পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশ বাইশ পাঞ্জাবী পরিবারের দ্বারা শোষিত হয়ে আসছিলো। আজ স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এসে সেই ক্ষমতাধর পরিবারের সংখ্যা বেড়ে কত’য় দাঁড়িয়েছে, সে ব্যাপারে এক সমীক্ষা চালানো যেতে পারে। সেদিকে না গিয়ে বরং ছোট একটা গল্প বলি শুনুন। আয়ের দিক বিবেচনায় এ দেশে মানুষে মানুষে এখনো কতো ব্যবধান!
_______________________________
★
অফিসের সবার বোনাস গত বৃহষ্পতিবারেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। হারুন সাহেব নিজের চেয়ারে বসে আছেন। এখানে বসেই আশেপাশের সবার কথারই কিছু না কিছু শুনতে পান। আশ্চর্যজনকভাবে কথার চৌম্বক অংশগুলিই কেন জানি শুনতে পান। একটু আগে তার আন্ডারে কাজ করা একজন অন্য আরেক জনকে জিজ্ঞেস করল ঈদে বাড়ি যাবে কিনা? উত্তরে সে যা বলল তাতে হারুন সাহেবের ভিতরে কোথায় যেন কি বেজে উঠল। সেই লোকটি বলল,
– বাড়ি কীভাবে যাবো। মোট বেতন পাই ৫৯৬০ টাকা। এর অর্ধেক বোনাস দিলো। আর যাবার সময়ে এই মাসের (২৭ তারিখে অফিস বন্ধ হবে) বেতনের অর্ধেক দিবে। মোট কত হলো?
অপরজন একটু চিন্তা করতেই সে একটু উষ্ণ স্বরে বলে,
– এটাও কি হিসেব করা লাগে বুদ্ধু? ৫৯৬০ টাকাই পাবো। এখন তুই-ই বল, ঢাকা থেকে শরণখোলা আমার সাথের আরো তিনজন পরিবারের সদস্য নিয়ে মোট চারজন বাড়ী পৌঁছাতে কত টাকা লাগবে? আবার আসার ভাড়া… মা-বাবা বোন আর ছোট ভাইয়ের জন্য ঈদে কি কিনে নিয়ে যাবো? আশেপাশের ছেলেমেয়েদেরকে ঈদের সালামি কি দিবো? তার থেকে এখানেই থেকে যাই। বাড়ির সবার জন্য টাকাটা পাঠিয়ে দিলেই ভালো হবে, কি বলিস?
যাকে উদ্দেশ্য করে বলা সে আর কি বলবে। সে নিজেও তো একই রকম একজন ভুক্তভোগী।
হারুন সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, তাদেরই ফ্যাক্টরীতে ডাইয়িং এ.জি.এম মাসে এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা বেতন পান। এবারে ঈদে তার বোনাস এসেছে আশি হাজার টাকা। শরণখোলা নিজের বাড়িতে যে লোকটি হিসাবের তালগোলে বাড়ি যেতে পারছে না, তার সাথে এই এ.জি.এম এর বেতনের কি বিস্তর ব্যবধান! এটা কেবলই এই দেশেই সম্ভব।
হারুন সাহেব ভাবতে থাকেন…
ভেবে ভেবে শেষে একসময় উদাস হয়ে যান।।
#ব্যবধান_অণুগল্প_২৮৬
loading...
loading...
অসাধারণ সব অণুগল্প। কাহিনী বিন্যাসে আপনার লিখা বরাবরই অনেক সুন্দর।
ধন্যবাদ মি. মামুন।
loading...
মামুন ভাইয়ের লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
loading...