একজন পুরুষ গল্পকারের সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয়, যখন তিনি নারী প্রধান কোনো চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে চান। আমার নিজেরও এক্ষত্রে সমস্যা হয়। একজন নারীর অনুভবে কল্পনায় অনুভূতিগুলি কিভাবে প্রকট হয়, একজন পুরুষ হিসেবে সেটা ফুটিয়ে তোলা অত্যন্ত ভয়াবহ। নারীর মন যেখানে সহস্র সাধনার ধন, সেখানে পুরুষ হয়ে তাকে বুঝতে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। তো এই কঠিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম একটা ছোটগল্প লিখতে গিয়ে। জানি না গল্পের কণা চরিত্রটিকে বাস্তবিক তাঁর নিজের অনুভবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলাম কিনা। এই বিচারের ভার দিলাম ব্লগের নারী পাঠকদের ওপরঃ-
________________________________________________
সকাল থেকেই কেন জানি অস্থির লাগছে কণার। অথচ কেন বুঝতে পারছে না। ছেলে মেয়ে দু’জন বসার রুমে। শুদ্ধ পিসিতে গেমস নিয়ে ব্যস্ত। আর পিম্পি ছবি আঁকছে। স্কুলে কি একটা কম্পিটিশনে অংশ নেবে। কণা-ই থিম দিয়েছে। সেই অনুযায়ী এখন আঁকার চেষ্টা করছে। ওদের দু’জনের ভূবনে ওরা নিজেদের মতো রয়েছে।
আর সে?
.
ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি এসে এসেও আসে না। কি এক রহস্যময় অনুভবে মুহুর্তে বিলীন হয় কণা। হাসির সাথে বিষন্নতার লেজ ধরে কিছু কষ্টও কি মুহুর্তটিকে একটু হেলিয়ে দিতে চায় না?
.
কলিং বেল বেজে উঠে।
‘আসসালামু আলাইকুম… য্যারা মেহেরবানি করে দরোয়াজা খুলিয়্যে’
ইলেক্ট্রিনিক রেকর্ডেড নারী কন্ঠের জোরালো আওয়াজে কণার সামান্য ভাবনা-চিন্তার মুহুর্তটি দূর হয়। আজকাল এ দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতির রমরমা আগ্রাসন। এই কলিং বেলটির কথা বাংলায় হলে কি হতো?
.
দরজা খুলে দেখে ওরই সহকর্মী রাহেলা ম্যাডাম। কণার পাশের বাসায় থাকে। দু’জন একই কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করে। হাসিমুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাসন্তী রঙের সাজে তাঁকে বেশ সুন্দর লাগছে।
মুহুর্তে মনে পড়ে যায় আজ পহেলা ফাল্গুন। এবং শিহাব বরাবরের মতো ওকে রেখে অফিসের কাজে চলে গেছে।
.
রাহেলা ম্যাডাম যখন কণাকে জিজ্ঞেস করলো,
– আজ ভাইকে সাথে নিয়ে কোথায় কোথায় যাবেন? ভাই কি ঘুমে নাকি এখনো? কণার ঐ মুহুর্তে প্রচন্ড রাগ হলো।
রাগ নিজের উপর থেকে শিহাবের উপর হয়ে ড্রয়িং রুম থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়ে পিম্পির উপর গিয়ে পড়ে। ওকে একটা ছোট্ট ধমক দেয়,
– ছবি আঁকা রেখে কি দেখছ তাকিয়ে? সময় হাতে আছে আর?
.
মায়ের হঠাৎ এরকম রেগে যাওয়াতে পিম্পি অবাক হয়। ছেলে একবার মুখ ফিরিয়ে মাকে দেখে আবার গেমসের জয় স্টিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সহকর্মী চলে যাবার পর আবারো নিজেকে ফিরে পাওয়া। একটু একটু করে মনের অতল থেকে ফিরে আসা। মুহুর্তগুলোয় পাওয়া তেঁতো স্বাদকে অতিক্রম করে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে চায় কণা।
.
শিহাবকে নিয়ে এতগুলো বছর পার করেও কোনো অভিযোগ রয়েছে ওর? তবে রাহেলার প্রশ্নের উত্তরে রেগে গেল কেনো? আজকের দিনে শিহাব সাথে নেই বলে? নাকি শিহাববিহীন বসন্তের প্রথম দিন নিঃসঙ্গ থাকবে বলে? অন্যরা দিনটিকে যার যার সঙ্গীকে নিয়ে কাটাবে। সে একা নিজের ভূবনে। আজ শিহাবকে সাথে নিয়ে পথ চলার আনন্দ মিস করবে বলে কি?
এতগুলো ‘কি’ কণাকে বিভ্রান্ত করে তোলে। উত্তর জানা নেই বলে কি বিভ্রান্ত হয়? অথবা উত্তর জানে কিন্তু মেনে নিতে পারে না বলে?
.
নিজের বেডরুমের জানালার পাশে একটি কাঁঠাল গাছ। শিকের ভিতর দিয়ে সবুজ পাতা ভেদ করে দূরের নীল আকাশ দেখা যায়। খুব একটা পছন্দের জায়গা কণার। এখানে এলেই কেন জানি মন ভালো হয়ে যায়। জানালার স্বল্প পরিসর দৃষ্টিপথ দিয়ে দূরকে কাছে বসে দেখাতেই কি এই ভালো লাগা? নাকি ওর কাছের মানুষটির ক্রমশঃ দূরে সরে যাওয়াতে দূরকে এত ভালো লাগে। ঐ দূর দিগন্তে যেখানে আকাশ মাটির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হবার আনন্দে ভরপুর… কণাও কি ওর ভালবাসার মানুষটিকে ওখান থেকে খুঁজে পেতে চায়?
.
‘এই পথ চলাতে মোর আনন্দ’…পথিকের পথ চলাতে আনন্দ হতে পারে। তবে কণা শিহাবকে পথের বাঁকে এসে সাথে পেলে আনন্দ পায়। একা একা পথা চলাতে কি আনন্দ রয়েছে? যাকে ভালো লাগে এমন কারো হাতে হাত রেখে চলাতেই জীবনের মানে লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে হয় ওর কাছে।
.
নারীর মন নাকি শত সহস্র বছরের সাধনার ধন। শিহাব কি কখনো এই সাধনায় নামার আগ্রহ দেখিয়েছে? পুরুষের মন কেমন? তাকে কি বুঝা খুবই দুঃসাধ্য? আমাদের গড় আয়ু কত হবে? ৫৫/৬০… এই সময়সীমায় একজন নারী কি পুরুষকে বুঝতে পারে? কিংবা পুরুষ নারীকে?
.
তবে কনার এতো সময় নষ্ট করে মনের খোঁজ নিতে ইচ্ছে হয় না।
সে সাথে থেকে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে পথটা পাড়ি দেবার কথা ভাবে। হৃদয়ের খোঁজের চেয়ে সাথে থাকাটা কি তবে অনেক জরুরী?
.
বিয়ের আগের সময়ে ফিরে যায় কণা। কতটা আবেগে প্রগলভ সময়গুলো কেটে যেতো। ঝিরঝিরে সময়গুলো ফুরফুরে বাতাসে এলোমেলো অনুভূতির ছোঁয়ায় তিরতির করে কাঁপতো! সবার বাঁধা না মেনে আগুনের দিকে দ্রুত ধাবমান পতঙ্গের মত অনিন্দ্যকে লক্ষ্য করে ছুটে চলবার সেই অনুভূতিগুলো কি নিঃশেষ হয়ে গেলো?
.
তোমার কি মনে হয়?
নিজেকে দেখে কণা। আয়নায় নিজেকে দেখার মত না। আয়নায় শুধু উপরের ছবিটা ভেসে উঠে। আসলের নকল প্রতিচ্ছবি। কিন্তু আজ কণা নিজেকে নিজের চোখে আয়নাবিহীন নিজের আসল ছবি দেখতে চাইছে।
অনুভূতিগুলো কি নিঃশেষ হয়েছে! মনে হয় না। হলে শিহাবকে নিয়ে ভাববার কিংবা ওর উপর রাগ হবার প্রয়োজন পড়তো না।
.
কীভাবে যেন আনন্দের সেই সময়গুলো পার হয়ে অসময়কে রেখে গেলো। পনেরটি বছর এভাবে শেষ হয়েছে। হাসি-কান্না আনন্দ-বেদনায় মূর্ত সময়ের ভিতরের দুঃসময় হঠাৎ উঁকি মারা শুরু করেছে। এখন খুব অল্প সময়ই কণাশিহাবের সাথে থাকতে পারে। রাতটা যেতে না যেতেই শেষ হয়ে যায়। যেন ঘোড়ার পিঠে করে চলে যায়। পৌনঃপুনিক এভাবে সপ্তাহগুলো কেটে যাচ্ছে। সারাদিন পরিশ্রান্ত মানুষটি এসেই কণার সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে। একজন পুরুষ হিসেবে সে ওর কাছে আসছে বলে কেন মনে হয় আজকাল কণার? সে তো একজন বন্ধু শিহাবকে চায়। তবে মানুষটি কেন সেই আগের শিহাব হতে পারে না? অপুর্ণতাটি কোথায় ? আজকাল বড্ড ভাবে কণা।
সেই আগের মত শিহাবের ছোঁয়ায় কি ওর ভিতরে শিহরণ জাগে?
.
ভাবে। উত্তর পায় না। আসলে ঐ সময়গুলোতে শিহাবকে কেমন অন্য মানুষ মনে হয়। একটা যন্ত্র যেনো সে। রোবটমানব। সব কিছু সময় মিলিয়ে শেষ করতে হবে।
– ওহহো! বারটা বেজে গেছে। ঘুমালাম। সকাল উঠতে হবে…।
কিংবা
– আজ কোনো ভাবে আসতে পারছি না লক্ষ্মীটি। জরুরী শিপমেন্ট রয়েছে। অনেক রাত হবে। তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও…।
.
এভাবে পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদেরকে সাথে নিয়ে কণাকে একাই যেতে হয়েছে… হচ্ছে…। সামনেও হয়তো যেতে হবে।
হয়তো? তারমানে আশা লুকিয়ে রয়েছে মনের গভীরে কোথায়ও। শিহাবের থেকে কণা যা চাইছে তার পূর্ণতা হওয়া সম্ভব এখনো।
.
মানুষটা যে কেনো হাত ধরার সুযোগ না দিয়ে দূরে দূরে সরে থাকছে! তবে হাত ধরার সুযোগটা এখনো এক আধ বার এসে যায়। যখন শিহাবের সাথে বাসা থেকে কোথায়ও বের হয়, তখন এসে যায়। দু’জন যখন রাস্তাটা পার হতে চায়, পাশাপাশি দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ই কণা ওর হাত পরম নির্ভরতায় ধরে ফেলে।
.
আহ! কি শান্তি। শিহাবকে কিছু বলা লাগে না, কিংবা সে তাকিয়েও দেখে না কণার হাতটা কোথায় রয়েছে। জাস্ট একবারেই ধরে ফেলে…!
দু’জনে একসাথে রাস্তা পার হয়।
.
এতোগুলো বছর তো এভাবেই পেরিয়ে এসেছে! তারপরও কেনো অভিযোগ? কিসের অপুর্ণতা?
.
একটা দীর্ঘশ্বাস নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে। আজ সারাদিন কি শুধু শিহাব আর নিজেকে নিয়েই ভাববে? কী থেকে কী হয়ে গেলো! নিজেদের কতটুকু চিনেছে?
.
একটা স্বপ্ন কণা প্রায়ই দেখে। শিহাবকে নিয়ে। অনেক বছর পরে হঠাৎ দু’জনের দেখা একটি রেল স্টেশনে। কণার ঠোটের বাম পাশের তিলের জন্য হাসলে তাঁকে অদ্ভুত দেখায়। এতোগুলো বছর পরে ঐ হাসিটা দেখে শিহাব কনাকে চিনে ফেলে। আর মানুষটির ওকে চিনতে পারার ঐ হাসি দেখে কনাও হেসে ফেলে। একটু রোমান্টিসিজমের গভীরে যাবে এমন সময়েই প্রতিবার কনার স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে পাশে ঘুমন্ত অশিহাবকে দেখে। সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। বড্ড মায়া লাগে। তবে ওকে জাগিয়ে পাশে বসে কথা বলে বলে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। এতো কাছে… তবুও কত দূরে মনে হয়।
.
মেয়েদের সব ইচ্ছে কি পুরণ হবার? না কি হয়?
.
কণার নিজে এবং ছেলে-মেয়ে সব কিছুর থেকে এখন শিহাবকেই বেশী দামী মনে হয় কেনো? ওকে চায় সে! কণার সব কিছুর বিনিময়ে.. শিহাবকে চাই!… নিঝুম অন্ধকারে ওকেই চাই! শেষ পর্যন্তও ওকেই চাই!
.
কণা হাসে। কিন্তু তার মন কাঁদছিলো। চোখ ও। ‘ভালোবাসা! সারা জীবন ধরে চেয়েছে যে ভালোবাসা! কেমন পাওয়া হলো এটা! সীমানার বাইরে!! কণা’র কষ্ট হচ্ছিলো। ভালো ও লাগছিলো।
.
বিয়ের আগের একটা অদ্ভুত রাতের কথা মনে পড়ল তার। রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। শিহাব বেপরোয়া ফোনের পর ফোন দিচ্ছে! এক সময় অস্থির হয়ে পাগলের মত হয়ে গেলো সে। কনা ফোন ধরছে না ইচ্ছে করে। অনেক পরে সে রাতে কণা ফোন রিসিভ করেছিল কী অদ্ভুত শোনাচ্ছিল শিহাবের স্বর! ভুতে পাওয়া মানুষের মত! ‘ I love you! Do you! Do you! Do you!………কণার অন্তরাত্মা সারা রাত চিৎকার করেছে
‘Yes, I do !… I do! …. I do!
.
কিন্তু একটা শব্দ বের হলো না সে রাতে কণার মুখ থেকে! অন্ধকারে ও সে সমাজ, সংসার, বয়স, চারপাশের সব সম্পর্কগুলি বিস্ফারিত চোখে দেখছিলো! ওর ভয় হচ্ছিলো। কেউ যদি শোনে! শিহাবের কোন ক্ষতি হয়!
.
সেই রাতের কথা ভেবে কণা মাথা নিচু করে হাসলো। সে ভীরু! ভালোবাসি বলার সাহস তার নেই! ভালোবাসলো কেনো তাহলে!?
.
অপরাধবোধের মৃদু হাসি ফুটে রইল কনার মুখে। গাছের পাতা ভেদ করে বিকেলের সোনাঝরা আলো পড়েছে ওর মুখে। তবু চোখ টানছে না। মন হারিয়ে গেছে কোথাও। কনা আবারো হাসলো। সত্যিই বদলে গেছে ওরা দু’জনেই !
.
ভাবনাগুলি স্মৃতি আর আবেগের মিলিত স্রোতে ভেসে যেতে থাকলো। কী হবে সামনের দিনে!?
.
বিবাহিত জীবনের এই পর্যায়ে এসে কণার মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হয়। সুখ জিনিসটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। তাই সে সুখী কিনা সে ব্যাপারে জানতেও চায় না। শিহাবকে ওর পরিবারের কেউই পছন্দ করেনি। সে ই সবাইকে অগ্রাহ্য করে আলাদা সংসার পেতেছিলো। তাই নিজের ভালবাসাকে অপমান করা হবে আজ মানুষটিকে অবজ্ঞা করলে। সময় আজ শিহাবকে অনেক কর্কশ বানিয়ে দিয়েছে যদিও। কিন্তু একজন পুরুষ হিসাবে এইটুকু কর্কশতার প্রয়োজন ছিলো। তবে শিহাব একটু বেশীই কি হয়ে যাচ্ছে না? সংসারকে টিকিয়ে রাখতে যেটুকু স্বচ্ছলতার প্রয়োজন, সেটা আনতে সে যদিও প্রচন্ড পরিশ্রম করছে, কিন্তু তাতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে কনার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে সে কখনো শিহাবকে চাপ দেয় নাই। বরং নিজেই আজ এতোগুলো বছর স্কুলে চাকরি করছে। বাসায় প্রাইভেট টিউশন দিচ্ছে।
.
কনার অতিরিক্ত স্বচ্ছলতার প্রয়োজন নাই। দু’জনের আয়ে যা আসছে তাতে সুন্দরভাবেই তো চলে যাচ্ছে। কিন্তু শিহাব কণার চাকরি করাটাকে বোধহয় মেনে নিতে পারেনি। অথবা সে ভেবেছে শিহাব একা কুলিয়ে উঠতে পারছে না বলেই কনার এই আয়ের পথ বেছে নেয়া।
শিহাব কি একধরণের ‘ইনফ্রেরিয়র কমপ্লেক্সে’ ভুগছে?
.
কনার চোখ পড়ল ফ্রিজের উপরে রাখা বড় মাটির ব্যাংকটির দিকে।
এরকম একটি ব্যাংক রয়েছে কণার অন্তরের অনেক গভীরে। যেখানে সে প্রতিটি মুহুর্ত শিহাবের থেকে পাওয়া ভালোবাসা জমিয়ে রাখতে চায়। সময়ে অসময়ে ভালবাসার আকাল হলে সেখান থেকে ভালোবাসা তুলে এনে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে।
কণা শিহাবের কাছ থেকে আজকাল এই ভালোবাসাটুকুই পায় না… সেই আগের মতো!
.
দুই ছেলেমেয়ের পাশ দিয়ে একজন মা অতি সন্তর্পনে মুহুর্তগুলোকে কাটিয়ে একজন অভিমানী স্ত্রীতে পরিণত হয়। সন্তানেরা একটুও বুঝতে পারে না। ওরা কেবলি ওদের মাকেই দেখে। তাই সেভাবেই ওদের জীবন আবর্তিত হয় একজন মাকে ঘিরে। একজন নারী হিসেবে কণার অসহায়ত্ব একমাত্র যে মানুষটি উপলব্ধি করতে পারতো… বারান্দায় এসে কনা তাঁকে হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে বাসার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে।
.
মুহুর্তে দমকা বাতাসের সাথে বেগে ধেয়ে আসা ভালোলাগারা ওর হৃদয়কে ঘিরে প্রহ্লাদে নাচতে থাকে। কণা ওর চোখের আলোয় জ্বলে উঠে চোখের বাহিরে থাকা শিহাবকে কেনো জানি আজ স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
.
অনেকদিন পরে ব্যালকনিতে দাঁড়ানো ওর প্রেয়সীর সেই হাসিমুখ দেখে শিহাব ও নীচে থেকে অবাক হয়।
.
বাজারের ব্যাগ কনাকে বুঝিয়ে দেয় সে। কনা চলে যেতে উদ্যত হলে ওর হাত ধরে ওকে থামায়। নিঃশব্দে দু’জনের চোখের ভাষায় কথা হয়। শিহাবের হাতের প্যাকেটটির দিকে অবাক তাকিয়ে রয় কণা। প্যাকেটের ভিতর থেকে ভালোবাসা ফুলের সাথে বের হয়… কণার খোঁপায় জড়িয়ে যায় একজন হৃদয়বান পুরুষের প্রথম বাসন্তী উপহার!
বসন্তের প্রথম দিনের শেষ বিকেলে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে কনার মনে হয়, আজো ওর প্রিয় মানুষটি সেই একইরকম রয়েছে। সে এখনো হৃদয়বান!
.
কিন্তু ওর পাশে থাকা হৃদয়বান পুরুষটি কি সাথে থাকা নারীকে হৃদয়বতী ভাবছে?
.
এভাবেই ভাবনাগুলো হৃদয় থেকে হৃদয়ে আসা যাওয়া করতে থাকে। এরই মাঝে একদিন ফুরায় সকল লেনদেন। শেষ হয় খেলা।
কিন্তু ভালোবাসাবাসি কি শেষ হয়?
loading...
loading...
লিখাটি পূর্ণ এবং ব্যাপ্তি ময় মনে হলো। অণুগল্প পড়তে পড়তে চোখের ফোকাস অণু হয়ে যাচ্ছিলো। আজ দৃষ্টি প্রসারিত হলো। অভিনন্দন মি. মামুন।
অব্যহত থাকুক আপনার কলম।
loading...
ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি নিজেও অণুগল্প লিখতে লিখতে বড় গল্প কিংবা ধারাবাহিক গল্প লেখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। আগামী বইমেলার জন্য অন্তত একটা উপন্যাস দরকার। হাতে সময় কম। এজন্য 'দৃষ্টি প্রসারিত' করণের জন্য হলেও লেখা শুরু করা দরকার।
শুভেচ্ছা আপয়ান্র জন্য নিরন্তর…

loading...
বিচার অথবা তুলনার চাইতে বা পাশাপাশি অগ্রগণ্য হচ্ছে প্রত্যেক পাঠক বা পাঠিকার দৃষ্টিযোগ এক নয়। কারও একটি লাইন ভাল লাগতে পারে; আবার কারো কাছে নির্যাস। বিস্তারের মাত্রাও একটি বিচার্য বিষয়। আমার কাছে ওভার অল ভাল লেগেছে গল্প দা।
loading...
সুন্দর ব্যাখ্যা করলেন দিদি। হ্যাঁ, 'প্রত্যেক পাঠক বা পাঠিকার দৃষ্টিযোগ এক নয়'- এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে একজন লেখক নিজের মতো লিখে যাবেন।
আপনার অনুভব ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা… ভালো থাকুন।
loading...