আজ জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৯৯-তম জন্মদিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চলছে তুমুল স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। টক-শোগুলিতে ধুমায়িত কফির মগ সামনে রেখে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। সবাই যার যার মতো নিজেকে কঠিন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী জাহির করাতে সচেষ্ট।
কিন্তু কথা হলো, এখন আওয়ামীলীগের সুবর্ণ সময়। টানা দশ বছর পার করে এই ঐতিহ্যবাহী দলটি পরপর তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে। তাই স্বভাবতই এখন ‘বসন্তের কোকিলদের’ আগমন। এইসব কোকিলেরা ‘হাইব্রিড আওয়ামীলীগার’ হিসেবেই কোনো কোনো মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এরা ‘চাম্পু’ টাইপেরও বলতে পারেন। ‘চাম্পু টাইপ’ কী সেটা জানতে চাইলে অন্য কোনো সময় এ বিষয়ে জ্ঞানগম্ভীর আলোচনা করা যাবে।
বলছি বসন্তের কোকিলদের কথা। আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে এদেরকে পাওয়া যায় না। তখন এরাই ১৫ আগস্ট সহ বিভিন্ন দিবসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে বাঁধা সৃষ্টি করে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে (এ ব্যাপারে আমার নিজের দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে)। বহু পুরনো সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন বসন্তের কোকিলরাও রয়েছেন। আবার এইসব হাইব্রিড লীগাররাই আওয়ামীলীগের বিরোধীদের থেকে সুবিধা গ্রহণ করে তাদেরকে বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দিতে সদা তৎপর। এরা আসলে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে বসবাস করা ক্ষতিকারক নেংটি ইঁদুর। এসব ইঁদুর থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
বলছিলাম পুরনো সময়ের বসন্তের কোকিলদের কথা। পুরনো সময় বলতে আমি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়কেই ধরলাম। তখন সময় এমন ছিলো যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলে কিংবা সপরিবারে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় অথবা পত্রিকায় দু’কলম লিখবে- এমন কাউকেই তখন পাওয়া যায়নি। অথচ বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর সাথে সামান্যতম লিংক আছে এমন দিবস এলেই এইসব পুরনো কোকিলেরা জাতির জনকের স্তুতিগানে নিজেদের মুখের ফেনা তুলে ফেলে এমন অবস্থা।
আজ জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে কেন তাঁর মৃত্যু দিবসের প্রসঙ্গ তুলে আলাপ করছি- অনেকেই হয়তো এমনটি ভাবছেন। ভাবুন। ভাববার মতো বিষয়ই বৈকি।
আমার মতে আজ এবং জাতির জনকের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দিবসে এই দেশে কেবলমাত্র কবি নির্মলেন্দু গুণই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিছু বলার, লেখার কিংবা গাইবার অধিকার রাখেন। কেন? বলছি শুনুন…
১৯৭৭ ইং সাল। ভয়ংকর একটা সময় পার করছে বাংলাদেশ। পাথরচাপা সেই অন্ধকার সময়ে বাংলা একাডেমির একুশের কবিতা পাঠের আসরে প্রথম দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ শীর্ষক প্রথম কবিতাটি লিখেছিলেন তিনিই। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যতরুণ গোষ্ঠীর একুশে স্মরণিকা ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ এ এই কবিতাটি প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এটিই ছিল প্রথম প্রতিবাদী কবিতার সংকলন।
‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতায় নির্মলেন্দু গুণ বললেন-
‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শহিদ মিনার থেকে খসে-পড়া একটি রক্তাক্ত ইট গতকাল আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মতো আমিও পলাশ ফুল খুব ভালোবাসি, ‘সমকাল’
পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শাহবাগ এ্যভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝরনাটি আর্তস্বরে আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মতো আমারো স্বপ্নের প্রতি পক্ষপাত আছে,
ভালোবাসা আছে_ শেষ রাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক,
না-ফোটা কৃষ্ণচূড়ার শুষ্কভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জরীগুলো কান পেতে শুনুক,
আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক_
আমার পায়ের তলায় পুণ্য মাটি ছুঁয়ে
আমি আজ সেই গোলাপের কথা রাখলাম, আজ সেই পলাশের কথা
রাখলাম, আজ সেই স্বপ্নের কথা রাখলাম।
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি,
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’
তাই, আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর জয়গান গাইতে ভয়-ভীতি শংকা কিংবা অন্য কোনো প্রলোভনে নিশ্চুপ থেকেছে, যে সব লেখক/কবি/সাহিত্যিকের লেখনি স্তব্ধ থেকেছে- আজও তাঁদের নিশ্চুপ থেকে দুঃসময়ের নিশ্চুপতার প্রায়শ্চিত্ত করা উচিৎ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘প্রচ্ছদের জন্য : শেখ মুজিবুর রহমানকে’, ‘সুবর্ণ গোলাপের জন্য’, ‘শেখ মুজিব ১৯৭১’, ‘সেই খুনের গল্প ১৯৭৫’, ‘ভয় নেই’, ‘রাজদণ্ড’, ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’, ‘মুজিব মানে মুক্তি’, ‘শেষ দেখা’, ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনী’, ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’, ‘শোকগাথা : ১৬ আগস্ট ১৯৭৫’, ‘পুনশ্চ মুজিবকথা’, ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো’, ‘প্রত্যাবর্তনের আনন্দ’ প্রভৃতি কবিতা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার লেখা প্রথম কবিতা ‘প্রচ্ছদের জন্য : শেখ মুজিবুর রহমানকে’, ১৯৬৭ সালের ১২ নভেম্বর এ কবিতাটি তিনি যখন লেখেন তখন মুজিব কারাগারে।
আজ জাতির জনকের ৯৯তম জন্মদিবসে আমিও কোনো শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবো না। আমিও আরেকটি কবিতা (এটি গানও) দিয়ে লেখা শেষ করবো-
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।
যে মানুষ ভীরু কাপুরুষের মতো, করেনি কো কখনো মাথা নত।
এনেছিল হায়েনার ছোবল থেকে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।
কে আছে বাঙ্গালি তার সমতুল্য, ইতিহাস একদিন দেবে তার মুল্য।
সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে, যায় কি রাখা কখনো তা।
যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।’
youtu.be/VdphdjUQMc8
loading...
loading...
'পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। '
জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই।
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা..
loading...
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৯৯-তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
loading...
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতিরজনকের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা । আর শুভ জন্মদিনে জাতিরজকের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা..
loading...
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা..
loading...
শ্রদ্ধা।
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা…
loading...
যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।
loading...
জি, যদি শোনা যেত…
জনকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা…
loading...
জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা..
loading...
যতদিন রবে পদ্মাযমুনা গৌরি মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
নির্মলেন্দু গুণের প্রতি শ্রদ্ধা, বসন্তের কোকিলদের জন্য করুণা
loading...