অণুগল্পঃ তিন শহর

1649171_n

ফ্রাঙ্কফুর্ট। জার্মানি।
ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুর ম্যাসেজ। আর এক মহাদেশ পার হয়ে আসতেই হ্যান্ডসেট স্ক্রিনে মৃদু কাঁপন অনুভব করে দূরের বন্ধু। মৃদু হাসি নিয়ে বিছানায় পাশ ফিরে আরাম অনুভব করে সে। ভালো লাগাটুকুও চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে।

স্ক্রিনে বন্ধুর মুখ।
‘পারুর সাথে একবার কথা বলতে চাই। আমার ফোনই ধরছে না সে। তোর বুবুকে বল না..।’

সময় যেন থমকে যায়। নিঃশ্বাসগুলো বিশ্বাসের ওপার থেকে এপারে আসতে বাঁধা পায়। সমস্যার গভীরে চিন্তা-ভাবনাকে ঠাঁই দেবার আগেই বেদনারা ঘিরে ধরে দূরের বন্ধুকে। সে মোবাইলের দর্পণে কাছের বন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। উপায় খোঁজে।

মধ্যরাত। পারুর শহর।
একা এক প্রিয়দর্শিনী ঘুমন্ত ওর নিজ শহরের নিমগ্নতা, যোগীর গভীর ধ্যানমগ্নতায় অনুভব করছে। ফ্ল্যাট লাগোয়া ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার ফাঁক গলে নেমে আসা চাঁদের আলোয়, ওর দীর্ঘ এলোচুল কেমন মায়াবী! নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে… দর্শকের বুকের গভীরে উষ্ণ রক্তের তান্ডব নৃত্য অনুভব করায়।

কালচে আগুন!
অহর্নিশি পোড়ায়। কাছে টানে। এমনই আগুন।

কি এক রহস্যময়, গোপন আবেশে পারুর অধর কোণে ফুটে ওঠা মৃদু হাসি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই, হ্যান্ডসেটে মৃদু কম্পন।

‘পারু! ফোন ধর… একবার।’

এতটুকুই কথা। কত ব্যথা। কথার ভিতরেও কতটা যে না বলা কথা রয়েই গেল! রেখে গেল কিছু একটা। অনুভবে নাকি কল্পনায়?
বাস্তবে নয় কি? কেন?

পারুর হাসিই পারুর কান্না। সেই কান্না ধীরে ধীরে মৃদু হাসির কম্পনে চোখ স্পর্শ করার আগেই, মধ্যরাতের এক রহস্যময়ী অপ্সরী, নিজের শহরে বসে ভাবে-
‘ওকে যদি আমি ভালোই না বাসি, তবে ওর কষ্ট অনুভব করে, আমারও কষ্ট পাবার কোনো অধিকার নাই।’
রুপালী তরল চাঁদের প্রবল বর্ষণে ভিজে যেতে থাকে পারু…

মধ্যরাত। কাছের বন্ধুর নিজের শহর।
টপ ফ্লোরে নিজের ‘সাময়িক বন্দীশালায়’ বসে এই মহানগরের ভিন্ন এক রুপ দেখছে সে। আলোয় ঝলমলে নগরীর নিচেই কতটা অন্ধকার। অনুভূতিতে খোকলা। বিশাল এক অজগরের মত প্রকাণ্ড হা করে থেকে, সকাল-সন্ধ্যা ওর বুকে বিচরণ করা যান্ত্রিক মানুষগুলোর অনুভূতিকে খেতে থাকে। সেই আলো-অন্ধকারের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থেকে সে ভাবে-
‘পারু ম্যাসেজের উত্তর দিলো না!’ 🙁

হৃদয়ের গভীরে কিছু একটা পুড়ছে। পোড়া গন্ধ পায় সে। কাছের বন্ধুর ভিতরে কোথায় যেন সহস্র জ্বলন্ত মোমবাতি গলে গলে পড়ছে। পুড়ছে। পোড়াচ্ছে!!

‘ওহ! ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন?‘
নিজের পারুর কথা ভেবে ভেবে সে উদাস হয়।

একটা আক্ষেপ সারা জীবন থেকেই গেলো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র না পাওয়ার বেদনাগুলোর এলোমেলো পথ চলার নামই কি জীবন নয়?

এব্যাপারে, কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতেও পারে। তবে অহংকার যাদের জীবনে অলংকারের মত জড়িয়ে থাকে, তাদের জীবনের বেশীরভাগ পথই এমন এলোমেলো চলতে হয়।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ২৬-০৪-২০২১ | ৯:৫০ |

    প্রকৃত ভালোবাসায় কষ্টটাই বেশী

    GD Star Rating
    loading...
    • মামুন : ১৫-০৫-২০২১ | ১৯:২৯ |

      জি, সহমত পোষণ করছি।

      আপনার অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ২৬-০৪-২০২১ | ১০:৫৩ |

    অণুগল্পটি অসামান্য ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অসাধারণ বলতে পারি মি. মামুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মামুন : ১৫-০৫-২০২১ | ১৯:৩০ |

      ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া।

      আপনার অনুভূতি সব সময়ের জন্যই আমার লেখার প্রেরণা।  https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      GD Star Rating
      loading...
  3. ফকির আবদুল মালেক : ২৬-০৪-২০২১ | ১১:২১ |

    বেশ ভালো লেগেছে।  

    GD Star Rating
    loading...
    • মামুন : ১৫-০৫-২০২১ | ১৯:৩১ |

      ধন্যবাদ আপনাকে। 

      ঈদের শুভেচ্ছা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

      GD Star Rating
      loading...