মামুনের অণুগল্প: ছায়াসঙ্গিনী

নীলা কলেজে যেত একা। একটা ছেলে খুব বিরক্ত করতে শুরু করল। তার অদ্ভুত সব কাজে মেয়েটা সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকতো। পথে ঘাটে, রেস্তোরাঁয়, সাইবার ক্যাফেতে, কলেজে সর্বত্র ছেলেটা নীলাকে বিরক্ত করতো। এমনসব কাণ্ড যে অন্যরা টের পেত না। সে নীরব অনুভূতি নীলার মধ্যে পার করে দিয়ে ওর ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতো। নিজের মত করে সে হেঁটে যেতো নীলার ছায়া হয়ে।

ছেলেটার কিছু কিছু আচরণে নীলা এত বেশি অপমান বোধ করতো যে সে একদিন ছেলেটাকে খুব অপমান করে। ঐ ঘটনার পর থেকে ছেলেটাকে আর দেখা যায় না। নীলা আগের মত প্রতিদিনের জীবনযাপন করে, তবু সময়ে অসময়ে কেন জানি ছেলেটাকে খুব মিস করে। কলেজে আসা যাওয়ার পথটা মনে হয় জনহীন, শূণ্য। সে হাঁটে কিন্তু বার বার পিছনে তাকায়, তবে আগের মত ওর অনুভূতিতে কেউ বিরক্ত করতে আসে না। পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে কিংবা ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় সবকিছু আগের মতই চলে নীলার। তবে সব কিছু ছিন্নভিন্ন ভাবে…
নিঃসঙ্গ নীলা হৃদয়ের খুব গোপন কোন এক তারে ছেলেটার জন্য প্রচণ্ড ভালোবাসা অনুভব করে। কিন্তু ছেলেটাকে সে আর দেখে না।

একদিন ওকে এদিকে ওদিকে তাকাতে দেখে এক অপরিচিত ছেলে এসে খবর দেয়, ওর কথার তীর্যক বাণে সেদিন রাতেই ছেলেটা একটা নাইনলের রশি দিয়ে নিজের বেডরুমে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। ছেলেটার আর নীলার বাসা অন্য দুই ভিন্ন মহল্লাতে হবার জন্য সে জানতে পারেনি। নীলা ছেলেটার কথা শুনে প্রচণ্ড কষ্ট পায়।

এরপর দিন থেকে নীলা চলার পথে আবারো ছেলেটাকে দেখতে পায়। এবার ছেলেটা সরাসরি ওর সাথে কথা বলে। নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে। হাজারো মানুষের ভীড়ে সে একাকী একটা মেয়ে অদৃশ্য কোনো একজনের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়… সবাই মেয়েটাকে পাগল ভাবে… মেয়েটা কেয়ার করে না। সে তার হৃদয়ে এক প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে অসহ্য গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে ছেলেটার হাত ধরে এগিয়ে চলে। একজন ছায়াসঙ্গিনী হয়ে দুঃখী মেয়েটা ঐ মৃত ছেলেটাকে বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৯-০৯-২০১৯ | ১৮:০৪ |

    মনটা বিষণ্ন হলেও আপনার সুলিখনকে অণুগল্প হিসেবেই গ্রহণ করলাম মি. মামুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. সুমন আহমেদ : ৩০-০৯-২০১৯ | ৮:২৬ |

    অণুগল্পটি পড়লাম মামুন ভাই। চমৎকার লিখেছেন। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  3. সাজিয়া আফরিন : ৩০-০৯-২০১৯ | ৮:৫১ |

    সুন্দর অণুগল্প। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ৩০-০৯-২০১৯ | ৯:৪৫ |

    ভালোবাসা মহ. আল মামুন ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. রিয়া রিয়া : ৩০-০৯-২০১৯ | ২১:৪২ |

    শুভেচ্ছা প্রিয় গল্প দা। 

    GD Star Rating
    loading...
  6. শাকিলা তুবা : ৩০-০৯-২০১৯ | ২২:২৬ |

    সুন্দর মামুন ভাই। Smile

    GD Star Rating
    loading...