কেবল মানুষই আর একজন মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে। অন্য কোনো প্রাণী নিজেদের স্বজাতির সাথে কখনও এই কাজ করে না। ওরা সামনা সামনি যা করার, বলার বা দেখানোর তা করে। কিন্তু মানুষ মুখে মধু, অন্তরে বিষ এই টাইপের হয়।
বিশেষকরে আত্মীয়স্বজনদের ভিতরে এই কষ্ট দেবার প্রবণতা বেশী দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে নিজেদের কাছের লোকেরা পারিবারিক যে কোনো ‘স্ক্যান্ডাল’ বা দুর্ঘটনাকে আড়াল করে রাখবে; কিন্তু তারাই সবার আগে রয়টার কিংবা বিবিসি’র মতো মুহুর্তেই ঘটনাটি চাউর করে ফেলে।
শিহাবের একজন রিলেটিভ আছেন যার কাছে শুধু একবার মোবাইলে এই জাতীয় কোনো তথ্য জানিয়ে শেষে বলতে হবে, ‘কাউকে বইলেন না’। ব্যস! দেশের গণ্ডী পেরিয়ে ১০ মিনিটের ভিতরে সারা বিশ্বময় জানাজানি হয়ে যাবে!
এসব দেখে দেখে একজন মানুষ হিসেবে শিহাব খুবই কষ্ট পায়। একটা কথা ওর মনে বার বার উঁকি দিয়ে যায়, ‘মানুষ! তোমরা এতো পেট পাতলা কেনো?’
শিহাব একবার একটা হিন্দী সিনেমা দেখেছিলো- সেখানে পরেশ রাওয়ালের কাছে কেউ কোনো কথা বললে, সে অন্য কাউকে তৎতক্ষনাৎ সেই কথা না বলতে পারলে, তার পেট ফুলে যেত। এ জন্য সে মানুষ ছাড়া অন্য যে কোন পশু-পাখী বা গাছপালার কাছে গিয়ে সেই ঘটনাটি বলে দিতো।
এক বিশাল জনসভা ডেকে, সবার উদ্দেশ্যে শিহাবের বলতে ইচ্ছে করে, ‘ভাই সব! আপনাদের ভিতর যাদের এই বিশেষ স্বভাবটি রয়েছে, দয়া করে পরেশ রাওয়ালকে অনুসরণ করবেন। তাতে করে আপনাদের আত্মীয়স্বজন সহ অন্যরাও শান্তিতে থাকবে।’
#পেট_পাতলা_মানুষ_অণুগল্প_৪৭২
_________________________
এক বউ দিবসে ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে শিহাব কোনাবাড়ী থেকে একটা ম্যাক্সিতে চড়ে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়েছিলো। তাই যাত্রাপথে আর কোনো চিন্তা নাই। শীতকাল হওয়াতে সন্ধ্যা খুব তাড়াতাড়ি হয়। এজন্য অন্য ঋতুর মত বৃহস্পতিবারে মাগরিবের নামাজ কাজা হবার কষ্টটা নেই।
একটু ক্ষিদে পেল। তবে রাস্তার খোলা খাবার খাওয়ার অভ্যাস শিহাবের নেই। বাদাম জাতীয় কিছু পেলেও না হয় খাওয়া যেত।
চন্দ্রা নেমে স্ট্যান্ডে এক বাদাম বিক্রেতাকে পেলো। ওর কাছ থেকে ২৫০ গ্রাম বাদাম কিনলো। কাগজের ঠোংগায় বাদাম নিয়ে বিআরটিসি’র দোতলা বাসের উপরের তলায় উঠে একেবারে সামনের দিকের সিটে বসে। সবার উপরে থাকার একটা মজাই আলাদা। এটা যে থাকে সে-ই কেবল বুঝতে পারে। এই উপরে থাকা নিয়েই না দেশের সকল রাজনৈতিক সংকট।
বাদাম খাবার নিয়ম হল আগে ঠোঙ্গা থেকে সব বাদাম নিজের যে কোনো একটা পাত্রে (নিজের পকেটও হতে পারে) রেখে খাবার সময় খোসা গুলো সেই ঠোঙ্গায় রাখা। তাহলে আর বাদামের খোসায় আশপাশ নোংরা হবে না। চলার পথে শিহাব অনেককেই দেখে, বাসের ভিতরে বিদ্ঘুটে আওয়াজ করে বাদাম চাবায় আর এখানে সেখানে খোসা ফেলে। বাদামের লাল রঙের আবরণটাও ফু দিয়ে মানুষের শরীরে ফেলে। এরাও এক ধরণের গিদার। এদেরকে ‘বাংলা ওয়াস’ করা দরকার।
বাদাম খাবার নিয়মানুযায়ী, বাদামের খোসা রাখতে গিয়ে, কাগজের ঠোঙ্গায় একটা লেখার দিকে শিহাবের চোখ পড়ে। লাল কালি দিয়ে সেখানে লেখা,
Read My Lips
ভালো করে এবার ঠোঙ্গাটি চেক করে বুঝলো, এটা একটি প্রেমপত্র, যা এখন বাদামের ঠোঙ্গা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রেমপত্রটির ঠিক মাঝখানে ‘লিপস্টিক’ জাতীয় কিছু দিয়ে কোন প্রেয়সীর ঠোঁটের ছাপ আঁকা রয়েছে। হয়ত কোন এক প্রেমিকের জন্য একজন প্রেমিকার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল এই চিঠি, যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
ব্যর্থ ভাবনাটি এজন্যই এসেছে; কারণ যদি সফল প্রেম হতো, তবে আজ এই চিঠিটি এভাবে বাদামের ঠোঙ্গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো না। কারো হৃদয়ের গোপন জায়গায়, খুব নিরাপদ একটি স্থানে এই চিঠিটির আজ থাকার কথা।
কারো গোপন চিঠি পড়া ঠিক নয় জেনেও চিঠিটি পড়লো শিহাব (যেহেতু বাদাম কেনার কারণে ক্রয়সূত্রে ঠোঙ্গাটিরও মালিক হয়েছে সে)। দু’একটি লাইন এমন ছিলো,
“ তুমি অবশ্যই আজ রাত ১০টার পরে ফোন করে আমাকে তোমার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। অনেক কিছু লেখার ছিলো, কিন্তু পারছি না। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা, সমস্যার কথা, ভবিষ্যত জীবনের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেও… … … তোমার চিন্তায় আমার আর পড়াশোনা হবে না ”
চিঠির মালকিনের জন্য শিহাবের হৃদয়ে একটু কষ্ট অনুভব করলো। ভাবনায় উন্মুখ হলো একপলক, ‘শেষ পর্যন্ত কেন চিঠিটি পেলোনা যার পাবার কথা ছিল?’ কিংবা ‘যে পেয়েছিলো সে-ই হয়তো বাদামের ঠোঙ্গা চিঠিটির জন্য উৎকৃষ্ট স্থান ভেবেছিলো!’
একটা বড় কষ্টের স্রোত কোথা থেকে জন্ম নিয়ে শিহাবের হৃদয়ের দিকে ধাবিত হয়… দোতলা বাসটিও যেন তুমুল বেগে সেই গতির সাথে পাল্লা দিয়ে সাভারের দিকে এগিয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে, ‘তুমি অবশ্যই আজ রাত ১০টার পরে ফোন করে আমাকে তোমার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে’… কি ছিলো সেই সিদ্ধান্ত? যার জানানোর কথা সে কি জানিয়েছিলো? কারও শেষ চিঠি কেনো বাদামের ঠোঙ্গায় পরিণত হয়?
কাগজের ঠোঙ্গা হিসেবে ব্যবহৃত এক মলিন প্রেমপত্রকে কেন্দ্র করে, অনেকগুলি জিজ্ঞাসা চিহ্ন পিচ্ছিল ব্যাংগাচির আকৃতি ধারণ করে, শিহাবের ব্রেইণে ঘুরপাক খেতে থাকে।
#শেষ_চিঠি_অণুগল্প_৪৭৩
____________________
মেয়েদেরকে অপমান করা যায় না, শুধু ভালবাসা যায়।
আবার তাদের অপমান সহ্য করাও দায়।
ফাটা বাঁশে আটক শিহাব ভাবে, ‘আমি আমার একাকী জীবনেই খুব ভাল ছিলাম।’
#শাঁখের_করাত_অণুগল্প_৪৭৪
loading...
loading...
আল মামুন খানের ৩টি অণুগল্প নিশ্চিত চমৎকার। অভিনন্দন মি. আল মামুন খান। শুভসকাল।
loading...
অণুগল্প তিনটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ এবং শুভ সকাল।

loading...
মুগ্ধ হলাম গল্প দা।
loading...
আপনার মুগ্ধতা লেখার প্রেরণা হলো রিয়াদি'
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ সকাল।
loading...
অভিনন্দন মহ. আল মামুন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ কবিদা'
শুভ সকাল।

loading...
আপনার মুগ্ধতা লেখার প্রেরণা হলো রিয়াদি'
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ সকাল।
loading...
‘আমি আমার একাকী জীবনেই খুব ভাল ছিলাম।’
*


loading...
আহ! সময় ছিলো একটা সে 'একাকী জীবন' কি বলেন প্রিয় দিলওয়ার ভাই?
শুভ সকাল।
loading...