মিথিলাকে প্রথম যেদিন দেখি
আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল প্রচুর
কর্দমাক্ত একটি রাস্তার ডান পাশ ঘেষে হেঁটে আসছিল সে
অতি সন্তর্পনে পা ফেলছিলো
যেন এলোমেলো ইটের উপর পা পড়ে
তলার কাঁদাপানি ওকে বিড়ম্বনায় না ফেলে দেয়।
অফিস যাবার তাড়া ছিল তার..
প্রতিদিন একই সময়ে সে বাসস্টপে হেঁটে আসতো
রাস্তার ওপারের ফলের দোকানের সেই বৃদ্ধ দোকানি আর আমি
প্রতিদিনই দূর থেকে নীরব হাসিতে অভ্যর্থনা জানাতাম তাকে।
সে নিরবে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতো..
ওকে নিতে আসা মাইক্রোবাসটি ছিল কালো রঙের ‘হাইয়েস’
দূর থেকে গাড়িটি দেখা যেত না
কেমন ভুতের মত আচমকা এসে হাজির হতো!
সে একবার ঘাড় বেঁকিয়ে আমার পানে চেয়ে নীরবে চলে যেতো।
আমি ভাবতাম আবোলতাবোল নিজের মনে একা একা..
এভাবে একজন সম্পর্কহীনা
প্রতিদিনের অপেক্ষার কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে করে
চেনা-অচেনার গণ্ডী পার হয়ে কিভাবে যে আমার কাছে চলে আসলো
সে এক ভিন্ন ইতিহাস।
অন্য কোনও সময় বলা যাবে..
একদিন হরতালের দিনে
প্রতিদিনের মতো অপেক্ষায় আমি
পিকেটাররা তখনো বের হয়নি
কাঁধের ব্যাগটি মিথিলার অবহেলায় এদিক সেদিক দুলছিল সেদিন
চিন্তিত মিথিলা পাশে এসে বলে,
– আজ গাড়ি আসবে না। কি করি বলুন তো?
আমার অবাক হওয়া চাহনি দেখে মৃদু হেসে বললো,
– এই যে মিস্টার! আপনাকেই বলছি আমি।
আমি তখন ওর ঠোঁটের আলোড়ন কিভাবে শব্দকে মধুর করে তোলে
সেই বিশ্লেষণে বিভোর ছিলাম ওরই পানে চেয়ে!
আমার বালক মনের নাবালক চোখের অপার বিস্ময়
সেদিন ওর চোখের তারায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল!
কেমন শান্তিপ্রদ তেজ সেই আগুনের
শীতের নরম রোদের মত মায়াবী কোমল!
সেদিনই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে একই রিক্সায় পাশাপাশি
সেদিনই প্রথম নিজের ভেতর থেকে নিজেকে বের করে আনা
চেতন অবচেতনে সেদিনই বালক থেকে প্রথম পুরুষ হয়ে ওঠা
আর ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম হওয়া ক্ষণে
সেই-ই প্রথম দু’জনায় কাছাকাছি!
দুরন্ত বাতাস মিথিলার অবাধ্য চুল আমার দিকে ঠেলে দিয়ে হাসছিলো
আমার আর ওর শরীর ছুঁয়ে যাওয়া মাতাল সমীর
উষ্ণতর এক কাঁপন হয়ে আমায় গ্রাস করছিলো
আর আমি ভেসে যাচ্ছিলাম ফেনা হয়ে, ওর নি:শ্বাসের ছোঁয়ায়!
অনেক দিন, অনেকগুলো ঘন্টা
একত্রে কাটিয়েছিলাম আমি মিথিলার সাথে
হ্যা! ওটাই নাম ছিল তার
বলেছি বোধহয় আগেও একবার।
শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত আর ভরা বাদলের দিনে
ভেজা শালবনের ভেতর দিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম দু’জনে!
যেদিন ওর অসুখ থাকতো
কিংবা কোনো কারণে দেখা হতো না আমাদের
বড্ড মরে যেতে ইচ্ছে করতো সেদিন
বারবার ওকে দেখতে ইচ্ছে হতো!
ওর চলার পথগুলিতে তখন হেঁটে বেড়াতাম আমি পাগলের মতো
মিথিলার ঘ্রাণ অনুভব করতে চাইতাম পথের বুকে, আকাশে-বাতাসে, মাটির সোঁদা গন্ধে!
সেই মিথিলাকে শেষবার দেখি এক আলোকোজ্জ্বল রাতে
অপ্সরী সেজেছিল সে!
দেখেছিলেম তাকে সানাইয়ের সুরে সুরে চলে যেতে
একবারও পিছু ফিরে তাকালো না সে আমার দিকে!
মিথিলারা কখনো পিছু ফিরে তাকায় না!
মিথিলারা কখনোই কারো হয় না।।
______________________
.
মিথিলা কারোর নয়। গ্রন্থ : শেষ তৈলচিত্র।
loading...
loading...
"মিথিলারা কখনো পিছু ফিরে তাকায় না!
মিথিলারা কখনোই কারো হয় না।।"
অনুভবগুলো এমনি হয় হয়তো। ভালো লিখেছেন । এটি আগেও পড়েছি মনে হয়।
loading...
জীবন কাব্য। অসাধারণ প্রকাশ মি. আল মামুন। মুগ্ধতা জানালাম। ধন্যবাদ।
loading...
দীর্ঘ কবিতা। আপনার এই লেখাটি আমার আগে সম্ভবত পড়া হয়নি। দারুণ।
শুভেচ্ছা কবি এবং গল্পকার আল মামুন ভাই।
loading...
অসাধারণ সুন্দর জীবন গাঁথা। মন্ত্রমুগ্ধ।
loading...
দুরন্ত বাতাস মিথিলার অবাধ্য চুল আমার দিকে ঠেলে দিয়ে হাসছিলো।
loading...
অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় গল্প দা।
loading...
চেতন অবচেতনে সেদিনই বালক থেকে প্রথম পুরুষ হয়ে ওঠা
আর ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম হওয়া ক্ষণে
সেই-ই প্রথম দু’জনায় কাছাকাছি!
loading...
মিথিলারা কখনো পিছু ফিরে তাকায় না!
মিথিলারা কখনোই কারো হয় না।।
*

loading...