দুইটি অণুগল্প
_________
টানা হাঁটবার পর, সামনের পথ কিছুটা ঢালু হয়ে এসেছে, অনুভব করল আমান। দু’পাশের ‘অ্যাকাশিয়া’ (আকাশী)’ গাছগুলোর সৃষ্ট টানেলটি- মায়াবি সবুজ! দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ভালোলাগাদের চোখের পাঁপড়িতে মৃদু কম্পন ওঠে। সময় যেন পলকের তরে থেমে যায়।
কলেজ ফিল্ডে তিন যুবক। ফাকা গোলপোষ্টের পেছনে গোল হয়ে বসা। আমানকে দেখে ঘোলা চোখে একপলক তাকায়। সিগ্রেট মিশ্রিত মারিজুয়ানার হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ বুকে নিয়ে নেচে আসা দমকা হাওয়া, আমানের নাসারন্ধ্রে ঝড় তোলে। ওর দৃষ্টির প্রখরতা ছেলেগুলোর নির্লিপ্ত চাহনির সামনে কেমন নিষ্প্রভ হয়ে আসে।
স্মৃতির চড়ুইগুলো কি আরো ধুসর ছিল? আমান হাটে আর ভাবে। একজন পরাজিত মানুষ। যার স্মৃতির চড়ুইগুলো কেবলই ধুষর থেকে ধুসরতর। আমান। একজন অতি সাধারণ মানুষ। অন্তর্মুখী জীবনে অভ্যস্ত একজন পলাতক মানব। পলাতক সময়ের বুকে হারিয়ে আছে।
সময় কত বদলে গেছে এখন। ইচ্ছে-অনিচ্ছের গন্ডি নূণ্যতম মূল্যবোধেরও ‘থোরাই কেয়ার’ করে। বড্ড বোবা সময় এখন। চোখে ঘষা কাচের দৃষ্টি। আর ব্রেইনে কিছু Pre-Arranged Instructions নিয়ে বেচে থাকা রোবট মানুষগুলোর, অনুভূতি ক্রমেই শুণ্য হয়ে আসছে। অনুভূতিহীন ভালোবাসায় ওদের হৃদয় একদিন ঠিকই মরে যাবে। এখন প্রয়োজন অনুভূতির ব্যবচ্ছেদ।
শুণ্য অনুভূতি নিয়ে যে পৃথিবীতে ভালোবাসা ধুঁকে মরে, কেমন সেই পৃথিবী? একটু থমকে দাঁড়ায় আমান। সামনের সবুজ টানেলটিকে এখন কালচে লাগছে। ভালোবাসাহীন সেই পৃথিবীর শেষ মানুষ দুজন যদি ওরা হত! সে আর তার প্রিয়দর্শিণী। মৃত হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে সে সক্ষম ছিল। এক পলাতক চাঁদের পিছু ধেয়ে, সেই যে চলে গেল…..
আমান হাঁটে আর ভাবে,
‘পলাতক রাত বিরহী চাঁদের টানে সব সময়েই কি ফিরে? আপন নীড়ে?
এক সন্ধ্যায়- যে সন্ধ্যায় আলো সবুজ, পথ সবুজ- এমনই পথে নিজের চোখের আলোয় জ্বলে উঠে, এক প্রিয়দর্শিনী, আমানের হাত ধরে হাঁটবে বলেছিল। আর আমানও হাঁটতে চেয়েছিল। এখনো আমান একাই পথ হাঁটছে। চরম শুণ্যতায় ডুবে থাকা নিঃসঙ্গ প্রহরগুলোই এখন আমানের বন্ধু। ছায়াসংগী!
এই ছায়াসঙ্গীদেরকে সাথে নিয়ে আজো আমান অপেক্ষায় তৃষ্ণাতুর! অনুভূতিতে বেদনাবোধ বড্ড তীব্র অনুভূত হয়। আমানের পথগুলো এখন কালো, আঁধারে ঢাকিয়াছে বিশ্বচরাচর। এই পথ ধরে অন্ধকারে নিরন্তর এক সুপ্ত আশায় আমান পথ চলে। ওর অনুভবে কল্পনায়, সেই আঁধারকে ভেদ করে, সবুজ ব্যান্ড মাথার এক প্রিয়দর্শিনী, হাজার বছর পথ চলার ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু হাসে। আমানের হাত ধরে, সবুজ টানেলের ভিতর দিয়ে ওকে জীবনের পথে নিয়ে যায়!
কিন্তু প্রিয়দর্শিনীরা একবার চলে গেলে কখনো ফিরে কি?
#পথের_বাঁকে_অণুগল্প_৪৬৩
★★
‘কখনো কোনো মাকে বিয়ে করিস না’- অনেক আগে নিজের মায়ের বলা কথাগুলি আজ বড্ড কঠিনভাবে মনের গভীরে বেজে ওঠে ইসতিয়াকের। সেদিন কথাগুলি ঠিকমতো বুঝে আসেনি ওর।
অন্ধকার রাস্তা ধরে ভরা পূর্ণিমায় হেটে হেটে আজ সব বুঝে আসে। মায়ের পছন্দের মেয়েটিকে বিয়ে না করে নিজের পছন্দের এক ‘সিংগেল মাদার’কে বিয়ে করেছিলো। ভালোবেসে ছিলো ইসতিয়াক একজন স্বামী পরিত্যক্তা মাকে। কিন্তু সেই মা কেনো ইসতিয়াককে ভালোবাসতে পারলো না যেভাবে সে চেয়েছিলো?
আসলে ভালোবাসা ভাগ হয়ে যায়। কুমারি নারীর ভালোবাসা তার পুরুষটির জন্য বিয়ের শুরুতে যতটুকু থাকে, বিয়ের পরে সন্তান এলে তা ক্রমশ: হ্রাস পায়। আর ইসতিয়াক তো এক বাচ্চার এক মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো! ওর মা সেই কথাই বুঝিয়েছিলেন।
একজন সিংগেল মাদারের সাথে আজ কয়েকবছর ঘর বেধে নিজের চাহিদামতো ভালোবাসা না পেয়ে একজন ইসতিয়াক ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে থাকে। কষ্ট ভালোবাসার ‘রিটার্ণ ব্যাক’ ভালোবাসা না পাওয়ায়.. কষ্ট নিজের মায়ের কথা না শোনায়.. কষ্ট ভালোবাসার ভাগ হওয়ায়!
হায় প্রেম!
দু’ধারি খঞ্জরের মতো যেতে আসতে কেবলি আঘাত দেয়।
– কেবলি আঘাত দেয়? এই আঘাত তো এক সময় অনেক মধুর লেগেছিলো তোমার, ভুলে গেলে? এখনো কি ভালোবাসো না তাকে?
নিজের মনের প্রশ্নে বিব্রত ইসতিয়াক চলার পথে থমকে দাঁড়ায়। পূর্ণিমার আলোয় নিজের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
– হ্যা! ওর আঘাত আনন্দ এখনো দেয় আমাকে। ভালোবাসি! এখনো আগের মতই ভালোবাসি তাকে। আজো হৃদয়বান আছি আমি। ভালোবাসা সাঁতার শেখার মতো। একবার শিখলে ভুলে কি কেউ?
#ভালোবাসি_ভালোবাসি_অণুগল্প_৪৬৪
loading...
loading...
শুণ্য অনুভূতি নিয়ে যে পৃথিবীতে ভালোবাসা ধুঁকে মরে, কেমন সেই পৃথিবী?
নৈমিত্তিক সব নতুন নতুন থিমের লিখা গুলোন হৃদয়ে স্থান দেবার মতো।
অভিনন্দন মি. আল মামুন খান। শুভ দিন।
loading...
আপনার সময় নিয়ে লিখা গুলো পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।

loading...
* শুভ কামনা নিরন্তর…
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় দিলওয়ার হুসাইন ভাই।

loading...
দুটি অনূগল্পই চমৎকার হয়েছে মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
সাথে থাকার শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় কবিদা'
ধন্যবাদ

loading...
আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে গল্প দা মামুন।
loading...
আপনার ভালো লাগা টুকু লেখকের জন্য অনেক দামী রিয়া দিদি।
শুভেচ্ছা
loading...