বাসে প্রচুর ভীড়। নিঃশ্বাস বন্ধ করা সেই ভীড়ে মধ্যবয়স্ক একজন কন্ডাক্টর ভাড়া নিচ্ছে। এক পর্যায়ে একজনের সামনে এসে বলে, ‘ মামা আপনার ভাড়াটা?’ যাকে বলা হল সে কোনো কথা না বলে সামনে তাকিয়ে থাকে। আবার একই কথা বলতেই- ‘ এই বাইঞ্চোত! একবার ভাড়া দিলাম না?’ কথায় কথা বাড়ে… হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় অনেক সময়।
একজন দশ টাকার নোট দিয়েছে। ভাড়া পাঁচ টাকা। কন্ডাক্টর দুই টাকা ফেরত দিতেই-‘এ্যাই, আর তিন টাকা কই?’ … ‘ মামা, ভাড়া আট টাকা।’ …’ কবে থেকে? নতুন যাই মনে হয়?’ … ‘আমরা ও তো নতুন নিই না’… ‘জলদি তিন টাকা দে’…। পেছন থেকে একজন-‘ …শালাদের মাইর দেয়া দরকার’। এক পর্যায়ে কন্ডাক্টরের কানের উপর দু’এক ঘা… যাত্রী বনাম বাস স্টাফদের এই অসম যুদ্ধে নির্যাতিত হয়েও অতি স্বাভাবিক থেকে যায় এই স্টাফেরা।
চলার পথে এগুলো খুব কমন দৃশ্য। আমি বলছি না পরিবহন স্টাফেরা ধোঁয়া তুলসি পাতা। তবে ওদের জ্ঞান-রুচিবোধের সাথে আমাদের অনেক পার্থক্য। তাই একবার ভাড়া নিয়েও ভুলে আবার চাওয়াতে কোনো দোষ দেখি না। সামান্য দু’তিন টাকার জন্য নিজেকে মানুষ থেকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে আনাটাও কি ঠিক?
রিক্সায় উঠেছেন ভদ্রলোক, ভাড়া ঠিক করে নেন নাই। গন্তব্যে পৌঁছে স্বাভাবিক ভাড়ার থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দাবী করাতেই হাতের ছাতা দিয়ে গোটা দুই বাড়ি রিক্সাওয়ালার শরীরে। কিংবা রিক্সায় ওঠার আগে ভাড়া কত নিবে জানার সময় অতিরিক্ত চাওয়াতে একটা অকথ্য ভাষার প্রয়োগ… এসবও প্রতিদিন দেখি… শুনি। নিজেকে ওই অশিক্ষিত গরীব মানুষগুলোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটাও কি ঠিক?
বাসে উঠেছেন, তাড়া আছে দ্রুত পৌঁছাবার। সবারই থাকে। ড্রাইভার জায়গায় জায়গায় বাস থামাচ্ছে। যাত্রীরা চীৎকার করছে, ‘ এ্যাই …শালার পো। বাস ছাড়োছ না ক্যা? ড্রাইভার ইচ্ছে করে আরো ঘাউরামি করে। এক মিনিটের জায়গায় আরো কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। ফলাফল? ড্রাইভার-হেল্পারকে আচ্ছামত ‘মাইর’। এগুলো কিন্তু আমাদের মতো সাদা মনের দাবীদার মানুষেরাই করি। একটু ধৈর্য-সহিষ্ণুতার অভাব আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কখনো ভেবেছি কি?
এতোক্ষণ বলা হল যারা পাবলিক পরিবহনে চলাফেরা করেন, তাদের সাথে রিলেটেড প্রতিদিনের কিছু কমন ইন্সিডেন্ট। এবারে যারা নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করেন তাদের বেলায় ঘটে যাওয়া কিছু দৃশ্যের কথা বলি?
প্রচন্ড জ্যাম… প্রাইভেট কারে এসির ভিতরে বসে একটু পরপর উত্তেজিত হচ্ছেন-‘নাহ! এই দেশটার কিছুই হবে না। কেউ কোনো নিয়ম মানে না।’ পরক্ষনেই অন্য একটা কারকে আপনার ডান পাশ দিয়ে রঙ সাইড ধরে বেরিয়ে যেতে দেখেই ড্রাইভারকে- ‘ কি ব্যাপার? সবাই চলে যাচ্ছে, তুমি কি করছ? যাও, ওই পাশ দিয়ে ওর পিছনে রওয়ানা হও।’ ভালোই আইন মানলেন!
খালি রাস্তা… তেমন ভীড় নেই… একটা মোড় ঘুরার সময়ে হঠাৎ একটা রিক্সা আপনার গাড়ির সামনে। প্রচন্ড ব্রেক… আর একই সাথে নিজের মুখের ব্রেক ছেড়ে দেয়া- ‘ আবে …হালার পো, মরার আর জায়গা পেলি না? কিভাবে রিক্সা চালাস? অ্যাই তোরে লাইসেন্স কে দিছে রাস্তায় বের হবার?’ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রিক্সাওয়ালারা চুপ থাকে। তবে কিছু ঘাড় ত্যাড়া রিক্সাওয়ালা ত্বরিত মুখের ওপর জবাব দেয়… আর শিক্ষিত-উচ্চবিত্ত মানুষগুলোর হাতের জোর কেমন সেই পরীক্ষার গিলোটিনে গিনিপিগ হয়।
এরকম অসংখ্য ছোটখাট জিনিসের কথা উল্লেখ করে লেখার কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। আমি এখানে যাত্রী এবং পরিবহন স্টাফদের ভিতরকার কিছু আচরণের কথা বলছি না। আমি মানুষের সাথে মানুষের ছোট ছোট ব্যবহারের কথা বলছি। যেগুলো আমরা সচরাচর ভুলে যাই। ভয়-ক্রোধ ও হতাশার সময়ে আমরা নিজেদের ভেতর থেকে বের হয়ে আসি। আমাদের মুখোশ খুলে যায়। কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে আমরা নিজেদেরকে দেখতে পাইনা। তবে অন্যের চোখে ঠিকই সেগুলো ধরা পড়ে। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আমরা সৃষ্টির সেরা জীব, আমরা মানুষ। তাই আসুন নিজেকে নিজের চোখে দেখবার চেষ্টা করি।
অনুশীলনের জন্য প্রতিদিন একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়া যেতে পারে। সেখানে হয়তো নিজের মুখোশবিহীন আসল চেহারাটি দেখা যাবে। আর ঐ চেহারাটিই আসল।।
_______________
#মুখোশ_অণুগল্প_৫২২
loading...
loading...
এভাবেই আমাদের এই সব দিন রাত্রি মি. মামুন। শুভ সকাল।
loading...
জি ভাইয়া। এভাবে কাটছে জীবনের দিন, দিন দিন প্রতিদিন।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা…

loading...
অনুরূপ কত ঘটনাই না ঘটে আমাদের আশেপাশে মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
জি কবিদা', অনেক ঘটনার মহাসম্মেলন আমাদের জীবন।
শুভেচ্ছা রইলো..

loading...
"যেগুলো আমরা সচরাচর ভুলে যাই। ভয়-ক্রোধ ও হতাশার সময়ে আমরা নিজেদের ভেতর থেকে বের হয়ে আসি। আমাদের মুখোশ খুলে যায়। কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে আমরা নিজেদেরকে দেখতে পাইনা। তবে অন্যের চোখে ঠিকই সেগুলো ধরা পড়ে।" বার্তাটি গ্রহণ করবার মতো। শুভেচ্ছা প্রিয় গল্প দা।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় রিয়া দিদি। আমাদের সকলের নিজেকে নিজের আসল চেহারায় দেখবার অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে।
শুভেচ্ছা…

loading...
বাস্তবতা।
loading...
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা…
loading...