়ে বলল, এখন বলব না। পরে বলব।
আপনার বাসা কোথায়?
নরসিংদীতে।
নরসিংদীর কোথায়?
ব্রাহ্মন্দীতে।
পড়াশুনা কি করেন?
এবার এস.এসসি দিয়েছি।
পরিবারে কে কে আছে?
আমি আর আমার এক ভাই, বাবা-মা।
আপনার আব্বু কি করেন?
চাকুরী করেন।
মা কি করেন?
গৃহিনী।
এভাবে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে মুন্না আর উত্তর দিচ্ছে মীম। কিন্তু মীম কোন প্রশ্ন করছে না মুন্নাকে। তাইতো মুন্না বললো, আমার সর্ম্পকে আপনার জানার ইচ্ছে নাই?
আছে। এখন না পরে কথা বলব। এখন আসি। এই কথা বলেই মীম সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
এখন থেকে মীম প্রতিদিন ফেসবুকে মুন্নার সাথে চ্যাটিং করে। একদিন মুন্না মীমকে যাচাই করার জন্য তার মোবাইল নাম্বার চেয়ে নেয়। তারপর সেই নাম্বারে কল করে অনেকক্ষণ কথা বলে। তারপর থেকে মুন্নার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে মীম। এর মাঝে মীম বুঝে গেছে সে মুন্নাকে ভালবেসে ফেলেছে। মুন্নাকে কথাটা বলা দরকার কিন্তু কিভাবে বলবে যদি সে মুন্নার মনের মতো না হয়। যদি তার ভালোবাসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। তার থেকে না বলায় ভালো, বন্ধু আছি তাই থাকি। ভালোবাসার কথা শুনে যদি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এই ভেবে মীম আর মনের কথাটা বলে উঠতে পারে না। আবার ভাবে তা কেন হবে সেতো মনের মতো প্রেমিকা খুঁজছে। আর আমাকে যদি মনেই না ধরে তাহলে আমার সাথে কথা বলত না।
এদিকে মুন্না দিন রাত মীমকে নিয়ে ভাবছে। কিভাবে তাকে ভালোবাসার কথা বলা যায়। সেও ভাবছে কিভাবে বলবে। ইতোমধ্যে তাকে না দেখেই ভাল লেগে গেছে। তার মনের মতো প্রেমিকা পেয়েছে কিন্তু এখনও বলা হয়নি তাকে সেই প্রেমের কথা। সে সত্যিই আমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিবে, নাকি আমার সাথে প্রতারণা করবে। এই নিয়েই ভাবছে। আবার ভাবছে তা কেন হবে সেতো আমার প্রস্তাব দেখেই আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছে। এই যখন ভাবছে ঠিক তখনই মীম মুন্নাকে ফোন দিল।
হ্যালো।
আপনি কেমন আছেন?
ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
ভাল আছি।
মুন্না আপনাকে একটা কথা বলার আছে।
হ্যা বলেন।
আচ্ছা আপনার কি কাউকে ভাল লাগে?
হুম লাগেতো।
কাকে?
এই যে আপনাকে!
প্লিজ মুন্না ভাই মজা করবেন না।
মজা করলাম কৈ?
এই যে বলছেন আমাকে আপনার ভাল লাগে!
তাতো সত্যিই বলছি।
সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ সত্যি।
কেন ভাললাগে আমাকে? ভালো লাগার মত কি দেখছেন আমার মাঝে?
তা বলতে পারব না। তবে ভাল লাগে আপনাকে। আর ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসা হয়। আমি আপনাকে ভালোবাসি।
কি বললেন! আপনি আমাকে ভালোবাসেন? এটা কি মনের কথা?
কেন এতদিনের বন্ধুত্বের সর্ম্পকের মধ্যে কি আমাকে বুঝতে পারেন নাই?
পেরেছি। আমি সত্যি একজন ভাগ্যবতী মেয়ে যে আপনার মতো সুন্দর মনের একজন ছেলে পেয়েছি। কিন্তু আপনিতো আমাকে দেখেন নাই। না দেখে কি এভাবে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়া ঠিক?
তাতে কি হয়েছে? আপনিতোও আমাকে দেখেন নাই। আর সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন, ভালোবাসার জন্য সুন্দর একটা মন লাগে। দেখার প্রয়োজন হয় না।
দেখা হলে ভাল হতো না। যেমন ধরুন আপনি আমাকে কল্পনা করেছেন এক রকম আর আমি হলাম অন্যরকম। তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে? তখনতো আমাকে নাও ভালোবাসতে পারেন?
এমনটা হবে না। কারণ আপনি যেমনই হউন না কেন আমি আপনাকে না দেখেই ভালোবেসেছি। আমি একজন মনের মতো সঙ্গী চেয়েছি। আপনি আমার অন্তরে ঢুকে গেছেন। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে মেয়ে এত সুন্দর করে কথা বলে আমার মতো ছেলেকে পাগল করতে পারে সে অবশ্যই সুন্দর হবে। তাছাড়া ফেসবুকেতো আপনার ছবি দেখলাম।
সেটাতো আমার নাও হতে পারে।
আমার বিশ্বাস এটা আপনারই ছবি।
আপনার ধারনা ভুল হতে পারে। আমি যদি কালো মেয়ে হই?
তাতে কি হয়েছে। কথায় আছে- জাতের মেয়ে কালোও ভাল।
তাই বলছেন?
তারপরও বলছি সরাসরি দেখে নিলে ভাল হয়।
আপনার দেখার ইচ্ছে থাকলে দেখা করব। কিন্তু তার আগেই আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা। আপনি রাজি কিনা বলুন।
এবার মীম লজ্জায় পড়ে গেল। বেশীরভাগ মেয়েরাই ভালোবাসার কথা সরাসরি মুখে বলতে পারে না। আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে চায়।
আপনি বুঝতে পারেন নাই?
কিভাবে বুঝব? আপনি যদি খুলে না বলেন।
সব কথা কি খুলে বলতে হয়। কিছু কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
মুন্না মীমের কথায় বুঝতে পেরেছে সে রাজি। কিন্তু তারপরও তার মুখ থেকে কথা শুনার জন্য বলল, আমি বুঝতে চাই না। সরাসরি বলুন।
এবার লজ্জা মাখা কণ্ঠে ক্ষীণ স্বরে মীম বলল, রাজি।
তাহলে আর আপনি নয়। এখন থেকে তুমি হবে।
ঠিক আছে মুন্না আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি শুধু আমার। কথা দাও আর কাউকে তুমি ভালবাসতে পারবে না।
কথা দিচ্ছি আমি তুমি ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসব না। বিয়ে যদি করতে হয় তোমাকেই করব।
সত্যি বলছ?
হ্যাঁ সত্যি।
তাহলে আজ রাখি।
ঠিক আছে।
ওকে বাই বাই বলে ফোনটা কেটে দিল মীম।
আজ মুন্না ও মীমের মনটা ফুরফুরে। কেউ কাউকে না দেখে শুধু ফেসবুকের পরিচয়ে ভালোবাসা হয়ে গেল। এখন শুধু দু‘জনার মধ্যে ভাবনা কখন দেখা করবে। ইতোমধ্যে দু’জন দু’জনার ছবি দেখেছে। প্রতিদিন কথা হয়। ফেসবুকে চ্যাটিং হয়। এত কিছুর পরও তাদের মন ভরে না। কি যেন অপূর্নতা রয়ে গেছে। দু’জনের দেখা হওয়া দরকার। তাহলেই তাদের প্রেমের পূর্ণতা ফিরে আসবে। তাইতো দু’জন সিদ্ধান্ত নিল দেখা করবে। কখন কিভাবে দেখা করবে সেই নিয়ে আলোচনা চলছে। মুন্না থাকে ঢাকায় আর মীম নরসিংদীতে। মীম মুন্নাকে বলল, নরসিংদীতে আসতে। মুন্না রাজি হলো। দিন তারিখ ঠিক হলো ২৬ মার্চ বিজয় দিবসে একে অপরের সাথে দেখা করবে।
আজ ২৬ শে মার্চ। সেই কাক্সিক্ষত দিন। এই দিনে দেখা করবে মীম ও মুন্না একে অপরের সাথে। নতুন করে আবার ভালোবাসা বিনিময় করবে এই দিনে। কিভাবে দেখা করবে, কোন পোশাক পড়ে যাবে এই নিয়ে দু’জনেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ মীম নীল রঙের একটা শাড়ী পড়েছে। কপালে লাল টিপ দিয়েছে। ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে। হাইহিল জুতা পড়েছে। কাঁধে একটি ব্যানিটি ব্যাগ নিলো। মুন্নার জন্য একটি লাল গোলাপ নিলো। তারপর দুপুর ১২:০০ টায় নরসিংদী সরকারি কলেজে আসলো। কলেজের পুকুর পাড়ে বসে আছে মীম। কখন আসবে মুন্না এই অপেক্ষায়।
এদিকে মুন্না সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে একটি কালো ব্লেজার পড়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। সেও একটি লাল গোলাপ ও একটি রজনী গন্ধা ফুল নিয়ে আসল। মুন্না কলেজ গেইটে এসেই মীমকে ফোন দিল।
হ্যালো মীম।
হ্যালো মুন্না তুমি কোথায়?
আমি কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে আছি।
ঠিক আছে তুমি দাঁড়াও আমি আসছি।
মীম দূর থেকে দেখতে পেল। একটি ছেলে ফুল হাতে কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। ফেসবুকের ছবি অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে এই সেই মুন্না। কিন্তু তারপরও তাকে যাচাই করার জন্য আরেকটু কাছে এসে তাকে আবার ফোন দেয়। মুন্না ফোনটি রিসিভ করে কানে দিতেই মীম লাইনটা কেটে দিল এবং বুঝতে পারল এই হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষ মুন্না। তারপর তার কাছে এসে বলল, তুমি নিশ্চয় মুন্না।
হ্যাঁ আর তুমি মীম।
হ্যাঁ।
পরিচয় পেয়ে দ‘ুজন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলে। বিশেষ করে মুন্না মীমকে দেখে চোখ আর নিচে নামাতে পারছে না। একি দেখছে সে। এটা কি সত্যিই মীম। এত সুন্দর মীম। তা সে কল্পনাও করে নাই। আর মুন্নাও দেখতে হ্যান্ডসাম স্মার্ট, শিক্ষিত টগবগে যুবক। যা সে কল্পনা করে নাই তার চেয়ে বেশী।
এবার মীম বলল, কি ব্যাপার এভাবে কি দেখছ।
তোমাকে! জীবনের প্রথম দেখছি। তাই চোখ নামাতে পারছি না।
ঠিক আছে। প্রাণ ভরে দেখ। এখানে নয়। চল কোথাও বসি।
দু’জনে হাটঁতে হাঁটতে পুকুর পাড় একটি বেঞ্চে গিয়ে বসল। তারপর একে অপরকে ফুল দিয়ে নতুন করে ভালোবাসা বিনিময় করল। তাদের মধ্যে অনেক কথা হল। ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো। কিভাবে তাদের ভালোবাসাকে সফল করা যায় তা নিয়ে কথা হলো। এখন থেকে কিভাবে সাক্ষাত হবে তা নিয়ে কথা হলো। কথা বলতে বলতে বিকাল হয়ে গেল। দু’জনে স্টেশনে গিয়ে হোটেল থেকে খেয়ে নিল। বিকাল ৪:০০টায় মুন্না বিদায় নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
দিন যত যাচ্ছে মুন্না ও মীমের প্রেম তত গাঢ় হচ্ছে। ইতোমধ্যে মীমের পরিবার ও বন্ধু বান্ধব সবাই এই ব্যাপারটা জেনে গেছে। একদিন এই ছেলের ব্যাপারে মীমকে অনেক শাসন করেছে তার বাবা। তাকে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছে। তুমি সবে মাত্র এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছ। তোমাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। তোমাকে ডাক্তার বানাবো। তোমাকে এইচ.এস.সিতে অনেক ভাল রেজাল্ট করতে হবে। এই সব বাজে চিন্তা বাদ দাও। কিন্তু কে শুনে কার কথা। মীম বাবার এই উপদেশকে খারাপ চোখেই দেখছে। প্রতিটা দিন কাটে এখন মুন্নার সাথে ফোন করে। ফেসবুক চ্যাটিং করে। বিশেষ করে বাবা মা যখন ঘুমিয়ে যায় তখন সারা রাত কথা বলে। এভাবে তিন মাস পার করে দিল। ইতোমধ্যে মীমের পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। দারুণ খুশী মীম ও মীমের মা বাবা। কিন্তু মীমের বাবা খুবই চিন্তিত তার ভবিষ্যত নিয়ে। মেয়ে যেভাবে প্রেমে জড়িয়ে গেছে তাকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছে। আদরের মেয়ের উপর হাত পর্যন্ত তুলেছে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি।
একদিন মীমের মা বাবা পরামর্শ করলো তার মোবাইলটা বন্ধ করে দেয়া হবে। তাই করা হলো। এই নিয়ে বাবা মায়ের সাথে মীমের তুমুল ঝগড়া হয়। দুদিন না খেয়ে থাকে। মেয়েকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই বুঝ মানছে না অবুঝ মীম।
এই দিকে মুন্না মীমের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। সে কি ভুলে গেল কিনা তা জানার জন্য মীমের বান্ধবী লুবনাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ দেয়। লুবনা মীমের পরিবারের কথা জানায়। অপরদিকে মীমও ইতোমধ্যে তার বাবাকে জানিয়ে দিল, তোমরা যদি আমার মোবাইল না দাও তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।
এ কথা শুনে মীমের বাবা মা আশ্চার্য হয়ে গেল। বাবা বলল, একি বলছিস তুই! এসব অলক্ষণে কথা মুখে আনতে নেই। তুই মুন্নাকে ভুলে যা। তার ফেসবুক আইডি ও মোবাইল নাম্বার ডিলেট করে দে। আমি মোবাইল দিয়ে দিব।
আমি মুন্নাকে ভুলতে পারব না। আর মোবাইল ছাড়াও থাকতে পারব না। মোবাইল দিবে কিনা বল। না দিলে আমি বিষ খাব।
মেয়ের যে জিদ কখন জানি কি করে বসে। তাই ভয়ে বাবা তার মোবাইল ফেরত দিল।
মোবাইল পেয়ে মীম খুশী। আজ রাতেই মুন্নাকে কল দিল।
হ্যালো মুন্না।
মীম তুমি! কোথায় ছিলে দুইদিন। মোবাইল বন্ধ কেন?
বাবা মা তোমার আমার প্রেমটাকে ভালো চোখে দেখছে না। তাই তারা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। আজ ভয় দেখিয়ে মোবাইল নিলাম।
আমিতো ভাবছি তুমি আমাকে ভুলে গেছ?
তা কখনো সম্ভব নয়। জীবন গেলেও তোমাকে ভুলতে পারব না। আমি এখানে থাকলে তারা তোমার সাথে কথা বলতে দিবে না।
তাহলে কি করব?
আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। পালিয়ে বিয়ে করব আমরা।
এসব কি বল!
হ্যাঁ তা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
আমার কোন চাকরী নেই। মাস্টার্স পড়াও শেষ হয়নি। এই মূহূর্তে বিয়ে করি কি করে?
টাকার চিন্তা তোমার করতে হবে না। তুমি শিক্ষিত ছেলে চাকরীর অভাব হবে না। আমি যত পারি টাকা নিয়ে আসব।
কিন্তু বাবা মাকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হবে?
ঠিক বেঠিক আমি জানতে চাই না। তুমি আমাকে নিয়ে যাবে কিনা সেটা বল।
রাগ করছো কেন? মাথা ঠান্ডা কর।
তুমি বিয়ে করলেই আমার মাথা ঠান্ডা হবে অন্যথায় নয়। যে কোন সময় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
মুন্না এবার চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে বুঝতে পারছে না। এমন ভালোবাসার মানুষকে হারাতেও চায় না। আবার বাবা মাকেও কষ্ট দিতে চায় না। উভয় সংকটে মুন্না।
কি ব্যাপার কথা বলছ না কেন?
কি বলব?
কাল আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। রাজি।
আচ্ছা তোমাকে পরে জানাচ্ছি।
না এখনই বলতে হবে। পরে যে কথা বলতে পারবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। তোমাকে এখনই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
আর কিছু ভাবতে পারছে না মুন্না। আর কোন কিছু না ভেবেই বলে ফেলল, ঠিক আছে। তবে কখন কিভাবে যাবে?
আমি আগামী কাল দুপুর ১২টার দিকে কলেজ গেইটে থাকব। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে যাবে।
ঠিক আছে।
তারপর আরো দশ মিনিট দুজনের মধ্যে কথা হয়। কিভাবে পালিয়ে যাবে। কোথায় যাবে। কোন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করবে ইত্যাদি নানা কথাবার্তা।
এপ্রিলের ১৪ তারিখ। বাংলা পহেলা বৈশাখ। আজ তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। কথা অনুযায়ী যথাসময়ে দ’ুজন কলেজে মিলিত হয় এবং এখান থেকে দু’জন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। মেয়েকে বাসায় ফিরতে না দেখে চিন্তায় পড়ে গেল মীমের বাবা মা। বিকেল গড়িয়ে রাত হলো। মীমের মোবাইলও বন্ধ পাচ্ছে। আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোঁজ নিয়েও দেখলো কোথাও যায়নি। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল মুন্না মীম পালিয়ে বিয়ে করেছে। ইতোমধ্যে এই খবরটি পত্রিকায় ছাপা হয়ে গেলে। ফেসবুকেও মুন্না-মীমের বিয়ের খবরটি ছড়িয়ে পড়ছে। শিরোনাম দেয়া হচ্ছে ‘ফেসবুকে পরিচয় অতপর পালিয়ে বিয়ে!’

রচনাকালঃ ০৬/০২/২০১৫খ্রি:

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৭-১২-২০১৭ | ২০:৩৪ |

    বর্ণিত এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে কিনা আমার জানা নেই; তবে ঘটছে এবং ঘটেছে। আপনার লিখার অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে জীবনকে খুব কাছ থেকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

    ধন্যবাদ মি. আমির ইশতিয়াক। শুভ সন্ধ্যা। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • আমির ইশতিয়াক : ১৯-১২-২০১৭ | ১২:২৩ |

      অহরহ না ঘটলেও ঘটছে প্রিয় মুরুব্বী। ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  2. রিয়া রিয়া : ১৭-১২-২০১৭ | ২৩:১০ |

    গল্পে খুব পরিচিত ঘটনা বর্ণনা করেছেন গল্প দা। শুভেচ্ছা রাখছি আপনার জন্য। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • আমির ইশতিয়াক : ১৯-১২-২০১৭ | ১২:৪৪ |

      আপনার জন্যও শুভ কামনা রইল রিয়া দিদি।

      GD Star Rating
      loading...
  3. দীপঙ্কর বেরা : ১৮-১২-২০১৭ | ২০:৪৯ |

    ভাল লাগল চেনা গল্প। 

    GD Star Rating
    loading...
    • আমির ইশতিয়াক : ১৯-১২-২০১৭ | ১২:৫০ |

      দীপঙ্কর দা অনেকদিন পর অ‍াপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল। শুভ কামনা রইল।

      GD Star Rating
      loading...