প্রায় দুই যুগ ধরে আমি একা পথ চলতে পারি না। নিঃসংগ পথ চলায় আমার আনন্দ নেই। আর ফেলে আসা যে সময়ের কথা বললাম, তখন বউয়ের হাত ধরে হাঁটার তীব্র আনন্দ রোগে ভুগছিলাম আমি।
যদিও এই রোগটি দান করে বিরল সুখের অনুভব, যারা ওভাবে ভাবেন, উপলব্ধি করছেন। আমিও ঐ ‘বিরল শ্রেণীর তীব্র আনন্দ উপভোগকারীদের’ একজন বলে দাবী করতে পারি।
প্রিয় মানুষের হাত ধরে পথ চলায় অনেক বিড়ম্বনাও আছে। সহজে এটা সবার পাওয়া হয় না। সবচেয়ে আসল বিষয়টি হলো, একজন মানুষ ‘প্রিয় হয়ে ওঠা’। আর এই হওয়াটা এক পক্ষের না। ‘প্রিয়’ শব্দটি ন্যূন্যতম ‘একাধিক’ পক্ষের সাথে জড়িত।
একটু জ্ঞান দেবার চেষ্টা করলাম বলে কি মনে হচ্ছে? ওরকম মনে এলে ভুল ভাবছেন ভেবে নিন।
আমার প্রিয় মানুষ একজন নারী। নারীর মন নাকি শত সহস্র বছরের সাধনার ধন। আমাদের গড় আয়ু কত হবে? ৫৫/৬০…? এতো সময় নষ্ট করে মনের খোঁজ না নিয়ে, অনেক চিন্তা করে ওদের হাত ধরে জীবনের বাকী পথটা পাড়ি দেবার কথা ভাবলাম। হেঁটে হেঁটেই মনে প্রবেশের রাস্তা পাওয়াই যাবে। তাই হাঁটা শুরু করলাম।
আমার প্রিয় মানুষের সাথে পথ চলার প্রথমদিকে, আমার কাছে ওর হাতের আঙ্গুলের সাথে আমার হাতের ছুঁয়ে দেয়াটা, অনেক বিরাট পাওয়া মনে হতো! ঐ সময়ে, আমাদের হাতের আংগুলেরা কীভাবে যেন একে অপরকে কাছে টেনে নিতো। মনে হতো যেন বিশ্বজয় করে এসেছি!
এরপর বিশ্বজয় করে করে কীভাবে যেন বছরগুলি ঘুরে গেলো। টের পেলাম না। শুভ্র কেশের উপস্থিতি যদিও অনেক বেলা হবার জানান দিচ্ছিল, ওদিকে লক্ষ্য করার সময় ছিলো না। বেপরোয়া পথ চলায় মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম।
পার করা সময়গুলিতে, নিরবচ্ছিন্ন তাঁর সাথে থাকতে পারিনি। ‘চাকুরি এবং অন্যান্য’ কারণে’ মেয়াদী বিচ্ছিন্নতা’ কাজ করেছে। চাকুরিকালীন ভিন্ন শহরে বসবাস করায় হাত ধরতে পারিনি। ঐ সময়ে বৃহস্পতিবার রাতটা শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যেত… শুক্রবারটা ঘোড়ার পিঠে করে চলে গিয়ে রাত সাড়ে চারটায় জেগে ওঠার অ্যালার্ম বাজিয়ে আমাকে বউয়ের থেকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিত। পৌনঃপুনিক এভাবে সপ্তাহগুলো কেটে গেছে.. অনেক বছর।
তবে ঐ একদিনের শুক্রবারটায়ও হাত ধরার সুযোগটা এক আধবার এসে যেত। যখন ওকে নিয়ে বাসা থেকে কোথায়ও বের হতাম, তখন। দু’জন যখন রাস্তাটা পার হতে যেতাম, পাশাপাশি দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ই বউ আমার হাত পরম নির্ভরতায় ধরে ফেলতো। আমাকে কিছু বলা লাগত না যে ‘হাত ধরো’, কিংবা সে একবার তাকিয়েও দেখতো না আমার হাতটা কোথায় আছে। জাস্ট একবারেই ধরে ফেলতো…।
এখনো সুযোগটা আসছে। ওকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে কিংবা কোনো ‘টেস্ট’ করাতে যেতে হবে, এসব উপলক্ষ্যে। বাকী সময়টা শুয়ে থাকতে হয় তাকে। রাস্তাটা তো সেই একই আছে। পার হবার ব্যাপারটিও প্রতিবারের মতো একইরকম। তবে এবার সে ধরার আগেই আমি খুব সাবধানে ওর হাতটা দেখে নিয়ে ধরি।
আমার এখনকার এবং আগেকার – এই দুই সময়ের ধরার অনুভবের তারতম্য বউ বুঝে কি? আমি নিজেও কি অনুভব করি? কতটুকু? অক্ষরে প্রকাশ করতে পারবো?
ভালোবাসাগুলি কোথায় ছিলো? নিজেদেরকে এখন এত তীব্রভাবে কেন আমাকে অনুভব করায়? এতো ভালো লাগছে কেন ওকে?
অনেক ভালোবাসি… তাই?
loading...
loading...
"প্রিয় মানুষের হাত ধরে পথ চলায় অনেক বিড়ম্বনাও আছে। সহজে এটা সবার পাওয়া হয় না। সবচেয়ে আসল বিষয়টি হলো, একজন মানুষ ‘প্রিয় হয়ে ওঠা’। আর এই হওয়াটা এক পক্ষের না। ‘প্রিয়’ শব্দটি ন্যূন্যতম ‘একাধিক’ পক্ষের সাথে জড়িত।"
এই লিখাটি ভাবীর প্রতি আপনার অসীম ভালোবাসার অন্যতম একটি নিদর্শন।
loading...
খুব 'ভয়াবহ অবস্থার ভিতরে কাটছে' সময় এখন ভাইয়া। গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতি জানানোর জন্য ধন্যবাদ। ভালো লাগলো। ইদানিং ভালো লাগা মুহুর্তগুলির আকাল পড়েছে।
ভালো থাকুন সবসময়। শুভেচ্ছা..

loading...
জীবন ভালোবাসাময় হোক মহ. আল মামুন ভাই। যুগল ছবি অসাধারণ এসেছে। ভালোবাসা।
loading...
আপনার দোয়া কবুল হোক। ধন্যবাদ প্রিয় সৌমিত্র দাদা। ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে। শুভেচ্ছা…

loading...
সুখি হোন গল্প দা। অনে…ক সুখি।
loading...
তাই যেন হয় দিদি। আপনার দোয়া আমাদের স্রস্টা কবুল করুন। ভালো থাকুন সবসময়। শুভেচ্ছা রিয়া দিদি।

loading...