মামুনের তিতা কথা

মামুনের তিতা কথা …
আমাদের মানার অভ্যাস কবে হবে?

এক.
একজন প্রয়াত মন্ত্রীর প্রকাশ্যে ধুমপান করা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম এবং নিউজ মিডিয়াগুলোতে বেশ আলোড়ন চলল কিছুদিন। এরপর সাংবাদিকদের সম্পর্কে ওনার মন্তব্য নিয়েও অনেক লেখালিখি হল। আমার আজকের প্রসঙ্গ ওনাকে নিয়ে নয়। তবে ধুমপানের ব্যাপারটা তার ক্ষেত্রে এতো বেশী আলোচনা পাবার কারণ হল, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীল একটি পদে ছিলেন। কিন্তু যেভাবে প্রকাশ্যে চলছে ধুমপানের মহোৎসব, তাতে কি আমরা একটুও বিচলিত হচ্ছি? পরোক্ষ ধুমপানে অধুমপায়ীরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটিও উপেক্ষা করবার মত নয়। আমাদের দেশে আইন তৈরী হয়েছে, কিন্তু মানা হচ্ছে কোথায়? আর এই না মানার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে অনেক জটিলতা। একই সাথে আইনের অবমাননা করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। যদি মানাতেই না পারা যায়, তবে কেন এই আইন করা? সিষ্টেমের ভিতরে এই না পারার ব্যর্থতাকে খুঁজে বের করে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

দুই.
আমাদের বাংলাদেশীদের মানার যোগ্যতা আসলেই কম। কিছুটা রয়েছে না মানার একগুঁয়েমি মনোভাব, কিছুটা অবহেলা আর কিছু রয়েছে উদাসীনতা। পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত হবার সুবাদে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে অ্যাক্সেসরিজ অর্ডার করতে হতো আমাকে। প্রায়ই এই কোম্পানির মার্কেটিং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে আমার মোবাইলে কথা হতো। কথাবার্তার বেশীরভাগ সময়ই ওনাদেরকে মটর বাইকে পেতাম। রিঙ বেজে চলতো। ওপাশ থেকে সাড়া না পেয়ে মাঝে মাঝে একটু বিরক্তও হতান। তবে একদিন এক কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, ‘ বাইকে চলন্ত অবস্থায় কথা বলার ব্যাপারে কোম্পানী থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে সবাইকে। কখনো জানতে পারলে চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়ে যাবে’… শুনে আমি খুশীই হয়েছিলাম। ওনারা যে কঠোরভাবে এই আইনটি মেনে চলেছেন, তাতে হৃদয়ের এক কোণে ভালোলাগার এক আবেশে যারপরনাই উৎফুল্ল হয়েছিলাম। আরেকদিন সেই একই কর্মকর্তাকে কাজের প্রয়োজনে ফোন করেছিলাম। তিনি মোবাইল রিসিভ করলেন। আওয়াজে বুঝলাম বাইকে রয়েছেন। সে কথা জিজ্ঞেস করাতে বললেন, ‘ হ্যা, আমি বাইকেই আছি, বলেন অসুবিধা নাই।’ একটু টাসকি খেয়ে গেলাম! পরক্ষণেই মনে পড়ল, তিনি অন্য কোম্পানিতে জয়েন করেছেন। সেখানে বুঝি এই ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

তিন.
ঢাকায় যখন বসবাস করতাম, বন্ধের দিনগুলোতে আমার ছোট ভাই এর সাথে বাইকে ঘুরতে বের হতাম। চালক হিসেবে আমার ছোট ভাই আইনকে মেনে চলতো অত্যন্ত কঠোরভাবে। হেলমেট একটি ‘পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট’। এটি চালক এবং যাত্রী উভয়ের ‘সেফটি’র জন্যই খুবই জরুরী। সেই সময়ে এবং এখনো পথে বের হলেই দেখি, হেলমেট বিহীন মটরবাইকে চলাফেরা করা চালক এবং যাত্রীদের। অত্যন্ত জরুরী এই রক্ষাকবজটি অবহেলায় বাইকের পিছনে কিংবা সাইডে পড়ে থাকে। আর যখনি ‘মোবাইল কোর্ট’ বসে কিংবা সামনে ট্রাফিক সার্জেন্টকে বেশ ‘কর্মতৎপর’ মনে হয়, তখনি হেলমেটকে আলগোছে তুলে মাথায় পড়তে দেখি। খুব দুঃখ হয়, যখন স্বেচ্ছায় আমরা আইনকে না মেনে ভয়ে বা বাধ্য হয়ে মানার অভিনয় করি।

এজন্যই বলেছিলাম, আমাদেরকে ‘মাইরের’ উপরে রাখতে হবে। তাহলে যদি মানতে মানতে একসময় অভ্যাস হয়। মনটা স্বচ্ছ হয়। ভিতর থেকে শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়।

আর কোনো বিকল্প আছে কি?

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৭-০৮-২০১৭ | ১২:২৮ |

    ‘আমাদেরকে ‘মাইরের’ উপরে রাখতে হবে। তাহলে যদি মানতে মানতে একসময় অভ্যাস হয়। মনটা স্বচ্ছ হয়। ভিতর থেকে শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়।’

    এর কোন বিকল্প নেই এবং এবং এবং ছিলোও না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. আনু আনোয়ার : ২৭-০৮-২০১৭ | ১৬:২৯ |

    সত্য কথন।

    GD Star Rating
    loading...