… Now I don’t think about your body or about sex. Am thinking about your heart. May be I’m falling in Love with you…
ফারাহ মৃদু হাসি মুখে স্ক্রীনের মেসেজটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। হাল্কা একটা নি:শ্বাস ফেলল। চোখে হাসির আড়ালে সামান্য বিষাদ। তাতে কিছু স্মৃতি, কিছু বিস্মৃত সুখ, কিছু আড়াল করে রাখা কষ্ট। কিছু লুকিয়ে রাখা সময়।
‘এসে গেছে সেই মুহূর্ত!
কী হবে এখন!?’
ফারাহ চোখ নামালো দীর্ঘ মেসেজটা থেকে। টেনশন হচ্ছে! হাসিটা ঠোঁটের পাশ থেকে সারা মুখে ছড়িয়ে গেল। চোখে কিছুটা ভালোলাগা এসে জমা হল। কিছুটা বিষন্নতা তবু তার চোখমুখ ছেড়ে যেতে চাইল না।
ফারাহর ফেইস বুক ইনবক্সে আসাদের মেসেজ। মেসেজটা সে শুরু থেকে আবার পড়তে শুরু করল :
“Now I don’t think about your body or about sex. Am thinking about your heart. May be I’m falling in Love with you.
আজ সারাদিন শুধু তোকে, আমাকে আর আমাদের দু’জনকে নিয়ে ভাবছি। কী থেকে কী হয়ে গেল! আমাদের কতটুকু পরিচয় ছিল? শুধু দু’জনের নাম আর চেহারাই তো। দু’জনই বন্ধুর বন্ধু। পরিচয়ের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ক’বার দেখা হয়েছে আমাদের? বেশি হলে দুই চার বার!
অনেক বছর পরে হঠাৎ দুজনের দেখা একটি রেল স্টেশনে। তোর ঠোঁটের বাম পাশের তিলের জন্য হাসলে তোকে অদ্ভুত দেখায়। এতোগুলো বছর পরে তোর ঐ হাসিটা দেখে তোকে চিনে ফেললাম। আর ঐ হাসি দেখে আমিও হেসে ফেললাম। আর দুই এক কথায় তুইও ও আমাকে চিনে ফেললি। আজম খানের ‘হয়তবা এই দিন থাকবে না কোনদিন’ গানের কথাগুলি মনে আছে তোর? ‘ধর অনেক পরে আবার দেখা হল’… লাইনগুলোর মত!
জানলাম তোর স্বামী-সংসার আছে। তুইও জানলি আমার বউ -বাচ্চা আছে। সব জেনে মোবাইল নাম্বার নেয়া হল। সাধারণ ভদ্রতা। এরপর একটু আধটু কথা বার্তা, হাসি ঠাট্টার ভিতর দিয়ে মনের অজান্তেই সম্পর্ক অনেক দূরে গড়িয়ে গেল। আমি তোর ফেবু বন্ধু হলাম। এরপর রাতের পর রাত দু’জনে ইনবক্সে সময় কাটানো। ভদ্রতার তুমি থেকে অন্তরঙ্গ তুমি। তুমি থেকে তুই। তারপর তুই তুমি একাকার। তোর যে কোন একদিনের অসতর্ক কথার প্রসঙ্গ টেনে দুজনের আলাপ শরীর নিয়ে বহুদূর পৌঁছে গেল। আর এখানেই ভুল হয়ে গেল। আমার ঘোর লেগে গেল। নেশার মত হয়ে গেল। আমি মেয়েদের সাথে খুব বেশি মিশি নাই। মেয়েরা আমার কাছে এখনো রহস্যময়। স্বপ্নের মত। আমি একবার ডুবতে আর একবার ভাসতে লাগলাম। সেক্স এক এক সময় তুলি, রঙ হয়ে আশ্চর্য সব ছবি আঁকতে লাগল! আবার সেই সেক্সই এক অদ্ভুত অস্ত্রের মত হয়ে আমার হাতে উঠে এলো। রাতের পর রাত ভার্চুয়াল সেক্সুয়াল আলাপে তোকে দিশেহারা করে ফেললাম। আমার তোকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলছিল না। আবার তোকে সহ্য ও করতে পারছিলাম না। তুই এর থেকে মুক্তি চাস, আবার আমাকে আঘাত না করেও কিভাবে এর থেকে আমাকে ফিরানো যায়, সেটার পথ খুঁজিস। কিন্তু আমি ভুল বুঝি। প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করি তোর সাথে। আমার মনে হচ্ছিল তুই আমাকে নষ্ট করে ফেলেছিস। অপবিত্র করে ফেলেছিস। আমি তোকে শুধু অক্ষরের পর অক্ষর বসিয়ে- শব্দের পর শব্দ বসিয়ে যাচ্ছেতাই ভোগ করতে লাগলাম! কাটতে লাগলাম! ছিড়তে লাগলাম! উগ্র কামনায় তোকে ধ্বংস করতে চাইলাম! প্রানের সব আক্রোশ মিটিয়ে গালাগাল করলাম!
কিন্তু তুই হেসেই সব উড়িয়ে দিলি! জিজ্ঞেস করলি, ‘বউ কাছে যেতে দিচ্ছে না? মা’কে দেখতে ইচ্ছে করছে? বাবু’র জন্য খারাপ লাগছে?’
আমার এক এক সময় তোর কোলে মাথা গুঁজে হু হু করে কাঁদতে ইচ্ছে করত। এক এক সময় তোকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করত! এক এক সময়..
সভ্যতাকে গালি দিই এক এক দিন। এক এক সময় নেট’কে অভিশাপ দিই। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে। অনেক অপমান করেছি। তোকে যা দিয়েছিলাম সে সব ছবির দিকে এখন আমি নিজেই তাকানোর চিন্তা করতে পারি না! ওসব মেসেজ টাইপ করেছি ভাবলে নিজের হাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। বিশ্বাস হয় না! আয়নায় নিজেকে দেখলে এসবের কিছুর সাথে মিলাতে পারি না। সারা জীবনের শিক্ষা, সংস্কার, ধর্ম, সমাজ সব অতিক্রম করে কোথায় গিয়েছিলাম! গা ছমছম করা শ্বাপদে ভরা জঙ্গলের কথা মনে আসে এসব ভাবলে। সেসব হিংস্র চিন্তা, ভয়ংকর মুহুর্ত হাজার হাজার মাইল নিচু খাদের উপর খাড়া পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকার অনুভুতি আনে এখন। লোক জানাজানি হলে কী হত তখন? তুই, আমি- আমাদের দুটো পরিবারই ধ্বংস হয়ে যেত! এসব চিন্তা আমার মাথায় কোথা থেকে এসেছিল তখন!
সত্যি করে বল, তোর আমাকে খারাপ মনে হয় নাই? আমি তো নষ্ট-ই হয়ে গিয়েছিলাম। তুই ছেড়ে গেলি না কেন? কেন এভাবে সব সইলি তুই? আমার আরো ঘোর লেগে গেল। তুই একাধারে একজন বন্ধু, একজন প্রেমিকা এবং একজন মায়ের অনুভূতি দিয়ে আমাকে বুঝতে চেষ্টা করিস। আমাকে ঘৃণা করিস নাই। কাউকে অভিযোগ ও করিস নাই। নিজেই নিজের রুচি-বোধের ভিতরে থেকেও আমার বিকৃত কামনা এবং কথাগুলো সহ্য করেছিস। এরপর আস্তে আস্তে আমাকে তোর বন্ধুত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা শুরু করলি। তোর কি টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা আছে? একদিন অবাক হয়ে আমি উপলব্ধি করলাম,
– আরে, আমি তো সত্যি সত্যি-ই তোকে ভালবাসতে শুরু করেছি রে!
এটা তো ঐ ভার্চুয়াল সেক্সের থেকেও বেশী খারাপ হল রে! আমার পরিবার, ছেলে-মেয়ে সব কিছুর থেকে এখন তুই-ই বেশী দামী হয়ে গেলি? তোকে চাই আমি! আমার সব কিছুর বিনিময়ে তোমাকে চাই!… নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই! শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই!”
…
ফারাহ হাসছিল। তবে তাঁর মন কাঁদছিল। চোখ ও। ভালোবাসা! সারা জীবন ধরে চেয়েছে যে ভালোবাসা! কেমন পাওয়া হল এটা! সীমানার বাইরে!! ফারাহ’র কষ্ট হচ্ছিল। ভালো ও লাগছিল। আসাদের মেসেজের উত্তরে সে ছোট্ট একটা স্মাইলি আঁকল। একটা অদ্ভুত রাতের কথা মনে পড়ল তার। রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আসাদ বেপরোয়া মেসেজের পর মেসেজ দিচ্ছে! এক সময় অস্থির হয়ে নেট ছেড়ে ফোন নিল। কী অদ্ভুত শোনাচ্ছিল ওর স্বর! ভুতে পাওয়া মানুষের মত! ‘ I love you! Do you! Do you! Do you!………ফারাহ’র অন্তরাত্মা সারা রাত চিৎকার করেছে
‘ yes, I do !… I do! …. I do!
কিন্তু একটা শব্দ বের হল না সে রাতে ফারাহ’র মুখ থেকে! অন্ধকারে ও সে সমাজ, সংসার, বয়স, চারপাশের সব সম্পর্কগুলি বিস্ফারিত চোখে দেখছিল! ওর ভয় হচ্ছিল। কেউ যদি শোনে! আসাদের কোন ক্ষতি হয়!
সেই রাতের কথা ভেবে ফারাহ মাথা নিচু করে হাসল। সে ভীরু! ভালোবাসি বলার সাহস তার নেই! ভালোবাসল কেন তাহলে!?
অপরাধবোধের মৃদু হাসি ফুটে রইল ফারাহ’র মুখে। মোবাইলের স্ক্রীন থেকে আলো পড়েছে ওর মুখে। তবু চোখ টানছে না। মন হারিয়ে গেছে কোথাও। এ সময় একটু আগে ফারাহ’র পাঠানো স্মাইলি’র উত্তরে আসাদ স্মাইলি আঁকল। ফারাহ হাসল। সত্যিই বদলে গেছে অস্থির মানুষটা !
দেখল স্ক্রীনে আরো একটা স্মাইলি’র পাশে লেখা
– তোকে আমার কেন জানি ভালো লাগছে। অন্য রকম ভালোলাগা!
ফারাহ লিখল,
– এই ভালো লাগাটুকু দামী। তোকেও আমার খুব ভালো লাগে!
ভাবনাগুলি স্মৃতি আর আবেগের মিলিত স্রোতে ভেসে যেতে থাকলো। কী হবে সামনের দিনে?
#তোমাকে_চাই_অণুগল্প_২৯১
* ছবি: নেট থেকে কপি করা।
loading...
loading...
আবেশ গুলোনকে ঝালিয়ে নিলাম মি. মামুন।
loading...