অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ তে বের হয়েছিলো আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শেষ তৈলচিত্র’। এই কাব্যগ্রন্থের ‘তারা গুনি আকাশে আকাশে’ কবিতাটি লিখেছিলাম আমার খুলনার বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে। এখানে উল্লেখিত জায়গাগুলি বাস্তবেই রয়েছে… রয়েছে বা ছিলো উল্লেখিত মানুষগুলি। আজ কবিতায় উল্লেখিত সেই জায়গাগুলি থেকে ঘুরে এলাম। নস্টালজিক কবিতাটি আরো একবার শেয়ার করছি…
______________________________________________
বন্ধুরা! কেমন আছিস সবাই?
এখনো কি ক্ষ্যাপা চত্বরে আড্ডা দিস
শহীদুলের চা’র দোকানে
নেড়ে শফিক কি সেই আগের মতই উচ্ছল-
ছল ছল নদীর মত এখনো কি বয়ে চলে সে
হৃদয় থেকে হৃদয়ে… সারাটাক্ষণ?
আকাশের বিদেশ যাবার কি হলো
জানাস তো
পপির সাথে ওর কি এখনো যুদ্ধ চলে
সম্পর্কটা কি টিকে আছে ওদের?
বাতেন স্যার এখন কেমন আছেন রে
আগের মতন এখনো কি কবিতা লেখেন?
একটা বই বের করতে চেয়েছিলেন..
আচ্ছা বলতো, আমরা এতগুলি ছাত্র থাকতে
স্যারের এই ইচ্ছেটা পূর্ণ হল না কেন?
তোরা না জানালে ও
খবর রেখেছিলাম আমি.. একজন ফোনে জানিয়েছিল আমায়
সেই রাতে স্যারের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অনেক কেঁদেছিলাম!
আমাদের মত এমন কুলাঙ্গার ছাত্র স্যার রেখে গেলেন কেন বলতে পারিস?
সেই হোটেল আল সালাদিয়া’র কথা মনে পড়ে
গলার কাছে কিছু একটা আটকে আসে আমার
ওটার ভেংগে পড়ার আর কত দেরী জানাস তো।
অনেক স্মৃতি আছে আমাদের ওটাকে ঘিরে
ওর ভগ্নপ্রায় প্রতিটি ইটের বুকে জমে থাকা
আমাদের বেকার জীবনের কষ্টকর মুহুর্তগুলিকে
ছুঁয়ে আসতে ইচ্ছে করে এখনো!
আমাদের কষ্টগুলি মুখ থুবরে পড়ত ওর বুকে
আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল ভবনটি পরম মমতায়।
তোরা কি কখনও কখনও যাস ওখানে
আড্ডা জমাস এখনো!
এখনও কি সেই আগের মত.. সব চলে?
আমাদের ইরফান গার্মেন্টস মালিক হয়েছে শুনেছিস বোধহয়
একবার বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম চাকরি চাইতে
আমাকে সমাদর করেছিল বেশ
লাল চা খাইয়ে অনেক কথা বার্তা ও বলেছিল।
ওদের পিওন ছেলেটা অসাধারণ চা বানায়!
চাকরিটা হয় নাই আমার
সিভিটা হয়ত পড়েছিল ওর ওয়েস্টবিনের তলায় অবহেলায়..
কণার সাথে সম্পর্কটা ও তাই পোক্ত হলনা আর।
খালেককে শেষবার দেখেছিলাম বাজারের ফুটপাথে
ওর সব্জির দোকানে সে বসে আছে
দাড়ি রেখেছে তাই প্রথমটায় চিনতে পারিনি আমি-
শেষে যখন হাসল
চিনলাম আমি তাকে
ঐ হাসি কি ভুলা যায়?
এই, তোরা কি এখনও প্রাণ খুলে হাসিস!
আমি পারি না..
আমার আকাশ জুড়ে এখন বেদনার নীল
তীব্র ইলেক্ট্রিক ব্লু আমার চারপাশে..
কাছের মানুষেরা সবাই চাদা তুলে এই দূর পরবাসে পাঠিয়েছে আমায়
শেষ সময়ে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে কত মরীয়া তারা এখন!
অথচ সবাই মিলে সম্পর্কের সূচনাতে যদি একটু আধটু করত..
আচ্ছা বলতে পারিস
সম্পর্কগুলি কেন এভাবে দু:স্বপ্ন মাঝে বিলীন হয়ে আবারো কাছে আসতে চায়?
আমার বেড জুড়ে নিঃসীম নিঃসঙ্গতায় ছুঁয়ে থাকি আমি একা
ভুল বললাম, একা নই-
আমি আর আমার দেহে বাসা বানানো সেই ব্যাধি একসাথে পাশাপাশি
শেষ কথা বলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা..
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমার পরিচিত আকাশ দেখতে পাই না
এখানে মানুষগুলি ও বড্ড অপরিচিত
কিছু-ই বুঝে আসে না আমার
আমি আমার দেশের একচিলতে আকাশ দেখতে চাই
মার্কেটের ছাদের আড্ডার ঘনিষ্ট মুহুর্তগুলি উপভোগ করতে চাই!
স্কুল মাঠে পড়ন্ত বিকেলে শওকত ভাইয়ের সাথে
এক ইটে ফুটবল খেলতে চাই
কলোনীর পানির ট্যাংকের নিচে বসে থাকা
কিংবা শ্মশান ঘাটে মধ্যরাতে গোল হয়ে বসে থাকার মুহুর্তগুলি এখনো ডাকে আমায়!
আমি আসতে চাই
ফিরতে গিয়েও পদে পদে বাঁধা পাই
সময়ের বড্ড অভাব এখন
তাই চাইলে ও ফিরতে পারিনা আমি
আমার সময় কম
তাই আসতে পারলাম না আমি
একসাথে থাকিস সবাই
বন্ধুরা.. ভাল থাকিস
মনে রাখিস!!
___________________________
loading...
loading...
আমাদের জীবন অনেক সুখ-দুখের স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। অসাধারণ এই নস্টালজিক লিখা পাঠকদের উপহার দেবার জন্য সহস্র শুভেচ্ছা মি. মামুন।

loading...
জীবন আসলেই সুখ-দুঃখের সমন্বয় ভাইয়া- সহমত আপনার সাথে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর… ভালো থাকুন সবসময়।

loading...
চমৎকার এবং অসাধারণ এই কবিতাটি আগে একবার পড়েছিলাম। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম গল্প দা। শব্দনীড় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো, ভাল লেখা গুলোন খুব দ্রুত হারিয়ে যায়; আশা করবো তাঁরা যেন ভাল লেখা প্রয়োজনে পুনরায় প্রকাশ করেন। তাতে করে আমরা সহ নতুন পাঠকরাও আবার পড়তে পারবে।
loading...
আপনার মুগ্ধতা আমার লেখার পাথেয় হলো দিদি!
ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা আপনার জন্য।
এই কবিতাটি এক ছোট ভাই আবৃত্তি করেছিলো বই মেলায়। ওর আবৃত্তি আমি সংগ্রহে রেখে দিয়েছি এবং প্রায়ই শুনি। এই কবিতায় উল্লেখিত কয়েকটি চরিত্র পৃথিবী থেকে চলে গেছে যারা আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই মূলত এই লেখাটি।
ভালো থাকুন সবসময়।
loading...
প্রিয় কবি মামুন ভাই, অসাধারণ কবিতা!
একটা প্রশ্ন রাখতে চাইঃ আপনার বাড়ী কি খুলনায়, কোথায়?
আমার বাবা সরকারী চাকুরী করতেন এবং খুলনায় পোষ্টিং ছিলো। আমরা প্রায় তিন বছর ঐ সরকারী কোয়ার্টারে কাটিয়েছি। আমি খুলনার সব স্থান চিনি।
loading...
ধন্যবাদ ইলহাম আপনাকে সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
হ্যা ভাই, আমার বাড়ি খুলনার ছোট বয়রায়, খুলনা পোষ্টাল কলোনির পিছনে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের পশ্চিম পাশে। সোনাডাংগা থানায় পড়েছি আমরা।
শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
loading...
আমি আসতে চাই
ফিরতে গিয়েও পদে পদে বাঁধা পাই
সময়ের বড্ড অভাব এখন
তাই চাইলে ও ফিরতে পারিনা আমি
loading...
এভাবেই ক্যান্সারে মারা গেছেন আমার প্রিয় মামা থাইল্যান্ডের সেই নামকরা হাসপাতালটিতে। তার জবানিতেই কবিতাটি লেখার চেষ্টা করেছিলাম।
তিনি চেয়েও ফিরে আসতে পারেন নাই…
ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
স্মৃতিচারণমূলক কবিতাটি পড়ে সত্যিই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। এমন সহস্র স্মৃতি আমাদের সবার মাঝেই বিরাজ করে কিন্তু কাব্যনীড়ে বাঁধাই করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয় না। আপনার সেই প্রিয় বাতেন স্যার এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আপনারা আছেন বলেই আপনার স্যার আজও ভেসে বেড়াচ্ছেন আপনাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। বেচে না থেকেও বিশ্বজয় করছেন আপনাদের জন্যেই। শ্রদ্ধা রইলো।
loading...