সামাজিক দূরত্ব ও সৌদির কোকো কোলার বিলবোর্ড

সৌদি আরবে, কোকা কোলা কোম্পানির পানিয় বিক্রয় কমে যাওয়া বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বিপনণ বিভাগ, প্রমোশন বিভাগ ও অন্যান্যরা মিলে কি ভাবে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে মিটিং-এ বসলেন। মিটিং এ বসে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রমোশন বিভাগ এমন একটি বিজ্ঞাপন তৈরী করবে; যে বিজ্ঞাপনের কারণে সৌদি আরবে কোকো কোলা বিক্রয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

যথারীতি, সৌদি আরবের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিল বোর্ড বসিয়ে দেওয়া হলো, এবং যেখানে দেখানো হলো,
প্রথম ছবিতে : একজন মানুষ খুবই ক্লান্ত বোধ করছেন, ক্লান্তির কারণে নড়াচড়া করতে পারছে না।
দ্বিতীয় ছবিতে : তার হাতে একটি কোকো কোলার বোতল দেওয়া হলো।
তৃতীয় ছবিতে : কোকো কোলা পান করে লোকটি চাঙ্গা হয়ে গেলো।

বিল বোর্ড বসিয়ে দেওয়ার পর তারা খুবই আশাবাদী হলেন, এই বিল বোর্ডের কারণে তাদের বিক্রয় সংক্রান্ত সমস্যা কেটে যাবে। বাস্তবে দেখা গেলো উল্টো চিত্র, যা বিক্রয় হচ্ছিলো তাও বন্ধ হয়ে গেলো। স্বাভাবিক ভাবে তারা আবারও কারণ অনুসন্ধান করার জন্য মিটিং ডাকলেন। মিটিং-এ উঠে আসলো যে, সৌদী আরবের মানুষ ডান দিক থেকে পড়ে। অর্থাৎ তাদের বিজ্ঞাপনের অর্থ দাঁড়ালো একজন চাঙ্গা মানুষ কোকা কোলা পানের ফলে ক্লান্ত হয়ে গেলো।

কোরণার সংক্রামক রোধ করার জন্য স্বাভাবিক প্রচারেই সামাজি দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলো। বলা হলো নামায মসজিদে না পড়ে বাড়িতে পড়া যেতে পারে। এইসব প্রচারের মধ্যেই হুজুররা ষড়যন্ত্র খুজে পেলেন। তারা ওয়াজ করতে শুরু করলেন ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্যই এইসব প্রচার করা হচ্ছে। ইসলামে ছুঁয়েছে (সংক্রামক) রোগ বলতে কিছু নেই।

অতঃপর ব্যাপক ভাবে চিন, ইটালি, স্পেনের (তখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকোপ ছড়ায়নি) উদাহরণ দেওয়া হলো। এইবার হুজুররা গজব বলে চালিয়ে দিতে লাগলেন এবং বল্লেন, বাংলাদেশে করোনা আসবে না। নামায পড়লে কোরনা হবে না।

অতঃপর করোনা দেশে আসলো; লোকজনও করোনার ভয়াবহতা বুঝতে শুরু করলো। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকার, অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষনা করলো। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদে নামায না পড়ে বাড়িতে পড়তে বল্লো।

এইবার মানুষ সত্যিই ভয়ে পেতে লাগলো; ভয় ও দীর্ঘ ছুটি পেয়ে মানুষ ঢাকা ছাড়লো। ছুটির কারণে বাস, ট্রেন, বিমান লঞ্চ-ফেরির ভীড় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্যোগকে কৌতুকে পরিণত করে ফেল্লো। মিডিয়া ও ইন্টারনেটের কারণে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলো মানে মানুষ সত্যিই ভয় পেতে শুরু করলো।

ঢাকা ফেরত ও লোকাল মানুষ ভয় কাটানোর জন্য বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া শুরু করলো। মসজিদের এই ভীড় সামাজিক দূরত্বের উদ্যোগ আবারও কৌতুকে পরিণত করলো।

মানুষ নিজের বাড়ীটাকে পবিত্র করার সুযোগটাকে হাতছাড়া করলো।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০২-০৪-২০২০ | ১৪:০৫ |

    সমকালীন সমাজের পূর্ণ দর্পণ। মনে হলো একদম স্পষ্ট ছবি উঠে এসেছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • আলমগীর কবির : ০২-০৪-২০২০ | ১৪:৫১ |

      ধন্যবাদ ভাইয়া, ঘরে বন্দী আছে, এখন নিশ্চয়  আপনাদের সাথে থাকতে পারবো। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. ফয়জুল মহী : ০২-০৪-২০২০ | ১৪:১৭ |

     উপভোগ্য পড়া।  আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো। 

    GD Star Rating
    loading...
    • আলমগীর কবির : ০২-০৪-২০২০ | ১৫:০২ |

      আল্লাহু সবাইকে সেফ রাখবেন, নিজেরাও সেফ থাকুন। 

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ০৩-০৪-২০২০ | ৭:০৪ |

        স্বাগতম মি. আলমগীর কবির। Smile

        GD Star Rating
        loading...