প্রেম কিংবা টাকা প্রতিভা

সুমনের একটাই ইচ্ছা সেতারা যেচে এসে তার হাত ধরবে। সেতারা নামটা সেকেলে হলেও মেয়েটা সেকেলে নয়। পুরো-দস্তুর মর্ডান। সেতারা না হয়ে সুহাসিনী নাম হলে মানাতো ভালো। নামের সাথে ব্যক্তিত্বের অমিল হলে বেখাপ্পা লাগে। সেতারা নামটাই সেকেলে কিন্তু মেয়েটি সত্যি সত্যিই তারা। আমাদের স্কুলের সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। লেখাপড়ায় যেমন গান কবিতা গল্পে নৃত্যেও তারচেয়ে পারদর্শী কেউ নেই। সবচেয়ে মধুর হচ্ছে তার মুখের হাসি সুমন নিশ্চিত জগতে সেতারার মত সুন্দর হাসি কেউ হাসতে পারবে না। সেতারা না হয়ে নামটা সুহাসিনী হলে সোনায় সোহাগা হত।

সুমন নামটা সেকেলে নয় আবার আধুনিক নয়, নামটা মাঝামাঝি ধরনের। সুমন ছেলেটাও মাঝামাঝি। সুমন মেধাবী নয় তাকে অমেধাবীও বলা যাবে না। এ পর্যন্ত ক্লাসে দশের ভিতরেই থেকেছে। গান তার গলায় আসে না কিন্তু গানের কথাগুলো বেশ লিখতে পারে। পদ্য লেখায় কিছুটা মুন্সিয়ানা সুমনের আছে, সেটা অবশ্য সেতারা মাপের নয়। তবুও সেতারা সুমনের দিকে ঝুঁকেছে, সুমনের লেখা একটা গান গাইতে চেয়েছে। একটি অসাধারণ মেয়ে একটি সাধারণ ছেলে প্রতি দুর্বল হচ্ছে; গল্প, উপন্যাসে এটা হয় কিন্তু বাস্তব জীবনে যে এটা সম্ভব সেতারা সুমন এর উদাহরণ।

সুমন সেতারা যখন জুটি বাঁধতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ইমন নামের ছেলেটার বুকের ভিতর আগ্নেয়গিরি লাভা গলতে শুরু করেছে। ইমন কোন কাজের ছেলে না। লেখাপড়ায় টেনেটুনে পাস। অন্য কোনো প্রতিভা এখন পর্যন্ত কারো নজরে আসেনি। কিন্তু সব প্রতিভা যেখানে আত্মসমর্পণ করে সেখানে টাকার প্রতিভা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ইমনের বাবার প্রচুর টাকা। টাকার জোরে ইমন সব প্রতিভা কিনে নিয়েছে। ইমন নামের আধুনিকতা অনাধুনিকতা এখানে বিবেচ্য নয় কারণ টাকা কারো নামের ধার ধারে না।

সেতারা কিংবা সুমন ইমনের বন্ধু; আদতে শিষ্য তার পিছু পিছু হাঁটে। তার অঙ্গুলিহেলনে বিনা দ্বিধায় সব কাজ করে দেয়। সেতারাকে নিয়ে ইমনের কোন চিন্তা ছিল না, সে ধরে নিয়েছিল সেতারা সে ইতোমধ্যে কিনে নিয়েছে। স্কুল পর্ব কলেজ পর্ব শেষে সেতারা তার বাড়িতেই যাবে। সেতারার পিছনে টাকা বিলাতে সে কখনও কার্পণ্য করেনি, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলিয়েছে।

সেতারায় অন্য কেউ ভাগ বসাবে এটা ইমনের চিন্তাতে আসেনি। সেতারা সুমনের ঘনিষ্ঠতায় সে অবাক হয়। তার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা জুটি হয়ে যাবে এটা ইমন সহ্য করতে পারবে না।

সেতারা সুমনের গান গাওয়া পর্যন্ত হয়তো মানা যায় কিন্তু সেতারা যেচে সুমনের হাত ধরবে এই কথা শুনে এমন মাথা ঠিক রাখতে পারে না। ইমন ভাবে সুমনের হাত ভেঙ্গে দিলে কেমন হয়; হাত নেই হাত ধরাধরির বালাই নেই। যেই ভাবা সেই কাজ। টাকা প্রতিভায় ইমন সুমনের হাত ভেঙ্গে দিতে উদ্যত হয় এবং কিছু পরিমাণে সফল হয়।

হাত ভাঙ্গার সিদ্ধান্তের আগে ইমন সেতারার মুখোমুখি হয়েছিল। জিজ্ঞেস করেছিল
-সুমন চাচ্ছে তুমি তার হাত ধর, তোমার অভিমত কী?
-সুমন চাইলে আমি অবশ্যই তার হাত ধরব।
-আর আমি চাইলে?
-তোমার হাত ধরার কোন প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।

ইমন অপমানিত বোধ করে সামান্য একটা মেয়ে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ভেবে জ্বলে ওঠে। উপযুক্ত শিক্ষা দিতে সিদ্ধান্ত নেয়।

ইমনের টাকা সুমনের হাত পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়নি, তবে মুচড়ে দিয়েছে। সুমন হাসপাতালে; সেতারা গেছে দেখতে। ইমন ভাবল সেও একবার বন্ধুকে দেখে আসবে। হাসপাতালে পৌঁছে ইমন দেখল সুমনের বেডের পাশে সেতারা বসে আছে; তার দুই হাত দিয়ে সুমনের মুচড়ে যাওয়া হাত শক্ত করে ধরে আছে। এ দৃশ্য দেখে তার হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে গেল। একটা বিষয় তার উপলব্ধি হল, টাকা প্রতিভা সবসময় সফল হয় না; বিশেষ করে হৃদয় ঘটিত ব্যাপারস্যাপারে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
প্রেম কিংবা টাকা প্রতিভা, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৬-০৬-২০২২ | ৮:২৮ |

    সুলিখিত অণুগল্প। শুভেচ্ছা প্রিয় কবি প্রিয় আবু মকসুদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...