১.
একদিন ঘুম ভেংগে চেয়ে দেখি মা নেই বিছানায়, আমি বড্ড আদুরে বাবুটা তার, অনেক মন খারাপ হল আমার।
খুঁজতে বের হলাম একা একা, পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা বাকি রাখলাম না মাকে খুঁজে খুঁজে, শেষে এক বিশাল বরফ ঢাকা প্রান্তরে এসে থামলাম। থামলাম সামনে আর পথ ছিল না বলে।
শুভ্রতায় ছেয়ে আছে চারিদিক। একটি মাত্র গাছ আমার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখোমুখি বৃক্ষ আর আমি। গাছটিই আমায় জানায় এটাই ‘ডেড-এন্ড’। ফিরে যাবার হয়েছে সময়।
তবুও আমি মাকে খুঁজতে ‘ডেড-এন্ড’কে ও পাড়ি দিতে রাজী ছিলাম! কিন্তু মা ছিলেন আমার পিছনে। মাথার উপর। ফেলে আসা পথের প্রতিটি অণুতে অণুতে। অলিতে গলিতে। বরফ চাইয়ের সুক্ষ্ণ ফাটলে।
আমি দেখলাম না। আমি পিছু ফিরলাম না। তাই জানলাম না, মা ছিলেন আশেপাশে।
আজো আমি আর সেই নাম না জানা বৃক্ষটি মুখোমুখি সেই বিরান প্রান্তরে। ডেড- এন্ডের পাহারাদার আর আমি, নিজেদের ভিতর এক জটিল সমীকরণে ব্যস্ত থাকি।
মা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন ঠিক আমার পিছনে। আদুরে প্রিয় বাবুটা কখন ফিরে তাকায়!
আমি কি তাকাই?
ফিরিনা আমি। কেবলি খুঁজে মরি।
মাকে খুঁজতে হয়না.. মা থাকেন সবসময়.. অনুভবে কল্পনায় মাখামাখি। আমি আমার মায়ের আঁচলের নরম আদর ছিলাম।
ছিলাম?
এখন কি আর নেই?
একবার মা হারিয়ে গেলে, আর পাওয়া যায় না।
২.
আমি কোনো একসময়ে আমার পুরোপুরি বিদ্রোহী জীবনে আবিষ্কার করলাম, আমি নিজেকে দুই ভাগ করে ফেলেছি, ‘জলে বাস- কুমির নয়, জলের সাথে বিবাদ’!
অনুভুতি শাঁখের করাত হয়ে কাটতে লাগল, বাবার পরিচয় বহন করছি, তাকেই আবার স্বীকার করতে পারছি না.. তাকে আঘাত করছি, আবার সেই আঘাতে নিজে কষ্ট পাচ্ছি.. কিছুতেই আর মিশতে পারছি না, কোনমতেই নিজেকে ছাড়াতেও পারছি না!
আমি একজন মানুষ দু’জন হয়ে গেলাম, একজন সবল শ্রেণীর অংশ, অন্যজন দুর্বল শ্রেণীর.. এক দ্বৈত জীবন, আসলে দুইয়ে মিলে আমি বোধ হয় এই দুটো ধারা থেকে ভিন্ন আরেক ধারার মানুষ হয়ে গেলাম!
শেষে একদিন…
বাবা কিছুক্ষণ লড়াইটার মাঝখানে বসে রইলেন। এক সময় চাপা গলায় বললেন, ‘অসম্ভব!’ কর্তা পুরুষ নিজের অজান্তে ঘোষনা দিয়ে ফেললেন। বিদ্রোহ সইবেন না।
কেউ জিজ্ঞেস করল না কি অসম্ভব। সবাই বুঝতে পারছিল, একসাথে থাকা অসম্ভব।
মা আসলেই কণার জেদ সইতে পারছিলেন না। প্রতিদিনের বিরোধের সাক্ষী হওয়া বাবা আর আমি শিহাবের জন্যও কঠিন ছিল। আড়ালে আরো কত সত্য ছিল কে জানে।
আমি অতটুকু শুনেই বললাম, ‘তাহলে আমরা আপনার সাথে না থাকি?’
অবচেতনে আমি কি নিজের একটা রাজত্ব চাইছিলাম? বাবা কি তা বুঝলেন? কেন বললেন না, ‘ঘরটা ভেঙ্গো না।’
#ভাঙ্গনের_শব্দ_শুনি_অণুগল্প_৪৯৪
★ অণুগল্পটি প্রথম পুরুষ/নাম পুরুষে লেখা।
loading...
loading...
অণুগল্প আমাদের জীবন থেকেই নিঃসৃত। ভীষণ এই বাস্তবতা আমাদের নৈমিত্তিক।
loading...
সহমত ভাইয়া আপনার সাথে। জীবনের অণুগল্পে প্রাণ থাকে, গল্পকারের কল্পনার বর্ণনা জীবন্ত নয়। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।

loading...
একবার মা হারিয়ে গেলে, আর পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে মা তো এই একজনই।
loading...
হ্যা রিয়াদি', মা হারিয়ে গেলো তো সবই গেলো। গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
সুন্দর লিখন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই লিখাটিও হৃদয়ছোঁয়া। ভালো থাকুন মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
আপনার সুন্দর অনুভব প্রেরণা জোগালো। ধন্যবাদ কবিদা'। শুভেচ্ছা…

loading...
* অনুগল্পে জীবনের প্রতিচ্ছবি…
loading...
সাথে থাকার শুভেচ্ছা প্রিয় দিলওয়ার ভাই। ভালো থাকুন।

loading...