আজ আমাদের ঘরে ‘নীতি’র মা এসেছিলেন। তিনি আশা মানে ভীতিকর পরিস্থিতি। আমাদের যাপিত জীবনে তিনি উৎপাতের মত। তিনি এলে আমরা চুপ করে থাকি; যা বলার তিনি বলে যান; তার বলে যাওয়া অখাদ্য সহ্য করি অথবা গিলি। তিনি চলে গেলে আটকে যাওয়া শ্বাস ছাড়ি, সাথে ছাড়ি তার জোর করে খাওয়ানো নীতি-বাক্য।
তিনি অবশ্য ঘন ঘন আসেন না, মাঝেমধ্যে উদয় হন। তার আসা আমাদের পছন্দ নয় তবু তার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিতে পারি না। একবার চেষ্টা করে দেখেছি। জানালা দিয়ে সামনের রাস্তায় দেখলাম তিনি আসছেন আমাদের ঘরই টার্গেট করে আসছেন কিনা নিশ্চিত ছিলাম না তবুও তিনি যাতে অনায়াসে ঘরে ঢুকে পড়তে না পারেন সেজন্য দরজার ট্রিপল লক লাগিয়ে নিলাম। ভেবেছিলাম দরজা খুলতে পারছেন না তাই চলে যাবেন; কিন্তু এমন নির্লজ্জ যে যাওয়ার নামই নিলেন না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে আমাদেরই ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো; দরজা খুলে তাকে ভিতরে আসতে দিতে বাধ্য হলাম। ঢুকেই যথারীতি অযাচিত লেকচার। একই লেকচার বারবার কাহাতক স্বচ্ছ করা যায় বলুন, তবু ‘নীতি’র মা বলে কথা চোখ শরমের কারণেও মুখ বন্ধ করতে বলতে পারি না। তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার কথাগুলো বলে যেতে থাকেন।
আমরা তাকে এড়িয়ে যেতে চাই তিনি তা ভালো জানেন তবু কেন বারবার অসফল চেষ্টা করেন! তার উপস্থিতিতে আমাদের চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ফুটে উঠে, তাকে কিন্তু কোনদিন এ নিরুৎসাহিত হতে দেখি না। আমাদের মনে মগজে তার কথাগুলো পৌঁছে দিতে বিন্দুমাত্র কসুর তিনি করেন না। মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে যাই মনে হয় তার কথাগুলি মেনে নিলে মন্দ হয় না। মন যখন কিছুটা দুর্বল থাকে তখন তার কথাগুলোকে প্রাণবন্ত এবং প্রয়োজনীয় মনে হয়। কিন্তু এ দুর্বলতা ক্ষনিকের। বাস্তবের মাঠে নীতির মায়ের হাত ধরে চলা অসম্ভব। অনেকেই চেষ্টা করেছে; কেউ সফল হয়নি।
তার লেকচারে আমরা সাধারণত প্রতিউত্তর করি না, চুপচাপ শুনে যাই। একবার শুধু জানার জন্য জানতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম ‘মা জননী এই যে প্রতিবার কষ্ট করে আসেন, এই যে সময় নষ্ট করে দীর্ঘক্ষণ নীতিবাক্য শুনিয়ে যান আপনার শ্রম যে প্রতিবারই পণ্ডশ্রম হচ্ছে সেটা কী বুঝতে পারেন না’! তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পুত্র স্নেহে বলেন ‘আমি শুধুই সম্ভাবনা দেখি’!
নীতির মা তার মত চেষ্টা করে যান তার কথায় প্রভাবিত হতে অন্তর তাগিদ অনুভব করি। কিন্তু ঘরের বাইরে যেখানে পৃথিবী নামক গ্রহ থাকে সেখানে পা রাখার সাথে সাথে নীতির মায়ের কথা ভুলে যেতে হয়। সেখানে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না।
loading...
loading...
ঘরের বাইরে যেখানে পৃথিবী নামক গ্রহ থাকে সেখানে পা রাখার সাথে সাথে নীতির মায়ের কথা ভুলে যেতে হয়। সেখানে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না।
loading...