হে ক্ষণিকের অতিথি ... পর্ব: ১

324

আমি যখন অনুভব করা শিখলাম, তখন থেকেই ওকে ভালো লাগতো। এই ভালো লাগা অন্যসব ভালো লাগার থেকে আলাদা। বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনের জন্য যে ভালো লাগা সেরকম না। লতায় পাতায় জড়ানো আত্মীয়কূলদের জন্যও তো আলাদা এক ‘ফিলিংস’ থাকে, তেমনও না। আবার ওই ভালো লাগাকে ভালোবাসা ও বলা যাবে না।

তাহলে ওর প্রতি আমার ভালো লাগাটা কেমন ছিলো?
ওটা যেন গন্তব্যহীন কোনো পথের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘ল্যান্ডমার্ক’ এর দেখা পাওয়ার উদগ্র বাসনায় তাড়িত হওয়া। অন্ধকার টানেলে দিকভ্রান্ত ছুটে চলে এক কোটি বছর পর বহুদূরে শেষ মাথায় আলোর আভাস পাওয়া। কিংবা পাতা ঝড়ার দিনে- দুইপাশে সারি সারি গাছের মাঝ দিয়ে কালো পিচের পথ ধরে পাগলা হাওয়ায় নিঃশব্দে হেঁটে চলা। অথবা শীতের দুপুরে ভরপেট ঘুম চোখে প্রিয় কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ ঝাপসা করে দেয়া বিস্মৃতির অতল গভীরে ডুব দেওয়ার আগ মুহুর্ত!

ওকে যেদিন প্রথম দেখি, জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শনের চেয়ে সেটা কোনো অংশে কম ছিলো না। কিংবা প্রথম বিমান ভ্রমণ। অথবা মায়ের আঁচল ছেড়ে প্রথম একা বান্ধবীদের সাথে বাইরে যাওয়া। অক্ষরে সেই অনুভব প্রকাশ করা দায়।

ওর ঘামে ভেজা লেপ্টানো কোঁকড়া চুল যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায়, আমি তখন আর জন্মে বাতাস হতে চাই! ওর কপালে জমে থাকা মুক্তোর মত শ্বেদবিন্দু শীতের নরম রোদে যখন চকচক করে, পরের জন্মে আমার নরম রোদ হতে ইচ্ছে করে। ও যে পথ ধরে বন্ধুদের আড্ডায় যায়, সেই পথে ওর শরীরের ঘ্রাণ পেতে আমি পৌণঃপুণিক হেঁটে চলি!

বাবা মারা গেলেন। মায়ের আবার বিয়ে হলো। ওদের বাড়িতে আশ্রিতা হলাম। বাবার বড় বোনের ছেলে সে। সে দিক থেকে সম্পর্কে আমরা ভাই-বোন। কিন্তু আমি চাইলাম- যতবার জন্মাবো, আমি ওর হবো! এভাবেই বেড়ে উঠলাম আমরা। আনন্দ-হাসি-কান্নার মাঝে শৈশব পেরিয়ে কৈশোর ছাড়িয়ে আলগোছে একদিন হৃদয়বতী হয়ে উঠলাম।

যখন হৃদয়বতী হলাম, ভালো লাগা প্রেমের আগুনে পুড়ে পুড়ে ভালোবাসায় রুপ নিলো। আমি পুইঁয়ের লতার মতো আমার হৃদয়বানকে ঘিরে নেতিয়ে পড়লাম। মোমের মতো গলে গেলাম। আবার ধীরে ধীরে শক্ত মোম হলাম। কিন্তু ওকে ভালোবাসি তা কী বুঝাতে পারলাম?

এক ভরা সাঁঝে সে চলে গেলো। ওর আর আমার গল্পের শুরুটা এখান থেকেই।

#হে_ক্ষণিকের_অতিথি_পর্ব_১

(ক্রমশঃ)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
হে ক্ষণিকের অতিথি ... পর্ব: ১, 5.0 out of 5 based on 2 ratings
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১২-০১-২০২৩ | ১০:০২ |

    বরাবরের মতো মনোমুগ্ধকর সংযোজন। … তবে বেশ অনেকদিন পর আপনার দেখা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মামুন : ১২-০১-২০২৩ | ২৩:৫১ |

      অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। 

      এখন অনেক সময় করতে পারছি নিজের জন্য। সাথেই আছি জানবেন, দেখা না হলেও।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ১৮-০১-২০২৩ | ১৮:৫৭ |

        ইনশাল্লাহ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

        GD Star Rating
        loading...
  2. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ১৬-০১-২০২৩ | ১৯:১৬ |

    * সুপ্রিয় অনেকদিন পরে ফিরে এসে আপনার লেখায় মুগ্ধ! শুভ কামনা সবসময়https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মামুন : ২০-০১-২০২৩ | ২২:৩৫ |

      ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।  আপনার মুগ্ধতা আমার প্রেরণা। ভালো থাকুন। এই বইমেলায় আপনার বই দুইটি মেলা থেকে পড়বো ইনশা আল্লাহ।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      GD Star Rating
      loading...