আজ ২৪ রমযান। আগামী সপ্তাহে আজকের দিনে হয়তো ঈদ পালন করব। দুর্বার গতিতে রোযা চলে গেল ভালো করে ধরতে পারলাম না। জানি না এবারের রোযায় আল্লাহর আদেশ কতটুকু পালিত হয়েছে। জানি না আন্তরিক মনে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পেরেছি কিনা, আল্লাহ ভালো জানেন।
গতকাল বাংলা বছরের প্রথম দিন ছিল। আজ থেকে অনেক বছর আগে বাংলা ১৩৮৯ সালে বছরের প্রথম দিনে ‘বৈশাখী’ নামে ক্ষুদ্র এক সংকলন সম্পাদনা করেছিলাম। তখন আমার বয়স ১৩। এই সংকলনের কোন অস্তিত্ব এখন অবশিষ্ট নেই। ১৩৯০ অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার শহর তলিয়ে গেলে অনেক কিছুর সাথে ‘বৈশাখী’ও তলিয়ে যায়।
৮৪ বন্যার পরে ‘বৈশাখী’ না করতে পারলেও ‘ষড়ঋতু’ নামে আরেকটা ছড়া সংকলন সম্পাদনা করতাম। ‘ষড়ঋতু’ বেশ কয়েক সংখ্যা প্রকাশ করেছিলাম। ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ, এই সংকলনে বিভিন্ন ঋতুকে চিহ্নিত করে ছড়া ছাপা হতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিশোর ছড়াকাররা লিখতেন। পত্র যোগাযোগে সারাদেশের ছড়াকারদের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এখন কুড়িগ্রাম হাতের মুঠোয় থাকলেও তখনকার সময়ে কুড়িগ্রামের ছড়াকারের কাছে পৌঁছাতে কমপক্ষে এক মাস লেগে যেত। তবু চেষ্টার কমতি না দিয়ে আমরা পৌঁছাতাম। ষড়ঋতু সেই সময় বেশ জনপ্রিয় ছড়া সংকলন ছিল। ‘ষড়ঋতু’র দুই এক কপি এখনো অবশিষ্ট আছে।
আমাদের কৈশোরে পাড়ায় পাড়ায় সাহিত্য সাংস্কৃতিক কিংবা ক্রীড়া সংগঠন ছিল। আমরা ছিলাম এসব সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ কর্মী। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম। দিনের গাম্ভীর্য বজায় রেখে নিজেদের মত আনন্দ ফুর্তি করতাম। আমরা প্রতিবছর দিবস ভিত্তিক সংকলন করতাম, স্থানীয় লেখকদের সাথে অন্যান্য জেলা কিংবা রাজধানীর লেখকদের লেখা ছাপতাম। একটা সংকলন কিংবা একটা অনুষ্ঠানের জন্য সেই বয়সে যে দৌড়ঝাঁপ করতাম এখন এসব স্বপ্নের মত মনে হয়। সেই বয়সে অফুরন্ত শক্তি ছিল, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সেই কৈশোর আর ফিরে আসবে না। নতুন একটা দেশকে নিজেদের মতো সাজাবো বলে আমরা কষ্ট করতাম, কিন্তু কষ্ট কি কোনদিন কষ্ট মনে করতাম না।
এখনকার কী অবস্থা বলতে পারবো না। এখনকার কিশোর আমাদের মত রাত জেগে প্রেসে বসে থাকে কিনা জানি না। শহীদ দিবসের ভোরে নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারের দিকে হেঁটে যাওয়ার ব্যাকুলতা তার আছে কিনা জানিনা।
কৈশোরে আমরা স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম। ঘুম থেকে জেগেও স্বপ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি। দেশ স্বপ্নে নয় বাস্তবে পেয়েছি, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করাই আমাদের ব্রত ছিল।
গতকাল ছিল বাংলা বছরের প্রথম দিন। প্রথম দিনকে ধরব বলে সেহরি খেয়ে বিছানায় যেতে ইচ্ছে হলো না। ভোরের আলোর সাথে সাথে পড়লাম…
নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ-সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি|
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি-
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি|
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ-
স্তব্ধ অতল দিঘি-কালো জল নিশীথ শীতলস্নেহ
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে-
মা বলিতে প্রান করে আনচান, চোখে আসে জল ভর।
দেখলাম আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, চেষ্টা করেও কান্না চেপে রাখতে পারছি না। হায় প্রবাস জীবন…
loading...
loading...
ভালো থাকুন প্রিয় কবি আবু মকসুদ ভাই। শুভ নববর্ষ।
loading...
এখনকার কিছুকিছু কিশোররা নগ্ন পায়ে এখনো শহীদ মিনারে যায়। তবে কেউকেউ এতে খুবই বিরক্তিকর মনে করে। তাই অনেক দিবসেই দেখি কিছুকিছু কিশোর-কিশোরীরা পায়ে জুতো পরেই শহীদদের বরণ করতে ব্যকুল হয়ে শহীদ মিনারের দিকে ছুটে যায়।
loading...