আমার বিষণ্ন জানালার ওপারের আকাশ বিষণ্ণ হয়ে আছে। সে কী আমার মনের কথা জেনে আমার সাথে সহমর্মিতা দেখাচ্ছে! আজ আমার মন বিষণ্ণ। কোন কোন দিন অকারণে মন খারাপের ঘটনা ঘটে; আজ কারণে ঘটেছে। গত দুই তিন দিন ধরে শরীরের অবস্থা ভালো না; মাথা ব্যাথা, জ্বর, কফ শীতকালে সাধারণত যা হয়। জ্বর, কফে সাধারণত বিছানাবাসি হতে হয় না কিন্তু এইবার একটানা চৌদ্দ ঘন্টা বিছানায় কাটাতে হলো; মাথা তুলতে পারিনি।
শীতের ভোরে শীতের পুকুরে কেউ কী সাঁতার কেটেছেন! আমি কেটেছি, পুরো তারুণ্য শীতের পুকুর আমার দখলে ছিল। এখন তাপমাত্রা আঠারোর নিচে নেমে গেলেই ঠান্ডা লেগে যায়। পুকুরে সাঁতার তো দূরের কথা; মুখ ধোয়ার জন্য টেপের পানি প্রায় ৩০ সেকেন্ড ছেড়ে রাখতে হয়; যতক্ষণ না গরম পানি পাওয়া যায়। শার্টের বোতাম খুলে শীতের ভোরে হাটা তখনকার সময়ে স্টাইল ছিল, এখন ৪/৫ প্রস্থ কাপড় পরেও শীত আটকাতে পারি না। আমি প্রায় নিজেকে আঠারো বলি, বলি বটে কিন্তু বয়স যে আঠারোয় আঁটকে নেই সেটা বেশ জানি। অনেকেই মনের বয়সের কথা বলে কিন্তু সে কেবলই কথার কথা। মনের বয়স দিয়ে আপনি কিন্তু জ্বর এবং কফ আটকাতে পারবেন না।
এত গেল আমার শরীর যন্ত্রের কথা, বয়স হয়েছে শরীর খারাপ হবে এটাই ভবিতব্য। কিন্তু আজকের বিষণ্ণতা শুধুমাত্র শরীর খারাপের জন্য নয়। বিছানায় একটানা অনেক ঘন্টা ঘুমের কারণে বেশ কিছু আজগুবি এবং সম্ভাবনার স্বপ্ন আমাকে দেখতে হয়েছে। একটা স্বপ্ন আমাকে বেশ আন্দোলিত করেছে। লেখালেখিতে একঘেয়েমি চলে আসছিল, নতুন কিছুই যেন হাত থেকে বেরুচ্ছে না। সব চিন্তা জড় চিন্তায় পর্যবসিত হচ্ছে। এই স্বপ্ন আমাকে নতুন চিন্তার খোরাক দিচ্ছিল। আমি তরতর করে লিখছিলাম। স্বপ্নে খুব উত্তেজিত ছিলাম। নতুন কিছু সৃষ্টির উন্মাদনায় কাঁপছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভোর সাড়ে তিনটা। এখনই লিখে না রাখতে পারলে সব হারিয়ে যাবে ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে এলাম। বাথরুমে কয়েক মিনিট প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে সব হারিয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও কিছুই ফিরিয়ে আনতে পারলাম না।
স্বপ্নে আমি যে মন্ত্র গুলো পেয়েছিলাম লিখতে পারলে আমাকে আটকানোর সাধ্য থাকতো না কারো। আফসোস অমিত সম্ভাবনার একজন লেখক শুধুমাত্র স্বপ্ন থেকে বের হতে পারেনি বলে বাংলা সাহিত্য অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হলো। আজ আমার মন খুব বিষণ্ণ; একটাই সান্তনা ভোরের আকাশ আমার মনের খবর জানতে পেরেছে। আমার সহমর্মী হয়ে সেও বিষণ্ণ হয়ে আছে।
loading...
loading...
যাপিত জীবনের কথা-গল্প।
loading...