কোথায় যেন ধূপের গন্ধ..বাতাসে ভাসে। দমকা বাতাস দ্রুতধাবমান বাসের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ঘ্রাণকে উড়িয়ে নেয়। অখন্ড অবসর উপভোগরত ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা সাজ্জাদের জটিল এক আইডিয়ার বিশ্লেষণরত ব্রেইনকেও সতেজ করে এই ধুপের ঘ্রাণ।
ডাইনে-বামে অহেতুক তাকিয়ে ঘ্রাণের উৎস খুঁজে দেখার অপচেষ্টা চালায় সে। তবে পরবর্তী ক’সেকেন্ডেই অন্যান্য আরো অনেক অতীত মৃত চিন্তার মত এটাও ডিলিট হয়ে সোজা রিসাইকেল বিনে জায়গা করে নেয়।
এইমাত্র যা করলো সেটা ভাবতেই আনন্দ অনুভব করে। এখন হেঁটে হেঁটে তা উপভোগ করছে।
সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই ওর নাম টো টো সাজ্জাদ হয়ে গেছে। বন্ধুমহল থেকে শুরু করে ওর বাসার সবাই- এমনকি শায়লা পর্যন্ত জানে।
শায়লা!
নামটিই কেমন এক প্রশান্তি এনে দেয়। সবসময়।
মটর বাইকে করে এলাকায় অস্থির অলসতায় ঘুরে বেড়ানোর সাথে সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কাজও সে করে। বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশুনা করাটাই প্রধান কাজ। আর মাসের শেষে বাড়ির ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা, পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা- এ সবই সে করে। ওর বড় ভাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। প্রতিমাসে একবার বাবা-মাকে দেখতে আসেন। তাই বাবা-মার প্রতি ভালবাসার বড় ভাই এর অংশটুকুও সে প্রতিদিন নিজের মত করে।
এর মাঝে নিজের বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু চাহিদাও তাকে পূরণ করতে হয়। বিকৃত কথাটা বলা একটুও ভুল হচ্ছে না। সাজ্জাদের খুব প্রিয় একটি কাজ হচ্ছে, এলাকায় নতুন কেউ এলে ইচ্ছেকৃত সে ভুল ঠিকানা দেখিয়ে দেয়। আর নতুন মানুষটি যখন এক গলি থাকে অন্য গলিতে ঘুরপাক খায়, সে বাইকে করে দূর থেকে দেখে আনন্দ পায়।
আলমগীর মুন্সীর চায়ের দোকানের পাশে ওর বাইকটা স্ট্যান্ড করা। বাইকের ঘাড়ের লক খুলে স্টার্ট বাটন পুশ করে আশপাশ সচকিত করে একটা ইউ টার্ণ নিয়ে বেরিয়ে পড়া সুদর্শণ সাজ্জাদ মুহুর্তে টো টো সাজ্জাদে পরিণত হয়। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি। এইমাত্র নতুন একটি আইডিয়ার জন্ম হয়েছে ওর উর্বর মস্তিষ্কে।
…
শায়লা অনেকক্ষণ ধরে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। যা ও বা পাচ্ছে সবই ওর উল্টো পথের। এই ভরদুপুরে সবাই যার যার বাসায় কিংবা নিরাপদ কোনো ছায়াঘেরা জায়গায় যেতে চায়। বান্ধবী রিতার বাসায় এসে ফেসে গেছে শায়লা। একটা অটো নিয়ে চলে যাবে কিনা ভাবল একবার।
…
দূর থেকে শায়লাকে দেখছে সাজ্জাদ। সে যেখানে আছে সেখান থেকে শুধু শায়লাকেই দেখা যাবে। শায়লা ওকে সেইভাবে দেখতে পাবেনা। বাইকের লুকিং গ্লাস দিয়ে বিপরীত দিক থেকে শায়লাকে দেখছে সে। শায়লা যদিও এদিকে তাকায় তবে শুধু পিছনের অংশই দেখতে পাবে। পিছন থেকে দেখেও কি সে চিনবে সাজ্জাদকে?
এই মেয়েটিকে দেখলেই কেমন যেন হয়ে যায় সাজ্জাদ। ওদেরই ভাড়াটিয়া। বৃদ্ধা মা এবং ছোট এক বোনকে নিয়ে থাকে ওরা। তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটে। একেবারে সাজ্জাদদের সরাসরি নীচের ফ্ল্যাট। শায়লার বড় এক ভাই আছেন। সে ঢাকায় এক পোশাক কারখানায় ভালো পোষ্টে চাকরি করে। সেখানেই দুই মেয়ে আর বউকে নিয়ে থাকে। তবে মা ও বোনদেরকে দেখার জন্য প্রতি মাসে একবার আসবেই। যতই কাজ থাকুক না কেন। নিজের ফুল ফ্যামিলি নিয়ে আসে সে।
সেই কটা দিন শায়লার খুব আনন্দে কাটে। দিন না বলে ক’টা রাত বললেই বেশী মানানসই হয়। ভাইয়া তো বৃহষ্পতিবার এসে আবার শুক্রবার রাতে চলে যায়। তবে ভাবী ও বাচ্চারা কখনো দু-তিনদিন থেকে যায়। এই ভাড়া বাসাটি তখন শায়লার কাছে নিজের বাড়ির মত শান্তি এনে দেয়। সেই যে বাবা বেঁচে থাকতে ওদের গ্রামের বাড়িতে সবাই মিলে একসাথে থাকার সময় যা অনুভব করত, সেরকম। আসলে পরিবারের সবাই এক সাথে থাকার আনন্দের সাথে অন্য কোনো কিছুর তুলনাই হয় না।
গরমে ঘেমে অস্থির হয়ে আছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্টপেজে কোনো বাস ও আসছে না সেই অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। শায়লা বিরক্তির একেবারে চরমে পৌঁছে গেলো। ঠিক তখনই উল্টো দিকে সাজ্জাদের পিছনটা সে দেখতে পায়।
এবং চিনে ফেলে।
মেয়েদের ভিতরে অনেক অদ্ভুত জিনিস আছে। একইসাথে এদের অতিরিক্ত একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। অদৃশ্য কিছু অতি সহজে বুঝে ফেলার… দ্রুত উপলব্ধি করার এমন কিছু সহজাত ক্ষমতা পুরুষের থেকে এদের বেশী। তবে এই এরাই আবার খুব কাছ থেকে সহজ অনেক কিছুও অনেক দেরীতে বুঝে।
সাজ্জাদ নামের এই ছেলেটি যে ওকে কেন্দ্র করেই চিন্তা-ভাবনার এলোমেলো জগতে সর্বক্ষণ অবস্থান করে সেটাও মেয়েলি এই বিশেষ ক্ষমতাবলে সে বুঝে গেছে।
বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে হেঁটে হেঁটে সাজ্জাদের বাইকের পাশে এসে দাঁড়ায় শায়লা। লুকিং গ্লাসে শায়লাকে ওর দিকে আসতে দেখেও একচুল নড়তে পারেনা সাজ্জাদ। চোরের মত ধরা পড়া অভিব্যাক্তি নিয়ে ফুটপাতের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।
কাছে এসে বেশ স্বাভাবিকভাবেই শায়লা বলে,
– চলুন, বাসায় যাই।
নীরবে শায়লাকে বাইকে বসার জায়গা করে দিয়ে একটু সামনে সরে বসে সাজ্জাদ। ওরা দু’জন যখন বাইকে করে চলে যায়, নিজের খুব কাছে স্বপ্নের রাজকন্যা থাকা সত্বেও কেন জানি চিরতার পানি পান করেছে এমন অভিব্যক্তি নিয়ে থাকে সাজ্জাদ। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সে কেন জানি কোনো আনন্দ পায়না।
ওর সকল আনন্দের উৎস বিশ্লেষণধর্মী ব্রেইনে এই মুহুর্তে কোনো অনুভুতিই নেই। সব শূন্য হয়ে আছে। শুধু নিয়ম মেনে বাইক চালিয়ে বাসায় পৌঁছানোতেই ব্রেইনের সবটুকু অংশ মগ্ন।
_________________________
#আমার_হিয়ার_মাঝে_লুকিয়ে_ছিলে।
loading...
loading...
আপনার পরিবেশিত গল্প বা অণুগুলোনকে আমি সব সময়ই সমীহের দৃষ্টিতে দেখি। আজকের লিখাটিও পড়লাম। ভালো লিখেছেন মি. মামুন। শুভ সকাল এবং পাশে থাকুন।
loading...
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার প্রেরণায় লিখবার চেষ্টা করছি। শুভেচ্ছা..
loading...
অণুগল্পটি পড়লাম। আপনি বরাবরই ভালো লেখেন মামুন ভাই।
loading...
গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থেকো ভাই।
loading...
আবারও পড়লাম। চমৎকার মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ কবিদা'। শুভেচ্ছা..

loading...
আপনার গল্পের সৌন্দর্যই আলাদা প্রিয় গল্প দা।
loading...
জেনে খুশী হলাম দিদি। ধন্যবাদ।

loading...
ভালো গল্প।
loading...
ধন্যবাদ বন্ধু আপনাকে। শুভেচ্ছা..

loading...