[একজন গল্পকার একই গল্পকে ভিন্ন ভিন্ন আংগিকে লিখতে পারেন। আর লেখকের লেখায় পাঠক সেইভাবে ‘রিয়্যাক্ট’ করবেন। লেখক তার লেখার দ্বারা পাঠক মনকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক-উভয় দিকেই তাড়িত করতে পারেন।
আমি একটি অণুগল্পকে তিনভাবে লিখে দেখিয়েছি। একই ‘থিম’ কিন্তু গল্পত্রয় এর চরিত্রগুলি নেতিবাচক ও ইতিবাচক- উভয় দিকেই নিজেদের চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করেছে। এই লেখাটি মূলত লেখকদের উদ্দেশ্য করেই লেখা। লেখকগণ পাঠকদের সামনে লেখায় যে ‘ম্যাসেজ’ দিবেন, সেটা কিভাবে হওয়া উচিত, লিখনীতে নেতিবাচকতা কতটুকু পরিহার করবেন এসব লেখককে অনুভব করে প্রকাশ করতে হবে।
যাইহোক, তিনটি গল্প পড়ে পাঠক অনুভব করুন, গল্পের চরিত্র দুইটির ভিতরে তিন প্রেক্ষাপটে আপনারা কোনটিতে নিজেদেরকে দেখতে চান। ]
১.
স্ফুলিঙ্গ (নেগেটিভ মানসিকতা)
___________________________
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাঁড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,
: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?
মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মুহুর্তে জ্বলে উঠে।
আগুন জ্বলে দু’দিকেই।
২.
স্ফুলিঙ্গ (একজনের নেগেটিভ এবং অন্যজনের পজিটিভ মানসিকতা)
__________________________________________
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,
: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?
মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মনের ভেতরে মুহুর্তেই জ্বলে উঠে, আবার দপ করেই নিভে যায়।
ভাবে, আহারে বেচারা, কাজের চাপে কী দশা!
আবেগে কাণ্ডজ্ঞান ভুলে যাওয়ায় নিজেকে শাসায় কণা,
বড় অন্যায় হয়ে গেছে!
উঠে যায় মাহতাবের দিকে-
কপালে হাত রেখে আস্তে করে বলে- স্যরি!
বাইরে তখন সকালের মিষ্টি রোদের সাথে শরতের মেঘের খুনসুটি!!
৩.
স্ফুলিঙ্গ (স্বামী স্ত্রী উভয়ের পজিটিভ মনোভাব)
_____________________________
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
স্ত্রীর উচ্ছ্বসিত হাসিমুখ দেখে রাগটা গিলে ফেলল মাহতাব। কণার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে কত বছর বল তো? মা কি এখনো বোঝেন না তোমাকে ভালবাসার জন্য আমার কোন উপঢৌকনের প্রয়োজন নেই?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে, ‘যাক, এসেই যখন গিয়েছে, তুমি বরং মাংসটা চাপিয়ে দাও। সারারাত ঘুমাইনি লক্ষ্মীটি, একটু ঘুমাই, আমি উঠে মাকে ফোন করে থ্যাঙ্ক ইউ জানাব’।
খুশি হয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় কণা। আসলেই খুশিতে মাহতাবের ঘুমের কথাটা একদম মনে ছিলোনা, ভীষণ ভুল হয়ে গিয়েছে! দুপুর তিনটা পর্যন্ত আর বাচ্চাদেরও ঐদিকে যেতে দেবেনা সে। ততক্ষণে মাহতাবের প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানী রান্না হয়ে যাবে। ঘুম থেকে উঠে কি সারপ্রাইজড’ই না হবে সে!
ওদিকে স্ত্রীকে হাসিমুখে যেতে দেখে মাহতাবের মনটাও ভাল হয়ে যায়। আজ ঈদের দিন বকা দিলে মনটা খারাপ হত বেচারীর। শাশুড়ি যতই মনে করুন তাঁর উপহার উপঢৌকন তাঁর আহ্লাদী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রেখেছে, সহজ সরল বৌটাকে সে আসলেই অনেক ভালোবাসে। একটু বোকা মেয়েটা, কিন্তু সে আসলেই মাহতাবকে অনেক ভালোবাসে। নিশ্চিত সে বাচ্চাদেরও আর দুপুর তিনটা পর্যন্ত এমুখো হতে দেবেনা। ভালোই হোল, এখন বারোটার পরিবর্তে তিনটা পর্যন্ত ঘুমোনো যাবে!
#স্ফুলিঙ্গ_অণুগল্প_৪৬৫_৪৬৬_৪৬৭
loading...
loading...
স্বামী স্ত্রী উভয়ের পজিটিভ মনোভাব অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। এমনটাই থাকা উচিত।
loading...
ধন্যবাদ রিয়া দিদি। এভাবেই থাকুক সবাই।
শুভেচ্ছা…
loading...
এমন লিখন পদ্ধতি যথেষ্ঠ জটিল। এক মনে ত্রিধারার চেতনা। মুগ্ধ হলাম মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ সৌমিত্রদা'। অনেক ভালো লাগলো আমার, প্রেরণা পেলাম।
শুভেচ্ছা

loading...
আমি সব সময় পজেটিভ চিন্তা করি। পজেটিভ ধারার লিখা আমার পছন্দের। তিনটি অনুচ্ছেদ বিচার করলে পাঠক যেটাকে নিজ মনের সাথে সাদরে বরণ করবেন আমি তাকেই পছন্দ করবো। পাঠক চিন্তার সুযোগ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. মামুন।
loading...
আপনার একান্ত অনুভূতিও জানা হলো ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।

loading...
* মননশীল লেখনীর জন্য ধন্যবাদ…
loading...
স্বাগত আপনাকে প্রিয় ভাই। শুভেচ্ছা রইলো।
loading...