দৃশ্য – ৬। লোকেশনঃ নদীর পাড়
নাজিরঃ আমি আপনাকে দাদা বলতে পারি?
দাদাঃ ঠিক আছে। বল।
– তবে তুমি এখন কোথায় থাকবা? এখানে তো কোন থাকার জায়গা নাই। সন্ধ্যা হয়ে আসল। [নাজির দাদার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মলিন, ফ্যাকাশে একটা চেহারা। মনে হচ্ছে অনেক দিন ধরে খাওয়া দাওয়া হয় না।]
নাজিরঃ জি আমার নাম নাজির। আপনার বাড়ি কোন দিকে?
দাদাঃ আমি এ দিকে ছোট একাটা ঝোপড়িতে থাকি।
নাজিরঃ আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলব।
দাদাঃ হ্যাঁ বল। [এই কথা বলে দাদা হাটতে থাকে। সাথে নাজিরও।]
নাজিরঃ আপনার ছেলে, ছেলের বউ তারা কোথায়? আপনার পরিবার … আপনাকে দেখলে মনে হয়না আপনার অবস্থা এত খারাপ ছিল।
দাদাঃ [ঠোটের কোণায় কষ্টের একটা লোকানো হাসি দিয়ে।] তুমি ভাই আজই ফিরে যাবা?
নাজিরঃ না দাদা। দেখি কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। মোটামুটি মাথা গুজার ঠায় হলই হবে।
দাদাঃ এই এলাকাতে কোথাও তো থাকার জায়গা পাবা না। নদী ভাঙ্গনের জায়গা। বাড়ি ঘর এখন আছে আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে কিছুই নাই। সব নদীর পেটে বিলীন হয়ে গেছে। সম্ভাবনাময় কিছু প্রাণ অকালেই হারিয়ে যাবে কাউকে কিছু না বলে। কিছু কান্না বিশাল বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে জীবনের প্রতিটা কোণায়। [দাদার চোখে পানি আসতে থাকে।] অবশিষ্ট যে জীবনটা পড়ে থাকে সেটা একটা মোচড়ানো কাগজের ঠোঙ্গা ছাড়া আর কিছুই নয়। বেচে যাওয়া কিছু কিছু জীবন হয়ে যায় একেকটা জীবন্ত আতুর ঘর। [দাদা আর বলতে পারে না। ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।]
নাজিরঃ দাদা …. দাদা…. প্লিজ কাঁদবেন না। আমি আপনার সব কথা শুনব। মানুষ তার কষ্ট বলতে পারলে হালকা হয়। এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেল, কাল সকালে আবার শুনব।
দাদাঃ হ….. দাদা চোখ মুছে। তুমি তো এখন কোথাও থাকার জায়গা পাবানা। তয় তোমারে আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তবে আমার সাথে আমার ভাঙ্গা ঘরে রাতটা কাটাতে পার।
নাজিরঃ না না না… দাদা এটা এভাবে বলেন কেন। আপনার ঘরে থাকাটাতো আমার জন্য চরম সৌভাগ্যের। আমি আপনার বাড়িতে থাকব।
দাদাঃ যদিও আমি তোমার মেহমানদারিটা করতে পারব বা আদো তোমাকে খাওয়াতে পারব কি না তাও বলতে পারি না।
নাজিরঃ সেটা কোন বিষয় নয়। চলেন সামনের দিকে যাই। [দু’জনে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কেউ কোন কথা বলে না। নাজির শুধু মাঝে মাঝে দাদার চোখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।]
দৃশ্য – ৭
লোকেশনঃ বাজার
একটা বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাজির একটু থামে। তারপর কিছু সবজী সাথে তেল ও মসলা কিনে। এই সময় দাদা তার দিকে তাকায় ………
দাদাঃ ভাই তুমি এটা কি করছ?
নাজিরঃ আমি তো আপনাকে দাদা ডাকি। তাহলে নাতি ঘরের জন্য কিছু বাজার করছে। তাতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সতুরাং দাদা আপনি একটু চুপচাপ অপেক্ষা করেন।
এই বলে নাজির আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দাদার কাছে আসে এবং বলে –“ দাদা এবার চলেন আমার কাজ শেষ।”
দাদা আর কিছু বলে না। নিরবে নাজিরের সাথে সামনের দিকে কদম ফেলে।
দৃশ্য – ৮
লোকেশনঃ দাদার বাড়ি
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। দাদা আর নাজির বাড়িতে ঢুকেছে। ঘরের ভিতর একটা ছোট কপি বাতি জ্বলছে। অনেকটা না জ্বলার মত করে। এটাকে মূলত বাড়ি বলা যায় না। অনেকের বাড়ির পাশে আলগা ঝুপড়ি থাকে। এটা অনেকটা তাই। যাই হোক- বাড়িতে ঢুকতই দাদা তার নাতনী রীপাকে ডাকলেন-
দাদাঃ রীপা….. অই রীপা….
রীপাঃ কী হয়ছে?[ দরজার সামনে শরীরের কিছু অংশ এবং মুখটা একটু বের করতেই থমকে দাড়াঁয়।]
অই মিয়া আপনে আমাদের বাইতে আইছেন কেরে?
[নাজির হাসে।] তারপর নাজির বলে-
নাজিরঃ তোমাকে দেখতে আসছি।
দাদাঃ এই রীপা…. চুপ কর। মেহমানের সাথে এই ভাবে কথা কয়। হাত মখ ধূয়ার জন্য পানি দে।
নাজিরঃ তার আগে এই ব্যাগটা নাও।
রীপাঃ এইডার ভিত্তে কি?
নাজিরঃ আগে নাও। তারপর খুলে দেখ। [রীপা এসে ব্যাগটা হাত থেকে নেয়। ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত ঘরের ভিতর কপি বাতিটার কাছে চলে যায়। খুলতে থাকে ব্যাগের ভিতর যা কিছু আছে। তারপর রীপা আস্তে করে ঘারটা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকায়। নাজিরকে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। মৃদু আলোতে মনে হল রীপার চোখে পানি। রীপার চোখে পানির উপস্থিতি টের পেয়ে নাজির তার জায়গা থেকে একটু সরে ঘুরে দাঁড়ায়। তার মনও কেমন খারাপ হয়ে যায়। রীপার মত এত ছোট মেয়েটার চোখে বাজার দেখে পানি চলে আসল! নাজির ভাবতে থাকে। হঠাৎ পিছন থেকে-
রীপাঃ ভাইজান পানি।[নাজির চমকে উঠে।]
নাজিরঃ ওহ্ তুমি।
রীপাঃ (মুখে হাত দিয়ে একটু জুড়েই হাসে।) হা হা হা হা…… আপনে ভয় পাইছেন!!!
.
_____________________
নাটক – এক খণ্ড জীবন [ পর্ব -১]
নাটক – এক খণ্ড জীবন [পর্ব-২]
loading...
loading...
অনেস্টলি বললে বলতে হয় আপনার ধারাবাহিক লিখাটি পড়তে মন্দ লাগছে না।
loading...
অহ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি অনেক আনন্দিত আপনার এই উতসাহে।
ভাল ও সুন্দর থাকুন সবসময়।
loading...
শব্দ আর গোছালো বাক্যের লেখনী পড়ে ভালো লেগেছে। তবে আগের পর্বগুলো মনে হয় মিস করেছি। তা সময় করে পড়ে নিবো শ্রদ্ধেয় দাদা।
loading...
অনেক ধন্যবাদ নিতাই দাদা। আপনার মন্তব্যে অনেক উতসাহিত হলাম।
loading...
আমি বেশ অনুভব করছি আপনার লেখাটি। শুভেচ্ছা র'লো দাদা।
loading...
আমার নাটকটি পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন সতত।
loading...
ভালো একটা গল্প দাঁড়াচ্ছে। নাটিকা কিনা সেই সঙজ্ঞা আমার জানা নেই। দারুণ।
loading...
অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের উতসাহই আমার পথা চলা।
loading...
মন্তব্য করতে না পারলেও তৃতীয় পর্ব সহ আগের গুলোনও পড়েছি। চলুক।
loading...
অনেক ধন্যবাদ আবু সাঈদ ভাই। আশা করি পরের পর্বগুলিও পড়বেন।
loading...
এ পর্যন্ত সুন্দর হয়েছে এবং এগোচ্ছেও ভালো। চালিয়ে নিন ভাই।
loading...
অনেক ধন্যবাদ শাকিলা আপু। সাথে থাকুন।
loading...
পড়ে নিলাম।
loading...
ধন্যবাদ।
loading...
এতো সুন্দর সুন্দর ভাবনা মাথায় আসে কি করে?
loading...
হা হা হা…..
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ফর্মালীন মুক্ত খাবার খান। বুদ্ধি বাড়বে। হা হা হা..
loading...